গোপালগঞ্জে কন্দাল জাতীয় ফসল চাষাবাদ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। চলতি বছর সদর উপজেলায় প্রায় ২০৬ হেক্টর জমিতে এসব ফসলের আবাদ হয়েছে।
কৃষি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এসব ফসল চাষে কীটনাশক ব্যবহার হয় না। এ ছাড়া এসবে প্রচুর পরিমাণ খনিজ ও ভিটামিনের উপাদান রয়েছে। খাবার হিসেবে ফসলগুলো মানবদেহের জন্য অন্তত নিরাপদ। কন্দাল জাতীয় ফসলগুলোর মধ্যে রয়েছে, গোল আলু, মিষ্টি আলু, পানিকচু, লতিকচু, ওলকচু, মুখিকচু ও গাছ আলু।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাফরোজ আক্তার বলেন, ‘২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সদর উপজেলায় ৯০ হেক্টরে গোলা আলু, ১১ হেক্টরে মিষ্টি আলু, ৯২ হেক্টরে পানিকচু ও লতিকচু, দুই হেক্টরে মাদ্রাজি ওলকচু, ৮ হেক্টরে বিলাসী মুখিকচু, তিন হেক্টরে স্থানীয় জাতের গাছ আলুর আবাদ হয়েছে। সব মিলিয়ে এই উপজেলায় মোট ২০৬ হেক্টর জমিতে এসব ফসলের আবাদ হয়ছে।’
গোল আলু হেক্টরে ২২ দশমিক ৬৯ টন ফলন হয়েছে। ৯০ হেক্টরে এই আলু ২ হাজার ৪২ টন ১০ কেজি ফলন দিয়েছিল। ১ হেক্টরে উৎপাদিত আলু বিক্রি হয়েছে ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৮০০ টাকা। আলু উৎপাদনে হেক্টরপ্রতি ৩ লাখ ৩ হাজার ৮০০ টাকা খরচ হয়েছে। এতে কৃষকের প্রতি হেক্টরে লাভ হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। মিষ্টি আলু প্রতি হেক্টরে ২৯ টন ৭৫ কেজি ফলেছে। ওই হিসাবে ১১ হেক্টরে ৩২৭ টন ২৫ কেজি মিষ্টি আলু ফলন হয়েছে। যার মূল্য ৬ লাখ ৫৪ হাজার ৫০০ টাকা। চাষে খরচ হয়েছে ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৫০০ টাকা। কৃষকের ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। পানিকচু ও লতিকচু হেক্টরে ৪২ টন ২৫ কেজি ফলন হয়েছে। ৯২ হেক্টরে ৩ হাজার ৮৮৭ টন কচু উৎপাদন হয়েছে। বিক্রি হয়েছে ১০ লাখ ৫৬ হাজার ২০০ টাকা। উৎপাদনে ব্যয় হয়েছে ৮ লাখ ৫৬ হাজার ২০০ টাকা। লাভ হয়েছে ২ লাখ টাকা। ওলকচু প্রতি হেক্টরে ৩৫ টন ২ কেজি ফলন হয়েছে। ২ হেক্টরে ওলকচু ফলেছে ৭০ টন ৪০ কেজি। ১ হেক্টরে উৎপাদিত ওলকচু বিক্রি হয়েছে ১১ লাখ ২৬ হাজার ৪০০ টাকা। খরচ হয়েছে ৯ লাখ ১৬ হাজার ৪০০ টাকা। কৃষক লাভ করেছেন ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। মুখিকচু হেক্টরে ২২ টন ফলন হয়েছে। ৮ হেক্টরে কচু ফলেছে ১৭৬ টন। প্রতি হেক্টর চাষে ব্যয় হয়েছে ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা। বিক্রি হয়েছে ৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা। খরচ বাদে লাভ হয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। গাছ আলু প্রতি হেক্টরে ফলন হয়েছে ২০ টন। ৩ হেক্টরে ৬০ টন ফলন হয়েছে। ১ হেক্টরে উৎপাদিত আলু ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। এতে লাভ হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
সদর উপজেলার গোবরা গ্রামের কৃষক আব্দুল হাকিম বলেন, ‘কন্দাল জাতীয় ফসল আবাদে সার ও কীটনাশকের ব্যবহার খুবই কম। যেকোনো ফসলের তুলনায় কন্দাল ফসল চাষে বেশি লাভ হয়।’
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাফরোজ আক্তার বলেন, ‘কন্দাল জাতীয় ফসলে প্রচুর পরিমাণ খনিজ ও ভিটামিন উপাদান রয়েছে। এসব চাষে কোনো কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। কন্দাল ফসল মানবদেহের জন্য নিরাপদ। এতে উৎপাদন খরচ কম, কিন্তু লাভ বেশি হয়। এ কারণে প্রতিবছর সদর উপজেলায় এ জাতীয় ফসলের আবাদ বাড়ছে। এতে কৃষক অনেক টাকা আয় করছেন।’