ঢাকা ২৯ আষাঢ় ১৪৩২, রোববার, ১৩ জুলাই ২০২৫
English

এনবিআরের আমূল সংস্কার দাবি ব্যবসায়ীদের

প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২৪, ০১:২১ পিএম
এনবিআরের আমূল সংস্কার দাবি ব্যবসায়ীদের
ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আমূল সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে হয়রানি ও অত্যাচার বন্ধে এনবিআর কর্মকর্তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার কথা বলেন তারা। জাতীয় রপ্তানির ধারা অব্যাহত রাখতে রপ্তানিমুখী বাণিজ্যিক সংগঠনের মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ী নেতারা এসব কথা বলেন।

রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে সোমবার (১২ আগস্ট) এই সভার আয়োজন করে পোশাক খাতের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও মোড়ক পণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএপিএমইএ)।

সভায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন, ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হওয়ার পেছনে এনবিআর চেয়ারম্যানের দায় আছে। এ ছাড়া এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়া পিছিয়ে দেওয়ার দাবি করেন তারা।

সভায় বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহসভাপতি আব্দুল্লাহ হিল রাকিব, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি ও থাই চেম্বারের সভাপতি শামস মাহমুদ, বাংলাদেশ সুইং থ্রেড ম্যানুফ্যাকচার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবুল কাসেম হায়দার, বিজিএপিএমইএর সাবেক সভাপতি হাফেজ আলম চৌধুরী প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন বিজিএপিএমইএর সভাপতি মো. শাহরিয়ার।

সভায় বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, জবাবদিহি ও স্বচ্ছতার জন্য গণতন্ত্র আবশ্যক। কেউ দেশের জন্য সম্পদ সৃষ্টি না করেই সম্পদ অর্জন করলে সেটি হবে অবৈধ এবং দুর্নীতি। এ সময় তিনি দলীয় তথা রাজনৈতিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে ব্যবসায়িক স্বার্থে একতাবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ব্যবসায়িক স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে সরকারের সব সিদ্ধান্তকে সমর্থন করার মানসিকতা থাকা উচিত নয়।

দেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে এই ব্যবসায়িক নেতা বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনারা একটি জনপ্রতিনিধিত্বশীল ও গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের সুযোগ করে দেবেন। এ জন্য বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার দাবি জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে বিজিএমইএর সহসভাপতি আবদুল্লাহ-হিল-রাকিব ওয়্যারহাউস থেকে মালামাল নিরাপদে স্থানান্তর করার, রুগ্ন ও ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বৈদ্যুতিক সংযোগ ৬ মাস পর্যন্ত না কেটে প্রতিষ্ঠানটিকে ব্যবসায় ফিরে আসার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান। তা ছাড়া সরকারি পরিসংখ্যানগত তথ্য সঠিক ছিল না বিধায় এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের সময় পেছানোর, এনবিআর ঢেলে সাজানো, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকের মাধ্যমে শিল্পনীতি প্রণয়ন, দুই মাসের জন্য সফট লোনের ব্যবস্থা করা, বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্লকড্ ব্যবসা পলিসি পরিবর্তন করে ব্যবসাসহায়ক পলিসি করার দাবি জানান তিনি।

মতবিনিময় সভার উদ্যোক্তা ও বিজিএপিএমইএর সভাপতি মো. শাহরিয়ার এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের সময়সীমা ২০৩২ পর্যন্ত বাড়ানো এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল রাখার দাবি জানান। এ ছাড়া রপ্তানিমুখী বাণিজ্যিক সংগঠনগুলোর সব দাবি-দাওয়া একীভূত করে একত্রে সরকারের নিকট দাবি জানানোর জন্য সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক সংগঠনের সমন্বয়ে একটি কমন প্ল্যাটফর্ম/কো-অর্ডিনেশন কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন।

সবশেষে অনুষ্ঠানের সঞ্চালক বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম দেশের রপ্তানির তথ্য যথাযথ নয় প্রমাণিত হওয়ায় এলডিসিতে উত্তরণ আপাতত স্থগিত রাখার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের নিকট দাবি জানান। বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতীয় রপ্তানি ধারা অব্যাহত রাখতে রপ্তানিকারী সংগঠনগুলো একত্রে সভার মাধ্যমে করণীয় সম্পর্কে একটি রূপরেখা প্রণয়ন, গ্যাসের বর্ধিত ধার্যমূল্য বাতিলপূর্বক আন্তর্জাতিক মূল্য পর্যালোচনা করে শিল্প খাতের জন্য গ্যাসের মূল্য পুনরায় নির্ধারণ, পলিসি প্রণয়ন এবং রাজস্ব আহরণ পৃথক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করার লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সংস্কারের দাবি জানান। সেই সঙ্গে তিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ক্ষতিগ্রস্ত সব শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রয়োজনে সরেজমিনে পরিদর্শন করে আর্থিক ও নীতিগত সহায়তা দেওয়া এবং কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সেবা সহজ ও হয়রানিমুক্ত পাওয়ার জন্য করণীয় নির্ধারণের প্রস্তাব দেন।

বন্ধের দিনেও খোলার সুফল মেলেনি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৫, ০৯:৩২ এএম
আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৫, ০৯:৪৯ এএম
বন্ধের দিনেও খোলার সুফল মেলেনি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে
বন্ধের দিনেও খোলার সুফল মেলেনি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে।

দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সচল রাখতে সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও দেশের অন্যান্য কাস্টম হাউস খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কিন্তু এর সুফল মেলেনি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে। আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত কার্যক্রম স্বাভাবিক নিয়মে চলবে বলে জানিয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কিন্তু গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের বিশেষায়িত সফটওয়্যার অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমের আপডেট দেওয়ায় শুল্কায়নের কাজ হয়নি দেশের বৃহত্তর এ স্টেশনে। ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়াডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্টরা কাস্টম হাউসে এলেও কম্পিউটারে কাজের অগ্রগতি করতে পারেনি কর্মকর্তারা।  

এর আগে গত বুধবার ১০ জুলাই এনবিআরের কাস্টমস নীতি শাখার প্রথম সচিব মু. রইচ উদ্দিন খান স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় বলা হয়, কাস্টম হাউসের বিশেষায়িত সফটওয়্যার অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমের ধীরগতির কারণে সম্প্রতি পণ্যচালান ছাড়প্রক্রিয়া কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ অবস্থায় দেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে কোনো ধরনের বিঘ্ন না ঘটাতে সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও কার্যক্রম চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে শুক্রবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের গিয়ে ফেরত আসতে হয়েছে ব্যবসায়ীদের। কাস্টম হাউসের বিশেষায়িত সফটওয়্যার অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে কাজ করতে না পারায় শুল্কায়ন হয়নি। মূলত যে কারণে কাস্টম হাউস খোলার কথা বলা হয়েছে, সেই সমস্যা থেকে যাওয়ায় শুল্কায়ন করতে পারেননি কর্মকর্তারা। 

শুক্রবার দেখা যায়, সরকারি ছুটির দিনে কাস্টম হাউস চালু থাকলেও ব্যাংক, কাস্টমসের সেবা পুরোপুরি চালু ছিল না। শিল্পকারখানা ও গুদাম বন্ধ থাকায় সড়কে পণ্যবাহী যান চলাচলও ছিল কম। বন্দর কাস্টমস সড়কে যানবাহনের জটও অন্যানের দিনের মতো দেখা যায়নি। 

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মাসফিয়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ সরওয়ার আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘সকালে কাস্টম হাউসে গিয়ে কোনো কাজ না করেই ফিরে আসতে হয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সিস্টেম আপডেট দেওয়া হয়েছে। তাই কাজ করা যাচ্ছে না। অথচ ছুটির দিনে ওভারটাইমের খরচ দিয়ে কাজে আনা হয়েছে কর্মচারীদের। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হলো না।’

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সিস্টেম অ্যানালিস্ট মো. হাসান উজ জামান খান খবরের কাগজকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কিছু কর্মকর্তার কম্পিউটার মেমোরি ফুল হয়ে যাওয়ায় আপডেট দেওয়া হয়েছে। এ সমস্যা সব কম্পিউটারে হয়নি। যাদের কম্পিউটারে সমস্যা হয়নি, তারা কাজ করতে পেরেছেন। সকাল থেকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ১ হাজার ২০০ ফাইল এন্ট্রি হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে তা ৫ হাজার হয়ে থাকে।’ 

