পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা পাওয়া রাশিয়ার দুই অলিগার্কের (কোনো দেশ বা সংগঠনের ওপর অসীম ক্ষমতাবান ব্যক্তি বা গোষ্ঠী) সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে যুক্তরাজ্যের বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী সংস্থা হারবার এনার্জি। একটি জার্মান কারখানা কেনার জন্য রাশিয়ান ওই দুই অলিগার্কের সঙ্গে এই চুক্তি করা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যের বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী কোম্পানিটির আংশিক মালিক হয়ে উঠেছেন তারা। এরা হলেন মিখাইল ফ্রিডম্যান ও পেটার অ্যাভেন। খবর বিবিসির।
ব্রিটিশ সম্প্রচার মাধ্যমটির খবরে বলা হয়, রাশিয়ান অলিগার্ক মিখাইল ফ্রিডম্যান ও পেটার অ্যাভেনের যৌথ মালিকানাধীন বিনিয়োগ কোম্পানি হলো লেটারওয়ান। এই চুক্তির মাধ্যমে লেটারওয়ান এখন হারবার এনার্জির প্রায় ১৫ শতাংশের মালিক।
হারবার এনার্জি যুক্তরাজ্যের জলসীমা থেকে তেল ও গ্যাস উত্তোলনকারী বৃহত্তম কোম্পানি। কোম্পানিটি রাসায়নিক জায়ান্ট বিএসএএফ থেকে তাদের জার্মানিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান উইন্টারশাল ডিইএর বেশির ভাগ তেল ও গ্যাস উত্তোলন সম্পদ কিনে নিয়েছে।
লেটারওয়ান হলো উইন্টারশাল নামের আরেকটি কোম্পানির আংশিক মালিক। তারা তাদের উইন্টারশালের শেয়ার ছেড়ে দিয়েছে এবং এর বদলে তারা হারবার এনার্জি কোম্পানির শেয়ার নিয়েছে। তবে উইন্টারশালের কিছু সম্পদ, যেমন রাশিয়ার গ্যাজপ্রম কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে পরিচালিত ব্যবসা এই বিনিময়ের অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এই সম্পদগুলো এখনো জার্মানির বিএএসএফ কোম্পানির কাছেই রয়ে গেছে।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, লেটারওয়ান হারবার এনার্জিতে কোনো ভোটিং অধিকার পাবে না, তবে এটি হারবারের মুনাফার একটি পরিমাণ লভ্যাংশ হিসেবে পাবে। তবে যদি দুই রাশিয়ান ব্যবসায়ীর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়, তাহলে লেটারওয়ানের শেয়ার সম্ভাব্যভাবে ভোটিং শেয়ারে রূপান্তরিত হতে পারে।
খবরে বলা হয়, লেটারওয়ান বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ধরনের সম্পত্তির মালিক, যার সম্পদের মূল্য ১৮ বিলিয়ন ডলার (১৩ দশমিক ৮০ বিলিয়ন পাউন্ড)। তাদের এই সম্পত্তির মধ্যে হেলথ ফুডের খুচরা বিক্রেতা হল্যান্ড ও ব্যারেটও অন্তর্ভুক্ত। প্রসংগত, হেলথ ফুড হলো- ফল, শাকসবজি, শিম, বাদাম ও দানাদার শস্যজাতীয় খাবার।
রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পরই ২০২২ সালের মার্চে ফ্রিডম্যান ও অ্যাভেনকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। একসঙ্গে তারা গ্রুপের ৫০ শতাংশেরও কম শেয়ারের মালিক। বাকি বেশির ভাগের মালিকানা আরেক রাশিয়ান নাগরিক আন্দ্রেই কোসোগভের। তবে কোসোগভের ওপর পশ্চিমাদের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।
সরকার লেটারওয়ানকে ২০২২ সালে আঞ্চলিক ব্রডব্যান্ড প্রদানকারী কোম্পানি ‘আপ’কে বিক্রি করতে বাধ্য করেছিল। সে সময় বলা হয়েছে কোম্পানিটি ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি’ বয়ে আনছে। তবে লেটারওয়ান তাদের প্রতিষ্ঠান বিক্রি করতে অস্বীকার করেছে এবং সরকারি এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করছে।
গ্লোবাল উইটনেস নামের একটি ক্যাম্পেইন গ্রুপের জীবাশ্ম জ্বালানি তদন্ত বিভাগের প্রধান লুই উইলসন বলেছেন, যুক্তরাজ্য সরকার ও হারবারের এই চুক্তি থেকে এক মাইল দূরে থাকা উচিত ছিল। লুই উইলসন বলেন, নিষেধাজ্ঞা পাওয়া রাশিয়ান অলিগার্কদের আংশিক মালিকানাধীন কোম্পানি, যেটিকে কনজারভেটিভ পার্টির পক্ষ থেকে যুক্তরাজ্যের ব্রডব্যান্ড সংযোগের জন্য খুব বেশি নিরাপত্তাঝুঁকি বলে মনে করেছিল, তাকে যুক্তরাজ্যের বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারীর একটি বড় অংশ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাজ্যের জ্বালানিশিল্পে অলিগার্কদের কোনো স্থান থাকা উচিত নয়।