শ্রমিক-কর্মচারীদের পাশাপাশি কারখানার নিরাপত্তা চাইলেন সাভারের আশুলিয়ার কয়েকজন তৈরি পোশাকশিল্প মালিক। তারা বলেছেন, অন্যায় দাবি ও গুজব ছড়িয়ে অস্থিরতা তৈরি করা হচ্ছে।
একেক দিন একেক কারখানার শ্রমিকরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বের হয়ে যাচ্ছেন। তারপর তারা আশপাশের কারখানার শ্রমিকদের বের করে নিচ্ছেন। এভাবে চলতে থাকলে কারখানা রুগ্ণ হয়ে যাবে। তাতে বিপুলসংখ্যক শ্রমিক বেকার হবেন।
রাজধানীর উত্তরায় তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর কার্যালয়ে গত সোমবার সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন সাভারের আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের কয়েকটি তৈরি পোশাকশিল্পের মালিক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব, সহসভাপতি আসিফ আশরাফ, পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল, শেহরিন সালাম ঐশী, ডেকো লিগেসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কল্পন হোসেন প্রমুখ।
বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, কারখানাগুলোকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে হবে। নিরাপত্তা পাওয়া মালিকদের অধিকার। তা না হলে কারখানাগুলো রুগ্ণ হয়ে যাবে। সেগুলোকে টিকিয়ে রাখা যাবে না। তিনি আরও বলেন, কার ইন্ধনে একেকটি কারখানার ৪০ থেকে ৫০ জন শ্রমিক বিশৃঙ্খলা করে হাজার হাজার কর্মরত শ্রমিককে বের করে নেন এবং কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সেটি গোয়েন্দাদের খুঁজে বের করতে হবে।
গত রবিবার কারখানা পুড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে কাঠগড়া এলাকার এআর জিনস প্রডিউসার কারখানায় বহিরাগত লোকজন হামলা চালান বলে দাবি করেছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল কবির। তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিজিএমইএর পরামর্শে কমিউনিটি নিরাপত্তাব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। ফলে কয়েক দিন কারখানা স্বাভাবিকভাবে চলে। যদিও বহিরাগত একটি গোষ্ঠী এতে নাখোশ হয়। রবিবার বেলা ১১টার পর বহিরাগতরা কারখানা পুড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে হামলা চালায় এবং ব্যাপক ভাঙচুর করে। সেদিন আমাদের কর্মীরা নিজেদের জীবন বাজি রেখে কারখানা রক্ষা করেন। বেলা দেড়টার দিকে আর্মি এসে লাঠিচার্জ করলে হামলাকারীরা পিছু হটে।’
নাজমুল কবির আরও বলেন, ‘আমাদের তৈরি পোশাক রপ্তানির ব্যবসা ১২ কোটি ডলারের। আমরা কি দেশকে কিছুই দিইনি?’ নিরাপত্তা না দিলে তারা কারখানা চালাবেন না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
লুসাকা গ্রুপের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান তার আশুলিয়ার কারখানার শ্রমিক অসন্তোষ ও কারখানা ভাঙচুরের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, হঠাৎ এক দিন শ্রমিকরা সাত দফা দাবি জানালেন। দাবি আদায়ে তারা প্রশাসন প্রধানকে ব্যাপক মারধর করেন। এ ঘটনায় মামলা হয়। পরে শ্রমিকদের দাবির মুখে লিখিতভাবে তা প্রত্যাহারের আশ্বাস দেওয়া হয়। তারপর শ্রমিকরা আরও কয়েকজনকে চাকরিচ্যুত করার দাবি করেন। পরে এক দিন একজন উপমহাব্যবস্থাপককে মারধর করে অজ্ঞান করে ফেলেন তারা।
এক প্রশ্নের জবাবে হাফিজুর রহমান বলেন, সেপ্টেম্বর মাসে সব মিলিয়ে পাঁচ থেকে সাত দিন কারখানায় উৎপাদন হয়েছে। বাকি দিনগুলোয় কাজ হয়নি। তাতে দিনে ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকার উৎপাদন লোকসান হয়েছে। শ্রম অসন্তোষের কারণে সময়মতো পণ্য জাহাজীকরণ করতে না পারায় ৪৮ লাখ ডলারের পণ্য নিজ খরচে উড়োজাহাজে পাঠাতে হয়েছে। ২৬ হাজার ডলার মূল্যছাড় দিতে হয়েছে এক ক্রেতাকে।
আশুলিয়ার ফ্যাশন ডটকম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খান মনিরুল আলম বলেন, ‘অতীতে নিরাপদ কর্মক্ষেত্রের দাবি ছিল শ্রমিকদের জন্য। এখন নিরাপদ কর্মস্থল শুধু শ্রমিক নয়, এটা মালিক ও কর্মচারীদের জন্যও প্রযোজ্য। নিরাপত্তাহীনতায় শ্রমিক ও কর্মচারীরা কাজ করতে চান না।’
পুরো সেপ্টেম্বর মাসেই বিভিন্ন দাবিতে আশুলিয়ায় পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন। শ্রমিকদের টানা বিক্ষোভের কারণে তাদের ১৮ দফা দাবি বাস্তবায়নে সম্মত হয় মালিকপক্ষ। ২৪ সেপ্টেম্বর মালিক ও শ্রমিকরা একটি যৌথ ঘোষণা দেন। এতে বলা হয়, দেশের পোশাকশিল্পের সব কারখানার শ্রমিকদের মাসিক হাজিরা বোনাস ২২৫ টাকা বাড়ছে। টিফিন ও রাত্রিকালীন ভাতাও (নাইট বিল) বাড়বে। আগামী অক্টোবরের মধ্যে বিদ্যমান নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়ন করা হবে।
অবশ্য তার পরও শ্রম অসন্তোষ পরিস্থিতির পুরোপুরি উন্নতি হয়নি। সোমবার আশুলিয়ায় তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় গুলিতে একজন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন। আহত ব্যক্তিদের সাভারের বেসরকারি এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।