ঢাকা ২১ কার্তিক ১৪৩১, বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪

এফবিসিসিআইয়ে কর্মশালা অর্থনৈতিক শুমারি বাস্তবায়নে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা চায় বিবিএস

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩৬ এএম
আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪২ এএম
অর্থনৈতিক শুমারি বাস্তবায়নে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা চায় বিবিএস
অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৪এর কার্যক্রম চালু উপলক্ষে মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) এক কর্মশালার আয়োজন করে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। ছবি : সংগৃহীত

শিগগিরই দেশে চতুর্থ অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৪-এর কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। এটি সফলভাবে করতে চায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো- বিবিএস। এ জন্য ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা চেয়েছে সংস্থাটি। উক্ত শুমারি কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করতে গতকাল দেশের বিভিন্ন শ্রেণির ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একটি কর্মশালার আয়োজন করেছে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)।

কর্মশালায় দেশের বিভিন্ন শিল্প ও ব্যবসায়িক খাতের নেতৃস্থানীয় প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে শুমারির প্রশ্নপত্র চূড়ান্তকরণে তাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত ও পরামর্শ প্রদান করেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা হিসেবে বিভিন্ন ধরনের শুমারি পরিচালনা করে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য শুমারিগুলো হলো জনশুমারি, কৃষি শুমারি ও অর্থনৈতিক শুমারি।

বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যানিক কার্যক্রমসমূহের একটি হলো অর্থনৈতিক শুমারি যা বাংলাদেশে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন অর্থনৈতিক শুমারি-২০২৩ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত হয়। দেশের সর্বপ্রথম অর্থনৈতিক শুমারি ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত হয়, এরপর ২য় অর্থনৈতিক শুমারি ২০০১ এবং ২০০৩ সালে পর্যায়ক্রমে অনুষ্ঠিত হয়, ৩য় অর্থনৈতিক শুমারি ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে বাংলাদেশের ৪র্থ অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

‘অর্থনৈতিক শুমারি-২০২৩ প্রকল্প’-এর প্রথম জোনাল অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে। প্রথম জোনাল অপারেশন দুই পর্বে পরিচালিত হয়েছিল। দুই পর্বের একটি হলো ম্যাপিং অপারেশন ও অন্যটি হলো লিস্টিং অপারেশন। ইতোমধ্যে গত জুলাই ২০২৪-এ দেশব্যাপী শুমারিকর্মীরা দেশের প্রায় সব থানা ও প্রতিষ্ঠানের লিস্টিং কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৪-এর চূড়ান্ত কার্যক্রম আগামী নভেম্বর মাঝামাঝি সময়ে সম্পন্ন হবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এবং এফবিসিসিআই-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ কর্মশালার উদ্দেশ্য হচ্ছে: শুমারির প্রশ্নপত্রকে চূড়ান্তকরণের লক্ষ্যে আরও কার্যকর ও সময়োপযোগী করা। এ জন্য ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরাসহ উপস্থিত সবার মতামতের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র চূড়ান্তকরণের লক্ষ্যে পরামর্শ গ্রহণ করা হয়। এফবিসিসিআইসহ দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর নেতারা এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন, যারা শুমারির তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতি আরও উন্নত ও সময়োপযোগী করার প্রস্তাব তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি, প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এস এম শাকিল আখতার শুমারির টেকনিক্যাল এক্সপার্ট এবং অংশীজনদের পরামর্শের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, কর্মশালার মাধ্যমে প্রাপ্ত দিকনির্দেশনা দেশের পরিকল্পনা প্রণয়নে অবদান রাখবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘অর্থনৈতিক শুমারি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা লাগবে। এ বিষয়ে এফবিসিসিআই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এফবিসিসিআই-এর মাধ্যমে শুমারির গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং তথ্য সংগ্রহে সহযোগিতার জন্য প্রশিক্ষণ ও প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, বলেন, ‘অর্থনৈতিক শুমারির মাধ্যমে আমরা দেশের প্রকৃত আর্থিক চিত্র তুলে ধরতে চাই, যা ভবিষ্যতে নীতি প্রণয়নে সহায়ক হবে। এ প্রক্রিয়ায় ব্যবসায়িক সমাজের সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, শুমারি কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়নে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তাদের সহযোগিতা ছাড়া শুমারি সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না। তারা শুমারির প্রক্রিয়া এবং এর গুরুত্ব সম্পর্কে জনগণ ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহে সহায়তা করতে পারে।’

দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা কর্মশালায় তাদের বক্তব্যে বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনার বিষয়ে আলোচনা করেন। তারা শুমারির তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতি আরও উন্নত ও উদ্ভাবনী করার প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।

অংশগ্রহণকারীদের মতামতের ভিত্তিতে অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৪-এর প্রশ্নপত্র শিগগিরই চূড়ান্ত করা হবে। এই শুমারি দেশের অর্থনীতির ইন্ডিকেটরসমূহের সার্বিক বিশ্লেষণ এবং পরিকল্পনা প্রণয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।

নিত্যপণ্যের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ আছে : উপদেষ্টা

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৭ পিএম
নিত্যপণ্যের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ আছে : উপদেষ্টা
অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ

অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘চাল-চিনি-গমসহ রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য এবং সার আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যেন শিগগির এগুলো আনা হয়। এসব পণ্য আমদানিতে পর্যাপ্ত অর্থের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কোনো ব্যাপারেই যেন ভোক্তাদের কোনো সমস্যা না হয়।’ 

বুধবার (৬ নভেম্বর) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির (এফপিএমসি) সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

খাদ্যদ্রব্য মনিটরিং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কোন কোন পণ্যের মজুত কী পরিমাণ আছে, কী কী আমদানি করতে হবে, সেগুলো নিয়ে কাজ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি বাড়ানোর জন্য বলে দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা দ্রুত পণ্য আনতে পারে। চাল-গম যতটুকু মজুত আছে, যতটুকু আমদানি দরকার, তার চেয়ে কিছুটা বেশি আমদানি ও সংগ্রহ করতে নির্দেশনা দিয়েছি।’

অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘সরকার ধান ও চাল সংগ্রহের যে দাম ঠিক করে দিয়েছে, তা যেন ভোক্তা ও কৃষকদের জন্য যুক্তিপূর্ণ হয়। সরকার একটা দাম ঠিক করবে আর বাজারে এর বেশি ব্যবধানে বিক্রি হবে, এমন যেন না হয়। এমন হলে বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীরা সুবিধা নেবে। আসন্ন রমজানে যেন পণ্যের দাম না বাড়ে। ছোলা, ডাল, চিনি, তেল এবং খেজুর যেন দেশে ঠিক সময় আমদানি হয়। সে লক্ষ্যে সরকার দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ 

এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নে খাদ্য সচিব মো. মাসুদুল হাসান জানান, আগামী আমন মৌসুমে ১০ লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহ করা হবে। এর মধ্যে ৩৩ টাকা কেজি দরে ধান, ৪৭ টাকা কেজি দরে সিদ্ধ চাল এবং ৪৬ টাকা কেজি দরে ১ লাখ টন আতপ চাল সংগ্রহ করা হবে। ১৭ নভেম্বর থেকে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সিদ্ধ চাল ও ধান সংগ্রহ করা হবে। আর আতপ চাল ১৭ নভেম্বর থেকে ১০ মার্চের মধ্যে সংগ্রহ করা হবে।

ডেনিম এক্সপো শুরু পোশাক খাতে আশার আলো দেখছেন ব্যবসায়ীরা

প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২১ পিএম
পোশাক খাতে আশার আলো দেখছেন ব্যবসায়ীরা
রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর ১৭তম আসর শুরু হয়। ছবি: খবরের কাগজ

দেশের চলমান পরিস্থিতিতে পোশাক খাতসহ অন্যান্য শিল্প-কারখানাগুলো নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। তবু এই খাতে আশার আলো দেখছেন ব্যবসায়ীরা। 

যথাসময়ে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা, শিল্পের নিরাপত্তা বিধানসহ নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে এই খাতে। এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও পোশাকশিল্পের বৈশ্বিক বাজার ও বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের আবেদনকে আশীর্বাদ হিসেবেই দেখেন উদ্যোক্তারা। পোশাক খাতের ৫০ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে এই শিল্পকে নিকট ভবিষ্যতে ১০০ কিংবা ২০০ বিলিয়ন ডলারের বাজারে উন্নীত করা সম্ভব বলেও তারা মনে করেন। 

গতকাল সোমবার ডেনিম শিল্পের অন্যতম বৃহৎ আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর ১৭তম আসরে অংশ নেওয়া ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জ এই প্রদর্শনীর আয়োজন করে। রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) দুই দিনের এই আয়োজনে ভারত, পাকিস্তান, চীন, তুরস্ক, স্পেন, ইতালিসহ সাত দেশের ৪৫টির বেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। এবারের এক্সপোর প্রতিপাদ্য হলো ‘দ্য ব্লু নিউ ওয়ার্ল্ড’। এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে ডেনিম শিল্পের গোটা সাপ্লাই চেইনকে এক ছাতার নিচে আসার সুযোগ করে দিচ্ছে। শিল্পের আধুনিক প্রযুক্তি, টেকসই উপাদান এবং উদ্ভাবনী ডিজাইনের ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা লাভের সুযোগ পাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতি পোশাক খাতের, বিশেষ করে ডেনিম শিল্পের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের এই আয়োজনে অংশ নেওয়াটা দেশের ভাবমূর্তির জন্যই ইতিবাচক বলে মনে করেন আয়োজকরা। 

জানতে চাইলে ফেব্রিক উৎপাদনকারী তুর্কি প্রতিষ্ঠান বোসসার স্বত্বাধিকারী ইলমাজ দেমির বলেন, বাংলাদেশ এখন একটি কঠিন সময় পার করছে। তবে এই সমস্যা সাময়িক। ব্যবসার সামগ্রিক পরিস্থিতির বিষয়ে ইলমাজ দেমির বলেন, শুধু বাংলাদেশই নয়, গোটা বিশ্বই এখন অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মুদ্রাস্ফীতি ভোগাচ্ছে বিশ্বকে। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের পর পরিস্থিতি কোনদিকে যায়, সেটাও একটা বিষয়। সব মিলিয়ে শিল্পের ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির বিষয়ে নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। তবে আমরা আশাবাদী। বাংলাদেশে প্রায় ১৫ বছর ধরে ফেব্রিক্স সরবরাহ করে আসছে বোসসা। এটি তাদের অন্যতম সেরা বাজার বলেও জানান ইলমা। 

পাকিস্তানি ফেব্রিক কোম্পানি নাবিনার জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি (মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস) মুহাম্মদ মানসুর বিলাল বলেন, রাজনৈতিক অবস্থা কখনো স্থিতিশীল হয় না। এ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন নই। আমরা মনে করি রাজনৈতিক অবস্থা যাই হোক কিন্তু আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। পোশাকশিল্পের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পণ্য সরবরাহ গুরুত্বপূর্ণ। এটি ঠিক হলে বাজার আরও এগিয়ে যাবে এবং আমরা তা নিয়ে আশাবাদী।

গত ১৩ বছর ধরে কাপড় উৎপাদন করছে নয়েজ জিনস। এই কোম্পানির সহপ্রতিষ্ঠাতা মনীষ এস চৌহান জানান, বাংলাদেশের গাজীপুর ও আশুলিয়ায় তাদের দুটি কারখানা রয়েছে। সেখানে প্রায় ৭০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। তারা বছরে প্রায় ৮ কোটি ডলার মূল্যের ডেনিম পণ্য উৎপাদন করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পণ্যের গুণগত মান খুব ভালো। দামও বেশ প্রতিযোগিতামূলক। 

