ঢাকা ২১ বৈশাখ ১৪৩২, রোববার, ০৪ মে ২০২৫

ঠাকুরগাঁওয়ের আম যাচ্ছে ইউরোপে

প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৪, ০২:৩৬ পিএম
ঠাকুরগাঁওয়ের আম যাচ্ছে ইউরোপে
ঠাকুরগাঁওয়ে বাগান থেকে শ্রমিকরা রপ্তানির জন্য আম প্রক্রিয়াজাত করছেন। ছবি: খবরের কাগজ

দেশের গণ্ডি পেরিয়ে প্রথমবারের মতো ইউরোপে রপ্তানি হতে যাচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের আম। এতে বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীদের লাভের পাশাপাশি সমৃদ্ধ হবে জেলার ও দেশের অর্থনীতি। এছাড়া এই রপ্তানির মাধ্যমে ভবিষ্যতে মানসম্মত আম বিদেশে রপ্তানির পথ সুগম হবে বলে আশা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

দেশের উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁও। অর্থকরী ফসলসহ এখানে উৎপাদন হয় ধান, গম, ভুট্টা, শাকসবজি ও নানা দেশি-বিদেশি ফল। এগুলো জেলার চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দেশের চাহিদা পূরণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে ঠাকুরগাঁওয়ের আম শুধু দেশের চাহিদাই পূরণ করছে না, বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে। ঠাকুরগাঁও থেকে এবার দ্বিতীয়বারের মতো ব্যানানা ম্যাংগো, আম্রপালি, বারি আমসহ বিভিন্ন জাতের আম ইউরোপে রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হবে। 

তবে বিমান ভাড়া বাড়ায় কিছুটা শঙ্কিত ব্যবসায়ীরা। এতে আগ্রহ হারাচ্ছেন আম বাগান মালিকরা।  তারা এ ব্যাপারে তারা সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। মুন্সিরহাটের আম বাগানের মালিক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বিমান ভাড়া বাড়ায় আমরা ক্ষতির মুখে পড়েছি। এতে লাভের বেশির ভাগ অংশ বিমান ভাড়ায় চলে যাচ্ছে। গত বছর আম পাঠাতে বিমান ভাড়া পড়েছিল প্রতি কেজি ১৮০ টাকা আর এবার প্রতি কেজি আম পাঠাতে খরচ পড়ছে ৪০০ টাকা। এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তাই আমরা প্রধানমন্ত্রী এবং কৃষিমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করি।’

অন্যদিকে পীরগঞ্জের আমবাগান মালিক একরামুল হক বলেন, ‘নিজের হাতে লাগানো গাছের আম বিদেশের মাটিতে যাচ্ছে, এতে খুব ভালো লাগছে। আম রপ্তানি করে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে। তবে একদিকে বিমানের ভাড়া বেড়েছে, আবার অন্যদিকে বিমানে পর্যাপ্ত জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। এতে আমাদের আম পাঠাতে সমস্যা হতে হচ্ছে। এ কারণে অনেক আমচাষি, বিদেশে আম পাঠানো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।’ 

এবার বিষয়ে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ট্রেড লিংকের সিইও কাউসার আহমেদ রুবেল বলেন, ‘ঠাকুরগাঁওয়ের আম অত্যন্ত সুস্বাদু, সাইজে অনেক বড় তাই এটি রপ্তানির উপযোগী। এ কারণে দ্বিতীয়বারের মতো আম রপ্তানি করা হচ্ছে। আমের গুণগতমান ভালো থাকলে বিদেশে আমাদের আমের চাহিদা বাড়বে।’

চলতি বছর ঠাকুরগাঁও ৩ হাজার ২২১ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘শুরুতে আমরা ৩০ কৃষককে চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিয়ে যাই। সেখনানে বাগান ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিই। তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করার পর অনেকে আম চাষে আগ্রহী হন। গত বছর প্রথমবারের মতো ইউরোপে আম রপ্তানি করি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিতীয়বারের মতো ইউরোপের আম পাঠানো শুরু হবে। প্রথমে বিভিন্ন কৃষকদের কাছ থেকে মানসম্মত আম সংগ্রহ করা হবে। পরে আম প্রক্রিয়াজাত করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানো হবে। আমরা কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করছি। কৃষকদের সমস্যাগুলো আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। আশা করছি, দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।’

