ঢাকা ২৬ আশ্বিন ১৪৩১, শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪

নিরাপত্তা চান আশুলিয়ার পোশাকশিল্পের মালিকরা

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১১:০৬ এএম
আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১১:১৪ এএম
নিরাপত্তা চান আশুলিয়ার পোশাকশিল্পের মালিকরা
বিজিএমইএর কার্যালয়ে মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সাভারের আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের কয়েকটি তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকরা। ছবি : সংগৃহীত

শ্রমিক-কর্মচারীদের পাশাপাশি কারখানার নিরাপত্তা চাইলেন সাভারের আশুলিয়ার কয়েকজন তৈরি পোশাকশিল্প মালিক। তারা বলেছেন, অন্যায় দাবি ও গুজব ছড়িয়ে অস্থিরতা তৈরি করা হচ্ছে।

একেক দিন একেক কারখানার শ্রমিকরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বের হয়ে যাচ্ছেন। তারপর তারা আশপাশের কারখানার শ্রমিকদের বের করে নিচ্ছেন। এভাবে চলতে থাকলে কারখানা রুগ্‌ণ হয়ে যাবে। তাতে বিপুলসংখ্যক শ্রমিক বেকার হবেন।

রাজধানীর উত্তরায় তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর কার্যালয়ে গত সোমবার সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন সাভারের আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের কয়েকটি তৈরি পোশাকশিল্পের মালিক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব, সহসভাপতি আসিফ আশরাফ, পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল, শেহরিন সালাম ঐশী, ডেকো লিগেসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কল্পন হোসেন প্রমুখ।

বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, কারখানাগুলোকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে হবে। নিরাপত্তা পাওয়া মালিকদের অধিকার। তা না হলে কারখানাগুলো রুগ্‌ণ হয়ে যাবে। সেগুলোকে টিকিয়ে রাখা যাবে না। তিনি আরও বলেন, কার ইন্ধনে একেকটি কারখানার ৪০ থেকে ৫০ জন শ্রমিক বিশৃঙ্খলা করে হাজার হাজার কর্মরত শ্রমিককে বের করে নেন এবং কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সেটি গোয়েন্দাদের খুঁজে বের করতে হবে।

গত রবিবার কারখানা পুড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে কাঠগড়া এলাকার এআর জিনস প্রডিউসার কারখানায় বহিরাগত লোকজন হামলা চালান বলে দাবি করেছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল কবির। তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিজিএমইএর পরামর্শে কমিউনিটি নিরাপত্তাব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। ফলে কয়েক দিন কারখানা স্বাভাবিকভাবে চলে। যদিও বহিরাগত একটি গোষ্ঠী এতে নাখোশ হয়। রবিবার বেলা ১১টার পর বহিরাগতরা কারখানা পুড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে হামলা চালায় এবং ব্যাপক ভাঙচুর করে। সেদিন আমাদের কর্মীরা নিজেদের জীবন বাজি রেখে কারখানা রক্ষা করেন। বেলা দেড়টার দিকে আর্মি এসে লাঠিচার্জ করলে হামলাকারীরা পিছু হটে।’

নাজমুল কবির আরও বলেন, ‘আমাদের তৈরি পোশাক রপ্তানির ব্যবসা ১২ কোটি ডলারের। আমরা কি দেশকে কিছুই দিইনি?’ নিরাপত্তা না দিলে তারা কারখানা চালাবেন না বলে উল্লেখ করেন তিনি।

লুসাকা গ্রুপের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান তার আশুলিয়ার কারখানার শ্রমিক অসন্তোষ ও কারখানা ভাঙচুরের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, হঠাৎ এক দিন শ্রমিকরা সাত দফা দাবি জানালেন। দাবি আদায়ে তারা প্রশাসন প্রধানকে ব্যাপক মারধর করেন। এ ঘটনায় মামলা হয়। পরে শ্রমিকদের দাবির মুখে লিখিতভাবে তা প্রত্যাহারের আশ্বাস দেওয়া হয়। তারপর শ্রমিকরা আরও কয়েকজনকে চাকরিচ্যুত করার দাবি করেন। পরে এক দিন একজন উপমহাব্যবস্থাপককে মারধর করে অজ্ঞান করে ফেলেন তারা।

এক প্রশ্নের জবাবে হাফিজুর রহমান বলেন, সেপ্টেম্বর মাসে সব মিলিয়ে পাঁচ থেকে সাত দিন কারখানায় উৎপাদন হয়েছে। বাকি দিনগুলোয় কাজ হয়নি। তাতে দিনে ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকার উৎপাদন লোকসান হয়েছে। শ্রম অসন্তোষের কারণে সময়মতো পণ্য জাহাজীকরণ করতে না পারায় ৪৮ লাখ ডলারের পণ্য নিজ খরচে উড়োজাহাজে পাঠাতে হয়েছে। ২৬ হাজার ডলার মূল্যছাড় দিতে হয়েছে এক ক্রেতাকে।

আশুলিয়ার ফ্যাশন ডটকম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খান মনিরুল আলম বলেন, ‘অতীতে নিরাপদ কর্মক্ষেত্রের দাবি ছিল শ্রমিকদের জন্য। এখন নিরাপদ কর্মস্থল শুধু শ্রমিক নয়, এটা মালিক ও কর্মচারীদের জন্যও প্রযোজ্য। নিরাপত্তাহীনতায় শ্রমিক ও কর্মচারীরা কাজ করতে চান না।’

পুরো সেপ্টেম্বর মাসেই বিভিন্ন দাবিতে আশুলিয়ায় পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন। শ্রমিকদের টানা বিক্ষোভের কারণে তাদের ১৮ দফা দাবি বাস্তবায়নে সম্মত হয় মালিকপক্ষ। ২৪ সেপ্টেম্বর মালিক ও শ্রমিকরা একটি যৌথ ঘোষণা দেন। এতে বলা হয়, দেশের পোশাকশিল্পের সব কারখানার শ্রমিকদের মাসিক হাজিরা বোনাস ২২৫ টাকা বাড়ছে। টিফিন ও রাত্রিকালীন ভাতাও (নাইট বিল) বাড়বে। আগামী অক্টোবরের মধ্যে বিদ্যমান নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়ন করা হবে।

অবশ্য তার পরও শ্রম অসন্তোষ পরিস্থিতির পুরোপুরি উন্নতি হয়নি। সোমবার আশুলিয়ায় তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় গুলিতে একজন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন। আহত ব্যক্তিদের সাভারের বেসরকারি এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সবজি সেঞ্চুরির ঘরে, কাঁচা মরিচের কেজি ৪০০

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫০ এএম
আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৪, ১১:২৬ এএম
সবজি সেঞ্চুরির ঘরে, কাঁচা মরিচের কেজি ৪০০
বন্ধের দিনেও নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন। ছবি : সংগৃহীত

ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান ও ভারত থেকে ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়ার ফলে সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম কিছুটা কমে ১৬০ টাকা ডজন হয়েছে। মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ৪০ টাকা। ২৬০ টাকার সোনালি মুরগি ৩০০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। অধিকাংশ সবজির দাম কেজিতে শতের কোঠায়। কাঁচা মরিচ কেজিতে ৩৫০-৪০০ টাকার কমে মেলে না। পেঁয়াজের কেজিও বেড়ে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগের মতোই বেশি দামে চাল, মাছ, মাংস বিক্রি হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) রাজধানীর টাউন হল বাজার, কারওয়ান বাজার, হাতিরপুলসহ অন্য বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

সবজির কেজি ১০০ টাকা

বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেড়েছে। শাকের দাম আঁটিতে ১০-২০ টাকা বেড়েছে। বেগুন ১০০-১৬০ টাকা হয়ে গেছে। পটোল ৮০-৯০ টাকা। ৬০-৮০ টাকার ঢ্যাঁড়শ, ধুন্দল ৯০-১০০ টাকা। ৩০-৪০ টাকার পেঁপে ৫০ টাকা। শসার কেজি ৬০-৮০ টাকা। বরবটি, কচুরলতি ১০০-১২০ টাকা কেজি। গাজর ১৬০ টাকা, শিম ২৩০-২৫০ টাকা, টমেটো ২৪০ টাকা। লাউ, চালকুমড়া পিস ১০০ টাকা ছুঁয়ে গেছে। কপির পিস ৮০-৯০ টাকা। আগের ৩০-৪০ টাকার পুঁইশাকের আঁটি ৫০ টাকা, ১৫-২০ টাকার লালশাক, পালং, পাটশাক ২০-২৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। বাড়তি দামের ব্যাপারে বিক্রেতারা বলেন, সপ্তাহের প্রায় প্রতিদিন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। কখনো হচ্ছে ভারী বৃষ্টি। এ জন্য খেত থেকে তোলা যাচ্ছে না সবজি। সরবরাহ কমে গেছে। সারা দেশের সবজি আসছে না। তাই আগের সপ্তাহের চেয়ে প্রায় প্রতিটি সবজির দাম বেড়েছে।

পেঁয়াজের কেজি ১৩০ টাকা

বাড়তি দামের ব্যাপারে কারওয়ান বাজারের লক্ষ্মীপুর স্টোরের আবুল কাশেম বলেন, ‘হঠাৎ করে ছোলার দাম বেড়ে গেছে। তা ১৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। মুগ ডালের দামও বেশি, ১৮০ টাকা কেজি। সিন্ডিকেট করে সব জিনিসের দাম বাড়ছে। এখন তো রমজান মাস নেই। তাহলে ছোলার দাম বাড়ে কেন? তেল চিনির দামও কমছে না। বিক্রেতারা জানান, আগের সপ্তাহে ১১০-১২০ টাকা দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করা হলেও গতকাল তা ১২০-১৩০ টাকা কেজি ও আমদানি করা পেঁয়াজ ১১৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আলু বিক্রি হয়েছে ৫৫-৬০ টাকা ও রসুন ২০০-২৪০ টাকায়। আদার দামও বেড়েছে। তা ৩১০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

এ সময় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জহির রায়হান নামে এক ক্রেতা খবরের কাগজকে বলেন, ‘কি আর বলব! বেগুনের দাম বাড়তেই আছে। পেঁয়াজের দামও বেড়ে ১৩০ টাকা কেজি। সরকার মুখে বলছে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু কাজে তো কিছু দেখছি না। দেশে মগের মুল্লুক চলছে। বাজারে ঢোকা যায় না। গত বছরও দেশে বৃষ্টি, বন্যা ছিল। এটা তো নতুন কিছু না।’

বিভিন্ন বাজারের বিক্রেতারা জানান, আগের মতোই মসুরডাল ১১০-১৩৫ টাকা, ছোলা ১৪০ টাকা কেজি, ২ কেজি ওজনের প্যাকেট আটা ১০০-১৩০ টাকা, খোলা আটা ৪০ টাকা কেজি। ১ লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৬৫ টাকা, ৫ লিটার ৭৯০-৮০০ টাকা, চিনি ১৩০-১৩৫ টাকা, দেশি লাল চিনি ১৬০-১৭০ টাকা কেজি। 

বাড়তি মুরগির দাম

অন্য পণ্যের মতো অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দামও বেঁধে দিয়েছে। তার পরও সে দামে বাজারে মিলছে না। ভোক্তাদের বেশি দামেই কিনতে হচ্ছে। ব্রয়লার ১৮০ টাকা ও সোনালির দাম ২৭০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও গতকাল বিভিন্ন বাজারে তা যথাক্রমে ২০০-২১০ টাকা এবং ৩০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে দেখা গেছে। গত সপ্তাহে সোনালি মুরগি ২৬০-২৭০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। হাতিরপুল বাজারের মায়ের দোয়া পোলট্রি হাউসের দ্বীন ইসলাম বলেন, ‘চাহিদার ওপর দাম কম-বেশি হচ্ছে। তাই বেশি দামেই ব্রয়লার বিক্রি করতে হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, আড়তেই দামের কারসাজি হচ্ছে। তাছাড়া মুরগির বাচ্চা ও খাদ্যের দাম বেশি। এ জন্য মুরগির দামও বেশি। গরুর মাংস ব্যবসায়ীরাও জানান, আগের মতোই ৭৫০-৭৮০ টাকা ও খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। 

কমেছে ডিমের দাম

গত দুই বছরের মতো এবারও ডিমের দামে ভোক্তাদের ভুগতে হচ্ছে। সরকার খুচরা পর্যায়ে ১৪৪ টাকা দাম বেঁধে দেওয়ার পরও বাস্তবতা তার ধারেকাছে নেই। গতকালও বিভিন্ন বাজারে ১৬০ টাকা ডজন ডিম বিক্রি করতে দেখা গেছে। তবে প্যারাগনের ডিমের দাম আরও বেশি, ১৭০ টাকা। এ ছাড়া বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় ১৬৫-১৭০ টাকা ডজন বিক্রি করা হচ্ছে। 

কমেনি মাছে দাম

অন্য পণ্যের মতো মাছের দামও কমেনি। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ‘মোকামেই বেশি দাম। তাই ঢাকার আড়তেও কমে না। এ জন্য আমরা কম দামে বিক্রি করতে পারি না।’

দামের ব্যাপারে টাউন হল বাজারের মাছবিক্রেতা রাজু বলেন, ‘আড়তে কমলে আমরাও কম দামে বিক্রি করতে পারব। মৌসুম শেষ হওয়ায় ইলিশ মাছের দাম বেশি। ১ কেজি ওজনের ওপরের ইলিশের দাম ২০০০ টাকা কেজি, ৯৫০ গ্রাম ওজনের কেজি ১৮০০ টাকা। রুইসহ অন্য মাছের দামও কমেনি।’ কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল বাজারেও দেখা গেছে একই চিত্র। সব জিনিস বেশি দামে বিক্রি করছেন।

কমেনি চালের দাম

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পরই সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় চালের দাম কেজিতে ৩-৫ টাকা বেড়ে গেছে। দুই মাস চলে গেলেও ভাঙেনি চালের সিন্ডিকেট। বাজারে আগের মতোই বেশি দামে চাল বিক্রি হচ্ছে। গতকালও মিনিকেট ৭০-৭৬ টাকা, আটাশ চাল ৫৮-৬০ টাকা ও মোটা চাল ৫২-৫৫ টাকা ছিল। কারওয়ান বাজারের মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘কি বলব। আগের মতোই চালের দাম। কমে না। সরকার বাজারের সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছে না। এ জন্য কমছে না দাম।’

বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস চলতি বছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৪ শতাংশ

প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৫০ পিএম
চলতি বছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৪ শতাংশ

রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে চলতি অর্থবছরে আগের পূর্বাভাস সংশোধন করে বিশ্বব্যাংক বলেছে, এ বছর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তথা জিডিপি কমে ৪ শতাংশ হবে। সংস্থাটি এর আগে প্রবৃদ্ধির পাঁচ দশমিক সাত শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাসে বলেছিল। 

কোটা আন্দোলনকে ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতার প্রভাব এবং সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তের ফলে প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে বলে মনে করছে বহুপক্ষীয় এই ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটি। তবে দক্ষিণ এশিয়ার জন্য বিশ্বব্যাংক আগে প্রবৃদ্ধির যে পূর্বাভাস দিয়েছিল, প্রতিষ্ঠান বলছে যে প্রবৃদ্ধি তার চেয়েও বেশি হবে।

বুধবার (৯ অক্টোবর) প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেটে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি শ্লথ হয়ে, মধ্যবর্তী পয়েন্ট হবে ৪ শতাংশ। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য বিশ্বব্যাংক এপ্রিলে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল।

বর্তমান অর্থবছরের বাজেটে গত আওয়ামী লীগ সরকার ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। সেই হিসেবে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস সরকারি লক্ষ্যের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী কমে গেলে তা হবে কোভিড মহামারির পর সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।

উল্লেখ্য, এর আগে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের আউটলুক প্রতিবেদনে প্রবৃদ্ধির পূর্ভাবাস সংশোধন করে কমানোর কথা বলেছে। গত জুলাই ও আগস্টে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়েছে উল্লেখ করে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস পাঁচ দশমিক এক শতাংশে নামিয়ে আনার দুই সপ্তাহ পর বিশ্বব্যাংকের এই সংশোধনী এলো।

চলতি অর্থবছরের পূর্বাভাস কমানোর পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলনও কমিয়ে ৫ দশমিক ২ শতাংশে নামিয়েছে। গত অর্থবছরের জন্য সরকারের সাময়িক প্রাক্কলন ছিল ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি।

প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলেছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোয় নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান না থাকা এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আভাসকে ঘিরে যে অনিশ্চয়তা রয়েছে, তাদের পূর্বাভাস তাকেই প্রতিফলিত করছে। স্বল্প মেয়াদে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে বিনিয়োগ ও শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি বাড়বে না। অন্যদিকে বন্যার কারণে কৃষি উৎপাদন কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

তবে মধ্য থেকে দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে বলে প্রত্যাশা করছে বিশ্বব্যাংক। সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেসব সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, তার ফলে প্রবৃদ্ধি বাড়বে বলে মনে করে সংস্থাটি। এ ক্ষেত্রে আর্থিক খাতে সংস্কার, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে রাজস্ব বাড়ানোর পদক্ষেপ, ব্যবসার পরিবেশের উন্নতি ও বাণিজ্য চাঙা হওয়ার বিষয়গুলো বিশেষভাবে উল্লেখ করেছে বিশ্বব্যাংক।

সার্বিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, চলতি বছরে এই অঞ্চলে প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ, যা তাদের আগে করা পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি। এর ফলে এই অঞ্চল অর্থনীতির দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অঞ্চলে পরিণত হওয়ার ধারা বজায় রাখবে।

নারীদের যদি আরও বেশি সংখ্যায় কর্মক্ষেত্রে নিয়ে আসা যায় এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরও উদারীকরণ করা হলে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জোরদার হবে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। ফলে এই অঞ্চলের দেশগুলো তাদের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে।

রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার সমীক্ষা পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত কৃষক

