ভারতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত কর্মসংস্থান কমেছে। গত এক দশকের মধ্যে দেশটির এই রপ্তানিনির্ভর কর্মসংস্থানের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এর মধ্যে গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে এই খাতের কর্মসংস্থান কমেছে প্রায় ১২ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চীন শ্রম-নিবিড় উৎপাদন (যে কাজে মানুষের শ্রমের বেশি প্রয়োজন হয়) খাত থেকে সরে যাওয়ার সুযোগ ভারত কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে বলে জানিয়েছে বৈশ্বিক দাতা সংস্থাটি। খবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের।
বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদরা উল্লেখ করেছেন, গত এক দশকে পোশাক, চামড়া, টেক্সটাইল ও জুতাসহ শ্রম-নিবিড় খাতের বৈশ্বিক রপ্তানিতে ভারতের অংশ কমে গেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, পোল্যান্ড, জার্মানি ও ফ্রান্সের মতো দেশগুলোর রপ্তানি ২০১৫ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
চলতি বছরের মে মাসে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের শ্রম-নিবিড় খাত যেমন টেক্সটাইল, চামড়া, রত্ন ও গহনা এবং সামুদ্রিক পণ্যগুলো তীব্র হ্রাসের সম্মুখীন হচ্ছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী এই চারটি খাত থেকে পাঁচ বছর আগে (২০১৮ অর্থবছরে) করোনা মহামারি-পূর্ব স্তরের তুলনায় ভারতের রপ্তানি প্রায় ১২ শতাংশ কমেছে।
খবরে বলা হয়, ভারতের টেক্সটাইল ও পোশাক রপ্তানি যেখানে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি (৩৫ বিলিয়ন) মার্কিন ডলারের আশপাশে অবস্থান করছে, সেখানে ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ তাদের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) এবং স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) মর্যাদার সুবিধা পেয়ে বাজারের একটি বড় অংশ দখল করেছে। এই মর্যাদার (এলডিসি) কারণে পশ্চিমা দেশগুলোতে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ শুল্ক ছাড় পেয়ে থাকে দেশ দুটি।
বিশ্বব্যাংকের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ভারত গত অর্থবছরে ৮ দশমিক ২০ শতাংশের প্রবৃদ্ধির হারের মধ্য দিয়ে দ্রুততম ক্রমবর্ধমান প্রধান অর্থনীতির দেশ হলেও, সেখানে শহুরে যুব বেকারত্বের হার ১৭ শতাংশের ওপরে রয়েছে। প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক পরামর্শ দিয়ে বলেছে, আরও বেশি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কিত চাকরি সৃষ্টি করার জন্য ভারতকে গভীরভাবে বিশ্বব্যাপী মূল্য শৃঙ্খলে দৃষ্টি দেওয়া উচিত, যা উদ্ভাবন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্যও সুযোগ সৃষ্টি করবে।
বিশ্বব্যাংক বলেছে, বিশ্ব বাণিজ্যের পরিবেশ চ্যালেঞ্জপূর্ণ এবং এটি একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তা সত্ত্বেও ভারতের গতিশীল সেবা রপ্তানি উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে কাজে লাগানোর বিপুল ও অপূর্ব সম্ভাবনা রয়েছে।
এ বিষয়ে এক বিবৃতিতে বিশ্বব্যাংক বলেছে, আরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য গ্লোবাল ভ্যালু চেইনগুলো (জিভিসি) ভারত তাদের সম্পূর্ণ সম্ভাবনার সর্বোচ্চ পর্যায়ে কাজে লাগাতে পারে। বিশ্বব্যাংকের ভাষ্যমতে, ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো গ্লোবাল ভ্যালু চেইনে একীভূত হওয়ার মাধ্যমে উল্লেখযোগ্যভাবে উপকৃত হতে পারে। তবে নীতিগত বাধা ও অন্যান্য সীমাবদ্ধতার কারণে ভারতের গ্লোবাল ভ্যালু চেইনে অংশগ্রহণ কমে গেছে।
বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদরা পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, ভারত রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ, পরিবর্তিত ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি কাজে লাগানো, বাণিজ্য খরচ কমানো এবং বাণিজ্য সুবিধা বাড়ানোর জন্য একটি নতুন কৌশল বের করে সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা করলে সুফল পেতে পারে। বিশ্বব্যাংক আরও বলেছে, ভারত বাণিজ্য সুবিধা ও বিশ্ববাজারের সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগের ক্ষেত্রে অগ্রগতি করেছে। তবে পণ্য, পরিষেবা ও বিনিয়োগকে প্রভাবিত করে এমন নতুন বাধাগুলোর কারণে তাদের অগ্রগতি সীমিত হয়েছে।