করদাতাদের জন্য উন্মুক্ত করা হলো অনলাইন রিটার্ন দাখিল সিস্টেম। একই সঙ্গে ই-রিটার্ন সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যায় করদাতাদের সহায়তায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) কল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) থেকে কল সেন্টারের ০৯৬৪৩৭১৭১৭১ নম্বরে ফোন করে করদাতারা ই-রিটার্ন ও রাজস্ব সংক্রান্ত যেকোনো সেবা নিতে পারবেন।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান এফসিএমএবি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ অনলাইনে আয়কর রিটার্নবিষয়ক সিস্টেম উদ্বোধন করেন। এনবিআর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, অন লাইনে ইটিআইএন গ্রহণ, কর পরিশোধ, অন লাইনে রিটার্নসহ রাজস্ববিষয়ক কাজ করা সম্ভব হলে দুর্নীতি করার সুযোগ থাকবে না। সামনাসামনি দেখা করে এসব কাজ করতে গেলে অনেক সময় অনৈতিক লেনদেনের সুযোগ তৈরি হয়। তাই অন লাইনই ভালো ব্যবস্থা।
তিনি বলেন, বিদেশে থাকার সময় কোনো দিন কর কর্মকর্তা- কর্মচারীদের দেখা মেলেনি। সব অন লাইনেই করতে হয়েছে। এমন কি রেয়াত পাওয়া গেলে বা ভুল করে বেশি কর দিয়ে দিলে তাও অন লাইনে ব্যাংকে ফেরত আসে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, দেশের উন্নয়নের জন্য অবশ্যই কর দিতে হবে। রাজস্ব আদায় করা সম্ভব না হলে সরকার অর্থ পাবে কোথা থেকে? তবে কাউকে কষ্ট দিয়ে রাজস্ব আদায় করা হবে না। যারা নিয়মিত কর দিচ্ছেন তাদের ওপরও চাপ সৃষ্ট করা হবে না। বরং আওতা বাড়াতে হবে। অনেকে কর দিতে সক্ষম। কিন্তু দিচ্ছেন না। তাদেরকে করের আওতায় আনতে হবে।
উপদেষ্টা বলেন, অনেকে প্রশ্ন করেন যে আমি কর দিচ্ছি। কিন্তু কি পাচ্ছি? তার উত্তরে আমি বলেছি, দেশের উন্নয়ন হবে এটাই আপনার প্রাপ্তি। দেশ এগিয়ে গেলে অবশ্যই আপনি উপকৃত হবেন।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এনবিআরের ওপর চাপ থাকে। আদায় করতে না পরলে সরকার বেকায়দায় পড়বে। সামনে বাজেট প্রণয়ন করা হবে। এবার আয়-ব্যয়ের সামঞ্জস্য রেখে বাজেট প্রণয়ন করা হবে। এরই মধ্যে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল করা হয়েছে। অনৈতিক কিছু রাখতে চাই না।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, চলমান রাজস্ব সংক্রান্ত বিভিন্ন আইনে যে অসামঞ্জস্য রয়েছে তা দূর করা হবে। বিশেষভাবে সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের বিষয়টিও দেখা হবে। এ ছাড়া আমরা যারা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী তারা সাধারণ মানুষের করের টাকায় সুবিধা নিয়ে থাকি। অবশ্যই সুবিধাগুলো যাতে আইনের মধ্যে সঠিকভাবে নিশ্চিত হয় তা দেখা হবে। অর্থপাচার সংক্রান্ত আইনের মধ্যে থেকে সব পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে। সব কাজ স্বচ্ছতার সঙ্গে করা হবে। কোনো কিছু গোপন করে করা হবে না।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ২০২১ সালে এই সিস্টেম চালু করার পর ২০২১-২০২২ কর বছরে ৬১ হাজার ৪৯১ জন, ২০২২-২০২৩ কর বছরে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৪৮১ জন ও ২০২৩-২০২৪ কর বছরে ৫ লাখ ২৬ হাজার ৪৮৭ জন করদাতা ই-রিটার্ন দাখিল করেছেন। অতীতের অন লাইনে যা হয়েছে তার থেকে অনেক উন্নতভাবে এবারে শুরু করা হয়েছে। আশাকরি ভালো ফল পাওয়া যাবে। প্রথম দিকে হয়তো কিছুটা সমস্যা হবে। তবে সময়ের সঙ্গে তা ঠিক করে ফেলা হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক এ জেনোসিসের কারিগরি সহায়তায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সামনের কর বর্ষে ১ জুলাই থেকে করদাতারা সম্পূর্ণভাবে অন লাইনে রিটার্ন দাখিল করতে পারবে। এতে করদাতাদের স্বাচ্ছন্দ্য ও দ্রুততম সেবা নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের ২০২৪-২০২৫ কর বছরের অনলাইন রিটার্ন দাখিলের জন্য অনলাইন রিটার্ন দাখিল সিস্টেম আপডেট করা হয়েছে।