প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৪০ এএম
আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৪৫ এএম
পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত কৃষক
ভারতের মহারাষ্ট্রের নাসিক অঞ্চলে পেঁয়াজ ট্রাকে তুলছেন শ্রমিকরা। ছবি: সংগৃহীত

ভারতে ক্রেতারা বাজার থেকে শাকসবজি ও ফল কেনার জন্য যে অর্থ ব্যয় করেন, তার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই পকেটে ঢোকান পাইকার ও খুচরা বিক্রেতারা। এতে ভোক্তাপর্যায়ে ব্যয় বাড়লেও পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা। রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (আরবিআই) এক সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে। খবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের।

শাকসবজি, ডাল ও ফলের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে আরবিআইয়ের পরিচালিত সমীক্ষা অনুযায়ী, তিনটি প্রধান শাকসবজি- টমেটো, পেঁয়াজ ও আলুর (টিওপি) ক্ষেত্রে ক্রেতারা যেই দাম দিয়ে পণ্য কেনেন তার মাত্র এক-তৃতীয়াংশ পান কৃষকরা। সমীক্ষা অনুযায়ী, টমেটোর ক্ষেত্রে কৃষকরা পান খুচরায় বিক্রি করা দামের প্রায় ৩৩ শতাংশ, পেঁয়াজের ক্ষেত্রে ৩৬ শতাংশ এবং আলুর দামের ক্ষেত্রে ৩৭ শতাংশ।

রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার গবেষণাপত্র অনুযায়ী, দেশীয় মূল্য শৃঙ্খলে কলার জন্য কৃষকদের অংশ ৩১ শতাংশ, আঙুরের জন্য ৩৫ শতাংশ এবং আমের জন্য ৪৩ শতাংশ। রপ্তানি মূল্য শৃঙ্খলে আমের ক্ষেত্রে কৃষকদের অংশ বেশি হলেও আঙুরের ক্ষেত্রে কম, যদিও প্রাপ্ত মূল্য দেশীয় মূল্য শৃঙ্খলের চেয়েও বেশি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটির খবরে বলা হয়, দুগ্ধজাত পণ্যের মতো অন্য খাতে দেশটির কৃষকরা চূড়ান্ত দামের প্রায় ৭০ শতাংশ পেলেও, বাকি অংশ পাইকার ও খুচরা বিক্রেতাদের মাঝে ভাগ হয়ে যায় বলে ওই গবেষণায় উঠে এসেছে।

ডাল জাতীয় পণ্যের মধ্যে ছোলার (চনা বুট) ক্ষেত্রে ভোক্তা যে অর্থ খরচ করেন, তার প্রায় ৭৫ শতাংশ কৃষকদের কাছে আসে। মুগডালের ক্ষেত্রে এই হার প্রায় ৭০ শতাংশ এবং তুরের (অন্য নাম অড়হর ডাল) জন্য ৬৫ শতাংশ।

আরবিআইয়ের গবেষণা অনুযায়ী, শস্য ও দুগ্ধজাত পণ্যের মতো যেখানে সংগ্রহ ও বিপণন ব্যবস্থা তুলনামূলকভাবে উন্নত, সেখানে টিওপি সবজির ক্ষেত্রে দক্ষ মূল্য শৃঙ্খল ব্যবস্থার অভাব রয়েছে। এই অবস্থার প্রধান কারণ হলো এই ফসলের নষ্ট হওয়ার প্রবণতা, আঞ্চলিক ও মৌসুমি ঘনত্ব, পর্যাপ্ত সঞ্চয় সুবিধার অভাব এবং বেশিসংখ্যক মধ্যস্থতাকারীর উপস্থিতি।

কোভিড-১৯ মহামারি এবং তার পরে দেশব্যাপী লকডাউন ২০২০ সালে দেশের টিওপি সবজির সরবরাহ শৃঙ্খল ও বিপণন অবকাঠামোতে বিদ্যমান সমস্যাগুলো প্রকাশ করেছে। গবেষণা অনুযায়ী, ভরা মৌসুমেও যখন দাম উৎপাদন খরচের অনেক নিচে নেমে যায়, তখন কৃষকরা প্রায়ই তাদের ফসল ফেলে দিতে বা দুর্দশায় পড়ে খুবই কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হন।

অন্যদিকে মন্দা বা টান মৌসুমে ভোক্তারা উচ্চমূল্যের চাপের সম্মুখীন হন। এই বুম-অ্যান্ড-বাস্ট (উত্থান-পতন) চক্রটি অকার্যকর বিপণন ব্যবস্থা, কৃষকরা যেই অর্থ পান তা এবং পণ্যের বিপরীতের ভোক্তারা যে অর্থ ব্যয় করেন তার মধ্যে একটি বিস্তৃত ব্যবধানসহ সুসংহত মূল্য শৃঙ্খলের অভাবের কারণে।

