ঢাকা ২২ আশ্বিন ১৪৩১, সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪

এনবিআরের সঙ্গে বৈঠক কর কাঠামো সহজীকরণ চায় ঢাকা চেম্বার

প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৩৬ পিএম
কর কাঠামো সহজীকরণ চায় ঢাকা চেম্বার
আগারগাঁওয়ে গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির একটি প্রতিনিধিদল। ছবি: সংগৃহীত

দেশের কর কাঠামো জটিল। এর কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য বিশেষ করে ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তারা প্রায়ই নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। হার না বাড়িয়ে কর কাঠামো আরও সহজ করলে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করা সহজ হবে। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের-এনবিআর আবদুর রহমান খানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এ কথা জানান ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আশরাফ আহমেদ। 

এ সময় এনবিআরের চেয়ারম্যান বলেন, করজাল সম্প্রসারণ করা সম্ভব না হলে বিদ্যমান করদাতারা কর প্রদানে নিরুৎসাহিত হবেন। তাই করজাল সম্প্রসারণে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আগামী ৬ মাস কাজ করবে এনবিআর। 

তিনি আরও বলেন, আমাদের মোট জনগোষ্ঠীর মাত্র ৫ শতাংশ লোক রাজস্ব প্রদান করে, যেখানে ভারতে এ হার ২৩ শতাংশ। বিদ্যমান বাস্তবতায় রাজস্ব আহরণের হার বাড়াতে নিজেদের করজাল সম্প্রসারণের কোনো বিকল্প নেই বলে তিনি অভিমত জ্ঞাপন করেন।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের মোট রাজস্বের সিংহভাগই আসে বিদ্যমান করদাতাদের কাছ থেকে এবং সমাজের একটি বড় অংশই করজালের বাইরে থেকে যাচ্ছে। ফলে চাপ বাড়ছে বিদ্যমান করদাতাদের ওপর। এমতাবস্থায়, করজাল সম্প্রসারণ করা সম্ভব না হলে বিদ্যমান করদাতারা কর প্রদানে নিরুৎসাহিত হবেন, তাই করজাল সম্প্রসারণে এনবিআর অগ্রাধিকারভিত্তিতে আগামী ৬ মাস কাজ করবে।

আবদুর রহমান জানান, বিভিন্ন স্তরে কর আহরণের কারণে বিশেষ করে করপোরেট করের ইফেক্টিভ হার বেড়ে যায়। বিষয়টি এনবিআর গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। সামগ্রিক রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা না কমিয়ে, কর হার যৌক্তিকীকরণের পাশাপাশি দেশের রাজস্ব ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজানো হবে।

ব্যবসায়িক লেনদেন প্রক্রিয়া ক্যাশলেস ও ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে সম্পন্ন করার জন্য ব্যবসায়ী সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে কর আহরণের হার আরও বৃদ্ধি পাবে। রাজস্ব খাতের বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিতকরণের পাশাপাশি সমাধানের লক্ষ্যে ডিসিসিআইকে প্রয়োজনীয় গবেষণা পরিচালনা করে সুপারিশ করলে এনবিআর যৌক্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

ঢাকা চেম্বার সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, দেশের জটিল রাজস্ব কাঠামোর জন্য আমাদের কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের উদ্যোক্তারা ব্যবসা পরিচালনায় নানাবিধ সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন, তাই এ খাতের উদ্যোক্তাদের বিকাশে সহায়ক এবং সহজ রাজস্ব কাঠামো প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বিদ্যমান কর হার না বাড়িয়ে, করজাল সম্প্রসারণ বেশি নজর দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। 

বর্তমান আইনে ব্যবসায়িক ক্ষতিকে অন্যান্য ব্যবসায়িক উৎসের আয়ের সঙ্গে সমন্বয় করতে না পারলে ব্যবসায়ীদের ওপর অতিরিক্ত করের বোঝা আরোপিত হচ্ছে, এ লক্ষ্যে আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর ধারা ৩৭-এর অনুরূপ বিধান পুনর্বহালের প্রস্তাব করেন ঢাকা চেম্বার সভাপতি। কর প্রদান ও করসংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়াদি সহজীকরণের লক্ষ্যে আয়কর ব্যবস্থাকে অটোমেশনের আওতায় নিয়ে আসার ওপর জোরারোপ করেন ডিসিসিআই সভাপতি।

