ঢাকা ২৫ ভাদ্র ১৪৩১, সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ইসলামী ব্যাংক দখলে নিতে মরিয়া একটি গোষ্ঠী

প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২৪, ০৯:০১ পিএম
ইসলামী ব্যাংক দখলে নিতে মরিয়া একটি গোষ্ঠী
ইসলামী ব্যাংক

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর একটি গোষ্ঠী বারবার ইসলামী ব্যাংক দখলে নিতে হামলা চালিয়েছে। চলতি মাসের ৬ থেকে ১১ তারিখ পর্যন্ত পাঁচ দিনে তিনবার মতিঝিলের দিলকুশায় ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে সশস্ত্র লোকজন ঘেরাও, হামলা ও গুলির মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও উপস্থিত নিরাপত্তারক্ষীরা মিলে প্রতিবারই এসব হামলা ঠেকিয়েছেন। 

সোমবার (১২ আগস্ট) দেশের অন্যতম বৃহৎ এ ব্যাংকটির শেয়ারহোল্ডার ও কোটি কোটি গ্রাহকের স্বার্থে নিরাপত্তা ও স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সেনাসদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ব্যাংকটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. মুনিরুল মাওলা এ অবস্থায় নিজ দপ্তরে যেতে পারছেন না। ব্যাংকটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চরম আতঙ্কে রয়েছেন।

এদিকে ব্যাংক দখলে নিতে বিক্ষোভ, হামলা ও ভাঙচুরের মতো ঘটনাগুলোকে গতকাল রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংক শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপ হিসেবে আখ্যায়িত করে একে শাস্তিযোগ্য অপরাধ ঘোষণা করে বিবৃতি দিয়েছে। 

ব্যাংক এমডিদের পাঠানো এক নির্দেশে বলা হয়, ব্যাংক-কোম্পানিতে শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকতে হবে। 

এতে আরও বলা হয়, মালিকানা সম্পর্কিত বিরোধ নিষ্পত্তিতে আইনি প্রক্রিয়া ও নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থা রয়েছে। গণমাধ্যমে পাঠানো একটি কপিতে ‘জাতীয় স্বার্থে এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরির’ অনুরোধও করা হয়েছে।

১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠা হয় ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। ১৯৮৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এ দীর্ঘ সময়ে ব্যাংকটিতে একটি গোষ্ঠী একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তার করেছিল। ২০১৩ সালের ২২ মে ব্যাংকটির পর্ষদ সভায় আবু নাসের আবদুজ জাহের তিন বছরের জন্য চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১৫ সালের ১৩ জুন ব্যাংকটির পর্ষদ সভায় মুস্তাফা আনোয়ারকে তিন বছরের জন্য চেয়ারম্যান করা হয়। এরই মধ্যে ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠাকালীন উদ্যোক্তা বাহরাইন ইসলামিক ব্যাংক তাদের সব শেয়ার বিক্রি করে চলে যায়। ২০১৫ সালে আরেক উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান দুবাই ইসলামিক ব্যাংকও সব শেয়ার বিক্রি করে দেয়। একই সময়ে উদ্যোক্তা পরিচালক ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (আইডিবি) ৮ কোটি ৬৯ লাখ শেয়ার বিক্রি করে দেয়। কুয়েতের সরকারি ব্যাংক কুয়েত ফাইন্যান্স হাউসও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে সব শেয়ার বিক্রি করে। 

২০১৬ সালের ২ জুন ব্যাংকটির ৩৩তম বার্ষিক সাধারণ সভায় নতুন শেয়ারহোল্ডার পরিচালক ও স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের সিদ্ধান্ত হলে মুস্তাফা আনোয়ার ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে যান। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আবদুল মান্নান পদত্যাগ করেন। ওই সময় কমার্স ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আরাস্তু খানকে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। এমডির দায়িত্ব পান ইউনিয়ন ব্যাংকের এমডি আবদুল হামিদ মিঞা। 