সোনারগাঁয়ে ৮ কোটি টাকার লিচু বিক্রির আশা

প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৫, ০৯:১৩ এএম
সোনারগাঁয়ে ৮ কোটি টাকার লিচু বিক্রির আশা
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের একটি বাগানে গাছে পাকা লিচু সংগ্রহ করে ঝুড়িভর্তি করে মাথায় তুলে নিচ্ছেন এক শ্রমিক। খবরের কাগজ

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে এবার লিচুর ভালো ফলন হয়েছে। এখানে শত শত বাগানে ফল ধরেছে। কৃষি কর্মকর্তারা জানান, ফলন আগের তুলনায় দ্বিগুণ। কিছু লিচু খরায় ঝরে গেলেও উৎপাদন ভালো। বাগানিরা জানান, পাইকাররা আগেই লিচু কিনে নিচ্ছেন। প্রতি হাজার লিচু ৪ হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এবার বাজারে ৮ কোটি টাকার লিচু বিক্রির আশা করছেন চাষিরা। সোনারগাঁয়ের লিচু দেশের বাজারে আগে ওঠে। কদমি লিচুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি।

উপজেলা কৃষি অফিস থেকে জানা গেছে, গত বছর এখানে অর্ধশতাধিক গ্রামে ১০০ হেক্টর জমিতে ৬৫০টি লিচুবাগান গড়ে উঠেছিল। আকারে ছোট হলেও এখানকার কদমি, মোজাফফরপুরী, পাতি, চায়না-থ্রি, এলাচি ও বোম্বাই জাতের লিচুর কদর সবচেয়ে বেশি। সে বছর লিচু চাষিরা পাইকারি দরে ৬ কোটিরও বেশি টাকার লিচু বিক্রি করেছিলেন। এ বছর উপজেলায় ১০৭ হেক্টর জমিতে ৬৬৬টি বাগানে লিচুর ফলন হয়েছে। এসব বাগানের লিচু পাইকারি দরে ৮ কোটিরও বেশি টাকায় বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন বাগানিরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ অঞ্চলে লিচুর চাষ শুরু হয় বহু বছর আগে। পর্তুগিজদের আগমনের পর তারাই প্রথম এ অঞ্চলে লিচুর চাষ শুরু করেন। নব্বইয়ের দশকে এখানে দেশের বৃহৎ লিচু চাষ হলেও তা কয়েক বছরের মধ্যে কমে আসে। তবে প্রায় এক যুগ ধরে এখানকার বাগানিরা বাজারে লিচুর কদর পেয়ে নতুন নতুন বাগানে ফলন করে চলেছেন।

শুরুর দিকে পানাম ও আদমপুরে লিচু চাষ হলেও এখন তা ছড়িয়ে পড়েছে ষোল্লপাড়া, দরপত, সনমান্দী, গোয়ালদী, বৈদ্যেরবাজার, ভট্টপুর, গাবতলী, হাড়িয়া, অর্জুন্দী, দুলালপুর, গোবিন্দপুর, কৃষ্ণপুরা, বাগমুছা, হাতকোপা, দত্তপাড়া, আদমপুর, খাগুটিয়া, খাসনগর দীঘিরপাড়, চিলারবাগ, দৈলরবাগ, টিপরদী, হরিশপুর, তাজপুর, সাদীপুর, ইছাপাড়া, বারদী, সেনপাড়া, বালুয়াদীঘির পাড়, মোগরাপাড়া, বাড়িচিনিসহ বিভিন্ন গ্রামে।

জানা গেছে, সোনারগাঁয়ের কদমি লিচুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এই লিচু আকারে ছোট হলেও রং টকটকে লাল। প্রতি বছর এখানকার লিচু দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে। লিচুর ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই এখানে লিচু চাষ বাড়ছে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় লিচুর ভালো ফলন হয়েছে। যেটা আগের তুলনায় দ্বিগুণ। এখন বাগানিদের অপেক্ষা শুধু বাজারজাতকরণের। 

সোনারগাঁ পৌরসভার লাহাপাড়া গ্রামের লিচু চাষি আবদুল আউয়াল জানান, তার বাগানে ছোট-বড় মিলিয়ে অর্ধশতাধিক লিচুগাছ রয়েছে। এ বছর লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। যদিও খরার কারণে অনেক লিচু ঝরে পড়েছে, তারপরও লাভ হবে বলে আশা করছি।

পৌরসভার ষোল্লপাড়া এলাকার লিচু ব্যবসায়ী বেনু মোল্লা জানান, তিনি ২০ বছর ধরে লিচু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তিনি বলেন, ‘তিনটি বাগান তিন বছরের জন্য ২০ লাখ টাকায় কিনেছি। বাগানগুলোতে পাতি, কদমি, বোম্বাই, চায়না-টু এবং চায়না-থ্রি জাতের লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকার পাইকাররা গাছের লিচু কিনেছেন। প্রতি হাজার ৪ হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করছি।’ চলতি সপ্তাহে লিচু ভাঙা শুরু হয়েছে বলেও তিনি জানান।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সাঈদ তারেক জানান, ‘এ বছর সোনারগাঁয়ে ১০৭ হেক্টর জমিতে প্রায় ৭২০ টন লিচুর উৎপাদনের লক্ষ্যে বাগান করেছেন চাষিরা। ছোট-বড় মিলে এখানে ৬৬৬টি লিচুবাগান রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন বাগান পরিদর্শন করে দেখেছি লিচুর ফলন খুবই ভালো হয়েছে। তবে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে কিছু লিচু গাছ থেকে ঝরে পড়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ফলন ভালো হয়েছে।’

বোরো ধান নিয়ে সিন্ডিকেট: ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না কৃষক

প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৫, ০৯:১০ এএম
আপডেট: ০৪ মে ২০২৫, ০৯:৩১ এএম
বোরো ধান নিয়ে সিন্ডিকেট: ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না কৃষক
খুলনার তেরখাদা বিল থেকে সরাসরি মহাজনদের কাছে বিক্রি জন্য ধানের বস্তা ট্রাকে লোড করছেন শ্রমিকরা। খবরের কাগজ

খুলনায় চলতি মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কায় পুরো দমে ধান কাটা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ৭০-৭৩ শতাংশ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। তবে অভিযোগ রয়েছে, সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে কৃষকরা উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। পাওনাদার, মিলমালিক ও মধ্যস্বত্বভোগীরা মাঠ থেকেই কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য করছেন কৃষকদের। গত কয়েক দিনে খুলনার ডুমুরিয়া, বটিয়াঘাটা, তেরখাদা ও ফুলতলা উপজেলার বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

কৃষকরা জানিয়েছেন, খুলনাঞ্চলে বছরে একবারই বোরো ফসল উৎপন্ন হয়। যেটা দিয়ে তারা সারা বছরের সংসার চালান। কিন্তু নানা ধরনের সিন্ডিকেট ও আর্থিক সংকটে পড়ে জমি থেকে ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গেই তা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। বর্তমানে তারা বোরো ধান প্রতি মণ ৯৫০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন, অথচ উৎপাদন খরচ ৯০০ টাকার ওপরে। তারা জানান, যদি ধান দেখেশুনে ও সঠিক সময়ে বিক্রি করতে পারতেন, তাহলে আর্থিকভাবে লাভবান হতেন। কিন্তু সিন্ডিকেটের চাপে এখন ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি মৌসুমে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও নড়াইলে মোট ২ লাখ ৫৮ হাজার ৩৯৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে খুলনা জেলায় চাষ হয়েছে ৬৫ হাজার ৫৩৬ হেক্টর জমিতে। বর্তমানে খুলনায় ৭৩ শতাংশ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে।
খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার চক্রাখালি এলাকার চাষি লক্ষণ টিকাদার বলেন, ‘এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে সিন্ডিকেটের কারণে ন্যায্য দাম পাচ্ছি না। ফসল গোলায় তোলার আগেই মজুতদার ও ফড়িয়ারা পাওনা টাকার জন্য হাজির হচ্ছেন। তাদের চাপে ধান কেটে বাড়িতে আনার আগেই কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। উৎপাদনে প্রতি মণে ৯০০ টাকার ওপরে খরচ হলেও ৯৫০ থেকে ১ হাজার টাকায় ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।’

একই অবস্থা খুলনার তেরখাদা উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নেও। কোনো ধরনের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ না থাকায় স্থানীয় মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগসাজশে চাষিরা বাধ্য হচ্ছেন কম দামে ধান বিক্রি করতে। ফসল ঘরে তোলার আগেই দাদন ও কিস্তির টাকার জন্য মাঠে হাজির হন মহাজন ও এনজিও কর্মীরা। এই সুযোগে মধ্যস্বত্বভোগী মজুতদার ও ফড়িয়া সিন্ডিকেটও সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

