কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে গত ১৮ জুলাই ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২৩ জুলাই রাতে সীমিত পরিসরে চালু হলেও ধীরগতির হওয়ায় সিলেটের অনলাইনভিত্তিক ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েন। ব্যবসায়ীরা তাদের পেজে প্রবেশ করতে পারছেন না, ফলে অর্ডার নিতে ও পণ্য বিতরণ করতে সমস্যা হচ্ছে।
সিলেট বিভাগে হাজার হাজার অনলাইন উদ্যোক্তা, যাদের মধ্যে অর্ধেক নারী।
অনলাইনভিত্তিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ‘গ্ল্যামডাস্ট’ এর পরিচালক আমিনা খুশি। তিনি গত ১৮ জুলাই সন্ধ্যায় একটি ড্রেসের অর্ডার নিয়েছিলেন।
এরপর রবিবার (২৮ জুলাই) পর্যন্ত কোনো অর্ডার নিতে পারেননি তিনি। কারণ ১৮ জুলাই রাত থেকে ইন্টারনেট বন্ধ থাকা ও গত দুদিন ধরে ধীরগতির ইন্টারনেটের কারণে তার ব্যবসায়িক পেজে তিনি প্রবেশ করতে পারছেন না।
আমিনা খুশি খবরের কাগজকে বলেন, ‘আন্দোলনের কারণে ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় কোনো অর্ডার নিতে পারছি না। দুদিন হলো নেট সংযোগ আসলেও ধীরগতি হওয়ায় পেজে ঢুকতে পারছি না, অর্ডার নেব কীভাবে। তার ওপর যারা পণ্য নেওয়ার জন্য আগে অর্ডার করে টাকা অ্যাডভান্স করেছিলেন তাদের পণ্যও দিতে পারছি না। কারণ বাইরের কোনো সেলারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। আমরা যারা অনলাইনকেন্দ্রিক ব্যবসা করি, তারা অনলাইনে যোগাযোগ করেন। তাই সব যোগাযোগ এখন বন্ধ। এমন পরিস্থিতি করোনার সময়ও ছিল না। কারফিউ থাকলেও যদি অন্তত ইন্টারনেট সংযোগ স্বাভাবিক থাকত তাহলে আমাদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হতো না।’
একই অবস্থা সিলেট নগরীর নয়াসড়ক এলাকার আমিনা শরিফ রুম্পার। ‘আমিনাস ফেন্সি কেক বুক’ নামে একটি ফেসবুক পেজের মাধ্যমে তিনি ব্যবসা পরিচালনা করেন। আমিনা শরিফ রুম্পা খবরের কাগজকে বলেন, ‘সর্বশেষ অর্ডার নিয়েছিলাম, গত ১৮ জুলাই সিলেট উইমেনস জার্নালিস্ট ক্লাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক ডেলিভারির পর আর পেজে ঢুকতে পারিনি। এরপর আগের অর্ডার করা দুটি কেক কারফিউর মধ্যে ডেলিভারি দিয়েছি। কারণ তারা আগেই অ্যাডভান্স দিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে ডেলিভারিম্যানরাও কাজ করতে ভয় পান। তাই যারা ফেসবুক পেজে না পেয়ে মোবাইল ফোনে কেকের অর্ডার দিচ্ছেন তাদেরও অর্ডার রাখতে পারছি না।’
কায়নাত বিডি ফেসবুক গ্রুপ থেকে নারীদের বিভিন্ন দেশি ও বিদেশি পণ্য যেমন- শাড়ি, গহনা, প্রসাধনী ও সালোয়ার-কামিজ বিক্রি করেন শেখ আফসানা রিয়া। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় আট দিন ধরে কোনো পণ্য বিক্রি করতে পারেননি রিয়া। শেখ আফসানা রিয়া খবরের কাগজকে বলেন, ‘নেট বন্ধ থাকায় আমার ব্যবসাও বন্ধ। কারণ ফেসবুক পেজের মাধ্যমে আমি আমার পণ্য বিক্রি করি। গত ১৮ জুলাই থেকে নেট বন্ধ। দুদিন হলো যে নেট দেওয়া হয়েছে, তাতে কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রবেশ করা যায় না। তাই কিছু করতে পারছি না। আমরা মূলত ফেসবুক পেজ, ওয়েবসাইট, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করি। তাই নেট সংযোগ না থাকায় আমরা অনলাইন ব্যবসায়ীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এভাবে যদি দীর্ঘদিন নেট স্লো ও বন্ধ রাখা হয় তাহলে ব্যবসা স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে।
দ্য সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি তাহমিন আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, সহজলভ্য ইন্টারনেটের কারণে কয়েক বছর ধরে সারা দেশের মতো সিলেটও অনলাইনভিত্তিক ই-কমার্স ব্যবসার একটি বিশাল বাজার গড়ে উঠেছে। অনলাইনভিত্তিক ব্যবসার সফলতার কারণে অন্যান্য সব ধরনের ব্যবসায়ীরও এখন তাদের প্রতিষ্ঠানে পণ্য বিক্রির পাশাপাশি অনলাইনেও পণ্য বিক্রি করেন। এই আন্দোলনের কারণে সিলেট বিভাগেই ট্রেডেই প্রায় শতকোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সবকিছু স্বাভাবিক হওয়া প্রয়োজন।