যুক্তরাজ্যের মূল্যস্ফীতির হার চলতি বছরে প্রথমবারের মতো বেড়েছে। সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, জুলাই থেকে বছরে (পণ্য ও সেবার) সামগ্রিক মূল্য ২ দশমিক ২০ শতাংশ বেড়েছে। এটি গত মে মাস থেকে মূল্যস্ফীতির হার যেখানে ছিল এবং ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের যে ২ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা ছিল তার থেকেও কিছুটা ওপরে রয়েছে। খবর বিবিসির।
ব্রিটিশ সম্প্রচারমাধ্যমটির খবরে বলা হয়, দাম বাড়তে পারে অনেকেরই এমন ধারণা ছিল এবং এর কারণ হলো গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম এক বছর আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে। এ ছাড়া এই মূল্যবৃদ্ধির হারটা অনেক অর্থনীতিবিদের প্রত্যাশার চেয়েও কম ছিল।
সাম্প্রতিক এই পরিসংখ্যানের মানে হলো, যুক্তরাজ্যজুড়ে পণ্যের দাম এখন আগের মাসগুলোর তুলনায় দ্রুত বাড়ছে। তবে ২০২২ ও ২০২৩ সালে যখন পরিবারগুলো বিশেষত জ্বালানির উচ্চমূল্য ও খাবারের বিলের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, সেই তুলনায় এখনো ধীরগতিতে দাম বাড়ছে।
যুক্তরাজ্যে দাম কত দ্রুত বাড়ছে?
ব্যাংক অব ইংল্যান্ড আশা করছে যে, দেশটির মূল্যবৃদ্ধির হার নির্ণয়ের প্রধান মাপকাঠি মূল্যস্ফীতি, আগামী বছরে ২ শতাংশের নিচে যাওয়ার আগে, চলতি বছরের সামনের মাসগুলোতে ২ দশমিক ৭৫ পর্যন্ত যাবে।
মূল্যস্ফীতির মাপকাঠির আরেকটি সেট হলো, কর্মসংস্থান ও মজুরি পরিসংখ্যান, আগামী ১৯ সেপ্টেম্বরে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের পরবর্তী সুদহার নির্ধারণী বৈঠকের আগে প্রকাশ করা হবে।
ব্যাংকটি ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি মোকাবিলায় সুদের হার গত মাসে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করেছে। এটি মহামারি (কোভিড-১৯) শুরু হওয়ার পর থেকে প্রথম সুদহার হ্রাস।
খবরে বলা হয়, সুদের উচ্চহার সঞ্চয়কারীদের জন্য ভালো হতে পারে, কিন্তু ভোক্তাদের জন্য বন্ধকি এবং অন্যান্য ঋণের খরচ বাড়িয়ে দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা এই বছর আরও কমানোর পূর্বাভাস দিচ্ছেন, বিনিয়োগকারীরা এখন তাদের বাজি বাড়াচ্ছে যে ব্যাংক সেপ্টেম্বরে কাটছাঁট বেছে নেবে।
সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ডয়চে ব্যাংক রিসার্চের যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত প্রধান অর্থনীতিবিদ সঞ্জয় রাজা বলেছেন, ‘সেপ্টেম্বরের সুদহার কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে আর বিলম্ব করা উচিত হবে না। এমন একটা বিষয় অনুমান করা যায় যে, আমরা এই বছর আরও একাধিকবার সুদহার কমাতে পারি।’
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অডিট ও আর্থিক খাতের পরামর্শক সংস্থা ডেলয়েটের অর্থনৈতিক গবেষণার পরিচালক দেবপ্রতিম দে বলেছেন, সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান দেখে সুদের হার সম্পর্কে ব্যাংকের চিন্তাভাবনাকে বস্তুগতভাবে পরিবর্তন করার সম্ভাবনা কম।
খবরে বলা হয়, পরিষেবা খাতে মুদ্রাস্ফীতির দিকেও নজর দেয় ব্যাংক। যদিও এই খাতে দাম জুলাইয়ে কমে ৫ দশমিক ২০ শতাংশে নেমেছে। এই খাতের মূল্যস্ফীতি বাড়ার কারণ হলো আংশিকভাবে বিমান ভাড়া ও হোটেলে থাকার ভাড়া বেড়ে যাওয়া। সামনের দিনগুলোতে এই খাতটি আরও বেশ অস্থির হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দেবপ্রতিম দে বলেন, আমরা আশা করি যে সেপ্টেম্বরে সুদহার কমানোর সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হবে। তবে এই বছর আরও দুই বার সুদহার কমানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
যারা গত কয়েক বছর ধরে সুদের উচ্চ হার ও ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন, সুদহার কমানো সেসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ভালো খবর হতে পারে।
ইংল্যান্ডের পূর্ব সাসেক্সের হোভে শহরে অবস্থিত ম্যারোক্কোর রেস্তোরাঁ ও আইসক্রিমের দোকানের মালিক লিভিয়া ম্যারোকো বিবিসিকে বলেন, ‘পণ্যের দাম বেড়েছে। সেগুলো তৈরির উপকরণের দামও বেড়ে গেছে। এ কারণে আমরাও দাম কিছুটা বাড়িয়ে দিয়েছি।’