তিনি বলেন, পণ্যের বিবরণ সঠিক থাকলেও এইচএস কোডে ভুল থাকার কারণে ৪০০ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে, যার ফলে ব্যবসায়ীদের অনেক সময় হয়রানির সম্মুখীন হতে হয়। এমতাবস্থায় পণ্যের বিবরণ এবং এইচএস কোডের যেকোনো একটি সঠিক থাকলে কাস্টমস আইন ২০২৩-এর ৮৬(১) ধারা সংশোধন করে অ্যাসেসমেন্ট পর্যায়ে দাখিলকৃত পণ্য ঘোষণার সংশোধন ও প্রত্যাহার করতে হবে। 
 
এ সময় ঢাকা চেম্বারের ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী, সহ-সভাপতি মো. জুনায়েদ ইবনে আলী, এনবিআর সদস্য (শুল্ক) মো. মাসুদ সাদেক, সদস্য (করনীতি) এ কে এম বদিউল আলম, সদস্য (কর প্রশাসন) জি এম আবুল কালাম কায়কোবাদ উপস্থিত ছিলেন।

বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারদর বাড়লেও কমেছে সূচক

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৩৯ এএম
বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারদর বাড়লেও কমেছে সূচক

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) রবিবার (৬ অক্টোবর) লেনদেনকৃত বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে। তবে এদিন বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারদর বাড়লেও কমেছে সূচক। তবে গত দিনের তুলনায় বেড়েছে লেনদেন। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্রমতে, এদিন ডিএসইর লেনদেন শেষে প্রধান সূচক ‘ডিএসইএক্স’ ৮৩ দশমিক ৮০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৩৭৮ পয়েন্টে।

অন্য সূচকগুলোর মাঝে, শরিয়াহ্‌ সূচক ‘ডিএসইএস’ ৩০ দশমিক ৪১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৯০ পয়েন্টে আর ‘ডিএস৩০’ ২৬ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৯৬৮ পয়েন্টে।

এদিন ডিএসইতে মোট ৩৬৮ কোটি ১৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। গত কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৩১৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকার শেয়ার। সে তুলনায় আজকে লেনদেনের পরিমাণ ২৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেড়েছে।

রবিবার লেনদেন হওয়া ৩৯২টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৮০টির, কমেছে ১৫৬টির অন্যদিকে অপরিবর্তিত রয়েছে ৫৬টি কোম্পানির বাজারদর।

রবিবার ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি।

রবিবার ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ২৫ কোটি ৫৮ লাখ ৯৭ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। তাতে লেনদেনের শীর্ষে জায়গা নিয়েছে কোম্পানিটি।

লেনদেনের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা মিডল্যান্ড ব্যাংক পিএলিসি কোম্পানি ১৪ কোটি ৯৩ লাখ ৪২ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আর ১২ কোটি ৩৩ লাখ ৭০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন করায় তালিকার তৃতীয় স্থান নিয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি।

এদিন লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলো হলো সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, টেকনো ড্রাগস লিমিটেড, লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেড, গ্রামীণফোন লিমিটেড, দ্য ইবনে সিনা ফার্মাসিটেক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি, অগ্নি সিস্টেমস লিমিটেড, এমজেএল বাংলাদেশ পিএলসি।

রবিবার ডিএসইতে দরবৃদ্ধির শীর্ষে উঠে এসেছে ফু ওয়াং সিরামিকস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।

এদিন ডিএসইতে ফু ওয়াং সিরামিকস লিমিটেডের শেয়ারদর আগের কার্যদিবসের তুলনায় ১ টাকা ২০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেড়েছে।

মূল্যবৃদ্ধির দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে ফু ওয়াং ফুড লিমিটেড। কোম্পানিটির শেয়ারদর ১ টাকা ২০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেড়েছে। মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রডাক্টস লিমিটেডের শেয়ারদর বেড়েছে ২ টাকা ২০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

গতকাল মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে উঠে আসা অপর কোম্পানিগুলো হচ্ছে দেশবন্ধু পলিমার লিমিটেড, এস আলম কোল্ড রয়েল স্টিলস লিমিটেড, নাভানা ফার্মাসিটিক্যালস পিএলসি, মেট্রো স্পিনিং লিমিটেড, ডমিনেজ স্টিল বিল্ডিং সিস্টেমস লিমিটেড, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলস লিমিটেড, মাইডাস ফাইন্যান্সিং পিএলসি।

