দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে বাজার মূলধন ও সূচক কমেছে। আলোচ্য সময়ে বাজার মূলধন কমেছে ৭ হাজার ১৫০ কোটি টাকার বেশি। তবে গড় লেনদেন সামান্য বেড়েছে।
আলোচ্য সপ্তাহ শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৯২ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৫৮১ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ বা ৭ হাজার ১৫০ কোটি টাকা।
সপ্তাহজুড়ে প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৭৯৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৭৯২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে দশমিক ৭৯ শতাংশ।
বিদায়ী সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয়েছিল ৩ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ৮২৪ কোটি টাকা।
আলোচ্য সপ্তাহে ডিএসইর সূচকে ঊর্ধ্বমুখী প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৭৫ দশমিক ৭৭ পয়েন্ট। ডিএসই-৩০ সূচক কমেছে ১০ দশমিক ৩৫ পয়েন্ট। আর ডিএসইএস সূচক কমেছে ১২ দশমিক ৪৫ পয়েন্ট।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট ৩৯৫টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৭৬টির, কমেছে ৩১১টির এবং ৮টি কোম্পানির শেয়ারের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
খাতভিত্তিক লেনদেনচিত্রে দেখা যায়, গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে ব্যাংক খাত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ দখলে নিয়েছে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাত। ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাত। এ ছাড়া ১০ দশমিক ৯ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে চতুর্থ অবস্থানে ছিল জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত। আর বস্ত্র খাতের দখলে ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে ইতিবাচক রিটার্নে শীর্ষে ছিল বিবিধ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও জীবন বিমা খাত। এ তিন খাতে ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে যথাক্রমে ১, দশমিক ১ ও দশমিক ১ শতাংশ। অন্যদিকে নেতিবাচক রিটার্নে শীর্ষে ছিল কাগজ, ভ্রমণ ও মিউচুয়াল ফান্ড খাত। এসব খাতে নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে যথাক্রমে ৫ দশমিক ৮, ৫ দশমিক ১ ও ৪ দশমিক ৮ শতাংশ।
ডিএসইতে বিদায়ী সপ্তাহে লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি।
সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির প্রতিদিন গড়ে ৪১ কোটি ৪৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা ছিল ডিএসইর মোট লেনদেনের ৫ দশমিক ১৯ শতাংশ। ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনায় এ তথ্য জানা গেছে।
লেনদেনের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির প্রতিদিন গড়ে ৩৪ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা ছিল ডিএসইর লেনদেনের ৪ দশমিক ৩২ শতাংশ।
তৃতীয় স্থানে রয়েছে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির প্রতিদিন গড়ে ৩৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা ছিল ডিএসইর লেনদেনের ৪ দশমিক ১৯ শতাংশ।
এ ছাড়া প্রতিদিন গড় লেনদেনে সাপ্তাহিক শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে এমজেএল বাংলাদেশের ২৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা, লিন্ডে বাংলাদেশের ২৪ কোটি ৫০ লাখ, গ্রামীণফোনের ২০ কোটি ৯২ লাখ, ইবনে সিনা ফার্মার ১৪ কোটি ৭৪ লাখ, লাভেলো আইসক্রিমের ১৩ কোটি ৭৩ লাখ, মিডল্যান্ড ব্যাংকের ১৩ কোটি ৬৪ লাখ এবং আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসির ১৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
ডিএসইতে গত সপ্তাহে লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে এসেছে লিন্ডে বাংলাদেশ লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ৩৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
সাপ্তাহিক দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২৪ দশমিক ৮২ শতাংশ দর বৃদ্ধিতে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে লিব্রা ইনফিউশন এবং ২১ দশমিক ৫০ শতাংশ দর বৃদ্ধিতে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে খান ব্রাদার্স।
দর বৃদ্ধির তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলো হলো ন্যাশনাল টি, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, লাভেলো আইসক্রিম, জিপিএইচ ইস্পাত, উসমানিয়া গ্লাস এবং তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল মিলস।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দরপতনের শীর্ষে উঠে এসেছে নিউলাইন ক্লোথিংস লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর ২৭ দশমিক ৩১ শতাংশ কমেছে।
সাপ্তাহিক দরপতনের শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১৯ দশমিক ১৭ শতাংশ দরপতনে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে খুলনা পাওয়ার এবং ১৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ দর বৃদ্ধিতে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে শাইনপুকুর সিরামিকস।
সাপ্তাহিক দরপতনের শীর্ষ তালিকায় স্থান পাওয়া অন্য কোম্পানিগুলো হলো কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ, ইয়াকিন পলিমার, ওরিয়ন ইনফিউশন, বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক, ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, ইবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড এবং জুট স্পিনার্স লিমিটেড।
দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গত সপ্তাহে সার্বিক সূচক সিএএসপিআই দশমিক ৮৭ শতাংশ কমে ১৬ হাজার ৩৭৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের সপ্তাহে যা ছিল ১৬ হাজার ৫২০ পয়েন্ট। সিএসসিএক্স সূচকটি গত সপ্তাহ শেষে দশমিক ৭৯ শতাংশ কমে ৯ হাজার ৮৭৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে, আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ৯ হাজার ৯৫৫ পয়েন্ট।
সিএসইতে গত সপ্তাহে ৭২ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের সপ্তাহে হয়েছিল ২৭৪ কোটি টাকা। গত সপ্তাহে সিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩২৪টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৯১টির, কমেছে ২২১টির আর অপরিবর্তিত ছিল ১২টির বাজারদর।