আয়কর ইস্যুতে উত্তপ্ত পণ্য পরিবহন খাত

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৫, ০৯:১৩ এএম
আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৫, ০৯:২২ এএম
আয়কর ইস্যুতে উত্তপ্ত পণ্য পরিবহন খাত

পণ্য পরিবহন খাতে অগ্রিম আয়কর বাড়ানোর সিদ্ধান্তে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন পরিবহন মালিকরা। তাদের অভিযোগ, এ সিদ্ধান্ত ব্যবসা পরিচালনাকে আরও জটিল করে তুলবে এবং অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি পরিবহন প্রতিষ্ঠান টিকে থাকতে পারবে না। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছে। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। 

পণ্য পরিবহন মালিকরা বলছেন, সম্প্রতি সরকার ঘোষিত বাজেটে পণ্য পরিবহন খাতে অগ্রিম আয়কর গাড়িভেদে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ১৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছে। এমন সিদ্ধান্ত পরিবহন খাতের ওপর একধরনের অর্থনৈতিক নিপীড়ন। এতে শুধু মালিকরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না, প্রভাব পড়বে সামগ্রিক পণ্য পরিবহন ও বাজার ব্যবস্থাপনায়। পণ্য পরিবহন খাতে এমনিতেই জ্বালানি, যন্ত্রাংশ, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ ও শ্রমিক মজুরি বেড়েছে। তার ওপর অতিরিক্ত করের বোঝা চাপানো হলে স্বাভাবিক পরিবহন কার্যক্রম চালানো ব্যাহত হবে। তাই সরকারকে আলোচনার মাধ্যমে একটি যৌক্তিক কর কাঠামো নির্ধারণের আহ্বান জানান তারা। 

জানা গেছে, নতুন অর্থবছরে সরকার প্রাইম মুভার গাড়িতে ১১ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৩৫ হাজার টাকা, ৫ টনের বেশি ট্রাক ও লরিতে ১৪ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা, দেড় টনের বেশি ট্রাক ও লরিতে সাড়ে ৩ হাজার টাকা বাড়িয়ে সাড়ে ৭ হাজার ৫০০ টাকা এবং পিকআপে সাড়ে ৩ হাজার টাকা বাড়িয়ে সাড়ে ৭ হাজার টাকা অগ্রিম আয়কর নির্ধারণ করা হয়েছে।

সরকারের এমন সিদ্ধান্তে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে পণ্য পরিবহন মালিকদের বড় সংগঠন বাংলাদেশ কাভার্ড ভ্যান ট্রাক প্রাইম মুভার পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশন। তারা আয়কর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছে। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন তারা। একই কথা জানিয়েছেন আন্তজেলা মালামাল পরিবহন সংস্থা ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি এবং চট্টগ্রাম প্রাইম মুভার ও ফ্লাটবেড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা।

বাংলাদেশ কাভার্ড ভ্যান ট্রাক প্রাইম মুভার পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব চৌধুরী জাফর আহম্মদ বলেন, ‘৫-৬ বছর ধরে খুচরা যন্ত্রাংশসহ পণ্য পরিবহনের গাড়ি খরচ অনেক বেড়ে গেছে। এ কারণে এমনিতেই পণ্য পরিবহন খাতের অনেক ব্যবসায়ী দেউলিয়া হয়ে গেছেন। আয়-ব্যয় সমন্বয় করতে না পেরে অনেকে গাড়ি বিক্রি করে দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে গাড়ির ওপর নতুন করে আয়কর বাড়ানো এ খাতের গাড়ির মালিক ও ব্যবসায়ীদের পথে বসানোর উপায় ছাড়া আর কিছুই নয়। সরকারের উচিত, কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পণ্যপরিবহন মালিক বা তাদের প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করা। ইচ্ছেমতো আয়কর চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। এ সিদ্ধান্ত সব পণ্য পরিবহন মালিকের মনে ক্ষোভ সৃষ্টি করছে। বন্দর ও অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা করে আমরা এখনো কোনো কর্মসূচিতে যাচ্ছি না। তবে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে আমরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।’ 

