২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) গত সাত বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি-এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। এ সময়ে খরচ হয়েছে ৭ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা যা মোট ব্যয়ের মাত্র ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। যেখানে আগের অর্থবছরের একই সময়ে খরচ হয়েছিল ১০ হাজার ৫৪২ কোটি টাকা, বাস্তবায়ন হয়েছিল ৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
আলোচ্য অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ৫৬টির মধ্যে ২০ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ১ শতাংশও বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এর মধ্যে এক টাকাও খরচ করতে পারেনি স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগসহ ৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ বাস্তবায়ন করতে পেরেছে ৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
গতকাল বুধবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) এডিপির হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় কাজ করতে পারছে না। আবার নতুন সরকার এসে অনেক প্রকল্প কাটছাঁট করেছে। সংশোধিত প্রকল্পও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। প্রকল্পের বাস্তবায়ন ধীর গতিতে চলছে। এ জন্য বাস্তবায়নের চিত্র হতাশাজনক।
এ ব্যাপারে আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘অর্থবছরের শুরুতে ছাড় সেভাবে শুরু হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্প পরিচালকদের সিদ্ধান্ত পেতে দেরি হচ্ছে। এ ছাড়া একনেক সভাও কম হচ্ছে। এতে প্রকল্প পাস কম হচ্ছে। তার ফলে বাস্তবায়নও কম হচ্ছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি- একনেক সভা বেশি হলে বা প্রকল্প পাস বেশি হবে। এডিপি বাস্তবায়নে গতি বাড়বে। এ ছাড়া বাস্তবায়নকারী সংস্থা বা মন্ত্রণালয় তৎপর হলে গতি আরও বাড়বে। কারণ তারাই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে।’
প্রতিবেদনে দেখা যায়, শুধু গত আগস্ট মাসে সরকার উন্নয়ন খাতে অর্থ খরচ করেছে ৪ হাজার ২২০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা বা ১ দশমিক ৫২ শতাংশ। যেখানে গতবছরের একই সময়ে খরচ হয়েছিল ৭ হাজার ৫৩ কোটি টাকা বা ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
আর গত দুই মাসে খরচ করেছে ৭ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা বা বাস্তবায়ন করা হয়েছে ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে খরচ করেছিল ১০ হাজার ৫৪২ কোটি টাকা বা এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
২০২২-২৩ একই সময়ে অর্থবছরে টাকা খরচ করেছিল ৯ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা, বাস্তবায়ন করা হয়েছিল ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এ ছাড়া অন্যান্য বছরের মধ্যে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩ দশমিক ৮২ শতাংশ, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩ দশমিক ৫২ শতাংশ, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে টাকা খরচ করেছিল ৬ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের উন্নয়ন কাজের জন্য পদত্যাগী শেখ হাসিনা সরকার ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন দিয়েছে। এডিপিতে মোট ১ হাজার ৩৫২টি প্রকল্প ধরা হয়েছে। এবারে এডিপিতে স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্য বরাদ্দ ৩৭ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জন্য ৩০ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ বিভাগের জন্য ৩৩ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জন্য ১২ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য ১১ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জন্য ১৩ হাজার ১২৫ কোটি টাকা, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৮৮৭ কোটি টাকা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ১৩ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা, সেতু বিভাগের জন্য ৬ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জন্য ৮ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এডিপিতে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা।
৪ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়ে ৮৮৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা খরচ করে বা ১৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়নে সবচেয়ে এগিয়ে আছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এরপরই ২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা খরচ করে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। তারা বাস্তবায়ন করেছে ১৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ। ২৪৬ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ২২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা খরচ করে বাস্তবায়ন করেছে ৯ দশমিক ১০ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরে এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়ে গত দুই মাসে স্থানীয় সরকার বিভাগ বাস্তবায়ন করতে পেরেছে ৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ বাস্তবায়ন করতে পেরেছে ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ। তৃতীয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েও সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ মাত্র ১ দশমিক ৯০ শতাংশ বাস্তবায়ন করতে পেরেছে।
এক পয়সাও খরচ করতে পারেনি ৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ
দুই মাস চলে গেলেও এক পয়সা খরচ করতে পারেনি ৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ ৪ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েও এক টাকা খরচ করতে পারেনি। ভূমি মন্ত্রণালয় ৬৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েও শূন্যের কোটায় রয়েছে। আইন ও বিচার বিভাগ ১৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দ নিলেও কোনো টাকা খরচ করতে পারেনি। পররাস্ট্র মন্ত্রণালয়ও ১৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়ে খরচের ব্যাপারে শূন্য অবস্থানে। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ও ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়ে এক টাকা খরচ করতে পারেনি।
এ ছাড়া ১ শতাংশও বাস্তবায়ন করতে পারেনি এমন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ হচ্ছে ১৫টি। তারা হচ্ছে- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, সেতু বিভাগ, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়, জননিরাপত্তা বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, মুক্তিযুদ্ধ বিয়ষক মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। ১ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, সংস্কৃতিকবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন।