ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) নির্বাচনের আগে আট দফা সংস্কারের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটির সদস্যদের একটি অংশ। তারা বলেছেন, গত ১৫ বছরে এফবিসিসিআইয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিপর্যয় ঘটেছে, ফলে নির্বাচনের আগে এসব সংস্কার বাস্তবায়ন করা জরুরি।
ব্যবসায়ীদের দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- এফবিসিসিআই নির্বাচনের আগে নতুন করে সব অ্যাসোসিয়েশন ও চেম্বারের নির্বাচন করা, সংগঠনটিতে মনোনীত পরিচালক নিয়োগ করার প্রথা বাতিল, পরিচালনা পর্ষদ ছোট করা প্রভৃতি।
সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরেন বৈষম্যবিরোধী সংস্কার পরিষদ নামে ব্যবসায়ীদের একটি অংশ। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বৈষম্যবিরোধী সংস্কার পরিষদের সমন্বয়ক জাকির হোসেন। এ সময় এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি ও জোটের সমন্বয়ক আবুল কাসেম হায়দার, সমন্বয়ক গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী ও মো. জাকির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে জাকির হোসেন বলেন, গত ১৫ বছর এফবিসিসিআইয়ের কার্যক্রম সার্বিকভাবে ব্যবসা, শিল্প, বাণিজ্য ও সেবা খাতের স্বার্থে পরিচালিত হয়নি; বরং সংগঠনটি অনির্বাচিত, একদলীয় স্বৈরাচারী সরকারের তোষামোদি ও ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলসহ রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে তৎপর ছিল। এ সময়ে এফবিসিসিআইয়ের ব্যর্থতার কারণে বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম কয়েক গুণ বেড়েছে। এর মধ্য দিয়ে একটি মহল রাতারাতি ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ বনে গেছে।
বৈষম্যবিরোধী সংস্কার পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত ২১ সেপ্টেম্বর এফবিসিসিআইয়ের সাধারণ পরিষদের এক সভায় সংগঠনের সংস্কার বিষয়ে সাধারণ সদস্যরা মত দেন। এ ছাড়া গত ১৫ বছরে এফবিসিসিআইয়ের অভ্যন্তরে দুর্নীতি ও আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে তদন্তের ব্যবস্থা করতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে আবেদন করা হয়েছে।
যেসব সংস্কার চান ব্যবসায়ীরা
বৈষম্যবিরোধী সংস্কার পরিষদের অন্যতম দাবি হলো, এফবিসিসিআইয়ের পরবর্তী নির্বাচনের আগেই সংগঠনটির অধিভুক্ত সব অ্যাসোসিয়েশন ও চেম্বারের নির্বাচন সম্পন্ন করা। পরিষদের নেতারা বলেন, গত ১৫ বছরে দেশের অধিকাংশ বাণিজ্য সংগঠনে সীমাহীন দলীয়করণ হয়েছে। বর্তমানে অনেক চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বিভিন্ন মামলার আসামি হয়েছেন এবং অনেকে পলাতক। এ অবস্থায় আগে চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন করা জরুরি।
ব্যবসায়ীরা জানান, বিগত সময়ে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মনোনয়নের মাধ্যমে অনেক অযোগ্য ও ব্যবসায়ী নন এমন ব্যক্তি এফবিসিসিআইয়ের পরিচালনা পর্ষদে এসেছেন। এসব ব্যক্তি সংগঠন থেকে সিআইপিসহ বিভিন্ন সুবিধা নেন। তাই সংগঠনে মনোনীত পরিচালক প্রথা সম্পূর্ণ বাতিল করতে হবে।
বিদ্যমান ব্যবস্থায় এফবিসিসিআইয়ের সাধারণ পরিষদের কাছে সংগঠনের সভাপতি, সহসভাপতি ও পরিচালকদের কোনো জবাবদিহি নেই বলে উল্লেখ করেন ব্যবসায়ীদের এই গোষ্ঠী। এ জন্য তারা সভাপতি, সহসভাপতি ও পরিচালক পদে সরাসরি নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন।
এ ছাড়া, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সংখ্যা বর্তমানে ৮০ থেকে অর্ধেকে নামিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। প্রস্তাবে তারা বলেন, চেম্বার গ্রুপ থেকে ১৫ জন ও অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে ২৫ জন পরিচালক হবেন। এ ছাড়া সহসভাপতির সংখ্যা ৭ জন থেকে কমিয়ে ৩ জন করার পরামর্শ দেন তারা।
এফবিসিসিআইসহ সব বাণিজ্য সংগঠনে কেউ পরপর দুইবার নির্বাচিত হলে এরপর কমপক্ষে এক মেয়াদের জন্য বিরতি গ্রহণের নিয়ম চালুর দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী সংস্কার পরিষদ। সংস্কারপন্থি ব্যবসায়ীরা বলছেন, কিছু ব্যক্তি ভুয়া ভোটার ও সিন্ডিকেট তৈরি করে বছরের পর বছর ক্ষমতা ধরে রাখছেন। নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার পরে সাধারণ ভোটারদের যেকোনো উপহার বা উপঢৌকন দেওয়া সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করার দাবিও জানিয়েছেন এসব ব্যবসায়ী।
সরকার পরিবর্তনের পরে গত ১৮ আগস্ট এফবিসিসিআইয়ের পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত করে প্রশাসক বসিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আগামী ১২০ দিনের মধ্যে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করে নির্বাচিত কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন এই প্রশাসক। এখন পরবর্তী নির্বাচনের আগেই প্রস্তাবিত এসব সংস্কার বাস্তবায়নের দাবি জানাল বৈষম্যবিরোধী সংস্কার পরিষদ।