চট্টগ্রাম প্রাইম মুভার ও ফ্লাটবেড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘পরিবহন খাতে অগ্রিম আয়কর নেওয়া হয়। কিন্তু এ আয়করের পরিমাণ বাড়ালে পরিবহন ব্যবসায় টিকে থাকা মুশকিল হয়ে পড়বে। পরিবহন খাতে কোনো ধরণের শৃঙ্খলা নেই। আগেও আমরা বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করলেও কেউ পূরণ করেননি। সবকিছু আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ ছিল, এখনো তাই। আমাদের মূল কথা হলো, ট্যাক্স টোকেন, রুট পারমিটসহ বিভিন্ন করের ওপর আরোপিত ভ্যাট ও অন্যান্য ফি প্রত্যাহার করে একক ডকুমেন্টের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি ভাড়ায়চালিত গাড়ির অগ্রিম আয়কর সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকায় নামিয়ে আনতে হবে এবং ট্যাক্স টোকেন ফি অর্ধেক করতে হবে। পণ্য পরিবহন খাতে শুধু মালিক নন, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছেন হাজার হাজার শ্রমিক। মালিকরা যদি কর্মসূচি দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেন, এতে বিপাকে পড়বেন গাড়ির চালক ও সহযোগীরা।’ 

বাংলাদেশ ট্রাকচালক শ্রমিক ফেডারেশনের মহাসচিব ওয়াজি উল্লাহ বলেন, ‘পণ্য পরিবহন খাতে মালিক, শ্রমিক সবাই জড়িত। যাত্রী পরিবহন মালিকরা হুটহাট গাড়ি চালানো বন্ধ করে দিতে পারেন। কিন্তু পণ্য পরিবহন খাতে তা সম্ভব হয় না। কারণ এর সঙ্গে অর্থনীতি জড়িত। এক দিন গাড়ি না চললে বাজারে ভোগ্যপণ্যের সংকট হবে, বন্দর অচল হয়ে পড়বে। আমাদের হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বেন। সরকার যে অগ্রিম আয়কর বাড়িয়েছে, তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।’

ছুটির দিনেও খোলা বেনাপোল কাস্টমস হাউস

প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২৫, ০৩:৪৯ পিএম
আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৫, ০৪:১৬ পিএম
ছুটির দিনেও খোলা বেনাপোল কাস্টমস হাউস
বেনাপোল কাস্টম হাউস। ছবি: খবরের কাগজ

শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকলেও বেনাপোল কাস্টম হাউস খোলা রয়েছে। তবে কাস্টমস হাউস খোলা থাকলেও সাপ্তাহিক ছুটির কারণে ব্যবসায়ীদের উপস্থিতি অনেক কম দেখা গেছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী, বেনাপোল কাস্টমস হাউস শুক্রবার ও শনিবার সরকারি ছুটির দিনেও খোলা থাকার কথা নিশ্চিত করেছেন বেনাপোল কাস্টম হাউসের অতিরিক্ত কমিশনার এইচ এম শরিফুল ইসলাম।

বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রথম সচিব (কাস্টমস নীতি) মো. রইচ উদ্দীন স্বাক্ষরিত পত্রে জানানো হয়েছে, অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমের ধীরগতির কারণে গত কয়েকদিন দেশের আমদানি-রপ্তানি পণ্যচালান ছাড় প্রক্রিয়া কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ অবস্থায় দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য নিরবচ্ছিন্ন রাখার উদ্দেশ্যে ১১ ও ১২ জুলাই সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চলমান রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক মামুন কবীর তরফদার জানান, শুক্রবার বন্দর খোলা রয়েছে। কেউ বন্দর থেকে আমদানিকরা মালামাল খালাস নিতে চাইলে খালাস দেওয়া হবে। আমদানিকরা ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক থেকে পণ্য আনলোডও করা হবে।

অতিরিক্ত কমিশনার শরিফুল ইসলাম জানান, অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমের ধীরগতির কারণে গত কয়েকদিন রাজস্ব আদায় ব্যাহত হয়েছে। এ ছাড়া আমদানি-রপ্তানি পণ্যচালান ছাড় প্রক্রিয়া কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। সেই ক্ষতি পোষাতে এখন সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও কাস্টমস হাউস খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

নজরুল/রিফাত/

কাঁচা মরিচের কেজি ৩০০ টাকা ছাড়াল

প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২৫, ১১:৩০ এএম
আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৫, ১১:৩৭ এএম
কাঁচা মরিচের কেজি ৩০০ টাকা ছাড়াল
ছবি: সংগৃহীত

আগের সপ্তাহে অধিকাংশ সবজির দাম বেড়েছিল। বেগুন, শসা, টমেটো, কাঁকরোল, শজনে ডাঁটার কেজি সেঞ্চুরি অর্থাৎ ১০০ টাকা ছাড়ায়।

 বৃহস্পতিবার  (১০জুলাই) পর্যন্ত সেই ধারা অব্যাহত ছিল। তবে কাঁচা মরিচের দাম তিন গুণ বেড়েছে। প্রতি কেজি ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। 

এদিকে কিছুটা বেড়েছে সোনালি মুরগির দামও। ইলিশ মাছের দামও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। ২ হাজার ৪০০ টাকা থেকে বেড়ে ৩ হাজার টাকায় ঠেকেছে কেজি। বেড়েছে ২০ শতাংশ। বিক্রেতারা বলছেন, বর্ষায় ফলন কমে গেছে। এ জন্য সবকিছুর দাম বেশি। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

স্বস্তি নেই সবজির বাজারে

আগের সপ্তাহে বেগুন ১০০ থেকে ১৪০ টাকায় ঠেকেছে। গতকালও সেই দরে বিক্রি হয়। এ ছাড়া টমেটো ৮০ থেকে ১০০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকার কমে মিলছে না। পটোল, ঝিঙে, ধুন্দুল ৬০ থেকে ৮০ টাকায় ঠেকেছে। শসা ৫০ থেকে বেড়ে ১০০, ১২০ টাকার কাঁচা মরিচ ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। কচুরমুখী ও কাঁকরোল ৭০ থেকে ৮০ টাকায়, শজনে ডাঁটা ১২০ থেকে ১৪০, ঢ্যাঁড়শ ৫০ থেকে ৭০, কাঁচা পেঁপে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। সব ধরনের শাকের দামও বাড়তি। পুঁইশাকের আঁটি ৪০ টাকায় বিক্রি হয়। সেগুনবাগিচা বাজারের আবদুর বারেকসহ অন্য সবজি বিক্রেতারা খবরের কাগজকে বলেন, ‘বর্ষাকালে অধিকাংশ এলাকা ডুবে থাকে। সরবরাহ কমে যায়। এ জন্য সবজির দাম বাড়তি। তবে আলু, পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের দাম বাড়েনি।

ইলিশের কেজি ৩ হাজার টাকা 

সপ্তাহের ব্যবধানে সোনালি মুরগির দামও কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৩২০ টাকা কেজি হয়েছে। তবে আগের মতোই ব্রয়লার মুরগি ১৭০ টাকায় বিক্রি হয়। মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারের ব্রয়লার হাউসের স্বত্বাধিকারী শিবলী মাহমুদসহ অন্য বাজারের খুচরা বিক্রেতারা খবরের কাগজকে বলেন, ‘সোনালির দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে ব্রয়লারের দাম বাড়েনি।’ অন্য মুরগি বিক্রেতারা বলেন, আগের মতোই দেশি মুরগি ৬৫০ থেকে ৬৮০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০, খাসির মাংস ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি ও ডিম ১২০ থেকে ১৩০ টাকা ডজনে বিক্রি হচ্ছে।
 
বর্ষা মৌসুমে বাজারে নদীর মাছের সরবরাহ কম হওয়ায় বেশি দামেই মাছ বিক্রি হচ্ছে। কাজলি, ট্যাংরা, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার কমে মেলে না। বাইলা মাছও ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা কেজি। তবে আকারভেদে চাষের রুই, কাতলা মাছের কেজি ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৫০০, চিংড়ি ৫০০ থেকে ৮০০, তেলাপিয়া ও পাঙাশ ২২০ এবং কাচকি মাছ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। 

