চাল রপ্তানিতে বিশ্বের এক নম্বর দেশ ভারত। দেশটি তাদের ব্যবসায়ীদের পুনরায় রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার পর গত সোমবার বিশ্ববাজারে কমেছে চালের দাম। ভারতের এই পদক্ষেপের ফলে বিশ্বব্যাপী চালের সরবরাহ বাড়বে এবং দরিদ্র এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলো আরও সাশ্রয়ী মূল্যে চাল কিনতে পারবে বলে জানিয়েছেন রপ্তানিকারকরা। খবর রয়টার্সের।
ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থাটির খবরে বলা হয়, গত শনিবার দেশের রপ্তানিকারকদের নন-বাসমতী সাদা চাল রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে ভারত। এর আগের দিন নতুন ফসলের আগমন এবং রাষ্ট্রীয় গুদামে চালের মজুত বৃদ্ধির কারণে ভারত তাদের আধা সেদ্ধ (পারবয়েলড) চালের রপ্তানি শুল্ক কমিয়েছে। এদিন রপ্তানিতে শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করেছে ভারত সরকার।
দেশটির প্রধান চাল রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সত্যম বালাজীর নির্বাহী পরিচালক হিমাংশু আগারওয়াল বলেন, ভারতের পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও পাকিস্তানের সরবরাহকারীরা তাদের রপ্তানিমূল্য কমিয়ে দিচ্ছে। বাজারে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখার জন্য সবাই প্রতিযোগিতামূলক থাকার চেষ্টা করছে। অর্থাৎ যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করতে এসব দেশের রপ্তানিকারকরা মূল্য সমন্বয় করতে বাধ্য হচ্ছেন।
গত বছর ভারতের সাদা চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ করা এবং আংশিকভাবে আধা সেদ্ধ চাল রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার পর বিশ্ববাজারে চালের দাম অত্যধিক বেড়ে যায়। এই সময়ে অতিপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যটির দাম বেড়ে গত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছায়। গত বছর ভারত কর্তৃক আরোপিত রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান ও মায়ানমারের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী সরবরাহকারীদের বিশ্ববাজারে তাদের রপ্তানির পরিমাণ বাড়ানো এবং আমদানিকারক দেশগুলোর কাছ থেকে বেশি দাম হাঁকানোর সুযোগ করে দিয়েছে।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়, গত সোমবার ভারতের ৫ শতাংশ ভাঙা (একটি ধরন) আধা সেদ্ধ চালের দাম প্রতি মেট্রিক টন ৫০০ থেকে ৫১০ ডলারে লেনদেন হয়েছে, যা গত সপ্তাহের ৫৩০ থেকে ৫৩৬ ডলার থেকেও কম। অন্যদিকে ৫ শতাংশ ভাঙা ক্যাটাগরির ভারতীয় সাদা চাল টনপ্রতি প্রায় ৪৯০ ডলারে বিক্রি হয়।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও মায়ানমারের রপ্তানিকারকরাও সোমবার প্রতি টন চালে অন্তত ১০ ডলার দাম কমিয়ে দিয়েছেন। এশিয়ায় চালের প্রধান আমদানিকারকদের মধ্যে রয়েছে ফিলিপাইন, নাইজেরিয়া, ইরাক, সেনেগাল, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়শিয়া। ভারতীয় কৃষিপণ্য রপ্তানির অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান ওলাম অ্যাগ্রি ইন্ডিয়ার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নিতিন গুপ্ত বলেছেন, এই অঞ্চলসহ অন্য ক্রেতা ও বিক্রেতারা ভারতের চাল সরবরাহ বৃদ্ধির সম্ভাব্য প্রভাব মূল্যায়ন করছে এবং সেই অনুযায়ী এই সপ্তাহে তাদের দাম নির্ধারিত হবে।
রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, ২০২২ সালে বিশ্বের চাল রপ্তানিতে ৪০ শতাংশের বেশি অংশ দখল করেছিল ভারত। আর বিশ্ববাণিজ্যের মোট ৫ কোটি ৫৪ লাখ মেট্রিক টন চাল রপ্তানিতে একটি রেকর্ড পরিমাণ অর্থাৎ ২ কোটি ২২ লাখ টন রপ্তানি করে ভারত।
সোমবার থাই চালের দরপত্র করা হয়েছে টনপ্রতি ৫৪০ থেকে ৫৫০ ডলারে। এটি গত সপ্তাহের টনপ্রতি ৫৫০ থেকে ৫৬০ ডলারের চেয়েও কম। থাই চাল রপ্তানিকারক সমিতির অনারারি প্রেসিডেন্ট চুকিয়াত ওপাসওং বলেন, বাজারে সরবরাহ বাড়ার কারণে থাই চালের রপ্তানিমূল্যও কমতে পারে। তিনি আরও বলেন, তবে এটি (চালের দাম) কতটুকু কমবে তা বেশ কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করবে, যার মধ্যে থাই মুদ্রার মূল্য বৃদ্ধিও রয়েছে।
খবরে বলা হয়, ভিয়েতনামেও চালের দাম কমতে শুরু করেছে। তবে ব্যবসায়ীরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, বাজারে ভারতীয় চাল সরবরাহের পূর্ণ প্রভাব এখনো পর্যন্ত পড়তে দেখা যায়নি। ভিয়েতনামভিত্তিক ভিনারাইস কোম্পানির প্রধান নির্বাহী ট্রুং টান তাই বলেন, ভিয়েতনামি রপ্তানিকারকদের শান্ত থাকা উচিত। সেই সঙ্গে কেবল চুক্তি নিশ্চিত করার জন্য ব্যবসায়ীদের দাম কমানো থেকেও বিরত থাকা উচিত।