পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক দরপতনের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের বিনিয়োগকারীরা। এ সময় তারা বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগ দাবি করেন এবং ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ গঠন করার দাবি জানান।
বুধবার (২ অক্টোবর) বেলা ১১টায় মতিঝিলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পুরাতন ভবনের সামনে সংগঠনটির বিনিয়োগকারীরা মানববন্ধন করেন।
এ সময় মানববন্ধন কর্মসূচিতে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের একাংশের সভাপতি মিজানুর রশিদ চৌধুরীসহ অন্য নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের অর্থ সম্পাদক মো. সাজ্জাদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, পুঁজিবাজারের ধারাবাহিক দরপতন অব্যাহত রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এখন বিনিয়োগকারীদের একটাই দাবি, বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যানের পদত্যাগ। একই সঙ্গে আমরা সরকারের কাছে দুই স্টক এক্সচেঞ্জ বাদ দিয়ে একটি ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ গঠনের দাবি জানাচ্ছি। আর সদস্যভুক্ত মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখার দাবি জানাচ্ছি।
বাজার পরিস্থিতি : গতকাল প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নিতে পেরেছে মাত্র ২৯টি প্রতিষ্ঠান। বিপরীতে প্রায় ৩৫০ প্রতিষ্ঠানের দাম কমেছে। ফলে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমেছে ১০০ পয়েন্টের ওপরে। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। এতে মূল্যসূচকেরও বড় পতন হয়েছে। তবে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। এর মাধ্যমে টানা তিন দিন শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই সূচকের বড় পতন হয়। লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এই দরপতনের মাত্রা বাড়তে থাকে। ফলে এক প্রকার ধস দিয়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে মাত্র ২৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৪৭টি প্রতিষ্ঠানের। আর ২২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৩২ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৪৫৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৩২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২১৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৫১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৮৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
অবশ্য এই ঢালাও দরপতনের মধ্যেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪৪০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩৮৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৫১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
এই লেনদেনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে গ্রামীণফোনের শেয়ার। কোম্পানিটির ২০ কোটি ৭৬ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা লিন্ডে বাংলাদেশের ১৭ কোটি ৯৩ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক।
এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- সোনালী আঁশ, ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, এমজেএল বাংলাদেশ, এডিএন টেলিকম এবং ইবনে সিনা। গতকাল ডিএসইতে দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে এসেছে দেশ গার্মেন্টস লিমিটেড। এদিন ডিএসইতে দেশ গার্মেন্টস লিমিটেডের শেয়ারদর আগের কার্যদিবসের তুলনায় ৭ টাকা বা ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেড়েছে।
দর বৃদ্ধির দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। কোম্পানিটির শেয়ারদর ১ টাকা ৫০ পয়সা বা ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেড়েছে। দর বৃদ্ধির তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা আফতাব অটোমোবাইলস লিমিটেডের শেয়ারদর বেড়েছে ১ টাকা ৯০ পয়সা বা ৬ দশমিক ০৩ শতাংশ।
বুধবার দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে আসা অপর কোম্পানিগুলো হচ্ছে- সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলিসি, মেঘনা সিমেন্ট মিলস পিএলসি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, এডিএন টেলিকম লিমিটেড, আমান কর্টন ফেব্রিক্স লিমিটেড, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড।
বুধবার ডিএসইতে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দরপতনের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে ফু-ওয়াং ফুড লিমিটেড। বুধবার দিন শেষে ফু-ওয়াং ফুড লিমিটেডের ইউনিট দর আগের কার্যদিবসের তুলনায় কমেছে ১ টাকা ৩০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। তাতে দরপতনের শীর্ষে জায়গা করে নিয়েছে কোম্পানিটি।
এদিকে দর হারানোর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেডের শেয়ারদর আগের দিনের তুলনায় ৭০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ কমেছে। আর শেয়ারদর ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ কমে যাওয়ায় তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থান নিয়েছে গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড।
এদিন দরপতনের তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলো হলো- ওরিয়ন ফার্মা লিমিটেড, অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন লিমিটেড, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, ডমিনেজ স্টিল বিল্ডিং সিস্টেমস লিমিটেড, জিপিএস ফাইন্যান্স কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড, সাইনপুকুর সিরামিকস লিমিটেড।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৩০৬ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২১৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৭৭টির এবং ১৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।