চেয়ারম্যান বলেন, ৯ সেপ্টেম্বর থেকে অনলাইন রিটার্ন দাখিল সিস্টেমটি করদাতাদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। করদাতারা চাইলে ঘরে বসেই www.etaxnbr.gov.bd ওয়েবসাইটে নিজের তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে সহজেই রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে ২০২৪-২০২৫ কর বছরের ই-রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, www.etaxnbr.gov.bd এর e-TaxService অপশন হতে করদাতারা ই-রিটার্ন সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা লিখিতভাবে জানাতে পারবেন এবং সমাধান পাবেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, ই-রিটার্ন সিস্টেম ব্যবহার করে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা নিজের রিটার্ন তৈরি, অনলাইনে রিটার্ন দাখিল অথবা অফলাইনে রিটার্ন দাখিলের জন্য প্রিন্ট গ্রহণ, অনলাইন ব্যাংকিং, ক্রেডিট কার্ড/ডেবিট কার্ড বা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (নগদ, বিকাশ, রকেট ইত্যাদি) মাধ্যমে কর পরিশোধ, রিটার্ন দাখিলের তাৎক্ষণিক প্রমাণ প্রাপ্তি, আয়কর পরিশোধ সনদ ও টিআইএন সনদ প্রাপ্তি, পূর্ববর্তী কর বছরের দাখিলকৃত ই-রিটার্নের কপি ও রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ ডাউনলোডের সুবিধা পাবেন। এই সিস্টেমে রেজিস্ট্রেশন করতে টিআইএন ও করদাতার নিজ নামে বায়োমেট্রিক ভেরিফায়েড মোবাইল নম্বর প্রয়োজন হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
কীভাবে অন লাইনে রিটার্ন দিবেন: অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া জন্য এনবিআর একটি স্মার্ট ই-রিটার্ন সিস্টেম তৈরি করেছে। ই-রিটার্ন সিস্টেমটি ব্যবহার করার সময় আপনার মোবাইল ফোন নম্বর যেটি বায়োমেট্রিকলি ভেরিফাইড এবং ই-টিন নম্বর প্রয়োজন হবে। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র যেমন- বেতন সনদপত্র, বিনিয়োগ (সঞ্চয়পত্র, এফডিআর, ডিপিএস, জীবন বিমা ইত্যাদি), ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ফ্ল্যাট, জমির তথ্য ইত্যাদি সঙ্গে রাখতে হবে। না থাকলে আগে তুলে নিতে হবে। আপনার ডকুমেন্টস থেকে নিজস্ব অনেক তথ্য ই-রিটার্নে ইনপুট দিতে হবে। অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার জন্য প্রথমেই ই-রিটার্ন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। এবার ই-রিটার্ন বাটনে ক্লিক করতে হবে। এরপর ডান পাশের সাইডবারের সবার নিচে থাকা রেজিস্ট্রেশন বাটনে ক্লিক করতে হবে। এবার আপনার টিন নম্বর, মোবাইল নম্বর সঠিকভাবে দিয়ে ভেরিফাই অপশনে ক্লিক করতে হবে। আপনার দেওয়া ফোন নম্বরে যে ৬ অক্ষরের ওটিপি কোড যাবে সেটি এবার বসিয়ে একটি নতুন পাসওয়ার্ড দিয়ে দিতে হবে।
নতুন পাসওয়ার্ডটি আবার দিয়ে সাবমিট করতে হবে। পাসওয়ার্ড অবশ্যই শক্তিশালী হতে হবে। রেজিস্ট্রেশন করার সঙ্গে সঙ্গে আপনার একটি ই-রিটার্ন অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়ে যাবে। রেজিস্ট্রেশনের সময় অবশ্যই নিজের নামের মোবাইল নম্বরটি ব্যবহার করতে হবে। অন্য কারও মোবাইল নম্বর ব্যবহার করার চেষ্টা করলে আপনার টিনটি ব্লক করে দেওয়া হতে পারে। আপনি আর ই-রিটার্ন সিস্টেমে রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন না। রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেলে সাইন ইন করতে হবে।