চট্টগ্রামের বেসরকারি ডিপোগুলোয় আমদানি-রপ্তানি পণ্য নিয়ে আসা ভারী যানবাহন থেকে অবৈধভাবে অতিরিক্ত পার্কিং ফি নেওয়া হচ্ছে বলে পরিবহন মালিকদের অভিযোগ।
অন্যদিকে, ডিপো কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, প্রাইভেট টার্মিনালগুলোয় ফি দিলে ডিপোতেও দিতে হবে। আইন অনুযায়ী, ডিপোতে পার্কিং চার্জ নেওয়ার কোনো নির্দেশনা নেই।
পণ্যবাহী পরিবহন মালিকরা বলছেন, আইনে বলা আছে, ডিপোর ভেতরে পর্যাপ্ত পরিসরের পার্কিং সুবিধা থাকতে হবে। কিন্তু অধিকাংশ ডিপোতে ওই সুবিধা নেই। তাই বাধ্য হয়ে প্রাইভেট টার্মিনালগুলোয় পার্কিং চার্জ দিয়ে গাড়ি রাখতে হয়। তবে বেসরকারি ডিপোতে পার্কিং চার্জ নেওয়ার জন্য কোনো নীতিমালা নেই। তাই ডিপো সংশ্লিষ্টদের দাবি অনৈতিক বলে উল্লেখ করছেন পরিবহন মালিকরা।
চট্টগ্রামে বর্তমানে ২০টি ডিপো রয়েছে। এর মধ্যে সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড (এসএপিএল), ওসিএল, ইস্পাহানি ইন কনট্রেড এবং কেডিএস- এই চারটি ডিপো কর্তৃপক্ষ আমদানি-রপ্তানি পণ্য নিয়ে আসা গাড়ি চালকদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। চার বছর আগে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, ডিপো কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ কাভার্ড ভ্যান ট্রাক প্রাইমমুভার পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশনের মধ্যে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, যেসব ডিপো কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা দেবেন, ওইসব ডিপোর ক্ষেত্রে পার্কিং চার্জ হবে ৫০ টাকা, ভ্যাট ৭ দশমিক ৫ টাকা, মোট ৫৭ দশমিক ৫ টাকা। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফি পরিশোধ করে আসছেন পরিবহন মালিকরা।
তবে সম্প্রতি পণ্য পরিবহন মালিক সমিতি বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) মহাসচিব রুহুল আমিন শিকদার, যিনি ইসহাক ডিপোর মহাব্যবস্থাপকও, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, রুহুল আমিন শিকদার বেসরকারি ডিপোগুলোয় ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা ডিপো চার্জ আদায়ের জন্য বাধ্য করছেন।
এ বিষয়ে রুহুল আমিন শিকদার জানিয়েছেন, ডিপো চার্জ নেওয়া যাবে কি না ওই বিষয়ে আইনে কোনো কিছু উল্লেখ নেই। পরিবহন মালিকরা যখন বাড়তি পরিবহন ভাড়া আদায় করেন, তখন তারা কোনো আলোচনা করে ভাড়া বাড়ান না। তাই আমরা পার্কিং চার্জ কত নেব বা বাড়াব কী কমাব- এই বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করার প্রয়োজন নেই। একটি ডিপো তৈরির জন্য বড় অঙ্কের বিনিয়োগ প্রয়োজন হয়। তাই ডিপো কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিলে, এর বিপরীতে চার্জ নেওয়া অনিবার্য। কারণ এটি একটি ব্যবসা।
আইন কী বলে?
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বেসরকারি আইসিডি/সিএফএস বা অফডক স্থাপন ও পরিচালনা সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২১-এর অনুচ্ছেদ-৩(ঙ) তে পার্কিং চার্জ সংবলিত কোনো নীতিমালা উল্লেখ নেই। আইনে বলা আছে-
‘অপেক্ষমাণ যানবাহনের পার্কিংয়ের জন্য আইসিডির অভ্যন্তরে পর্যাপ্ত পরিসরের পার্কিং সুবিধা থাকতে হবে। আইসিডি/সিএফএস ও তৎসংলগ্ন এলাকায়/সড়কে যাতে কোনো যানজট সৃষ্টি না হয়, ওই জন্য আইসিডি/সিএফএস পরিচালনাকারীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
বাংলাদেশ কাভার্ড ভ্যান ট্রাক প্রাইমমুভার পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব চৌধুরী জাফর আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘সম্প্রতি বিকডার মহাসচিব বাড়তি ডিপো চার্জ দেওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করছেন। তিনি দাবি করছেন, প্রাইভেট টার্মিনালগুলোয় আমরা যদি ১৫০-২৫০ টাকা পার্কিং চার্জ দিই, তাহলে ডিপো কর্তৃপক্ষকে আমরা দেব না কেন? এই যুক্তি একেবারেই অনৈতিক মনে করছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যে ডিপোগুলো পার্কিং চার্জ নিয়ে পীড়াপীড়ি করবে, তাদের আমরা বয়কট করতে বাধ্য হব, কারণ নীতিমালায় পার্কিং চার্জ দিতে হবে এমন কোনো নির্দেশনা নেই।’
বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা)-এর সভাপতি নরুল কাইয়ুম খান খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে জানতে পেরেছি। আমি মনে করি, দেশকে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে এগিয়ে নিতে হলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া বাড়াতে হবে, একে অপরের সহযোগী হতে হবে। পার্কিং চার্জ নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, আমি মনে করি, বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে যত দ্রুত সম্ভব সমাধান করা জরুরি। কারণ ব্যবসা-বাণিজ্যে আমরা সবাই একে অপরের পরিপূরক।’