গতকাল ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দরপতনের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি।

এদিন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শেয়ারদর আগের কার্যদিবসের তুলনায় কমেছে ৬ টাকা ১০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। তাতে দরপতনের শীর্ষে জায়গা করে নিয়েছে কোম্পানিটি।

এদিকে দর হারানোর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা মার্কেন্টাইল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স পিএলসির শেয়ারদর আগের দিনের তুলনায় ৪ টাকা ৪০ পয়সা বা ৯ দশমিক ১২ শতাংশ কমেছে। আর শেয়ারদর ৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ কমে যাওয়ায় তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থান নিয়েছে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি।

এদিন দরপতনের তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলো হলো খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেড, দুলামিয়া কটন স্পিনিং মিলস লিমিটেড, ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, আফতাব অটোমোবাইলস লিমিটেড, ডিবিএটইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড।

গতকাল অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১০৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ১৬৭ পয়েন্টে।

এদিন সিএসইতে ২০১টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১০০টির দর বেড়েছে, কমেছে ৮১টির এবং ২০টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
গতকাল সিএসইতে ৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।

সৌদি আরবের রিজার্ভ ১০ শতাংশ বেড়েছে

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৩২ এএম
আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৩২ এএম
সৌদি আরবের রিজার্ভ ১০ শতাংশ বেড়েছে
সৌদি আরব কিং আব্দুল আজিজ সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে আল-ওয়েনাহ গবেষণা কেন্দ্রের সোলার প্যানেল। ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবের সরকারি রিজার্ভ অ্যাসেট (বিনিয়োগ করা রিজার্ভ) চলতি বছরের আগস্ট মাসে ১ দশমিক ৭৬ ট্রিলিয়ন সৌদি রিয়ালে (৪৬৯ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার) পৌঁছেছে, যা গত ২১ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। সেই সঙ্গে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রিজার্ভ বেড়েছে ১০ শতাংশ। সৌদির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে এই তথ্য জানানো হয়েছে। খবর আরব নিউজের

এসএএমএ (সৌদি অ্যারাবিয়ান মনিটারি অথোরিটি) নামে পরিচিত সৌদি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশ করা সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এই অ্যাসেটের মধ্যে স্বর্ণ, বিশেষ আহরণ অধিকার বা এসডিআর (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের সৃষ্ট একটি আন্তর্জাতিক মুদ্রামান), আইএমএফে সৌদি আরবের অংশীদারত্বের মূল্য (আইএমএফ রিজার্ভ পজিশন) ও বৈদেশিক রিজার্ভ রয়েছে। মোট রিজার্ভের মধ্যে বিদেশি মুদ্রা, আমানত ও বৈদেশিক সিকিউরিটিতে বিনিয়োগ ছিল ৯৫ শতাংশ, যার পরিমাণ ১ দশমিক ৬৭ ট্রিলিয়ন সৌদি রিয়ালের সমান। এসব খাতের থেকে রিজার্ভ বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। যার প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রসঙ্গত, কোনো দেশ আইএমএফ থেকে কত টাকা তুলতে পারে, তার একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ হলো আইএমএফ রিজার্ভ পজিশন। এটি মূলত একটি দেশের আইএমএফ-এ থাকা জমা অর্থের মতো।

আগস্ট মাসের পরিসংখ্যানে আরও দেখা গেছে, মোট রিজার্ভের মধ্যে ৫ শতাংশ বা ৭৯ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন সৌদি রিয়াল ছিল বিশেষ আহরণ অধিকার থেকে। আগস্ট মাসে এটি ২ শতাংশ বেড়েছে।

খবরে বলা হয়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভকে আরও শক্তিশালী করার জন্য এসডিআর নামে একটি বিশেষ ধরনের মুদ্রা সৃষ্টি করে। এই এসডিআরের মূল্য নির্ধারিত হয় বিশ্বের কয়েকটি প্রধান মুদ্রা, যেমন- মার্কিন ডলার, ইউরো, চীনা ইউয়ান, জাপানি ইয়েন ও ব্রিটিশ পাউন্ডের ওপর ভিত্তি করে। এই মুদ্রাগুলোকে একসঙ্গে মুদ্রার বাস্কেট বলা হয়। এই বাস্কেটের মূল্যের ওঠানামার ওপর ভিত্তি করে এসডিআরের মূল্যও পরিবর্তিত হয়। প্রয়োজন হলে এগুলো সরকারগুলোর মধ্যে স্বাধীনভাবে ব্যবহারযোগ্য মুদ্রা হিসেবে বিনিময় করা যেতে পারে।

