শিগগিরই দেশে চতুর্থ অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৪-এর কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। এটি সফলভাবে করতে চায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো- বিবিএস। এ জন্য ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা চেয়েছে সংস্থাটি। উক্ত শুমারি কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করতে গতকাল দেশের বিভিন্ন শ্রেণির ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একটি কর্মশালার আয়োজন করেছে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)।
কর্মশালায় দেশের বিভিন্ন শিল্প ও ব্যবসায়িক খাতের নেতৃস্থানীয় প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে শুমারির প্রশ্নপত্র চূড়ান্তকরণে তাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত ও পরামর্শ প্রদান করেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা হিসেবে বিভিন্ন ধরনের শুমারি পরিচালনা করে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য শুমারিগুলো হলো জনশুমারি, কৃষি শুমারি ও অর্থনৈতিক শুমারি।
বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যানিক কার্যক্রমসমূহের একটি হলো অর্থনৈতিক শুমারি যা বাংলাদেশে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন অর্থনৈতিক শুমারি-২০২৩ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত হয়। দেশের সর্বপ্রথম অর্থনৈতিক শুমারি ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত হয়, এরপর ২য় অর্থনৈতিক শুমারি ২০০১ এবং ২০০৩ সালে পর্যায়ক্রমে অনুষ্ঠিত হয়, ৩য় অর্থনৈতিক শুমারি ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে বাংলাদেশের ৪র্থ অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
‘অর্থনৈতিক শুমারি-২০২৩ প্রকল্প’-এর প্রথম জোনাল অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে। প্রথম জোনাল অপারেশন দুই পর্বে পরিচালিত হয়েছিল। দুই পর্বের একটি হলো ম্যাপিং অপারেশন ও অন্যটি হলো লিস্টিং অপারেশন। ইতোমধ্যে গত জুলাই ২০২৪-এ দেশব্যাপী শুমারিকর্মীরা দেশের প্রায় সব থানা ও প্রতিষ্ঠানের লিস্টিং কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৪-এর চূড়ান্ত কার্যক্রম আগামী নভেম্বর মাঝামাঝি সময়ে সম্পন্ন হবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এবং এফবিসিসিআই-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ কর্মশালার উদ্দেশ্য হচ্ছে: শুমারির প্রশ্নপত্রকে চূড়ান্তকরণের লক্ষ্যে আরও কার্যকর ও সময়োপযোগী করা। এ জন্য ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরাসহ উপস্থিত সবার মতামতের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র চূড়ান্তকরণের লক্ষ্যে পরামর্শ গ্রহণ করা হয়। এফবিসিসিআইসহ দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর নেতারা এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন, যারা শুমারির তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতি আরও উন্নত ও সময়োপযোগী করার প্রস্তাব তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি, প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এস এম শাকিল আখতার শুমারির টেকনিক্যাল এক্সপার্ট এবং অংশীজনদের পরামর্শের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, কর্মশালার মাধ্যমে প্রাপ্ত দিকনির্দেশনা দেশের পরিকল্পনা প্রণয়নে অবদান রাখবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘অর্থনৈতিক শুমারি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা লাগবে। এ বিষয়ে এফবিসিসিআই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এফবিসিসিআই-এর মাধ্যমে শুমারির গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং তথ্য সংগ্রহে সহযোগিতার জন্য প্রশিক্ষণ ও প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, বলেন, ‘অর্থনৈতিক শুমারির মাধ্যমে আমরা দেশের প্রকৃত আর্থিক চিত্র তুলে ধরতে চাই, যা ভবিষ্যতে নীতি প্রণয়নে সহায়ক হবে। এ প্রক্রিয়ায় ব্যবসায়িক সমাজের সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, শুমারি কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়নে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তাদের সহযোগিতা ছাড়া শুমারি সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না। তারা শুমারির প্রক্রিয়া এবং এর গুরুত্ব সম্পর্কে জনগণ ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহে সহায়তা করতে পারে।’
দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা কর্মশালায় তাদের বক্তব্যে বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনার বিষয়ে আলোচনা করেন। তারা শুমারির তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতি আরও উন্নত ও উদ্ভাবনী করার প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।
অংশগ্রহণকারীদের মতামতের ভিত্তিতে অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৪-এর প্রশ্নপত্র শিগগিরই চূড়ান্ত করা হবে। এই শুমারি দেশের অর্থনীতির ইন্ডিকেটরসমূহের সার্বিক বিশ্লেষণ এবং পরিকল্পনা প্রণয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।