জয়সেনা বিলের চাষি আকবার বিশ্বাস বলেন, ‘আর্থিক সংকটে পড়ে ধার-দেনা করে বোরো আবাদ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু ফসল ঘরে তোলার আগেই টাকার জন্য মহাজন হাজির। বাধ্য হয়ে ৯০০ টাকা মণ দরে ধান বিক্রি করেছি ফড়িয়াদের কাছে।’

উপজেলা সদরের চাল ব্যবসায়ী জুবায়ের জানান, ‘তার জানা মতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন নতুন বোরো ধানবোঝাই অসংখ্য পরিবহন বিভিন্ন অঞ্চলের অটো রাইস মিলে যাচ্ছে।’

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক পূরবী রানী বালা বলেন, ‘এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের সভায় আলোচনা হবে। কৃষকদের অবস্থার কথা বিবেচনায় দ্রুত সরকারিভাবে ধান-চাল কেনা শুরু হবে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খুলনার উপসহকারী কর্মকর্তা ফয়েজ আহম্মেদ মিনা বলেন, ‘খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও নড়াইলে এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এর মধ্যে খুলনায় ৭০ শতাংশ, বাগেরহাটে ৮০ শতাংশ, সাতক্ষীরায় ৭৭ শতাংশ ও নড়াইলে ৬৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। তবে কিছু এলাকায় কৃষকরা আগেভাগেই ধান বিক্রি করতে বাধ্য হওয়ায় ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’

এদিকে খুলনার রূপসা উপজেলা খাদ্য বিভাগ ৩০ এপ্রিল থেকে সরকারিভাবে বোরো ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু করেছে। প্রতি মণ ধান ১ হাজার ৪৪০ টাকা দরে কেনা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আকাশ কুমার কুন্ডু জানান, রূপসা উপজেলার আইচগাতী ইউনিয়নে ৩৮ জন, শ্রীফলতলা ইউনিয়নে ১৫৫ জন, নৈহাটি ইউনিয়নে ৮০ জন, টিএসবি ইউনিয়নে ৫৪ জন এবং ঘাটভোগ ইউনিয়নে ১৩৫ জন কৃষক লটারির মাধ্যমে সরকারের কাছে ন্যায্য দামে ধান বিক্রির সুযোগ পেয়েছেন।

তবে নানা জটিলতার কারণে অনেক কৃষক সরকারি গুদামে ধান দিতে আগ্রহ হারাচ্ছেন। নৈহাটি বিলের কৃষক সুকুমার সানা বলেন, ‘সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে হলে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়, ধান মাপজোক করা হয়, তারপর টাকা পাওয়া যায়। অথচ আমাদের ওপর দেনার চাপ থাকে, টাকার দরকার পড়ে তখনই। তাই অনেকেই বাধ্য হয়ে মহাজনের কাছে বা হাটে কম দামে ধান বিক্রি করছেন।’

নীতি-সহায়তা পেলে আইসক্রিম রপ্তানি সম্ভব

প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৫, ০৯:০২ এএম
আপডেট: ০৪ মে ২০২৫, ০৯:৪৩ এএম
নীতি-সহায়তা পেলে আইসক্রিম রপ্তানি সম্ভব
ছবি : সংগৃহীত

গরম এলেই মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে পাওয়ার আগ্রহ তীব্র হয়ে ওঠে। আর গরম থেকে স্বস্তি পেতে ছোট-বড় সবারই দোকানে দোকানে চাওয়া থাকে আইসক্রিম। এখন নামিদামি অনেক ব্র্যান্ডের আইসক্রিমে সাজানো থাকে দোকানের ফ্রিজগুলোতে। সেই আইসক্রিমের বাজার এখন প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা, আর বছরে প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশের কাছাকাছি।

কোভিড-১৯-এর প্রভাবে প্রায় দুই বছর আইসক্রিমের ব্যবসায় মন্দা থাকলেও গত তিন চার বছরে আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে আইসক্রিম শিল্প। এই শিল্পের বিকাশে অনেক সংকট আছে এমন মন্তব্য শিল্প সংশ্লিষ্টদের। তারপরও তাদের প্রত্যাশা আগামী বাজেটে এ শিল্পের বিকাশে থাকবে সুস্পষ্ট নীতি-সহায়তা। 