এসডিআরগুলো প্রয়োজনের সময় অতিরিক্ত তারল্য সহায়তা দিতে পারে, বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখে, হিসাবের একক হিসাবে কাজ করে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা সহজতর করে।

সৌদি আরবের আইএমএফ রিজার্ভ পজিশন ছিল প্রায় ১৩ বিলিয়ন সৌদি রিয়াল। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে তা ৯ শতাংশ কমেছে। রিজার্ভ পজিশন মূলত, একটি দেশ শর্ত ছাড়া আইএমএফ থেকে যে পরিমাণ ঋণ নিতে পারে তার পরিমাণ।

বৈদেশিক মুদ্রাসহ সৌদি আরবের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ। আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং সংস্থা ফিচ রেটিংস অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সৌদির রিজার্ভ কভারেজ অনুপাত ছিল সাড়ে ১৬ মাসের বর্তমান বৈদেশিক ব্যয় মেটানোর সমান। অর্থাৎ তারা তাদের আগামী সাড়ে ১৬ মাসের সব লেনদেনের বৈদেশিক পরিশোধ এই রিজার্ভ থেকে করতে পারত।

এই উচ্চ অনুপাতটি রাজ্যের দীর্ঘ সময়ের জন্য তার বৈদেশিক আর্থিক দায়বদ্ধতা পূরণ করার সক্ষমতার প্রমাণ। এটি নিশ্চিত করে যে, দেশটি বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মুখেও স্থিতিশীল থাকবে। এটি একই সঙ্গে একটি আর্থিক নিরাপত্তা বেষ্টনী (ফিন্যান্সিয়াল বাফার) হিসেবে কাজ করে, যা জ্বালানি তেলের দামের ওঠানামা, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বা বিশ্ববাজারের গতিপ্রকৃতির পরিবর্তনগুলোর মতো বহিঃস্থ চাপ সামলাতে সক্ষম করে। সেই সঙ্গে এটি সৌদি আরবের অর্থনীতিতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কারণ তা সরকারের দায়বদ্ধতা পূরণ করার ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ইঙ্গিত দেয়।

সৌদি আরব তাদের ভিশন ২০৩০ কাঠামোর অংশ হিসেবে একটি রূপান্তরশীল ও প্রসারমূলক কৌশলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যার মধ্য দিয়ে দেশটি তাদের অর্থনীতিকে জ্বালানি তেলের ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কমিয়ে বৈচিত্র্যময় করার চেষ্টা করছে। এরই অংশ হিসেবে পর্যটন, প্রযুক্তি, অবকাঠামো ও নবানযোগ্য জ্বালানির মতো খাতগুলো সৌদি আরবের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য মূল্য লক্ষ্য হিসেবে নেওয়া হয়েছে এবং দেশটির লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ পূরণ করার জন্য একটি উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ।

এসব উচ্চাভিলাষী উদ্যোগের ফলে সরকারি ব্যয় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে এবং পূর্বাভাস অনুযায়ী, যখন ব্যয় বাড়তে শুরু করবে তখন তথা মধ্যবর্তী সময়ে বাজেট ঘাটতির সম্ভাবনা রয়েছে।

এই ব্যয়-সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও সৌদি আরব একটি শক্তিশালী আর্থিক অবস্থানে রয়েছে। রাজ্যের অনুকূল সরকারি ও ঋণ রেটিং, সেই সঙ্গে উল্লেখযোগ্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের কারণে দেশটির অর্থনীতি বড় হচ্ছে। এসব কারণে এমন ব্যয় ও সম্ভাব্য ঘাটতি কার্যকরভাবে পরিচালনা করার সুযোগ পাবে দেশটি।

বেনাপোল বন্দর সাত চালানে ৪১১ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানি

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১১:০৫ এএম
আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১১:০৬ এএম
সাত চালানে ৪১১ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানি
যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ইলিশ রপ্তানি করা হয়। খবরের কাগজ

