
গত সপ্তাহে নওগাঁ ও আশপাশের হাটে ধানের দাম প্রতি মণ ১২০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। কিন্তু বিপরীতে চালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। মিলগেট ও পাইকারিতে চাল আগের বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। সচেতন নাগরিকদের অভিযোগ, ভরা মৌসুমে ধান কিনে মজুত করে চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করছে পুঁজিপতি ও মিলার সিন্ডিকেট। সরকারের দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
নওগাঁর মহাদেবপুর, মাতাজি, আবাদপুকুর ও চৌবাড়িয়ার হাটে ধানের বাজারদর কমেছে। চাষিরা তাদের ফলন বিক্রি করতে গিয়ে হতাশায় পড়েছেন। সপ্তাহের ব্যবধানে আড়তদাররা প্রতি মণ ধানের দাম ১২০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত কমিয়েছেন। সরু ও মাঝারি জাতের ধানের প্রতি মণ ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা ও মোটা ধানে ৫০ টাকা কমেছে। হাটগুলোতে বর্তমানে শুকানো ধান, জিরাশাইল ও কাটারি জাতের প্রতি মণ ১ হাজার ৩২০ টাকার মধ্যে কেনাবেচা হচ্ছে। সুবর্ণলতা, বিআর আটাশ, বিআর ঊনত্রিশ বা মাঝারি জাতের ধানের সর্বোচ্চ দাম ১ হাজার ২৮০ টাকা ও গুটি স্বর্ণা, হাইব্রিড ও খাটো দশ বা মোটা ধানের দাম ১ হাজার ২০০ টাকা।
মাতাজি বটতলী এলাকার চাষি আজিজুল হক বলেন, ‘দেশে চলমান আন্দোলন-সংগ্রাম ও কারফিউর কারণে চাষিরা ২০ দিন ধান বিক্রি করতে পারেননি। নতুন সরকার গঠনের পর যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হলেও আড়তদাররা দর কমিয়ে ধান কিনছেন।’ মহাদেবপুর উত্তরগ্রামের কৃষক ময়েজ উদ্দিন, আব্দুল লতিফসহ অন্য চাষিরা বলেন, ‘তদারকি না থাকায় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ফড়িয়া, আড়তদার ও মিলাররা যৌথভাবে ধানের দাম কমিয়েছেন। এতে চাষিরা তাদের ফলনের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না।’
নওগাঁ মোকামে চালের পাইকারি ও মিলগেটে গিয়ে দেখা গেছে, উৎপাদন ও সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও মিলাররা বাড়তি দামে চাল বিক্রি করছেন। সিল্কি ও শর্টার ২৫ কেজির প্রতি বস্তা জিরাশাইল ও কাটারি নাজির বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ থেকে ১ হাজার ৮৭৫ টাকায়। মাঝারি চাল প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা ও মোটা হাইব্রিড চাল ৫০ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আড়াই থেকে ৩ টাকার নন-শর্টার চালের দামও বেড়েছে।
চাল বাজারের এই পরিস্থিতি নিয়ে নওগাঁ ক্ষুদ্র চাল বাজারের এক সাধারণ ব্যবসায়ী বলেন, মিলাররা ইচ্ছা করেই ধানের দাম কমিয়েছেন, কিন্তু চালের দাম কমাননি। দিনাজপুর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও কুষ্টিয়া এলাকায় হাতে গোনা ৮ থেকে ১০ জন মিলার ও করপোরেট মিলগুলো চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করছে।’
নওগাঁর কৃষক, ক্ষেতমজুর ও ভোক্তা অধিকার আন্দোলনের সমন্বয়ক জয়নাল আবেদীন মুকুল বলেন, ‘নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো নতুন সরকারের প্রধান কাজ হওয়া উচিত। চালের দাম কমানো প্রয়োজন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ধানের দাম কমলেও চালের দাম কমছে না, এটি ইঙ্গিত দেয় যে পুঁজিপতি, মিলার ও অসাধু ব্যবসায়ীরা মুনাফা লুটছে। সরকারকে দ্রুত সিন্ডিকেট ভেঙে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিতে হবে।’
বাংলাদেশ অটো রাইসমিল মালিক নেতা তৌফিকুল ইসলাম বলেন, ‘হাটগুলোতে ধানের সরবরাহ কম থাকায় চালের দাম কমেনি। মৌসুমের শুরুতেই চাষিরা ভালো দাম পেয়ে বেশির ভাগ ধান বিক্রি করেছেন। এখন সেই বাড়তি দামে কেনা ধান থেকেই চাল প্রস্তুত হচ্ছে।’
নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, ‘ধানের বাজারের দাম কমায় চালের দামের সঙ্গে সাযুজ্য ফিরেছে। মজুতদার ও করপোরেট গ্রুপের কাছে প্রচুর পরিমাণ ধান মজুত রয়েছে। এটি দাম বাড়ানো ও কমানোর ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা তৈরি করছে। সরকারের গুদামে সংগ্রহ মৌসুম শেষে মোটা চালের দাম কমবে।’
নওগাঁ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তানভির রহমান বলেন, ‘ধানের দরের সঙ্গে চালের বাজার স্বাভাবিক রাখতে মনিটরিং অব্যাহত আছে। কেউ অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি জানান, চলতি বোরো মৌসুমে খাদ্য বিভাগ ১১ লাখ টন সেদ্ধ, ১ লাখ টন আতপ চাল ও ৫ লাখ টন ধান সংগ্রহ করছে। এই সংগ্রহ চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত।