জয়পুরহাটের নিউ মার্কেট, শপিংমল ও বিপণিবিতানে দুর্গোৎসব উপলক্ষে চলছে ব্যাপক কেনাকাটা। সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে শুরু করলেও অক্টোবরের প্রথম দিন থেকেই বাজারের জমজমাট অবস্থা। বিক্রেতারা জানান, দেশি-বিদেশি কাপড়ের চাহিদা বেড়েছে, বিশেষ করে সিল্ক ও জর্জেট শাড়ি ও শিশুদের পোশাক। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যাতে শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গোৎসব উদযাপন করা যায়। এবারে ২৯০টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। খবর বাসসের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সারা দিন লোকজন মার্কেটে, বিপণিবিতান ও শপিংমলে যাচ্ছেন। শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে ক্রেতাদের পদচারণে জমজমাট হয়ে উঠেছে নিউ মার্কেট, পূর্ব বাজারের বড় কাপড়ের দোকান, লেডিস মার্কেট ও ফ্যাশন শো, শপিংমলসহ অন্যান্য কসমেটিকস, জুতা ও সাধারণ কাপড়ের দোকানগুলো। সনাতন ধর্মাবলম্বী নারী, পুরুষ, শিশু ও কিশোরসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের পছন্দের সামগ্রী কিনছেন। ক্রেতারা এখন পোশাকসামগ্রী কিনলেও প্রসাধনী ও জুতার দোকানে ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সকাল থেকে আসা ক্রেতাদের ভিড়ে শহরে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।
জেলা শহরের নিউ মার্কেট, পূর্ব বাজার কাপড় পট্টি, এনামুল হক মার্কেট, মীনা বাজার মৌসুমি, শাজাহান আলী মার্কেট ও বিগ বাজারসহ বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা যায়, বিক্রেতারা ব্যস্ত সময় পার করছেন বেচাকেনায়। নিউ মার্কেটের ফাতেমা ক্লথ স্টোর, ফারুক ক্লথ স্টোর ও পূর্ব বাজারের করিম গেঞ্জি স্টোর, তনুশ্রী বস্ত্রালয়, পূর্ণিমা বস্ত্রালয় ও বাবু গার্মেন্টসে ক্রেতাদের ভিড় বেশি লক্ষ্য করা যায়। দোকানিরা জানান, সেপ্টেম্বর মাসে টুকটাক বেচাকেনা হলেও অক্টোবর মাসের প্রথম দিন থেকেই বেচাকেনা চলছে পুরো দমে।
পূর্ব বাজারের বাবু গার্মেন্টসের মালিক মাসুদ পারভেজ বাবু জানান, ছোট শিশুদের জন্য গেঞ্জির সেট, কিশোর-যুবকদের জন্য টি-শার্ট রয়েছে। বিভিন্ন মাপের গার্মেন্টস পোশাক শিশুদের জন্য বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। কাপড়, সেলাই, মজুরি ও পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় গতবারের তুলনায় এবার বিভিন্ন প্রকারে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তনুশ্রী বস্ত্রালয়ের মালিক সুজন কুমার মণ্ডল জানান, ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে সিল্ক, জর্জেট, কাতান শাড়ি বেশি বিক্রি হচ্ছে। পূর্ব বাজারের সাজ লেডিস কালেকশনের মালিক নাসরিন আক্তার জানান, সিল্ক জাতীয় থ্রি-পিস ও এমব্রয়ডারি জর্জেট ১ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পূর্ণিমা বস্ত্রালয়ের মালিক ও বিশিষ্ট কাপড় ব্যবসায়ী পুরুষোত্তম রংটা জানান, শাড়ি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। ক্রেতারা তাদের সাধ্য অনুযায়ী কেনাকাটা করছেন। এবারে পাইকারি বাজারে কাপড়ের দাম বেশি। তাজপুর গ্রামের কিশোরী পাওয়েল এবারে পূজা উপলক্ষে ৭০০ টাকা দামের থ্রি-পিস কিনেছে। সবুজ নগর মহল্লার সুশান্ত কুমার এবারে পূজা উপলক্ষে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে দুটি পাঞ্জাবি, দুটি টাউজার ও দুই জোড়া জুতা কিনেছেন। দাম কিছুটা বেশি বলে জানান তিনি। পূজা এলে টেইলার্সগুলোতেও ব্যস্ততা বেড়ে যায়। ফেমাস টেইলার্সের মালিক মকবুল হোসেন জানান, সেলাইয়ের জন্য শার্টপ্রতি ৪৫০-৫০০ টাকা, প্যান্ট ও পাঞ্জাবিপ্রতি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা মজুরি নেওয়া হচ্ছে।
পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আবদুল ওয়াহাব জানান, বর্তমানে জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো। তারপরও পূজার কেনাকাটা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে মার্কেটগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাড়তি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করায় সন্তোষ প্রকাশ করেন পূর্ব বাজার কাপড় ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাসুদ পারভেজ বাবু।
জয়পুরহাট জেলায় এবারে ২৯০টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন চলছে। ইতোমধ্যে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করেছেন কারিগররা।