নানা সমালোচনার মধ্যেই ভারতে রপ্তানি হচ্ছে দেশের রূপালি ইলিশ। গত ২৬ সেপ্টেম্বর যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রথম ইলিশের চালান যায়।

রবিবার (৬ অক্টোবর) পর্যন্ত এই বন্দর দিয়ে ৭টি চালানে মোট ৪১১ টন ৩০০ কেজি ইলিশ ভারতে রপ্তানি হয়েছে।

যার প্রতি কেজি মাছের রপ্তানি মূল্য পড়ছে ১০ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১ হাজার ২০০ টাকা। ২৪ সেপ্টেম্বর ৪৯ জন রপ্তানিকারককে ২ হাজার ৪২০টন ইলিশ রপ্তানিতে ছাড়পত্র দেয় বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ৪৮ জনকে ৫০ টন করে ও একজনকে ২০ টন মাছ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়। এই অনুমতির মেয়াদ আগামী ১২ অক্টোবর পর্যন্ত।

দুর্গাপূজা উৎসব উপলক্ষে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ২০১২ সাল থেকে ভারতে পদ্মার ইলিশ রপ্তানি করা হয়। আগের সরকারগুলো একে বলত, ‘উপহারের ইলিশ’। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে অন্তর্বর্তী সরকার ভারতে ইলিশ না পাঠানো নিয়ে কঠোর মনোভাবের কথা জানায়। পরে অবশ্য অবস্থান পরিবর্তন করে ভারতে ইলিশ রপ্তানি করছে।

বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) রাশেদুল সজিব নাজির জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৫ অক্টোবর পযন্ত ১৩১ ট্রাকে ৪১১ টন ৩০০ কেজি ইলিশ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। সর্বশেষ গত শনিবার ১৩ ট্রাকে করে ৪২ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। গতকাল রবিবার মাছ আমদানি বন্ধ রাখে ভারত। এজন্য গতকাল (৬ অক্টোবর) ইলিশ রপ্তানি হয়নি। 

তিনি আরও জানান, ৩ অক্টোবর ৩০ ট্রাকে ৯২ টন, ১ অক্টোবর ২৩ ট্রাকে ৬৯ টন ৬৪০ কেজি, ৩০ সেপ্টেম্বর ৩০ ট্রাকে ৮৯ টন, ২৯ সেপ্টেম্বর ছয় ট্রাকে ১৯ টন, ২৮ সেপ্টেম্বর ১৫ ট্রাকে ৪৫ টন ২০০ কেজি এবং ২৬ সেপ্টেম্বর ২০ ট্রাকে ৫৪ টন ৪৬০ কেজি ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। রাশেদুল সজিব নাজির বলেন, রপ্তানিকারকদের আগামী ১২ অক্টোবরের মধ্যে ভারতে ইলিশ রপ্তানি শেষ করতে হবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে।

এদিকে কম দামে ভারতে ইলিশ রপ্তানি হওয়ায় ক্ষুব্ধ যশোরের মানুষ। দেশের বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও ভারতে রপ্তানি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকায়। এটি কীভাবে সম্ভব তা নিয়ে সর্বত্রই চলছে আলোচনা-সমালোচনা। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ইলিশের আহরণ বাড়লেও দেশের বাজারে দাম বেশ চড়া। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে এ মাছের দাম। কেন কম দামে এ মাছ ভারতে রপ্তানি করা হচ্ছে সেটাই সবার প্রশ্ন।
 
যশোর পৌর নাগরিক নেতা জিল্লুর রহমান ভিটু বলেন, ‘ইলিশ মাছ ভারতে রপ্তানি নিয়ে দেশে রীতিমতো রাজনীতি চলে। বিগত দিনে বাংলাদেশ সরকারের একটি রেওয়াজ ছিল, দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ইলিশ মাছ রপ্তানি করা। 

দেশের পদ্মা ও মেঘনা নদীর ইলিশ ছাড়া তাদের এ উৎসবের পূর্ণতা পায় না। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের অন্তর্বর্তী সরকার চলতি মৌসুমে প্রথমে ঘোষণা দিয়েছিল ভারতে ইলিশ রপ্তানি করা হবে না। পরে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে গত ২৫ সেপ্টেম্বর ২ হাজার ৪২০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি ও রপ্তানি বিভাগের প্রধান নিয়ন্ত্রক। কম দামে ভারতে ইলিশ রপ্তানি করায়  সাধাররণ মানুষ ক্ষুব্ধ।’ 