দেশের আইসক্রিমের বাজারের দুই-তৃতীয়াংশের দখল রয়েছে আব্দুল মোনেম গ্রুপের ইগলু ও ঢাকা আইসক্রিম ইন্ডাস্ট্রিজের পোলার ব্র্যান্ডের। এ ছাড়া লাভেলো, স্যাভয়, বেলিসিমো, জা এন জি, ব্লুপ, কোয়ালিটিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদিত আইসক্রিম বাজারজাত করছে। 

দেশের আইসক্রিমের বাজার কে কতটা দখলে রেখেছে তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান দিতে পারেনি বাজারসংশ্লিষ্টরা। তবে এ ব্যবসায় সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, বর্তমানে দেশের আইসক্রিমের বাজারের আকার আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি। ২০২৫ সালে এটি বেড়ে ৩ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। প্রতিবছর দেশের আইসক্রিম শিল্পের প্রবৃদ্ধি ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। মূলত মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে আইসক্রিম বিক্রির মৌসুম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর মধ্যে মার্চ থেকে জুনকে বলা হয় সুপার পিক এবং জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরকে সেমি-পিক সিজন হিসেবে গণ্য করা হয়। 

বেসরকারি আইসক্রিম প্রতিষ্ঠানের সম্প্রতি একটি গবেষণায় জানিয়েছে, ২০২১ সালে দেশের আইসক্রিমের বাজার আগের বছরের তুলনায় ৯৩ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৪১০ কোটিতে পৌঁছেছে। ২০২০ সালে দেশের আইসক্রিমের বাজার ছিল ৭৩০ কোটি টাকার। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২৫ সাল শেষে এই শিল্পের বাজার ২ হাজার ৬০০ কোটিতে ছাড়িয়ে যাবে। 

খাতসংশ্লিষ্টরা বলেছেন, আইসক্রিম তৈরির বেশির ভাগ কাঁচামাল আমদানি করে নিয়ে আসতে হয়। দেশীয় উৎস থেকে শুধু চিনি, বাটার ও পানি সংগ্রহ করা হয়। এ ছাড়া চকলেট, মিল্ক ফ্যাট, ফুল ক্রিম দুধ, ফ্লেবারসহ অন্যান্য উপাদান আমদানি হয়। আর এসব পণ্য ডেনমার্ক, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। 

সম্প্রতি আব্দুল মোনেম লিমিটেডের পরিচালক যায়নাব মাইনুদ্দিন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনায় জানিয়েছেন, আইসক্রিম একটি স্পর্শকাতর তাপমাত্রা সংবেদনশীল পণ্য। তাই এর উৎপাদন থেকে শুরু করে পরিবহন ও বাজারজাতের প্রতিটি পর্যায়ে প্রশিক্ষিত জনবল প্রয়োজন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত জনবলের নির্দিষ্ট কোনো প্রশিক্ষণ নীতিমালা নেই।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজাটে আইসক্রিম খাতের জন্য সংশ্লিষ্ট কাঁচামাল ও মেশিন আমদানির জন্য পৃথক এইচএস কোড নির্ধারণ করা জরুরি। এ ছাড়া আইসক্রিমের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে অন্যান্য শিল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উচ্চ শুল্কহারের পরিবর্তে ব্যবসাবান্ধব শুল্কহার ঘোষণা করা উচিত।

তিনি বলেন, ‘আইসক্রিম বিক্রি করতে সেলস জেনারেটিং অ্যাসেট (এসজিএ) অর্থাৎ প্রয়োজন ফ্রিজার। বর্তমানে ডিপ ফ্রিজে আমদানির ওপর ১০৪ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। দেশের বাজারে উন্নতমানের কমার্শিয়াল ফ্রিজার উৎপাদন হচ্ছে না। তাই ভ্যাট রেজিস্টার্ড আইসক্রিম উৎপাদন শিল্পের জন্যে ফ্রিজার আমদানির ওপর শুল্ক কমানো জরুরি।’ 

আইসক্রিম একটি দুগ্ধজাত পণ্য। দেশের মানুষের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে খুবই প্রয়োজনীয়। বিশেষ তাপমাত্রা বজায় রেখে উৎপাদন ও বিক্রি করতে হয় বলে খরচও অনেক বেশি। তাই আইসক্রিম বিক্রির ওপর সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি। 

