যশোরের চাষিরা বর্তমানে সোনালি ফসল পাট নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। রোদে পুড়ে আর বৃষ্টিতে ভিজে পাট ঘরে তোলার কাজে নেমেছেন কৃষকরা। বসে নেই কৃষাণীরাও। বিশেষ করে পাটখড়ি নিয়ে বেশি ব্যস্ত কৃষাণীরা। তারা এ কাজে কোমর বেঁধে নেমেছেন। পাটখড়ির দাম ভালো পাওয়ায় কৃষাণীরা বেজায় খুশি। তারা বাড়তি লাভ দেখছেন পাটখড়িতে।
কৃষি বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পাটখড়ি আজও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হয় গ্রাম-বাংলার দরিদ্র মানুষদের কাছে। এ জ্বালানি বারো মাস ব্যবহার করা হয়, বিশেষ করে বর্ষাকালে এর বেশি ব্যবহার হয়। পাটখড়ি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার ছাড়াও পার্টিক্যাল বোর্ড ও পাটখড়ি পুড়িয়ে তার ছাই কম্পিউটারের কালি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। ফলে পাটের পাশাপাশি পাটখড়ির দামও এবার ভালো। এতে কৃষকরা পাটখড়ি বিক্রি করে বেশ লাভবান হচ্ছেন।
সূত্র আরও জানায়, যশোর জেলার মধ্যে শার্শা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি পাট চাষ হয়েছে। এখানে তোষা, দেশি, মেছতা, কেনাফ জাতের পাট চাষ করা হয়। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫ হাজার ৪৬৫ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে ৫ হেক্টর বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে শার্শা উপজেলায় ৫ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ করা হয়েছিল।
এ উপজেলার কৃষকরা জানান, এবারে সোনালি আঁশ পাটের ভালো ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে পাট ধোয়ার পাশাপাশি নতুন পাট হাট-বাজারে বিক্রি শুরু হয়েছে। পাটের সঙ্গে এ মৌসুমে পাটখড়ির বেশ কদর বেড়েছে। পাটচাষিদের বাড়ি থেকে পাটখড়ি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। বাজারে ব্যাপক চাহিদা ও দাম বৃদ্ধির কারণে কৃষকরা খুশি। পাটখড়ি শুকানোর কাজ করছেন কৃষাণীরা।
শার্শা উপজেলার শ্যামলাগাছি গ্রামের পাটচাষি জাহান আলী জানান, এবার তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। ইতোমধ্যে কিছু পাট বাজারে তুলেছেন। সব জমির পাট থেকে যে পাটখড়ি পাবেন তা ভালোভাবে শুকিয়ে বিক্রি করতে পারলে ২০-২৫ হাজার টাকা বাড়তি আয় হবে তার।
একই উপজেলার লক্ষণপুরের মান্দারতলা গ্রামের কৃষক আলী আজগর বলেন, ‘এবার পাটের দামও ভালো। পাশাপাশি প্রতি আঁটি পাটখড়ি আকারভেদে ১০ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি করছি। আর পাইকারি ১০০ আঁটি পাটখড়ি ৯০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে কৃষকরা জ্বালানির চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি অর্থ ঘরে তুলতে পারছেন। গত বছরের চেয়ে এবার পাটখড়ি দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে।’
যশোর সদরের চাঁচড়া গ্রামের রূপদিয়া গ্রামের কৃষক আদিত্য বিশ্বাস জানান, এবার আড়াই বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে। তিনি বিঘাপ্রতি ৮-১০ মণ পেয়েছেন। পাটখড়িতে লাভ বেশি।
আরেক কৃষক সঞ্জয় সরকার জানান, তিনি দুই বিঘা জমিতে পাট আবাদ করেছেন। ফলন ভালো হয়েছে। এরই মধ্যে পাট বিক্রি করেছেন। পাটখড়ি ভালো দামে বিক্রি হবে বলে তিনি আশা করছেন।
যশোরের পাটখড়ি ব্যবসায়ী নুর ইসলাম ও করিম গাজী বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন গ্রামের কৃষকের বাড়ি থেকে পাটখড়ি কিনে শহরে বিক্রি করি। এ পাটখড়ির গ্রামাঞ্চলসহ শহরে বেশ চাহিদা রয়েছে। পাটখড়ি দিয়ে বাড়িঘরের বেড়া, সবজি খেতের বেড়া, মাচায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তা ছাড়া অনেক কৃষক পাটখড়ি পুড়িয়ে সার হিসেবে ছাই ব্যবহার করেন ফসলি মাঠে।’
শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দীপক কুমার সাহা বলেন, ‘ইতোমধ্যে পাট বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রতি মণ পাট জাতভেদে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাটের পাশাপাশি পাটখড়ি বিক্রি করেও বাড়তি উপার্জন করছেন কৃষকরা।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর জেলার কর্মকর্তা ড. সুশান্ত কুমার তরফদার জানান, ‘যশোরে এবার লক্ষ্যমাত্রারও বেশি পাটের আবাদ হয়েছে। চলতি মৌসুমে আট উপজেলায় পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২৫ হাজার ৩০০ হেক্টর। এ ক্ষেত্রে মোট ২৬ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে পাটের চাষাবাদ হয়েছে। গত মৌসুমে পাটের আবাদ হয়েছিল ২৩ হাজার ৫৬৫ হেক্টর। লাভজনক হয়ে ওঠায় যশোরে পাটের চাষাবাদ ও উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে।’