এর আগে গুলাটি ও সাইনির (২০১৩) গবেষণায় উচ্চফলনশীল বীজ, সেচ, লজিস্টিকস, প্রক্রিয়াকরণ কারখানা ইত্যাদি ক্ষেত্রে কৃষি গবেষণা ও উন্নয়নে (আরঅ্যান্ডডি) ব্যাপক বিনিয়োগ বরাদ্দ করে সরবরাহ প্রতিক্রিয়া বাড়ানো এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে অসংগতিগুলো সংশোধন করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া গাঙ্গুলি ও গুলাটির (২০১৩) আরেকটি গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, বাড়তি চাহিদার ফলে উচ্চমূল্যের পণ্যের দাম বাড়ার চাপকে সরবরাহ শৃঙ্খলকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার মাধ্যমে সংশোধন করা যেতে পারে।

সবজির মধ্যে টমেটো, পেঁয়াজ ও আলু, উৎপাদন ও খরচের দিক থেকে ভারতের তিনটি প্রধান ফসল। গত কয়েক বছরে এই তিনটি ফসলের উৎপাদন ব্যাপক হারে বেড়েছে।

গবেষণার পরিসংখ্যান উদ্ধৃত করে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানায়, ২০২২-২৩ সালে টমেটো, পেঁয়াজ ও আলুর উৎপাদন ছিল যথাক্রমে ২ কোটি ৪ লাখ টন, ৩ কোটি ২ লাখ টন এবং ৬ কোটি ১ লাখ টন।

এতে আরও বলা হয়, ভারত এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম টমেটো ও আলু উৎপাদক দেশ। এখানে দেশটির অবদান যথাক্রমে বিশ্ব উৎপাদনের ১১ শতাংশ ও ১৫ শতাংশ। ২০২১ সালে ভারত চীনকে ছাড়িয়ে বিশ্বের বৃহত্তম পেঁয়াজ উৎপাদক দেশ হয়ে ওঠে এবং ২০২২ সালে বিশ্ব উৎপাদনে ২৮ দশমিক ৬০ শতাংশ অবদান ছিল ভারতের। ২০১৩-১৪ থেকে ২০২১-২২ মৌসুম পর্যন্ত ভারতের পেঁয়াজ উৎপাদনে সবচেয়ে তীব্র বৃদ্ধি দেখা গেছে, যা ছিল বিশ্ব উৎপাদনের প্রায় ৬৩ শতাংশ।

সূচকের উত্থানে বেড়েছে লেনদেন

প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৩২ এএম
সূচকের উত্থানে বেড়েছে লেনদেন

গত মাসের ২৪  তারিখে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ছিল ৫ হাজার ৭৭৭ পয়েন্ট। তারপর থেকেই টানা পতনের বৃত্তে থাকে দেশের উভয় বাজার। মাঝখানে এক দিন ডিএসইর সূচক বাড়লেও গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ডিএসইর সূচক কমেছে ৪৫৪ পয়েন্ট। বিপরীতে বুধবার (৯ অক্টোবর) সূচক বেড়েছে প্রায় ৯৯ পয়েন্ট।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২৪ সেপ্টেম্বরের পর গত ১০ কর্মদিবসের মধ্যে শেয়ারবাজার মাত্র এক দিন ইতিবাচক প্রবণতায় থাকে। যা ছিল ৩ অক্টোবর। ওই দিন ডিএসইর সূচক বাড়ে ৯ পয়েন্ট।

এ ছাড়া বাকি ৯ কর্মদিনের মধ্যে প্রতিদিনই পতনের মাত্রা ছিল গভীর। এর মধ্যে ২৬ সেপ্টেম্বর সূচক কমেছিল ৯৭ পয়েন্ট এবং ২ অক্টোবর কমেছিল ১৩৩ পয়েন্ট।

দেশের পুঁজিবাজারে টানা দরপতনের পর গতকাল বুধবার মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়েছে। এদিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে সবকটি মূল্যসূচক। পাশাপাশি লেনদেনও বেড়েছে। 

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। ফলে এ বাজারটিতেও মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়েছে। তবে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। 

এদিন শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতেই সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার দেখা মেলে। লেনদেনের পুরো সময়জুড়ে সূচকের এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা বজায় থাকে। এমনকি লেনদেনের শেষদিকে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা আরও বাড়ে। ফলে সূচকের বড় উত্থান দিয়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ৩২৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৩২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসই-এক্স আগের দিনের তুলনায় ৯৮ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৪২২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৮ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২০৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৪৫ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৮৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