দেশের আইসক্রিম কোম্পানিগুলোর মধ্যে সরাসরি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত তাওফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিম পিএলসি। এ ছাড়া গোল্ডেন হার্ভেস্ট এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। এই কোম্পানির একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান আছে গোল্ডেন হার্ভেস্ট আইসক্রিম লিমিটেড। 

তাওফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিম পিএলসি ইতোমধ্যে তাদের চলতি হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যেখানে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় মুনাফা বেড়েছে। 

এ বিষয়ে কোম্পানি সেক্রেটারি মো. মহিউদ্দিন সরদার খবরের কাগজকে বলেন, ‘এ সময়টিতে মূলত আইসক্রিমের চাহিদা বাড়ে। এ জন্য স্বাভাবিকভাবেই আয় বেড়েছে। আমাদের নতুন প্রকল্প নিয়ে কাজ করছি। আশা করছি, আগামীতে আইসক্রিম বিক্রির মাধ্যমে আয় বাড়ানো সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।’ 

গত বছরের সেপ্টেম্বরে কোম্পানিটি তাদের দ্বিতীয় আইসক্রিম উৎপাদন কারখানা স্থাপনের জন্য ১৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগের ঘোষণা করেছে। ময়মনসিংহের ভালুকায় বিদ্যমান উৎপাদন কারখানাসংলগ্ন ৫৯.১৬ শতাংশ জমি কেনা হয়েছে নতুন কারখানা স্থাপনে। 

কোম্পানিটি সূত্রে জানা গেছে, নতুন কারখানায় উৎপাদন শুরু হওয়ার পর দৈনিক ২ লাখ ৫০ হাজার লিটার আইসক্রিম উৎপাদন হবে, এটি লাভেলোর বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি। প্রকল্পটি ২০২৫ সালে সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। কোম্পানিটির দ্বিতীয় প্রান্তিকে নিট মুনাফা করেছে ৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আগের বছরের একই সময়ে নিট মুনাফা হয়েছিল ২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।

দেশের বাজারে ব্লুপ ব্র্যান্ডের আইসক্রিম বাজারজাত করছে গোল্ডেন হার্ভেস্ট আইসক্রিম লিমিটেড। গোল্ডেন হার্ভেস্ট এগ্রো ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের কোম্পানি সচিব ইব্রাহিম হোসেন বলেন, আইসক্রিম ফ্যাক্টরিটি সুইডেনের টেট্রা প্যাকের মাধ্যমে স্থাপন করা হয়েছে। এটি ডেনিশ কোম্পানির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। ব্লুপ ব্যান্ডটি প্রায় ৪০টি বিভিন্ন ধরণের পণ্য বাজারে সরবরাহ করছে। এর মধ্যে আছে আইসক্রিম স্টিক, কাপ, কোন, ক্যালিপ্পো, শরবত, টাব, কেক অন্যতম। 

অতি সম্প্রতি আইসক্রিম শিল্পের ওপর করা লংকাবাংলা গ্রুপের এক জরিপে বলা হয়েছে, দেশে বছরে ৬ কোটি লিটারের বেশি আইসক্রিমের চাহিদা রয়েছে। এই চাহিদার পুরোটাই যোগান দিচ্ছে দেশীয় শিল্প উদ্যোক্তারা। এখন আলোচনায় আছে দেশ থেকে আইসক্রিম রপ্তানি’। জরিপে বলা হয়েছে, মোট চাহিদার ৩৮ শতাংশ যোগান দিচ্ছে আবদুল মোনেম লিমিটেডের ব্র্যান্ড ইগলু। ঢাকা আইসক্রিম ইন্ডাস্ট্রিজের পোলার চাহিদার ২৮ শতাংশ যোগান দিচ্ছে। এর পরের অবস্থানে রয়েছে লাভেলো। প্রতিষ্ঠানটি মোট চাহিদার ১৫ শতাংশ উৎপাদন করেছে। কোয়ালিটি রয়েছে চতুর্থ পর্যায়ে, কোম্পানিটি বছরে মোট চাহিদার ৯ শতাংশ যোগান দিচ্ছে। বাকি ১০ শতাংশের যোগান দিচ্ছে জা এন জি, ব্লুপ, স্যাভয়সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান।