প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি কোম্পানি প্যাসিফিক জিনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ এম তানভীর পোশাকশিল্পের বর্তমান চ্যালেঞ্জ নিয়ে বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘ডিউ ডিলিজেন্স ল’ অনুযায়ী ২০২৬ সালের মধ্যে আমাদের কার্বন নির্গমন ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে, সেটা একটা চ্যালেঞ্জ। আবার সম্ভাবনাও। 

বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘এই আসরের মধ্য দিয়ে আমরা এই প্রদর্শনীর ১০ বছর পার করেছি। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণ দেশের ভাবমূর্তির জন্যও ইতিবাচক।’

খাতুনগঞ্জে সয়াবিন লিটারে বেড়েছে ১০ টাকা

প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৭ এএম
আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৭ এএম
খাতুনগঞ্জে সয়াবিন লিটারে বেড়েছে ১০ টাকা
ডিও স্লিপ বাণিজ্যের কারণে সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে বলে জানায় ব্যবসায়ীরা। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে আরও লাগামহীন হয়ে পড়েছে ভোজ্যতেলের বাজার। সপ্তাহের ব্যবধানে বৃহত্তর এই ভোগ্যপণ্যের বাজারটিতে প্রতি মণ সয়াবিন তেলে নতুন করে ৩৫০ টাকা বেড়েছে যা লিটার হিসেবে বেড়েছে প্রায় ১০ টাকা।  পাম অয়েলের প্রতি মণে বেড়েছে ৮০ টাকা। ডিও স্লিপ বাণিজ্যের কারণে আগের কেনা তেলের দাম এতটা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

গত ২৭ অক্টোবর খাতুনগঞ্জে প্রতি মণ সয়াবিন তেল ৬ হাজার ৫০০ টাকা ও পাম অয়েল ৬ হাজার ৭০ টাকায় বিক্রি হয়। বর্তমানে প্রতি মণ সয়াবিন তেল ৬ হাজার ৮৫০ টাকা ও পাম অয়েল ৬ হাজার ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেলের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বর্তমানে খাতুনগঞ্জে সরবরাহে থাকা ভোজ্যতেলগুলো আগের কেনা। তবে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ায় এবং ডলার রেট বাড়ার কারণে আমদানিকারকরা ভোজ্যতেলের আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। কয়েক মাস আগে প্রতি টন সয়াবিন তেলের বুকিং রেট ছিল ৯৭০ ডলার। এখন বেড়ে দাম ঠেকেছে ১ হাজার ৪০ ডলারে। অন্যদিকে আগে প্রতি টন পাম অয়েলের বুকিং রেট ছিল ৮৫৬ ডলার, এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৩৭ ডলার। তাই সরবরাহ কমে যাওয়ায় আগের কেনা ভোজ্যতেল চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে যে দরে ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে, তা অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে বলে জানান তারা। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খাতুনগঞ্জের এক ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী জানান, বর্তমানে খাতুনগঞ্জে ভোজ্যতেলের সরবরাহ কমেছে, এটা ঠিক। কিন্তু ভোজ্যতেলের চাহিদা থাকায় ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) স্লিপ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের কাছে বারবার হাতবদলের কারণে আগের কেনা ভোজ্যতেলের দাম এতটা লাগামছাড়া হয়ে পড়েছে। প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উচিত এদিকে নজর দেওয়া। অন্যথায় ভোজ্যতেলের বাজার আরও অস্থির হয়ে উঠবে। 

বিগত কয়েক বছরের তুলনায় চলতি বছর একেবারে নাগালের বাইরে চলে গেছে ভোজ্যতেলের বাজার। ২০২০ সালে খাতুনগঞ্জে প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) পাম অয়েল বিক্রি হতো ২ হাজার ৫৩০ টাকায়। প্রতি মণ পাম অয়েল ২০২১ সালে ৩ হাজার ৭০০ টাকা, ২০২২ সালে ৪ হাজার ৩৫০ টাকা এবং ২০২৩ সালে বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৯৪০ টাকায়। 