এই পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ইতোমধ্যে সিংহভাগ শেয়ারের মালিকানা সূত্রে চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ ২০১৭ সালে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেয়। নিত্যপণ্য থেকে শুরু করে আমদানি-রপ্তানি ট্রেড ও ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে বছরে আড়াই লাখ কোটি টাকার টার্নওভার রয়েছে এই ব্যবসায়ী গ্রুপটির। কয়েক যুগের পুরোনো এ ব্যবসায়ী গ্রুপের আর্থিক লেনদেন হয় দেশের ১৫টি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে। এ গ্রুপের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ২০২০ সালে এমডি হিসেবে মো. মুনিরুল মাওলা দায়িত্ব নেন। তার পর থেকে ব্যাংকটি অব্যাহত অগ্রগতি অর্জন করে আসছে। সর্বোচ্চ পরিমাণ রেমিট্যান্স আহরণ, ঋণ বিতরণ ও আমানত সংগ্রহ করে ইসলামী ব্যাংক এখন দেশের শীর্ষ বাণিজ্যিক ব্যাংক। ২০২৩ সালে ব্যাংকটি মোট আমানত পেয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা। আর একই বছর ঋণ বিতরণ করেছে মোট ১ লাখ ৪১ হাজার ৩৫ কোটি টাকা। ২০২৩ সাল শেষে ঋণ বিতরণ ও আমানত প্রাপ্তি- এ দুই ক্ষেত্রেই ইসলামী ব্যাংক দেশের শীর্ষস্থানে থাকা সোনালী ব্যাংককে পেছনে ফেলে শীর্ষস্থান দখল করে। 

রেমিট্যান্স সংগ্রহে আগে থেকেই ইসলামী ব্যাংক শীর্ষস্থানে ছিল। প্রতি মাসেই ব্যাংকটি ৫০০ মিলিয়ন বা ৫০ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পেয়ে থাকে। বছর শেষে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬ বিলিয়নের মতো। এ পরিমাণ রেমিট্যান্স অন্য কোনো ব্যাংক আনতে পারেনি। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকের শাখা ছিল ৩৯৪টি। দেশের বাইরে বিশ্বের দেশে দেশে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নেটওয়ার্ক রয়েছে এ ব্যাংকটির।

ব্যাংকটির কর্মকর্তাদের অনেকের অভিযোগ, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত পরিবর্তনের ডাক দেওয়ার সুযোগ নিতে চায় একটি গোষ্ঠী। এককভাবে দেশের অর্থনীতিতে নজিরবিহীন অবদান রাখা সমৃদ্ধ এই ইসলামী ব্যাংক আবারও নিজেদের কব্জায় নিয়ে ব্যাংকবহির্ভূত উদ্দশ্যে এ ব্যাংকের অর্থ ব্যবহারের পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলেও তারা অভিযোগ করেন।

এডিবি ৪০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা দেবে : অর্থ উপদেষ্টা

প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০৫ পিএম
এডিবি ৪০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা দেবে : অর্থ উপদেষ্টা
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। ফাইল ছবি

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে ৪০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়া যাবে। বাজেট সহায়তা হিসেবে এই টাকা বাংলাদেশকে দিতে পারে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নিজ দপ্তরে এডিবি ও জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (জাইকা) প্রতিনিধিদল এবং ঢাকায় নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনারের (ভারপ্রাপ্ত) সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের কাছে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

এক প্রশ্নের উত্তরে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ফান্ড দেওয়ার বিষয়ে এডিবি, জাইকা ও অস্ট্রেলিয়া ইতিবাচক। এডিবির বাজেট সাপোর্ট আসবে। ডিসেম্বরের মধ্যে এডিবি ৪০ কোটি ডলার দিতে পারে।’ 

তিনি বলেন, ‘আইএমএফের চলমান ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ কর্মসূচির বাইরে আমরা অতিরিক্ত আরও ৩ বিলিয়ন ডলার চেয়েছি। তারা (আইএমএফ) এ প্রস্তাব পর্যালোচনা করে দেখছে।’

ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ‘জাইকা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার। আমাদের অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে তাদের অর্থায়ন রয়েছে। ভৌত অবকাঠামো খাতে দেওয়া ঋণ অব্যাহত রাখতে বলেছি। জাইকা বলেছে এটা তারা করবে। এ ছাড়া আরও দুটি বিষয়ে কথা বলেছি। একটি হলো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং অপরটি টেকনিক্যাল বা কারিগরি সহায়তা। এতে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেছে জাইকা।’

বৈদেশিক ঋণের প্রবাহ কমে গেছে কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘বৈদেশিক ঋণের প্রবাহ ঠিক আছে। একেবারে কমেনি। কিন্তু ব্যবহার নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে।’

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বৈঠকে যারা এসেছিলেন, তারা তিনজনই আমাদের উন্নয়ন সহযোগী। আমরা সবার সাথে আলাপ করেছি। এতদিন তাদের যে চলমান সহায়তা ছিল, সেটা আরও জোরদার করতে বলেছি।’

তিনি বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়াও আমাদের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার। কারণ, তারা যে সহায়তা করে সেটা সরাসরি প্রভাব ফেলে। অস্ট্রেলিয়া অনেক বড় দেশ। তারা আঞ্চলিক বাণিজ্যবিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরা বলেছি, বাংলাদেশের আঞ্চলিক বাণিজ্য খুব সীমিত দেশের সঙ্গে। অস্ট্রেলিয়া যদি এখানে আসে, আমরা আসিয়ানের অন্তর্ভুক্ত হতে পারব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আঞ্চলিক বাণিজ্য বেশি প্রয়োজন। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আমাদের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ আছে। তারা এনার্জি, কৃষি খাতে বিনিয়োগ করতে চায়।’

উপদেষ্টা বলেন, ‘বৈঠকে এডিবি, জাইকা ও অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিরা বলেছেন, উন্নয়ন সহযোগিতায় তারা সব সময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে।’

আগস্টে মূল্যস্ফীতি কমল

প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৫২ পিএম
আগস্টে মূল্যস্ফীতি কমল
আগস্ট মাসে কমেছে মূল্যস্ফীতি। ছবি : সংগৃহীত

গত আগস্ট মাসে দেশের মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা কমলেও তা ডাবল ডিজিটের ওপরেই ছিল। আগস্টে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। তার আগে জুলাই মাসে দেশে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ, গত বছরের আগস্টে যা ছিল ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। শহরের মতো গ্রামাঞ্চলেও কমেছে মূল্যস্ফীতি। 

রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হালনাগাদ প্রতিবেদন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। 

বিবিএসের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আগস্ট মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমলেও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়েছে। গত মাসে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ দশমিক ৩৬ ও খাদ্যবহির্ভূত খাতে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ। তার আগে জুলাইয়ে ছিল যথাক্রমে ১৪ দশমিক ১০ ও ৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ। ২০২৩ সালের আগস্টে ছিল যথাক্রমে ১২ দশমিক ৫৪ ও ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, শহরের মতো গত মাসে গ্রামাঞ্চলেও মূল্যস্ফীতি কমেছে। আগস্টে গ্রামাঞ্চলে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ দশমিক ৯৫ শতাংশ। তার আগের মাসে ছিল ১১ দশমিক ৮৯ শতাংশ। গত বছরের আগস্টে ছিল ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। অন্যদিকে গত মাসে শহরে মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ শতাংশের ওপর। তার আগের মাসে ছিল ১১ দশমিক ২৭ শতাংশ। ২০২৩ সালের আগস্টে ছিল ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৩ বছর ৪ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল। এর আগে সর্বশেষ সর্বোচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ২০১১ সালের এপ্রিলে। সে সময় ছিল ১৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এরপর আর কখনো খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ শতাংশে ওঠেনি। 

কয়েক বছর ধরে বিবিএসের মূল্যস্ফীতির তথ্য নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে আসছিলেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, সরকারি পরিসংখ্যানে মূল্যস্ফীতির যে হিসাব দেওয়া হচ্ছে, বাস্তবে সেটি আরও বেশি। সরকার মূল্যস্ফীতি কমিয়ে দেখাচ্ছে। কিন্তু আগস্টে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে গেলে মূল্যস্ফীতির পরিমাণ বাড়ে। অনেকে বলছেন, এখন মূল্যস্ফীতির কোনো তথ্য টেম্পারিং করা হয় না। এটা বেশি হলেও সঠিক তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে।

এস আলম গ্রুপের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়নি, অপপ্রচার করা হচ্ছে: গভর্নর

প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৩ পিএম
আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৭ পিএম
এস আলম গ্রুপের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়নি, অপপ্রচার করা হচ্ছে: গভর্নর
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘বেক্সিমকো বা এস আলম গ্রুপ শুধু নয়; কোনো প্রতিষ্ঠানেরই ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ (জব্দ) করা হয়নি। এর উদ্দেশ্য দুটি। এক. বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ভ্যালু নষ্ট করতে চায় না। দুই. ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত কর্মসংস্থান, বেতন-ভাতা তথা জীবিকা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কোনো ক্ষতি বাংলাদেশ ব্যাংক করবে না।’ 

গভর্নর বলেন, ‘গণমাধ্যমে এসব নিয়ে অপপ্রচার বা অভিসন্ধিমূলক সংবাদ প্রচার হচ্ছে, যা একেবারেই অপ্রত্যাশিত।’ 

রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বিষয়টি পরিষ্কার করতেই এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে।’ 

তিনি বলেন, ‘যেকোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানই হোক না কেন, তা নিজস্ব নিয়মে যথারীতি চলবে। অপপ্রচার করা হলে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, আতঙ্ক ছড়ায়। এ বিষয়ে গভর্নর গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করেন।’

গভর্নর আরও বলেন, ‘আগামীতেও কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হবে না। কোনো ব্যাংক অতি উৎসাহিত হয়ে কোনো প্রতিষ্ঠানের হিসাব জব্দ করে থাকতে পারে। কিন্তু এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা নয়।’ 

এক প্রশ্নের উত্তরে গভর্নর বলেন, ‘দেশের ৯-১০টি ব্যাংক আর্থিকভাবে অতি দুর্বল বা প্রায় দেউলিয়া অবস্থায় আছে। আমরা চাই না কোনো ব্যাংক বন্ধ হোক। আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে দেউলিয়া পর্যায়ে থাকা ব্যাংকগুলো যেন ঘুরে দাঁড়াতে পারে। আমরা সেই চেষ্টাই করব। এসব ব্যাংক টেকনিক্যাল, অ্যাডভাইজরি ও লিকিউডিটি সুবিধা পাবে।’ 

তিনি বলেন, ‘দুর্বল ব্যাংকগুলো সম্পর্কে এখন প্রতিদিন খোঁজ রাখা হচ্ছে। এসব ব্যাংকের প্রতিবেদন ডেইলি-বেসিস এ পর্যালোচনা করা হচ্ছে। ব্যাংকগুলোর কোথায় সমস্যা, অসুবিধা সব দেখা হচ্ছে এবং প্রতিদিনই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

গভর্নর বলেন, ‘গ্রাহকদের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। ব্যাংক যে অবস্থাতেই থাকুক গ্রাহকদের কোনো ক্ষতি হবে না। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক আমানত সুরক্ষা বিমার পরিমাণ ১ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ টাকা করেছে। দেশের ব্যাংকগুলোতে আমানতকারী গ্রাহকদের ৯৯ দশমিক ৬০ শতাংশের স্বার্থ আমানত সুরক্ষা বিমার মাধ্যমে সুরক্ষা করা আছে। অর্থাৎ ২ লাখ টাকার মধ্যে যাদের অমানত রয়েছে তারা আমানতের পুরো টাকা ফেরত পাবেন। কিন্তু যাদের আমানত ২ লাখ টাকার বেশি আছে তারা পুরো টাকা পাবেন না। নির্ধারিত সীমার ওই ২ লাখই পাবেন।’ 

গভর্নর আরও বলেন, ‘কোনো দেশই ব্যাংকিং খাতের আমানতের ১০০ ভাগ গ্যারান্টি দেয় না। আমরাও ৯৯ শতাংশের বেশি গ্যারান্টি দিচ্ছি। আমাদের অর্জন যদি ৯৫ শতাংশও হয় এটা আমাদের স্বার্থকতা হবে।’

এক্সিম ব্যাংককে টাকা ছাপিয়ে তারল্য সহায়তা দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন করা হলে গভর্নর বলেন, ‘ব্যাংকের প্রয়োজনে অর্থ সহায়তা দিয়ে ব্যাংকটিকে টিকিয়ে রাখা কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরই দায়িত্ব। ব্যাংক টিকে থাকলে ব্যবসা করতে পারবে এবং ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।’ 

গভর্নর বলেন, ‘বিগত সরকারের সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহীত পলিসিগুলো পর্যালোচনা করা হবে। কোনো পলিসি বিশেষ কোনো গোষ্ঠীকে দেওয়ার জন্য করা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে।’ 

তিনি বলেন, ‘আগামী ১০ দিনের মধ্যে ব্যাংক খাতের টাস্কফোর্স গঠন করে কাজ শুরু করতে পারব বলে আশা করছি। এ লক্ষ্যে, কাজ হচ্ছে। এডিবি, বিশ্বব্যাংক আমাদের সহায়তা দেবে। আশা করছি ব্যাংক খাতের জন্য আমরা ভালো কিছু করতে পারব।’

গভর্নর বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ২৫ হাজার কোটি টাকার ফান্ড রয়েছে। এই ফান্ড দীর্ঘদিন হলো অব্যবহৃত আছে। মূলত, ঋণ বিতরণে জটিল প্রক্রিয়া বা শর্তাবলির কারণে এটি হচ্ছে। কারণগুলো ব্যাংককে লিখিত আকারে দিতে বলা হয়েছে, তা সমাধান করে এসএমই খাতে ঋণ বিতরণে গতি আনা হবে। এতে একদিকে ব্যাংকগুলো উপকৃত হবে, অন্যদিকে এসএমই খাতের উদ্যোক্তারা তারল্য সহায়তা পাবেন। অর্থনীতিতেও উৎপাদন কার্যক্রম বাড়বে।’ 

তিনি বলেন, ‘আগে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে প্রতি মাসে এক দশমিক এক বিলিয়ন ডলার কমত। এখন সেটা কমছে না, বরং বাড়ছে। প্রবাসী আয় বেশি আসা ও ব্যাংকগুলোতে তারল্য বৃদ্ধির ফলে রিজার্ভের এই উন্নতি হচ্ছে।’

স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে রাসায়নিক সার

প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:১৫ এএম
স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে রাসায়নিক সার
রাজশাহীতে ফসলি জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করছেন এক কৃষক। ছবি: খবরের কাগজ

রাজশাহীতে ফসলি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে নষ্ট হচ্ছে ফসলের পুষ্টিগুণ, কমে যাচ্ছে মাটির উর্বরতা এবং পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। চিকিৎসকরা জানান, এসব ফসলের খাবার গ্রহণের ফলে ক্যানসারসহ মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে। তার পরও নানা সীমাবদ্ধতার কারণে এসব সমস্যা বন্ধ হচ্ছে না।

কৃষি তথ্যসেবা প্রকাশিত কৃষি ডায়েরির হিসাব অনুযায়ী, দেশে মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ৮৮ লাখ ১৭ হাজার ৯৩৫ হেক্টর। এসব জমিতে ২০২২-২৩ মৌসুমে রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়েছে ৬৪ লাখ টনেরও বেশি এবং কীটনাশক ব্যবহার করা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৮৩ টন।
সরেজমিনে রাজশাহীর পবা, তানোর, গোদাগাড়ী, পুঠিয়া, বাগমারাসহ বিভিন্ন উপজেলায় গিয়ে দেখা গেছে, রোগবালাই দমন ও বাড়তি ফলন পেতে ফসলি জমিতে অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করছেন কৃষকরা।

পবা উপজেলার কর্ণহার এলাকার কৃষক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘তিনি তিন বিঘা জমিতে বেগুন ও মরিচ লাগিয়েছেন। চার দিন পরপর নিয়মিত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগের ফলে এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। কীটনাশক প্রয়োগ না করলে পোকা লেগে বেগুন বড় হবে না এবং ভালো হবে না। তাই বাধ্য হয়ে কীটনাশক ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়।’ বাগমারা এলাকার হাটগাঙ্গোপাড়া এলাকার কৃষক সবুজ হোসেন বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে গত বছর কীটনাশক প্রয়োগ না করায় বেগুনে পোকার আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। এবার শুরু থেকেই রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগের ফলে ভালো ফলন হয়েছে। বিঘাপ্রতি প্রায় এক মণ সার প্রয়োগ করা হয়েছে।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রোনমি অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার এক্সটেনশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এ কে এম পারভেজ বলেন, ‘মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে উপকারী অর্গানিজমগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া জমির উর্বরতা হারানোর সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশের বাস্তুসংস্থান ধ্বংস হচ্ছে এবং জীববৈচিত্র্যের অস্তিত্ব সংকটে পড়ছে।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মারুফ বলেন, ‘১৫-২০ বছর আগে যেসব জলাশয়ে প্রাকৃতিকভাবে বিভিন্ন ধরনের মাছ ও প্রাণীর উপস্থিতি দেখা যেত, সেগুলো এখন আস্তে আস্তে কমে গেছে। পানিতে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য প্রয়োগের ফলে এটি ঘটেছে। এ ছাড়া কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।’

অন্যদিকে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক প্রয়োগ করে উৎপাদিত এসব ফসল থেকে খাদ্য গ্রহণের ফলে ক্যানসারাক্রান্ত ও প্রজননক্ষমতা নষ্ট হওয়ার মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের উপপ্রধান চিকিৎসক ডা. এফ এম এ জাহিদ বলেন, “মাত্রাতিরিক্ত সার ও কীটনাশক প্রয়োগে পোকামাকড় রোধ করা গেলেও উৎপাদিত ফসল থেকে খাদ্যেও বিষক্রিয়া থেকে যায়। এতে ক্যানসারাক্রান্ত ও প্রজননক্ষমতা নষ্ট হওয়ার মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়। ফলে যে খামারি বা কৃষক ফসলে এসব প্রয়োগ করেন তাকে অবশ্যই জানান দিতে হবে ‘আমি কীটনাশকটা গতকাল বা আজ ব্যবহার করেছি।’ তাহলে ক্রেতা সচেতনভাবে সেটা ব্যবহার থেকে বিরত থাকবেন। এভাবে জনগণ স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে বাঁচতে পারবে।”

এ বিষয়ে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক উম্মে সালমা বলেন, ‘লোকবল সংকটসহ নানা সীমাবদ্ধতার কারণে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার বন্ধে পদক্ষেপ নিতে পারছে না কৃষি বিভাগ। তবে কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এতে আশা করছি, কৃষকরা সচেতন হলে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ আস্তে আস্তে কমবে।’

জানতে চাইলে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, ‘নিরাপদ ফসল উৎপাদনে সহযোগিতার জন্য কমিটি করা হয়েছে। ওই কমিটিগুলোকে কার্যকর করতে পারলে দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে। তবুও এ বিষয়ে কৃষকরা সচেতন না হলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

কুমিল্লায় ভয়াবহ বন্যায় মৎস্য খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:০৩ এএম
কুমিল্লায় ভয়াবহ বন্যায় মৎস্য খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
কুমিল্লায় ভয়াবহ বন্যায় ডুবে গেছে চাষের পুকুর। ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লায় চলমান ভয়াবহ বন্যায় মৎস্য খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটেছে। মাছ উৎপাদনে কুমিল্লা দেশের তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। এখানে নদ-নদী, পুকুর, দিঘি, জলাশয় ও প্লাবন ভূমিতে জেলার চাহিদার দ্বিগুণের বেশি মাছ উৎপাদন হয়। তবে এবারের বন্যায় মৎস্য উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে। 

প্রাথমিকভাবে মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে এ খাতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪০০ কোটি টাকা নিরূপণ করা হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ দ্বিগুণ হতে পারে বলে জানিয়েছেন মাছ চাষিরা। খবর বাসসের

জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় জানায়, চলমান বন্যায় মোট ২৩ হাজার ৪২টি খামার বা পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আয়তনে এসব খামার বা পুকুরের পরিমাণ ৫ হাজার ৮৩৫ দশমিক ৬১ হেক্টর। ক্ষতিগ্রস্ত এসব খামার থেকে ২৫ হাজার ৫৩৮ দশমিক ৫০ টন ফিন ফিশ, ১০ দশমিক ২৮ টন চিংড়ি এবং ১০ কোটি ১৭ লাখ পোনা মাছের ক্ষতি হয়েছে। বাজারমূল্যে মাছের ক্ষতির পরিমাণ ৩৫৮ কোটি ১২ লাখ টাকা, চিংড়িতে ৫ কোটি টাকা এবং পোনা জাতীয় মাছের ক্ষতি ১৭ কোটি ৮ লাখ ৯২ হাজার টাকা। এ ছাড়া পুকুর, খামার বা স্লুইস গেটের অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে ২২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং ৮০ লাখ টাকার জাল নষ্ট হয়েছে।

কার্যালয়টি আরও জানায়, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বরুড়া উপজেলা। এখানে ৯০৩ হেক্টর আয়তনের মোট ৩ হাজার ৭৪৯টি মাছের খামার বা পুকুর বিনষ্ট হয়েছে। এ ছাড়া ব্রাহ্মণপাড়া ১ হাজার ১০টি, বুড়িচংয়ে ১ হাজার ৮০০টি, নাঙ্গলকোটে ৩ হাজার ১৬২টি, লালমাইয়ে ২০৭টি, মনোহরগঞ্জে ২ হাজার ৩৫০টি, আদর্শ সদরে ২ হাজার ৪৫২টি, মুরাদনগরে ৮০০টি, চান্দিনায় ২০০টি, লাকসামে ২ হাজার ৫০০টি, তিতাসে ২২টি, দেবিদ্বারে ৪০০টি, চৌদ্দগ্রামে ১ হাজার ৮৪০টি এবং সদর দক্ষিণে ৬৬০টি মাছের পুকুর তলিয়ে গেছে।

এ ছাড়া ১৫টি মৎস্যবীজ খামারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার আয়তন ২ দশমিক ৬৯ হেক্টর। এসব খামারে ক্ষতির পরিমাণ ৬২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। কুমিল্লার বুড়িচং ভরাসার এলাকার এশিয়ান মৎস্য খামের স্বত্বাধিকারী সালাউদ্দিন জানান, তার মাছের প্রজেক্টে প্রায় ২৫০ মণ মাছ ছিল। বন্যার পানিতে মাছ চলে গেছে। পানি কমলে ক্ষতির সঠিক পরিমাণ জানা যাবে। তার দাবি, প্রায় ৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মৎস্য চাষি সোহেল মিয়া জানান, তার প্রজেক্টে প্রায় ৩০০ মণ মাছ ছিল। বন্যার পানিতে মাছ চলে যায় এবং প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বেলাল আহমেদ বাসসকে জানান, বন্যায় মৎস্য খাতে ক্ষতির একটি প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। বানের পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সঠিকভাবে নিরূপণ করা যাবে।

জেলা দুর্যোগ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আবেদ আলী জানান, পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিদিনই ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ফুটে উঠছে। প্রতিটি উপজেলাভিত্তিক আলাদা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে কুমিল্লার ১৭টি উপজেলার মধ্যে ১৪টি উপজেলা বন্যা আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, দেবিদ্বার, লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, নাঙ্গলকোট ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলা। এসব উপজেলার মৎস্য খাতে ক্ষয়ক্ষতি সবচেয়ে বেশি হয়েছে।