
জুলাই মাসে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে ১৯০ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। গত বছরের জুলাইয়ে প্রবাসীরা পাঠিয়েছিলেন ১৯৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার। সে হিসাবে এ বছর জুলাইয়ে ৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার বা ৩ দশমিক ২৪ শতাংশ কম রেমিট্যান্স এসেছে।
এ বছর জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতা প্রতিরোধে সরকারের দেওয়া সাধারণ ছুটি ও কারফিউ কার্যকর থাকায় ২১ থেকে ২৭ তারিখ পর্যন্ত সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহে এক ধরনের স্থবিরতা ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ওই ৭ দিনে রেমিট্যান্স আসে মাত্র ১৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার। তবে ২৮ থেকে ৩১ জুলাই এ চার দিনে রেমিট্যান্স আসে ৩৪ কোটি ২০ লাখ ডলার। অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন রেমিট্যান্স এসেছে সাড়ে ৮ কোটি ডলার। এর মধ্যে ৩১ জুলাই ১ দিনেই রেমিট্যান্স এসেছে ১২ কোটি ডলার।
মধ্য জুলাই থেকে ঢাকাসহ দেশব্যাপী শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলন একপর্যায়ে সহিংসতায় রূপ নিলে তা প্রতিরোধে সরকারের দেওয়া সাধারণ ছুটি ও কারফিউতে ৭ দিন রেমিট্যান্স প্রবাহ প্রায় বন্ধ ছিল। এ ছাড়া কোটা আন্দোলনের সমর্থনে মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রবাসীদের একটি পক্ষ থেকে রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ করার মাধ্যমে সরকারকে অসহযোগিতার আহ্বান জানানো হয়। এতেও রেমিট্যান্সের স্বাভাবিক প্রবাহে ভাটা পড়ে।
এদিকে, পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে সহিংসতা সৃষ্টিকারীদের কথায় কান না দিয়ে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সরকারের পক্ষ থেকে রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রবাসীদের প্রতি জোর আহ্বান জানানো হয়।
রেমিট্যান্স বা বৈদেশিক মুদ্রায় প্রবাসীদের আয় দেশে ডলারের বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে বড় ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখতেও রেমিট্যান্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
দুই বছর ধরেই বাংলাদেশ ডলার সংকটে ভুগছিল। এ সংকট নিরসনে নানা পদক্ষেপ নিয়েও কাজ না হলে সর্বশেষ গত মে মাসের প্রথমদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দর নির্ধারণ করতে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু করলে ওই মাসেই প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বৃদ্ধি পায়।
ক্রলিং পেগ পদ্ধতির সূচনা করার মাধ্যমে ডলারের দর বাজারমুখী করতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি ডলারে তখনকার বিনিময় মূল্য ১১০ টাকা থেকে ৭ টাকা বাড়িয়ে দেয়। দর বৃদ্ধির ফলে প্রবাসীরা রেমিট্যান্সের প্রতি ডলারের দর পাচ্ছেন ১১৭ টাকার সঙ্গে বাড়তি আড়াই শতাংশ নগদ প্রণোদনা। এতে ব্যাংকিং ও এক্সচেঞ্জ হাউসের মাধ্যমে পাঠানো প্রতি ডলারের দর পড়ছে ১২০ টাকার মতো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে (২০২৩-২৪) রেমিট্যান্স আসে ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। আগের দুই অর্থবছরে (২০২২-২৩ এবং ২০২১-২২) দেশে রেমিট্যান্স আসে যথাক্রমে ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন এবং ২১ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ডলার।