বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বাংলাদেশকে ২ দশমিক ২৫ বিলিয়ন বা ২২৫ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা দিতে সম্মত হয়েছে। টাকায় এই অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক দেবে ৭৫০ মিলিয়ন বা ৭৫ কোটি ডলার এবং এডিবি দিচ্ছে ১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন বা ১৫০ কোটি ডলার।
রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে বিশ্বব্যাংক ও এডিবি প্রতিনিধিদলের পৃথক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র হোসনে আরা শিখা জানিয়েছেন। এদিন সফররত মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গেও গভর্নরের অপর একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরবর্তী পটভূমিতে ব্যাংকিং খাতের আমূল সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগকে আর্থিক সহায়তা দিতেই রবিবার এসব বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বলে জানা গেছে। কী পরিমাণ আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন, তা নিরূপণ করতেই অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকারমূলক ইস্যুগুলো আমলে নিয়েই বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিরা তাদের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বেলা সাড়ে ১১টায় শুরু হয়ে বৈঠকটি কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী হয়। এ বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ছাড়াও শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বিশ্বব্যাংকের ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদলে ছিলেন আঞ্চলিক পরিচালক ম্যাথু এ ভার্গিস, কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে শেকসহ অন্যরা। এ ছাড়া এডিবি দক্ষিণ এশিয়ার মহাপরিচালক তাকিও কোনিশির নেতৃত্বে ঊর্ধ্বতন একটি প্রতিনিধিদল গভর্নরের সঙ্গে পৃথক বৈঠকে যোগ দেয়।
গত ৪ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ঘোষণা দেন যে ব্যাংক খাতের সংস্কারে টাস্কফোর্স হচ্ছে। এ সংস্কার কার্যক্রমে আর্থিক সহায়তা দেবে বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বিশ্বব্যাংক। এ লক্ষ্যে সংস্থা তিনটির কাছে ঋণ চাওয়া হলে তারা সম্মতি দেন বলে গভর্নর জানিয়েছিলেন।
গভর্নর বলেছিলেন, অত্যধিক খেলাপি ঋণের ভার ও তারল্যসংকটে জর্জরিত ব্যাংক খাতের সংস্কার করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। এ সংস্কারে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ পাওয়া গেলে তা ডলারের সরবরাহ বাড়ানোর মাধ্যমে রিজার্ভকে শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে। ঋণ দিতে ওই তিন উন্নয়ন অংশীদারের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার পর এখন চাহিদাপত্র ও ঋণের উপখাত সৃজন নিয়ে কাজ চলছে। কী পরিমাণ ঋণ চাওয়া হবে এবং সুদহার কত হবে তার বিস্তারিত থাকবে ওই চাহিদাপত্রে। এখনো তা চূড়ান্ত হয়নি। মূলত ওই চাহিদাপত্রের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত আসবে আইএমএফ, এডিবি ও বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে। এ প্রেক্ষাপটেই বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিদল রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈঠক করেছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, ব্যাংক খাত সংস্কারের পাশাপাশি এ ঋণ সহায়তা বাংলাদেশ ব্যাংকের আধুনিকায়ন এবং সক্ষমতা বাড়ানোর কাজেও ব্যয় করা হবে। এ ঋণ থেকে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে মূলধন সহায়তা দেওয়া যায় কি না, তা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। এ ঋণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে। ঋণ সহায়তা মিলতে পারে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকেও।
এদিকে দুই বছর ধরেই ডলারসংকটে ভুগছে বাংলাদেশ। এর প্রভাবে বিনিময় হারে অস্থিরতা তৈরি হয় এবং ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয় প্রায় ৩৫ শতাংশ। এ সংকট কাটাতে গত বছরের জানুয়ারিতে আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি করে বিগত সরকার। এই ঋণ চলমান রয়েছে।
এদিকে মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পৃথক বৈঠক করেছেন। বৈঠকে ব্যাংক খাতের বিদ্যমান পরিস্থিতি, বিশেষ করে খেলাপি ঋণ, অর্থ পাচার, পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনতে মার্কিন সহযোগিতা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া ব্যাংক খাতের সংস্কার পরিকল্পনা সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ সময় মার্কিন প্রতিনিধিদলের প্রধান ইউএস ট্রেজারির আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের কাছে বাংলাদেশের সংস্কারে আর্থিক সহায়তা চান গভর্নর। তবে মার্কিন প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো প্রতিশ্রুতি আসেনি বলে জানানো হয়েছে।