তবে সরবরাহ সংকটের অজুহাতে চলতি বছরের আগস্ট মাস থেকে দফায় দফায় বাড়ানো হয় পাম অয়েলের দাম। গত আগস্টে প্রতি মণ বিক্রি হয় ৫ হাজার ৩০০ টাকায়। সেপ্টেম্বরে ৫ হাজার ৪৫০ টাকায়। অক্টোবরের শুরুতে ৫ হাজার ৭৩০ টাকায়। অক্টোবরের শেষে এসে ঠেকে ৬ হাজার ৭০ টাকায়। বর্তমানে আরও দাম বেড়ে প্রতি মণ পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ১৫০ টাকায়। 

এদিকে ২০২০ সালে খাতুনগঞ্জে প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ২০০ টাকায়, ২০২১ সালে ৪ হাজার ৫২০ টাকায়, ২০২২ সালে ৬ হাজার ৫০০ টাকায় এবং ২০২৩ সালে ৬ হাজার ৫৮০ টাকায়। 

সয়াবিন তেলেও সরবরাহ সংকটের অজুহাত দেখিয়ে গত আগস্ট মাসে প্রতি মণ সয়াবিন তেল বিক্রি হয় ৪ হাজার ৯৯৪ টাকায়। সেপ্টেম্বরে ৫ হাজার ৯৮০ টাকা ও অক্টোবরে ৬ হাজার ৫০০ টাকায় প্রতি মণ সয়াবিন তেল বিক্রি হয়। বর্তমানে দাম আরও বেড়ে খাতুনগঞ্জে প্রতি মণ সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ৮৫০ টাকায়। 

খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী মো. কামাল উদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের বুকিং রেট বেড়েছে। সরবরাহ কমে যাওয়া ও চাহিদা বাড়ার কারণে মূলত দামটা বাড়ছে। সরবরাহ বাড়লে ভোজ্যতেলের দাম কমে আসবে। 

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন খবরের কাগজকে বলেন, ‘আগের কেনা ভোজ্যতেল চাহিদা বাড়ার অজুহাতে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা অন্যায়। টাস্কফোর্স টিম, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর তাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছে। আমরা আশা করব, তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। পাশাপাশি সরকার সয়াবিন ও পাম অয়েল আমদানি পর্যায়ের ভ্যাট ১৫ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করেছে। এখন আমদানি বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে।’

খাতুনগঞ্জে চড়া আলু-পেঁয়াজের বাজার

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২০ এএম
আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৯ পিএম
খাতুনগঞ্জে চড়া আলু-পেঁয়াজের বাজার
পেঁয়াজ ও আলু

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে সপ্তাহের ব্যবধানে পাকিস্তানি পেঁয়াজ কেজিতে ৪ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ১০ ও মিসরীয় পেঁয়াজে বেড়েছে ১১ টাকা। মাসের ব্যবধানে আলুর কেজিতে বেড়েছে ৬ টাকা। অন্যদিকে তিন দিনের ব্যবধানে প্রতি মণ পাম অয়েলে বেড়েছে ৩০ টাকা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে খাতুনগঞ্জে দেশি, থাইল্যান্ড ও তুরস্ক থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ নেই। পুরো বাজারে ভারতীয়, পাকিস্তানি ও মিসরীয় পেঁয়াজ রয়েছে। ভারতে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি ও এলসি খোলার ক্ষেত্রে ডলার রেট বাড়ার কারণে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি মিসরীয় ও পাকিস্তানি পেঁয়াজের সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে। অন্যদিকে আমদানি কমে যাওয়া ও সরবরাহ সংকটের কারণে দফায় দফায় বাড়ছে পাম অয়েলের দাম। জয়পুরহাট, মুন্সীগঞ্জ থেকে বাড়তি দরে কেনায় আলুর দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। 

খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে সপ্তাহখানেক আগে ভারতীয় নাসিক জাতের পেঁয়াজ ও ভারতীয় সাউথ পেঁয়াজ ৯০ থেকে ৯৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে এসব পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৩ টাকায়। আকারভেদে মিসরীয় পেঁয়াজ আগে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৭৬ থেকে ৮০ টাকা। অন্যদিকে সপ্তাহখানেক আগে প্রতি কেজি পাকিস্তানি পেঁয়াজ ৮০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৮৪ থেকে ৮৫ টাকায়। 

তা ছাড়া বাজারটিতে গত ৩০ অক্টোবর চায়না রসুন ২০২ থেকে ২০৪ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২০৮ থেকে ২১০ টাকা। কেরালা আদা ১০০ থেকে ১০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস খবরের কাগজকে বলেন, ভারতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। তার ওপর এলসি খুলতে গিয়ে ডলার রেট বাড়ায় আমদানি খরচও বেড়েছে। এর প্রভাবে আমদানি তুলনামূলক কমেছে। তাই পেঁয়াজের দামটা বাড়তি। পাবনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। দেশে উৎপাদিত এসব পেঁয়াজ বাজারে আসবে ডিসেম্বরে। তবে ভারতীয় পেঁয়াজের সরবরাহ থাকায় পেঁয়াজের দর অতিরিক্ত বাড়েনি। আমদানি বাড়লে পণ্যটির দাম আরও কমে যেত। তাই কীভাবে পেঁয়াজের আমদানি বাড়ানো যায় সেটি ভাবা উচিত। 

হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিকারক মো. মোবারক হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘কয়েক মাস আগেও ভারতে পেঁয়াজের দাম কম ছিল। তখন দেশটিতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৩৫ থেকে ৩৮ রুপিতে। বর্তমানে মানভেদে ৪৫ থেকে ৫৫ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে। এসব পেঁয়াজ কিনে আনতে খরচ পড়ছে ৮৫ টাকার ওপরে। তার ওপর ডলার রেট বেড়েছে। এলসি খুলতে গেলে প্রতি ডলারে গুনতে হচ্ছে ১২১ টাকা। ভারতের নাসিক জাতের পেঁয়াজের ফলন উঠবে আগামী মাসের মাঝামাঝি। আশা করছি, তখন দাম কমে আসতে পারে।’

এদিকে খাতুনগঞ্জে চলতি মাসের শুরুতে প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) পাম অয়েল বিক্রি হয়েছিল ৫ হাজার ৭৩০ টাকায়। গত ২৬ অক্টোবর দাম বেড়ে বিক্রি হয়েছিল ৬ হাজার ৬০ টাকায়। ১০ টাকা বেড়ে গত ২৭ অক্টোবর বিক্রি হয় ৬ হাজার ৭০ টাকা। তিন দিনের ব্যবধানে আরও ৩০ টাকা বেড়ে বর্তমানে প্রতি মণ পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ১০০ টাকায়। 

সাধারণত ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া থেকে পাম অয়েল আমদানি হয়। এসব দেশে বুকিং রেট বেড়েছে। চলতি বছরের শুরুতে মালয়েশিয়ায় প্রতি টন পাম অয়েলের দাম ছিল ৩ হাজার ৭০০ রিঙ্গিত। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৭০০ রিঙ্গিত। 

খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী মো. কামাল উদ্দিন বলেন, বিশ্ববাজারে পাম অয়েলের বুকিং রেট বেড়েছে। এ কারণে আমদানি ও সরবরাহ দুটোই কমেছে। তাই দামটা বাড়তি। সরবরাহ না বাড়লে সামনে দাম আরও বাড়তে পারে বলে জানান তিনি। 

