ভারত থেকে ডিম আমদানি হলেও চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে এর দাম কমেনি। বরং প্রতি পিস ডিমের দাম ৪০ পয়সা বেড়ে গেছে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ভারত থেকে আমদানি করা ডিমগুলো সাদা রঙের এবং এসব ডিমের মূল ক্রেতা বেকারিগুলো। সাধারণ ভোক্তারা বাদামি রঙের ডিম বেশি পছন্দ করেন। বর্তমানে পাইকারি বাজারে প্রতি পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকা ২০ পয়সায়।
প্রতিবেশি দেশ থেকে আমদানি করা পণ্য সাধারণত পাইকারি বাজারে দাম কমায়, তবে এইবার ডিমের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। গতকাল বুধবার সকালে পাহাড়তলী বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল থেকে ১৭টি ডিমবাহী ট্রাক বাজারে প্রবেশ করেছে। প্রতিটি ট্রাকে বাদামি রঙের ডিম ছিল ১ লাখ ৪৪ হাজার পিস। টাঙ্গাইল ও ঢাকা থেকে ডিম এনে চট্টগ্রামের পাইকাররা বিক্রি করছেন ১২ টাকা ২০ পয়সায়। ভারত থেকে ডিম আমদানি হলেও পাইকারি বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি।
সাদা ডিম সি গ্রেডের?
ডিম ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দেশে দিনে এক কোটি ডিমের চাহিদা রয়েছে। ভারত থেকে এসেছে মাত্র ২ লাখ ৩১ হাজার ৮৪০ পিস ডিম, যা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। তা ছাড়া ভারত থেকে আমদানি করা ডিমগুলো সাদা রঙের এবং এসব ডিমের চাহিদা তুলনামূলকভাবে কম। সাদা ডিমের দাম কিছুটা কম থাকায় বেকারিতে এর চাহিদা বেশি থাকে। কিন্তু সাধারণ ভোক্তার কাছে বাদামি ডিমের চাহিদা বেশি। তাই সাদা ডিম আমদানি হলেও ভোক্তা পর্যায়ে ডিমের দাম কমেনি।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, দেশে দিনে ১ কোটি পিস ডিমের চাহিদা। ভারত থেকে আমদানি করা ডিমের পরিমাণ চাহিদার তুলনায় অনেক কম। সাদা ডিমের দাম কম থাকায় বেকারিতে এর চাহিদা বেশি। কিন্তু দেশে বাদামি ডিমের চাহিদা বেশি। বাদামি ডিমের ওজন ৬০ থেকে ৬৫ গ্রাম হয়ে থাকে, আর সাদা ডিমের ওজন ৫০ থেকে ৫৫ গ্রাম। ভারত থেকে আমদানি করা ডিমের বিক্রয় যথাযথভাবে না হলে পরবর্তী সময়ে আমদানিতে আগ্রহ কমতে পারে।
বন্যার সময় পণ্যবাহী পরিবহন বন্ধ থাকায় ডিমের সরবরাহ কমে গিয়েছিল। ২৬ আগস্ট পাহাড়তলী বাজারে প্রতি পিস বাদামি ডিমের দাম ছিল ১২ টাকা ৫০ পয়সা এবং ২৭ আগস্ট তা বেড়ে ১২ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ১৩ টাকা হয়ে যায়। যান চলাচল স্বাভাবিক হলে দাম কিছুটা কমে গিয়ে ৩ ও ৪ সেপ্টেম্বর প্রতি পিস ডিম ১১ টাকা ৬০ পয়সায় এবং ৫ সেপ্টেম্বর ১১ টাকা ৮০ পয়সায় বিক্রি হয়। তবে আবারও বন্যা এবং খামারিদের লোকসান, উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণে ১০ সেপ্টেম্বর দাম বেড়ে গিয়ে প্রতি পিস ডিম ১২ টাকা ১০ পয়সা হয়ে যায়। এক দিনের ব্যবধানে দাম আরও ১০ পয়সা বেড়ে বর্তমানে প্রতি পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকা ২০ পয়সা।
চট্টগ্রাম ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল শুক্কুর জানিয়েছেন, বর্তমানে ডিমের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে এবং চাহিদাও ভালো। তবে বাড়তি দরে ডিম কিনতে হচ্ছে, যার প্রভাব পাইকারি ও খুচরা বাজারে পড়ছে।
নগরের হালিশহর এলাকার বাসিন্দা মো. শাহ আলম বলেছেন, ‘ভারত থেকে ডিম আমদানি করে লাভ কী? খুচরা দোকানগুলোতে ভারত থেকে আমদানি করা ডিম পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে বাদামি রঙের ডিম ১৪ টাকা করে কিনতে হচ্ছে। চাহিদাকে পুঁজি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে রেখেছেন। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেছেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ডিমের বাজার চড়া। এসএমএসের মাধ্যমে পণ্যের দর নির্ধারণ করা হয়, যা নজর দেওয়া প্রয়োজন। ব্যবসায়ীদের ডিম কিনে আনার এবং বিক্রি করার মূল্য খতিয়ে দেখতে হবে এবং পাইকারি ও খুচরা বাজারে সমান তালে অভিযান পরিচালনা করতে হবে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. ফয়েজ উল্ল্যাহ জানিয়েছেন, তারা নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করছেন। ক্রয়-বিক্রয় রশিদ, মূল্য তালিকা, বাড়তি দামে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে কিনা সবকিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ডিমের দামে কোনো কারসাজি হচ্ছে কিনা তা যাচাই করা হবে।
যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর ভারতীয় একটি ট্রাকে ১ হাজার ১০৪ বক্সে ২ লাখ ৩১ হাজার ৮৪০ পিস ডিম আমদানি হয়েছে। শুল্কায়নসহ প্রতি পিস ডিমের দাম পড়েছে সাড়ে ৭ টাকা। ডিমগুলোর রপ্তানি করেছে ভারতের শ্রী লক্ষ্মী নারায়ণ ভান্ডার এবং আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দায়িত্বরত রয়েছে ঢাকার হাইড্রো ল্যান্ড সলিউশন। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছে বেনাপোলের রাতুল ইন্টারন্যাশনাল।