কম দামে ভারতে ইলিশ রপ্তানি বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের পরিদর্শক আসওয়াদুল আলম বলেন, ‘ইলিশ রপ্তানির পরিপত্রটি কয়েক বছর আগের। এ কারণে পুরোনো দামেই মাছটি রপ্তানি হচ্ছে।’ আগামীতে ইলিশের দেশীয় বাজার দরের সঙ্গে সংগতি রেখে রপ্তানি মূল্য সমন্বয় হতে পারে বলে তিনি ধারণা করেন।

খাতুনগঞ্জে লাগামছাড়া ভোজ্যতেলের বাজার

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫৯ এএম
আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১১:০৩ এএম
খাতুনগঞ্জে লাগামছাড়া ভোজ্যতেলের বাজার
চট্টগ্রাম-পাহাড়তলী পাইকারি একটি দোকানে টিনের জারে তেল ভরা হচ্ছে। ছবি : মোহাম্মদ হানিফ

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে ভোজ্যতেলের বাজার অস্থির হয়ে পড়েছে। জুলাই থেকে দাম দফায় দফায় বেড়ে বর্তমানে প্রতি মণ পাম অয়েল ৫ হাজার ৭৩০ টাকা, পামতেল সুপার ৫ হাজার ৬০০ টাকা ও সয়াবিন তেল ৫ হাজার ৯৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারের দাম বৃদ্ধি ও সরবরাহ সংকটের কারণে এই অস্থিরতা। ব্যবসায়ীদের মতে, আমদানি কম হওয়ায় দাম বাড়ছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর পরিস্থিতি নজর রাখছে।

পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, তিন কারণে অস্থির হয়ে পড়েছে ভোজ্যতেলের বাজার। বিশেষ করে পাম অয়েলের দাম বেশি বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়েছে। এ কারণে বুকিং রেটও বেড়ে গেছে। তার ওপর খাতুনগঞ্জে তেলের সরবরাহও কম। এর প্রভাব দেশীয় বাজারে পড়েছে। 

গত জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেলের বাজার দর বিশ্লেষণ করেছে খবরের কাগজ। দেখা গেছে, গত জুলাই মাসের শেষদিকে প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) পাম অয়েল বিক্রি হয় ৪ হাজার ৮০০ টাকায়। গত আগস্ট মাসের শেষদিকে ৩০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয় ৫ হাজার ১০০ টাকায়। সেপ্টেম্বর মাসে পাম অয়েল বিক্রি হয় ৫ হাজার ৩০০ টাকায়। সপ্তাহখানেক আগেও প্রতি মণ পাম অয়েল ৫ হাজার ১৮৭ টাকায় বিক্রি হয়। বর্তমানে প্রতি মণ পাম অয়েলের দাম ঠেকেছে ৫ হাজার ৭৩০ টাকায়। 

এদিকে গত আগস্ট মাসে প্রতি মণ পামতেল সুপার ৫ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেপ্টেম্বরে ৫ হাজার ৪৫০ টাকায় বিক্রি হয়। সপ্তাহখানেক আগে ৫ হাজার ৪১১ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে প্রতি মণ পামতেল সুপার বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৬০০ টাকায়। 

তা ছাড়া গত জুলাইয়ের শেষদিকে প্রতি মণ সয়াবিন তেল বিক্রি হয় ৪ হাজার ৯৯৪ টাকায়। দাম বেড়ে সপ্তাহখানেক আগে প্রতি মণ সয়াবিন তেল ৫ হাজার ৭৮৪ টাকায় বিক্রি হয়। বর্তমানে প্রতি মণ সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৯৮০ টাকায়।

বাংলাদেশ বাণিজ্য ও ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের বার্ষিক চাহিদা ২২ লাখ টন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৩ লাখ টন আমদানি করা হয়েছে। সেই হিসেবে ১ লাখ টন ভোজ্যতেল বেশি আমদানি হয়েছে। বাজারে তেলের সংকট হওয়ার কথা নয়। 

কিন্তু ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের বুকিং রেট বেড়ে গেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত প্রতিটন সয়াবিন তেলের বুকিং রেট ছিল ৯৪৯ ডলার। সেপ্টেম্বরে বুকিং রেট বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৪০ ডলার। ফলে আমদানিকারকরা সয়াবিন ও পাম তেলে বুকিং করতে নিরুৎসাহিত হয়েছেন। এ কারণে আমদানি ও সরবরাহ কমেছে। তাই বাজারে তেলের দাম বেড়েছে।