এদিকে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে জয়পুরহাট, মুন্সীগঞ্জ থেকে আলু কিনে আনা হয়। চলতি মাসের শুরুতে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি আলু ৪৫ থেকে ৪৭ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫১ থেকে ৫২ টাকায়। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, জয়পুরহাট ও মুন্সীগঞ্জে বাড়তি দরে আলু বিক্রি হচ্ছে। তাই এর প্রভাব পাইকারি বাজারেও পড়েছে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন খবরের কাগজকে বলেন, বিশেষ টাস্কফোর্স টিম গঠনের পর ডিম ও সবজির দাম কমতে শুরু করেছে। আলু, পেঁয়াজের দাম বাড়ায় সম্প্রতি চট্টগ্রামের চকবাজার এলাকায় কাঁচাবাজার মনিটরিং করা হয়। এখানে মূল্যতালিকা, বেচাকেনার রসিদ না থাকাসহ বিভিন্ন অসংগতি ধরা পড়ে। টাস্কফোর্স, ভোক্তা অধিকার সবাই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সব বাজারে মনিটরিং কার্যক্রম চলবে। কিন্তু সততার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনার সদিচ্ছাটাও থাকতে হবে।

পেঁয়াজ আলুর দাম বাড়তি, উচ্চমূল্যে সবজি স্থির

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৩ এএম
পেঁয়াজ আলুর দাম বাড়তি, উচ্চমূল্যে সবজি স্থির
শীতের সবজি আসা শুরু করেছে বাজারে। এতে দাম কমা শুরু করেছে সবজির।

শীতের সবজি বাজারে উঠতে থাকায় দাম কমতে শুরু করেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে অধিকাংশ সবজির কেজি ১০০ টাকার নিচে নেমেছে। তবে তা বেশ উচ্চমূল্যেই স্থির আছে। ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি হলেও দাম কমছে না। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে দেশি পেঁয়াজ ১৬০ টাকায় ঠেকেছে। আলুর দামও ৫ টাকা বেড়ে ৬৫ টাকা হয়ে গেছে। ডিমের ডজন ১৪৫-১৫০ টাকায় নেমেছে। চাল, মাছ, মাংস আগের মতোই বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

একই সবজির দাম বাজার ভেদে ১০-১৫ টাকা পর্যন্ত কম-বেশি হতে দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) রাজধানীর মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজার, কারওয়ান বাজার, হাতিরপুলসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

পেঁয়াজের কেজি ১৬০ টাকা
টাউন হল বাজারের খুচরা বিক্রেতা অলি আহমেদসহ অন্য বিক্রেতারা বলছেন, দেশি পেঁয়াজের মৌসুম শেষ। সরবরাহ কমে গেছে। এ জন্য দাম বেশি। আমদানি করা পেঁয়াজ ১২০ টাকা কেজি। সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর দাম ৫ টাকা বেড়ে ৬০-৬৫ টাকা কেজি। রসুন আগের মতোই ২২০-২৪০ টাকা ও আদা ২৮০-৩২০ টাকা কেজি।

বিভিন্ন বাজারের সবজি বিক্রেতারা বলেন, বেগুনের দাম ৩০-৪০ টাকা কমে ৮০-১২০ টাকায় নেমেছে। গত সপ্তাহে বেগুন ১২০-১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও গতকাল ৮০-১২০ টাকায় নামে। ঝিঙ্গার দাম কমে ৮০-৯০ টাকা, কচুরমুখী ৭০ টাকা, পটোল ৫০-৭০ টাকা, ধুন্দুল ৬০-৭০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৬০-৮০ টাকা, পেঁপে ৪০-৫০ টাকা, শসার কেজি ৫০-৭০ টাকা, বরবটি, কচুরলতি ৮০-১০০ টাকা। গাজর ১৪০ টাকা, শিম ১৬০-১৮০ টাকা, টমেটো ১৬০-১৮০ টাকা ও কাঁচা মরিচ ২০০-২৪০ টাকা কেজি। কপির পিস ৪০-৬০ টাকা। লাউ, চালকুমড়ার পিস ৪০-৬০ টাকা। শাকের দামও কমেছে। পুঁইশাকের আঁটি ৪০ টাকা। লাল, পালং, কলমি ও পাটশাক ২০-২৫ টাকা আঁটি।