আইসক্রিম প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মানসম্মত আইসক্রিমে অন্তত ১২ শতাংশ মিল্ক ফ্যাট থাকা প্রয়োজন। এই পণ্যের মূল উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয় তরল দুধ, গুঁড়ো দুধ, দুগ্ধজাত ক্রিম, কনডেন্সড মিল্ক, ভেজিটেবল ফ্যাটসহ বিভিন্ন দুগ্ধজাত ও চর্বিযুক্ত উপকরণ। এ সবের একটি বড় অংশ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়, বিশেষত অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, স্পেন, ডেনমার্ক, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর থেকে। স্বাদ ও গন্ধ বৃদ্ধিতে ব্যবহৃত উপাদান যেমন ফলের নির্যাস, চায়ের আস্তরণ, কোকো পাউডার, বাদাম, নারকেলের নির্যাস ও চকলেট কোটিং- এসবও আমদানি করা হয় মালয়েশিয়া, চীন, স্পেন ও ফ্রান্স থেকে। এ ছাড়া, আইসক্রিম মোড়কজাত করতে যে বিশেষ ধরনের র‌্যাপার ব্যবহৃত হয়, তা আসে থাইল্যান্ড, চীন ও তুরস্ক থেকে।

এসএমই নারী উদ্যোক্তাদের মেলা শুরু ৮ মে

প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৫, ০৮:৪৪ এএম
এসএমই নারী উদ্যোক্তাদের মেলা শুরু ৮ মে
বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে আবার শুরু হচ্ছে কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) খাতের নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণে ব্যাংকার-এসএমই নারী উদ্যোক্তা সমাবেশ, পণ্য প্রদর্শনী ও মেলা। নারীদের উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী করে তোলা ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। ৮ থেকে ১১ মে রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এই মেলা অনুষ্ঠিত হবে। মেলা চলবে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগ জানায়, এবারের মেলায় বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ৪৯টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে। মেলায় আসা দর্শনার্থীদের জন্য এসএমই খাতে তাদের পণ্য ও সেবাসংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য জানার সুযোগ রয়েছে। মেলায় অংশগ্রহণকারী ৭০ জন নারী উদ্যোক্তা তাদের পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি করবেন। এ ছাড়া মেলার প্রথম ও দ্বিতীয় দিন সিএমএসএমই খাত ও সমসাময়িক অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এই সেমিনার পরিচালনা করবেন। মেলা প্রাঙ্গণ সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

চার দিনের এই মেলার উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন অর্থ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।

গত মার্চে সিএমএসএমই খাতে কী পরিমাণ ঋণ দেওয়া হবে, তার নতুন লক্ষ্য ঠিক করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত লক্ষ্য অনুযায়ী, ২০২৯ সালের মধ্যে ব্যাংকের মোট ঋণ স্থিতির ২৭ শতাংশ সিএমএসএমই খাতে দিতে হবে। একই সঙ্গে প্রতি বছর এ খাতে ঋণের পরিমাণ দশমিক ৫ শতাংশ করে বাড়াতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে চলতি ২০২৫ সালের মধ্যে ব্যাংকের মোট ঋণ স্থিতির ২৫ শতাংশ সিএমএসএমই খাতে দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে।

এদিকে এসএমই ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এসএমই খাতের অবদান প্রায় ৩২ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৩ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুসারে, দেশে ৭৮ লাখের বেশি সিএমএসএমই শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এটি মোট শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ৯৯ শতাংশের বেশি। শিল্প খাতের মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৮৫ শতাংশ হয় এসএমই খাতে। 

শিল্প খাতে ব্যর্থতার কারণ অতীতের দুর্বৃত্তায়ন

প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৫, ০৮:৪০ এএম
শিল্প খাতে ব্যর্থতার কারণ অতীতের দুর্বৃত্তায়ন
ছবি: সংগৃহীত

শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, শিল্প খাতে ব্যর্থতার কারণ অতীতের দুর্বৃত্তায়ন। যিনি কারখানার মালিক তিনি রাজনৈতিক দলের নেতা, সংসদে এমপি। এভাবেই অতীতে শাসন এবং শোষণ চলেছিল। জুলাই বিপ্লবে ছাত্রদের পাশাপাশি শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণ ও প্রাণহানি ঘটেছে। এর পেছনে কারণ ছিল তাদের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ। সরকারের অবহেলায়ই রানাপ্লাজা দুর্ঘটনা ঘটেছে। রানাপ্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে ১৭ দিন পরে রেশমা নামক নারী কর্মীকে উদ্ধার করা ছিল সাজানো নাটক।