খাতুনগঞ্জে ভোজ্যতেলের পাইকারি ব্যবসায়ী মো. কামাল উদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের বুকিং রেট বেড়েছে। ফলে আমদানিও কমেছে। পাশাপাশি কোম্পানিগুলো আমাদের চাহিদামতো সয়াবিন দিতে পারছে না। ফলে সরবরাহও কমে গেছে। তাই দাম বেড়েই চলেছে।

এদিকে গত জুলাই মাসের শেষদিকে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) পরিশোধিত চিনি ৪ হাজার ৯৯৪ টাকায় বিক্রি হয়। আগস্ট মাসের শেষে এসে দাম কমে পণ্যটি মণপ্রতি বিক্রি হয় ৪ হাজার ৩৩০ টাকায়। একমাসের ব্যবধানে প্রতি মণ চিনিতে ২১০ টাকা বেড়ে ৪ হাজার ৫৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন খবরের কাগজকে বলেন, বর্তমানে ডিম, আলু, চাল, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ কোনো পণ্যের দাম বাড়ানো বাকি নেই। নানা অজুহাতে সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়তি করে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। সাধারণ মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। গত অর্থবছরে চাহিদার তুলনায় বেশি ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে। তাই দাম কেন দফায় দফায় বাড়ছে সেটা ভোক্তা অধিকার, জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকেই খতিয়ে দেখতে হবে। ব্যবসায়ীদের কারসাজি থাকলে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. ফয়েজ উল্যাহ খবরের কাগজকে বলেন, আমরা আমাদের সীমিত জনবল নিয়ে প্রতিদিন নগরের বিভিন্ন বাজারে অভিযান পরিচালনা করছি। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। অপরাধ পেলে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব। 

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ পণ্যের উৎপাদন খরচ কমাতে হবে

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪৯ এএম
পণ্যের উৎপাদন খরচ কমাতে হবে
রাজধানী সেগুনবাগিচায় গত শনিবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনিসটিটিউটে নাগরিক প্লাটফর্ম ভয়েস ফরম রিফর্ম আয়োজিত 'দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি : সংকট সমাধানের আশু উপায়' শীর্ষক সংলাপে উপস্থিত বক্তারা। ছবি : সংগৃহীত

শুধু বাজার তদারকি কিংবা চাঁদাবাজি কমানোর মাধ্যমে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমানো যাবে না। দীর্ঘ মেয়াদে নিত্যসামগ্রীর দাম কমাতে হলে পণ্যের উৎপাদন খরচ কমাতে হবে। একই সঙ্গে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়ে সরকারের নীতির স্থিতিশীলতা থাকতে হবে।

গত শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ভয়েস ফর রিফর্ম আয়োজিত এক সংলাপে এসব কথা বলেন বক্তারা। ‘দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি: সংকট সমাধানের আশু উপায়’ শীর্ষক সংলাপে বক্তারা আরও বলেন, সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভুল নীতির কারণে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি তৈরি হয়েছে। ফলে মূল্যস্ফীতি কমাতে হলে এসব নীতির সংশোধন করতে হবে।

সংলাপের সঞ্চালনা করেন ভয়েস ফর রিফর্ম প্ল্যাটফর্মের সহ-আহ্বায়ক ও তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা ফাহিম মাশরুর। তিনি বলেন, ‘দুই বছরের বেশি সময় ধরে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি রয়েছে। আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পরে আমরা আশা করেছিলাম, জিনিসপত্রের দাম কিছুটা কমবে; কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এমন প্রেক্ষাপটে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।’

অনুষ্ঠানে মূল আলোচক ছিলেন এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সমন্বিত পল্লী উন্নয়ন কেন্দ্রের (সিরডাপ) পরিচালক (গবেষণা) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, অর্থনীতিবিদ জ্যোতি রহমান ও চালডালের প্রধান নির্বাহী (সিইও) ওয়াসিম আলীম।

