গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর তার কর্মপরিকল্পনা কী হবে তা জানতে চেয়েছে দৈনিক খবরের কাগজ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন পত্রিকাটির ডেপুটি বিজনেস এডিটর ফারজানা লাবনী।
খবরের কাগজ: বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর আপনি কোন বিষয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেবেন?
ড. আহসান এইচ মনসুর: এখন দ্রব্যমূল্য লাগামছাড়া। অনেক নিত্যপণ্যের দামই সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। পণ্যের দাম এত বেড়েছে যে, অল্প আয়ের মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক কিছুই কিনতে পারছেন না। তাদের জীবন যাপন কষ্টকর হয়ে পড়েছে। অনেকে ধারদেনা করেও জীবন চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। সঞ্চয় ভেঙে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন কেউ কেউ। অনেকে নিয়মিত খাবার তালিকা থেকে অনেক কিছু বাদ দিয়েছেন। মূল্যস্ফীতি বাড়ার রেকর্ড হয়েছে। আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেব। মূল্যস্ফীতি কেন হচ্ছে তার কারণ চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টা করা হবে। আশা করছি জনগুরুত্বপূর্ণ এ ইস্যুতে সবার সহযোগিতা পাওয়া যাবে।
খবরের কাগজ: সম্প্রতি ছাত্র জনতার বড় ধরনের আন্দোলন হয়েছে। এক্ষেত্রে ছাত্ররা নেতৃত্বে ছিলেন। যুব সমাজের শক্তিকে কাজে লাগাতে তাদের কর্মসংস্থানের ওপর আপনি সব সময় জোর দিয়েছেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর কি এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেবেন?
ড. আহসান এইচ মনসুর: কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্ব দেওয়া হবে। সরাসরি চাকরির সুযোগ দেওয়াই একমাত্র কাজ হবে না, উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে। শুধু নিজে কাজ পেলেই হবে না, অন্যের জন্য কাজের সুযোগ তৈরি করতে হবে। তরুণ-তরুণীরা উদ্যোক্তা হতে চাইলে সরকার নীতি সহায়তাসহ সব ধরনের সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করবে। স্বনির্ভর অর্থনীতি সৃষ্টি হবে।
খবরের কাগজ: আপনি বিভিন্ন সময়ে বলেছেন, অর্থপাচার এদেশের জন্য বড় সমস্যা। এ সমস্যার সমাধানকে আপনি কতটা গুরুত্ব দেবেন?
ড. আহসান এইচ মনসুর: অর্থপাচার বন্ধ করতে বা কমাতে হলে প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তুলতে হবে। অর্থপাচার কমাতে বা বন্ধ করা সম্ভব হলে এদেশের অর্থনীতি দ্রুত গতিশীল হবে। অর্থ অবৈধভাবে অন্য দেশে চলে গেলে দেশের অথর্নীতি কীভাবে গতিশীল হবে? আমি চেষ্টা করব দেশের অর্থ দেশে রাখার কৌশল গ্রহণ করতে। বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা হবে।
খবরের কাগজ: আপনি বিভিন্ন সময়ে অর্থনীতিতে সুশাসন আনার কথা বলেছেন। বিশেষভাবে ব্যাংকিং খাত সংস্কারে আপনার পদক্ষেপ কী থাকবে?
ড. আহসান এইচ মনসুর: অর্থনীতিতে সুশাসন জরুরি। বিশেষভাবে ব্যাংকিং খাতে। এর জন্য যা যা করা দরকার করব। ব্যাংকিং খাতে গতি আনতে বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
খবরের কাগজ: দীর্ঘদিন অর্থ খাতের বিভিন্ন বিষয়ে আপনি কাজ করেছেন। আপনার যথেষ্ট অভিজ্ঞতা আছে। এদেশের রাজস্ব খাতে গতি আনতে, বিশেষভাবে রাজস্ব আদায় বাড়াতে আপনার বিভিন্ন সুপারিশ রয়েছে। রাজস্ব আদায় বাড়াতে আপনার ভূমিকা কী থাকবে?
ড. আহসান এইচ মনসুর: রাজস্ব আদায় সংক্রান্ত কাজ সরাসরি আমার আওতাভুক্ত হবে না। তবে যেহেতু এ বিষয়ে আমি অনেক দিন থেকে কাজ করেছি, তাই এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের আমার মতামত জানাব। সর্বোপরি সরকারের আয় বাড়ানোর বিকল্প তো কিছু নেই।
খবরের কাগজ: দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেবেন?
ড. আহসান এইচ মনসুর: স্থানীয় বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে। স্থানীয় বিনিয়োগ বাড়লে বিদেশি বিনিয়োগ সহজে বাড়বে। বিনিয়োগবান্ধব নীতি গ্রহণ করা হবে।