গতকাল শ্রমিক অধিকার সুরক্ষায় শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক নিয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। 

উপদেষ্টা আরও বলেন, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের অনেক মন্ত্রী, এমপি শ্রমিকের বেতন না দিয়ে বিদেশে পালিয়েছে বা আত্মগোপনে আছে। তাদের বাড়ি, গাড়ি, জমি বিক্রি করে শ্রমিকের পাওনা পরিশোধের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যারা শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ না করে বিদেশে পালিয়েছে তাদের ধরে আনতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারির কথা বলেছি। আমার শ্রমিককে আমি দেখব, মালিকদের এমন মানসিকতা গড়ে উঠেনি। তবে আমরা সর্বদা শ্রমিকের পক্ষে কথা বলি। মালিককেও দেখার দায়িত্ব আছে। আমরা চাই না শ্রমিক একদিকে মালিক অন্যদিকে। 

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, মে দিবস আসে যায়। দিবসটিতে নানা র‌্যালি, মিছিল-স্লোগান, সভা-সমাবেশের মাধ্যমে পালিত হয়। কিন্তু শ্রমিকের ভাগ্য বদলায় না। যাদের শ্রমে-ঘামে দেশের চাকা ঘোরে, তাদের ভাগ্যের চাকা ঘোরে না। শ্রমিক অধিকার আদায়ের যে দিবস, সে দিবস তাদের স্পর্শ করে না। দেশের ৮ কোটি শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে ৮৫ শতাংশ শ্রমিকেরই আইনি ও সামাজিক সুরক্ষা নেই। শ্রমিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই, নেই কর্মস্থলে পরিচয়পত্র। অথচ জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার বিপ্লবে ১১২ জন শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষ শহিদ হয়েছেন। কয়েক হাজার শ্রমজীবী মানুষ আহত হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। এর মধ্যে অনেকেই পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। তাই শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য দাবি পূরণ না হলে, জুলাই বিপ্লবের অর্জিত সুফল ম্লান হয়ে যাবে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ব্যতীত শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। শুধু মে দিবসে শ্রমিকদের সুরক্ষার কথা না বলে, শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনি ইশতেহারে ভালোভাবে উল্লেখ করলে তাদের ভোট বাড়বে, কমবে না। আমরা শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি আদায়ের পক্ষে। তবে অযৌক্তিক দাবির মাধ্যমে বহিরাগতদের নিয়ে কারখানায় শ্রমিকদের বিক্ষোভ, ভাঙচুর, কারখানা বন্ধ করে দেওয়া, জ্বালাও পোড়াও কোনোভাবেই আমরা সমর্থন করি না। 

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী সরকারের পতনের পর কিছু দেশি-বিদেশি অপশক্তি পোশাকশিল্পসহ বিভিন্ন মিল-ফ্যাক্টরি অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিল। এমনো দেখা গেছে, শ্রমিক আন্দোলনের নামে উসকানিদাতা কেউই শ্রমিক বা শ্রমিক নেতা নয়। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, শিল্প পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতায় অন্তর্বর্তী সরকার অযৌক্তিক শ্রমিক আন্দোলনের নামে তথাকথিত বিশৃঙ্খলা দমন করতে সমর্থ হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি এক বড় কালো অধ্যায়। অথচ রানা প্লাজায় নিহত ও আহত পরিবারের সাহায্যে দেশি-বিদেশিদের যে অর্থ পাওয়া গিয়েছিল তার বেশির ভাগ অংশই তৎকালীন সরকার ও তার সুবিধাভোগীরা লুটপাট করেছে। 

মহান মে দিবস-২০২৫ উদযাপনের অংশ হিসেবে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ‘শ্রমিক অধিকার সুরক্ষায় মালিক অপেক্ষা শ্রমিক সংগঠনের দায়িত্ব বেশি’ শীর্ষক ছায়া সংসদে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের পরাজিত করে তেজগাঁও কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, সাংবাদিক মো. আলমগীর হোসেন, সাংবাদিক মো. তৌহিদুল ইসলাম, সাংবাদিক মো. আতিকুর রহমান ও নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুল। প্রতিযোগিতা শেষে চ্যাম্পিয়ন দলকে ৫০ হাজার ও রানারআপ দলকে ৩০ হাজার টাকাসহ ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র দেওয়া হয়।