সবকটি মূল্যসূচক বাড়ার দিনে ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৭৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩৫৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ২১ কোটি ২৩ লাখ টাকা।

এদিন ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া তিন শতাধিক কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। এতে করে উত্থানে ফিরেছে শেয়ারবাজার। শেয়ারবাজারের এই উত্থানে মূলত ৯ কোম্পানি অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে।

কোম্পানিগুলো হলো- ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো, ব্র্যাক ব্যাংক, গ্রামীণফোন, স্কয়ার ফার্মা, সিটি ব্যাংক, বেক্সিমকো ফার্মা, পাওয়ার গ্রিড, খান ব্রাদার্স ও ইসলামী ব্যাংক।

বুধবারের লেনদেনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে অগ্নি সিস্টেমের শেয়ার। কোম্পানিটির ৩১ কোটি ৬৪ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা লাভেলো আইসক্রিমের ১৩ কোটি ২৯ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১১ কোটি ৩৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে মিডল্যান্ড ব্যাংক।

বুধবার ডিএসইতে দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে এসেছে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)।

এদিন ডিএসইতে আইসিবির শেয়ারদর আগের কার্যদিবসের তুলনায় ৫ টাকা ৯০ পয়সা বা ১০ শতাংশ বেড়েছে।

দর বৃদ্ধির দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বিডিকম অনলাইন লিমিটেড। কোম্পানিটির শেয়ারদর ২ টাকা ২০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৯১ শতাংশ বেড়েছে। দর বৃদ্ধির তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা অগ্নি সিস্টেমস লিমিটেডের শেয়ারদর বেড়েছে ৩ টাকা ৬০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

বুধবার দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে আসা অপর কোম্পানিগুলো হচ্ছে- ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, আমরা টেকনোলজিস লিমিটেড, ই জেনারেশন পিএলসি, বাংলাদেশ ফাইন্যান্স লিমিটেড, জেনেক্স ইনফোসিস পিএলসি, আইডিএলসি ফাইন্যান্স পিএলসি, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।

এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- গ্রামীণফোন , ইসলামী ব্যাংক, টেকনো ড্রাগস, এনআরবি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালস।

বুধবার ডিএসইতে দরপতনের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে নিউলাইন ক্লোথিংস লিমিটেড।

এদিন নিউলাইন ক্লোথিংস লিমিটেডের শেয়ারদর আগের কার্যদিবসের তুলনায় কমেছে ২ টাকা ৪০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ। তাতে দরপতনের শীর্ষে জায়গা করে নিয়েছে কোম্পানিটি।

এদিকে দর হারানোর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা রানার অটোমোবাইলস পিএলসির শেয়ারদর আগের দিনের তুলনায় ১ টাকা ৩০ পয়সা বা ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ কমেছে। আর শেয়ারদর ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ কমে যাওয়ায় তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থান নিয়েছে এপেক্স ট্যানারি লিমিটেড।

এদিন দরপতনের তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলো হলো- মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, আনলিমায়ারন ডাইং লিমিটেড, তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড, এআইবিএল ফার্স্ট ইসলামী মিউচুয়াল ফান্ড, ডুলামিয়া কটন স্পিনিং মিলস লিমিটেড, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।

বুধবার ডিএসইর ব্লক মার্কেটে ১৮টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মোট ২৮ কোটি ৯০ লাখ ৩৪ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হতে দেখা গেছে ৯ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- অগ্নি সিস্টেমস, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, লাভেলো আইসক্রিম, বেক্সিমকো, খান ব্রাদার্স, মিডল্যান্ড ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, বেক্সিমকো ফার্মা এবং বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। গতকাল এই ৯ প্রতিষ্ঠানের মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৮ কোটি ১৬ লাখ টাকারও বেশি।

জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে অগ্নি সিস্টেমসের। এদিন কোম্পানিটির ১৪ কোটি ২৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৪ কোটি ১০ লাখ ৮২ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

আর ৩ কোটি ২১ লাখ ৬ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন করে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে লাভেলো আইসক্রিম।

অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে- বেক্সিমকোর ১ কোটি ৯০ লাখ ৭৬ হাজার টাকা, খান ব্রাদার্সের ১ কোটি ৮২ লাখ ৫৯ হাজার টাকা, মিডল্যান্ড ব্যাংকের ১ কোটি ৫৩ লাখ ৯৬ হাজার টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংকের ৮১ লাখ টাকা, বেক্সিমকো ফার্মার ২৬ লাখ ৫৪ হাজার টাকা এবং বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ২১ লাখ ২০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১৭৩ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২০৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১২৫টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৫৩টির এবং ২৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১১ কোটি ৩২ লাখ টাকা।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান তিন মাসে আমানতকারী কমেছে ৪৭ হাজার