মৌসুম শুরু হলেও বাজারে ইলিশ অতি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। দাম একেবারে নাগালের বাইরে চলে গেছে। আগের সপ্তাহে এক কেজি ওজনের ইলিশ ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা বিক্রি হলেও বৃহস্পতিবার ৩ হাজার টাকায় ঠেকেছে। ছোট বা ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দামও দ্বিগুণ দরে বিক্রি হয়। ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার পিস দেড় থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। টাউন হল বাজারের ইলিশ মাছ বিক্রেতা রমজান আলী খবরের কাগজকে বলেন, ‘মৌসুম শুরু হয়েছে। তবে নদীতে আগের মতো ইলিশ পাওয়া যায় না। এ জন্য দাম বেশি।’ 

কমে না চালের দর

বোরো ধান ওঠার পর চালের দাম কমবে এমনটি সবাই আশা করলেও সেই আশায় গুড়ে বালি। খুচরা চাল বিক্রেতারা বলছেন, কৃষকের ধান মিলমালিকদের গোডাউনে চলে গেছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে তারা ইচ্ছামতো চালের দাম বাড়াচ্ছেন। এ জন্য বাড়তি দরে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে। মনজুর, রশিদ, সাগরসহ অন্যান্য কোম্পানির মিনিকেট চালের দাম বেড়ে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ডায়মন্ড, হরিণ, মোজাম্মেল কোম্পানির চাল আরও বেশি দামে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আটাশ চালের দামও বেড়ে ৬২ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে মোটা চাল আগের মতোই ৫২ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে শওকত রাইস স্টোরের মো. শওকত আলীসহ অন্য খুচরা চাল বিক্রেতারা বলেন, ‘ঈদের পর থেকে মিলমালিকরা চিকন চালের দাম বাড়িয়েছেন। এ জন্য আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। চালের দাম কমাতে হলে রাইস মিল ধরতে হবে। তারা কমালে আমরাও কম দরে বিক্রি করতে পারব।’

নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে বেনাপোল বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কমেছে

প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ০৯:২৮ এএম
আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৫, ০৯:৩৪ এএম
নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে বেনাপোল বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কমেছে
ফাইল ছবি

পণ্যে আমদানি নিষেধাজ্ঞার কারণে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হঠাৎ কমে গেছে। বন্দর সূত্র জানায়, বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আমদানি কমেছে ৬ লাখ টন এবং রপ্তানি ৭৫ হাজার টনের বেশি। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বেনাপোল দিয়ে আমদানির পরিমাণ ছিল ২১ লাখ ৩০ হাজার ২২৮ টন। বিদায়ী বছরে তা ৬ লাখ ৩১ হাজার ৩৩০ টন কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৯৮ হাজার ৮৯৮ টনে। একই সময়ে রপ্তানি কমেছে ৭৫ হাজার ২৩২ টন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারতে রপ্তানি হয়েছিল ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৬৭২ টন। এবার তা কমে হয়েছে ৩ লাখ ৮১ হাজার ৪৪০ টন।

আমদানি-রপ্তানি কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও বন্দর সংশ্লিষ্টদের আয় কমেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখনই বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া না হলে ক্ষতি আরও বাড়বে।

বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি আলহাজ মহসিন মিলন বলেন, ‘এ বন্দর দিয়েই ভারত-বাংলাদেশের সিংহভাগ বাণিজ্য চলে। কিন্তু রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর থেকে ট্রাক চলাচল কমেছে। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বাণিজ্য অনেকটাই নেমে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এর প্রভাব পড়ছে সরকারের রাজস্ব আয়েও। ক্ষতির মুখে পড়েছে দুই দেশই।’

বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক শামীম হোসেন জানান, সরকার বেশ কিছু পণ্যে আমদানি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এসব পণ্য দেশের অভ্যন্তরেই উৎপাদিত হয়। এতে ওই পণ্যগুলো আর বন্দর দিয়ে আসছে না। তিনি বলেন, ‘আগে প্রতিদিন ভারত থেকে প্রায় ৬০০ ট্রাক পণ্য আসত, রপ্তানি হতো ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাক পণ্য। এখন তা কমে এসেছে ৫০০ ট্রাকে, রপ্তানি নেমে গেছে ১০০ ট্রাকের নিচে।’
ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও আরোপিত বিধিনিষেধ শিথিল না হলে বেনাপোল বন্দরের বাণিজ্য আরও কমে যেতে পারে।