আকস্মিক বন্যায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় কৃষক, মৎস্যচাষি ও খামারিরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। বন্যায় ভেসে গেছে ফসলের মাঠ, পুকুর, মাছের ঘের, হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশুর খামার। বন্যা-পরবর্তী কৃষি পুনর্বাসনের অংশ হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে ধানের চারা, সবজির বীজ, মুরগির বাচ্চা, সার, কীটনাশক ও মাছের পোনা সরবরাহ করছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) শিক্ষার্থীরা। ঢাকা ব্যাংক ও কাজী ফার্মের সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনও ওই কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছে।
ধানের চারা বিতরণ
বন্যায় এবার আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এদিকে বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষ অনেকাংশেই আমন ধানের ওপর নির্ভরশীল। এ বিবেচনায় গত শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ৭৫ জন কৃষকের মাঝে ১০ একর জায়গায় চাষ উপযোগী ধানের চারা বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩০ জন কৃষক ব্রি-৭৫, ২৫ জন কৃষক বিনা-১৭, এবং ২০ জন কৃষক বিআর-২৩ ধানের চারা পেয়েছেন। এ ছাড়া কৃষকদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে ধানের চারা চাষের জন্য প্রয়োজনীয় সার ও কীটনাশকও বিতরণ করা হয়েছে।
সবজির চারা ও সার বিতরণ
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে সবজির চারা বিতরণ করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ। কুমিল্লার বুড়িচং, চান্দিনা, দেবীদ্বার উপজেলা ও ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় ৫০০ জন প্রান্তিক কৃষককে বসতবাড়িতে চাষের জন্য ২০ হাজার চারা দেওয়া হবে। পাশাপাশি বীজ থেকে ফসল তৈরিতে নিরাপদ সার হিসেবে কৃষকদের মধ্যে ভার্মিকম্পোস্ট ও জৈবপ্রযুক্তি হিসেবে ক্লিবায়ো বিতরণ করা হবে। ইতোমধ্যে দুই ধাপে প্রায় ১০ হাজার সবজি চারা কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বারোমাসি লাউ, বারোমাসি কুমড়া, মরিচ, বেগুন ও টমেটোর চারা।
মুরগির বাচ্চা বিতরণ ও মাছের পোনা উৎপাদনে উদ্যোগ
ধান বীজ ও সবজি চারা বিতরণের পাশাপাশি পোলট্রি ও মৎস্য খাতে জড়িত কৃষকদেরও সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়টি এগিয়ে এসেছে। এ লক্ষ্যে ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলায় ও কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলায় ১০ হাজার এক দিন বয়সী মুরগির বাচ্চা বিতরণ করা হয়েছে। প্রতিটি পরিবার চাহিদার ভিত্তিতে বিনামূল্যে ২০ থেকে ৫০টি ব্রয়লার বা লেয়ার বাচ্চা পেয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান, একুয়াকালচার ও মেরিন সায়েন্স অনুষদের উদ্যোগে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মৎস্য চাষিদের জন্য মাছের পোনা উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় এসব মাছের পোনা বিতরণ শুরু হবে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক তৌহিদ আহমেদ বলেন, ‘কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসনে আমরা আমাদের সাধ্যমতো সহযোগিতা করতে চাই। শিক্ষকরা তাদের জায়গা থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছেন। কৃষি পুনর্বাসনের অংশ হিসেবে আমরা বিনামূল্যে ধানের চারা, সবজির বীজ, মুরগির বাচ্চা, সার ও কীটনাশক বিতরণ করেছি। আগামী মাসে মাছের পোনা বিতরণ করা হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবদুল লতিফ বলেন, ‘কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যে উদ্যোগ নিয়েছে, বন্যা-পরবর্তী খাদ্যসংকট নিরসনে তা নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। এটি মূলত শিক্ষার্থীদেরই উদ্যোগ। শিক্ষক হিসেবে আমরা তাদের পরামর্শ দিয়েছি।’