সিরডাপ পরিচালক (গবেষণা) মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, জিনিসপত্রের দাম বাড়ার পেছনে যে সিন্ডিকেটের কথা বলা হয়, আমি তা ঠিক মনে করি না। কোনো সিন্ডিকেট দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ দাম ধরে রাখতে পারে না, বরং অতীতে নেওয়া বিভিন্ন সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতির কারণে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে। আগের সরকারের প্রবৃদ্ধি দেখানোর নীতির নেতিবাচক ফল হচ্ছে আজকের মূল্যস্ফীতি।

মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন আরও বলেন, বাজারে সরবরাহ পরিস্থিতি এবং চাঁদাবাজির মতো খরচের কারণে জিনিসপত্রের দামে প্রভাব পড়ে, কিন্তু তা সাময়িক। উৎপাদন ব্যয়ের প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। সে জন্য দীর্ঘ মেয়াদে পণ্যের দাম কমাতে হলে উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের নীতির ধারাবাহিকতা ও স্থিতিশীলতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ডলারের বিপরীতে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন হওয়া জিনিসপত্রের দাম বাড়ার পেছনে অন্যতম কারণ বলে মনে করেন চালডালের সিইও ওয়াসিম আলীম। তিনি বলেন, আড়াই বছরের মধ্যে ১ ডলারের দাম ৮৬ টাকা থেকে ১২০ টাকা হয়েছে। এটি মূল্যস্ফীতির অন্যতম কারণ। বিগত সময়ে অবাধে টাকা ছাপানো ও টাকা পাচারের কারণেও দ্রব্যমূল্যে প্রভাব পড়েছে।

ওয়াসিম আলীম আরও বলেন, এখন জিনিসপত্রের দাম কমাতে হলে পণ্যের উৎপাদন বাড়াতে হবে। পাশাপাশি বেশ কিছু পণ্যে আমদানি শুল্কও কমাতে হবে। বিশেষ করে দেশে প্রোটিন খাওয়া বেড়েছে; এখানে যত আমদানি শুল্ক আছে, তা তুলে নেওয়া উচিত। এ ছাড়া শুল্ক কমালে চাল, চিনি, পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল- এ ধরনের পণ্যের দামও কমা উচিত।

অর্থনীতিবিদ জ্যোতি রহমান বলেন, ২০১৪-১৯-এর সময়ে দেশে করোনা ছিল না, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়নি, মুদ্রার বিনিময় হার ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছিল। তখনো দেশে প্রায় ৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি ছিল। অথচ একই সময়ে প্রতিবেশী দেশগুলোয় মূল্যস্ফীতি তুলনামূলক কম ছিল। তখন অর্থনীতি ঠিকভাবে পরিচালিত না হওয়ায় মূল্যস্ফীতি বেশি ছিল। পরে বৈশ্বিক নানান চ্যালেঞ্জের কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়ে আজকের পর্যায়ে উঠেছে। সামষ্টিক অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান সামষ্টিক নীতির মাধ্যমেই করতে হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সাময়িকভাবে প্রবৃদ্ধি কমে গেলেও তা মেনে নিতে হবে।

উন্মুক্ত আলোচনায় শপআপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান মোকামের চিফ অব স্টাফ জিয়াউল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘দেশে পণ্য উৎপাদন ও চাহিদার বিষয়ে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোসহ (বিবিএস) অন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য বিশ্বাসযোগ্য নয়। সে জন্য আমরা পণ্যের চাহিদা ও সরবরাহ বিবেচনা করে দীর্ঘ মেয়াদে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। অথচ আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত পরবর্তী দু-এক বছরে পেঁয়াজের মতো পণ্য রপ্তানি করবে কি না, সেটা আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নেয়।’

এসিআই লজিস্টিকসের (স্বপ্ন) হেড অব বিজনেস (কমোডিটি) নিয়াজ মোর্শেদ বলেন, ‘পচনশীল পণ্যের জন্য আমাদের সরবরাহ খাত উপযোগী নয়। পণ্যের অপচয় কমিয়ে আনা গেলে জিনিসপত্রের দাম অনেকটা কমবে।’

উন্মুক্ত আলোচনায় বক্তারা বাজার তদারকিতে জোর দেন। তারা বলেন, গত দেড় মাসের মধ্যে চালের দাম তিন থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে; এর কারণ ধানের দাম বেড়েছে। কিন্তু ধানের বাজার তদারক করা হয় না। এ ছাড়া পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ভারতের ওপর অতিনির্ভরতা কমিয়ে আনারও পরামর্শ দেন তারা।