![বসুন্ধরা, বেক্সিমকো, সামিটসহ ৭ কোম্পানির শেয়ার লেনদেন স্থগিত](uploads/2024/10/02/85274100-1727883677.jpg)
বসুন্ধরা গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ, সামিট গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, নাসা গ্রুপ ও থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস লিমিটেডের (নগদ লিমিটেড) শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় ও দান অবিলম্বে স্থগিত করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এনবিআরের এ নির্দেশের খবর বাজারে ছড়িয়ে পড়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে। এদিন ডিএসইর লেনদেন শেষে প্রধান সূচক ‘ডিএসইএক্স’ ১৩২ দশমিক ২৯ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৪৫৩ পয়েন্টে।
এনবিআরের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের মহাপরিচালক আহসান হাবিব এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন। যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মগুলোর নিবন্ধক বরাবর গত ২৯ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষর হওয়া এই চিঠিটি সম্পর্কে বুধবার জানা গেছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, আয়কর আইন ২০২৩-এর ২২৩ ধারার আলোকে এনবিআর কর ফাঁকি রোধে সম্পত্তির অন্তর্বর্তীকালীন অবরুদ্ধকরণ বা ক্রোকের ক্ষমতা রাখে। চলমান তদন্তে দেখা গেছে, উল্লিখিত কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগসহ আর্থিক অনিয়মের গুরুতর অভিযোগ আছে। এ বাস্তবতায় জাতীয় স্বার্থে এনবিআর এসব কোম্পানির শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় ও দান স্থগিতের অনুরোধ জানিয়েছে।
এর আগে বাংলাদেশ এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেডের (বেক্সিমকো) শেয়ার নিয়ে কারসাজির দায়ে ৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে রেকর্ড ৪২৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সব মিলিয়ে বুধবার দেশের শেয়ারবাজারে ক্রেতাসংকটে বিভিন্ন খাতের প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দামে যেমন ঢালাও পতন হয়েছে, তেমনই মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে।
বুধবার (২ অক্টোবর) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নিতে পেরেছে মাত্র ২৯টি প্রতিষ্ঠান। বিপরীতে প্রায় সাড়ে ৩০০ প্রতিষ্ঠানের দাম কমেছে। ফলে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমেছে ১০০ পয়েন্টের ওপরে।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। এতে মূল্যসূচকেরও বড় পতন হয়েছে।
শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় ও দান অবিলম্বে স্থগিত করার ঘোষণার তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর বিষয়টি বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। বুধবার শেয়ারবাজারে লেনদেন চলাকালে বিষয়টি বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসে আলোচনার কেন্দ্রবিন্ধুতে ছিল।
এ পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় প্রায় সব কটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই সূচকের বড় পতন হয়। লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এই দরপতনের মাত্রা বাড়তে থাকে। ফলে এক প্রকার ধস দিয়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে মাত্র ২৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৪৭টি প্রতিষ্ঠানের। আর ২২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৩২ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৪৫৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৩২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২১৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৫১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৮৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অবশ্য এই ঢালাও দরপতনের মধ্যেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে।
সূত্র জানায়, এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান দায়িত্ব গ্রহণের পরই এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে বসুন্ধরা গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ, সামিট গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, নাসা গ্রুপ ও থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস লিমিটেড (নগদ লিমিটেড) এর গত কয়েক বছরের আয়কর, ভ্যাট, কাস্টমস সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে কর ফাঁকির তদন্ত করতে নির্দেশ দেন। এ ছাড়া এসব গোষ্ঠীর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের আমদানি-রপ্তানি পর্যালোচনা করতেও বলা হয়েছে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সাবেক মন্ত্রীসহ অনেকের ব্যাংক হিসাব জব্দ ও তলব করা হয়েছে। এসব ব্যক্তি ও তাদের পরিবার এবং ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব ফাঁকির তথ্যও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।