প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৪, ১১:২৬ এএম
আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৪, ১১:২৭ এএম
তিন মাসে আমানতকারী কমেছে ৪৭ হাজার
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নজিরবিহীন ঋণ জালিয়াতিসহ নানা অনিয়ম হয় ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে (এনবিএফআই)। ফলে গ্রাহকের জমানো টাকা ফেরত দিতে পারছে না তারা। তৈরি হয়েছে আস্থাহীনতা।

এমন পরিস্থিতিতে তিন মাসের ব্যবধানে ৪৭ হাজার আমানতকারী এনবিএফআই ছেড়ে চলে গেছেন। তবে এই সময়ে আমানত সামান্য বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে লিজ ও ঋণ। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত জুন ২০২৪-এর সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের যোগসাজশে যাচাই-বাছাই ছাড়াই বিতরণ করা হয়েছে ঋণ। এখন আদায় করতে পারছে না। আবার অনেক ঋণের বিপরীতে কোনো জামানত নেই। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ তথ্যভাণ্ডার বা সিআইবিতে গ্রাহকের তথ্য হালনাগাদ না থাকায় অনেক গ্রাহককে খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না। এসব কারণে অর্থসংকটে প্রতিনিয়ত দুর্বল হচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান। প্রয়োজনীয় প্রভিশন রাখতে পারছে না, পড়েছে মূলধনসংকটে। কিছু প্রতিষ্ঠান আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না। এমন অবস্থায় অস্তিত্বহীনতায় পড়েছে বেশ কিছু এনবিএফআই। যার কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতকারীর সংখ্যা দিন দিন কমছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে যেভাবে তদারকি করার দরকার ছিল, সেটা করা হয়নি। এখন গ্রাহকদের আস্থা ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের মার্চ শেষে দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ২৭ হাজার ৩৪১ জন। আর জুন শেষে অর্থাৎ তিন মাস পর আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৭৯ হাজার ৭৩৭ জন। সেই হিসাবে তিন মাসে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতকারীর সংখ্যা কমেছে ৪৭ হাজার ৬০৪ জন। একক প্রান্তিকে আমানতকারী কমার সংখ্যা এটাই সর্বোচ্চ। 

এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএফসিএ) চেয়ারম্যান ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কোম্পানি (আইআইডিএফসি) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. গোলাম সরওয়ার ভূঁইয়া বলেন, জুন প্রান্তিকে আমানতকারীর সংখ্যা কমেছে। আসলে এই সময়ে সরকারের বিল-বন্ডের সুদহার বেশি থাকায় আমানতকারীরা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা তুলে সেখানে রেখেছেন। গ্রাহক টাকা রাখেন লাভের জন্য। যেখানে বেশি লাভ পাবেন, সেখানেই তারা যাবেন।

নানা অনিয়মের কারণে মানুষ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলার কারণে আমানত তুলে নিচ্ছেন কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে গোলাম সরওয়ার ভূঁইয়া বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে কিছু আস্থার সংকট আছে। আমরা চেষ্টা করছি কীভাবে গ্রাহকের আস্থা বাড়ানো যায়।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতকারীর সংখ্যা কমেছিল ৩ হাজার ৮৮০ জন। এর আগে ২০২৩ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতকারীর সংখ্যা কমেছিল ২৫ হাজার ৭৮২ জন। এর আগের তিন মাসে (এপ্রিল-জুন) এ সংখ্যা কমেছিল ১৮ হাজার ৪৯৩ জন। এ ছাড়া ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) এ সংখ্যা কমেছিল ৩৫ হাজার ৫ জন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, জুন প্রান্তিকে এসব প্রতিষ্ঠানে আমানত বেড়েছে মাত্র ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক (এপ্রিল-জুন) শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানত দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজার ১১৬ কোটি ৮ লাখ টাকা। আর প্রথম প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ) শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানত ছিল ৪৪ হাজার ৩০৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। সেই হিসাবে তিন মাসে আমানত বেড়েছে ৮ হাজার ১১৩ কোটি ৯ লাখ টাকা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের মার্চ শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ বিতরণের স্থিতি ছিল ৭৪ হাজার ৫২৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। আর তিন মাস পর (এপ্রিল-জুন) আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৭৪ হাজার ৯১৮ কোটি ৪১ লাখ টাকা। সে হিসাবে তিন মাসে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৩৮৮ কোটি টাকা।