কারওয়ান বাজারের ইউসুফ স্টোরের ইউসুফ আলীসহ অন্য মুদি বিক্রেতারা বলেন, ‘আগের মতোই ছোলা ১৪০-১৬০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা কেজি, মসুর ডাল ১১০-১৩৫ টাকা, ২ কেজি ওজনের প্যাকেট আটা ১০০-১৩০ টাকা, খোলা আটা ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ১ লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৬৫-১৬৭ টাকা ও ৫ লিটার ৮০০-৮১০ টাকা, চিনি ১৩০-১৩৫ টাকা কেজি। সপ্তাহের ব্যবধানে কোনো জিনিসের দাম কমেনি।’

নির্ধারিত দরের ধারে কাছেও নেই মুরগি
সরকার সম্প্রতি ব্রয়লার ১৮০ টাকা ও সোনালি মুরগির দাম ২৭০ টাকা কেজি বেঁধে দিলেও বাজারে এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। গতকালও বিভিন্ন বাজারে ব্রয়লার মুরগি ভোক্তাদের ১৯০-২০০ টাকা ও সোনালি মুরগি ৩০০-৩২০ টাকা কেজিতে কিনতে হয়েছে। টাউন হল বাজারের খুচরা বিক্রেতা ব্রয়লার হাউসের বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘বেশি দামে কেনা। এ জন্য আগের মতোই ব্রয়লার ১৯০-২০০ টাকা ও সোনালি মুরগি ৩০০ টাকা কেজি। তবে ডিমের মতো উৎপাদকরা আমাদের কাছে মুরগি বিক্রি করলে আমরাও নির্ধারিত দরে বিক্রি করতে পারব। বিভিন্ন হাত বদল হয়ে আমাদের কাছে মুরগি আসে। এ জন্য দাম বেশি।’ গরুর মাংস ব্যবসায়ীরা জানান, কমে না দাম। এ জন্য আগের মতোই ৭৫০-৭৮০ টাকা কেজি গরুর মাংস ও খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।

বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে ডিমের দাম কিছুটা কমে বিভিন্ন বাজারে ১৪৫-১৫০ টাকা ডজন দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে এখনো নির্ধারিত ১৪২ টাকা ডজনে পাওয়া যাচ্ছে না। কারওয়ান বাজারের ডিম বিক্রেতা সোহরাব আলী বলেন, ‘আগের চেয়ে ডিমের দাম কমেছে। ডজন ১৪৫ টাকা।’ টাউন হল বাজারের সোহেল রানাও বলেন, ‘ডিম ১৪৫ টাকা ডজন। তবে বিভিন্ন পাড়া-মহাল্লায় এখনো ১৫০-১৫৫ টাকা ডজন বিক্রি হচ্ছে।’

কমেনি মাছের দাম
ইলিশ মাছ আহরণ ও বিপণন বন্ধ থাকায় অন্য মাছের দাম চড়া। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, কারওয়ান বাজার, সোয়ারি ঘাটসহ অন্য আড়তে বেশি দাম। এ জন্য আমরা কম দামে বিক্রি করতে পারি না। রুই-কাতলা ৩৫০-৬০০ টাকা কেজি। চিংড়ি ৬০০-১২০০ টাকা, কাজলির কেজি ১০০০-১২০০, মলা ৫০০ টাকা, ট্যাংরা মাছ ৫০০-৮০০ টাকা, তেলাপিয়া ও পাঙাশের কেজি ২০০-২৫০ টাকা, চিংড়ির কেজি ৭০০-১২০০ টাকা।

চালের দামও বেশি
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর আমদানি শুল্ক কমালেও কমেনি চালের দাম। বরং মৌসুম শেষের অজুহাতে সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ২-৪ টাকা বেড়েছে। খুচরা বিক্রেতারা বলেন, মিনিকেট ৭২-৭৬ টাকা, আটাশ চাল ৬০-৬২ টাকা ও মোটা চাল ৫২-৫৫ টাকা। চিনিগুঁড়া চাল খোলা ১৩০-১৪০ টাকা ও প্যাকেটজাত ১৭০-১৮০ টাকা কেজি।