ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান ও ভারত থেকে ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়ার ফলে সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম কিছুটা কমে ১৬০ টাকা ডজন হয়েছে। মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ৪০ টাকা। ২৬০ টাকার সোনালি মুরগি ৩০০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। অধিকাংশ সবজির দাম কেজিতে শতের কোঠায়। কাঁচা মরিচ কেজিতে ৩৫০-৪০০ টাকার কমে মেলে না। পেঁয়াজের কেজিও বেড়ে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগের মতোই বেশি দামে চাল, মাছ, মাংস বিক্রি হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) রাজধানীর টাউন হল বাজার, কারওয়ান বাজার, হাতিরপুলসহ অন্য বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সবজির কেজি ১০০ টাকা
বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেড়েছে। শাকের দাম আঁটিতে ১০-২০ টাকা বেড়েছে। বেগুন ১০০-১৬০ টাকা হয়ে গেছে। পটোল ৮০-৯০ টাকা। ৬০-৮০ টাকার ঢ্যাঁড়শ, ধুন্দল ৯০-১০০ টাকা। ৩০-৪০ টাকার পেঁপে ৫০ টাকা। শসার কেজি ৬০-৮০ টাকা। বরবটি, কচুরলতি ১০০-১২০ টাকা কেজি। গাজর ১৬০ টাকা, শিম ২৩০-২৫০ টাকা, টমেটো ২৪০ টাকা। লাউ, চালকুমড়া পিস ১০০ টাকা ছুঁয়ে গেছে। কপির পিস ৮০-৯০ টাকা। আগের ৩০-৪০ টাকার পুঁইশাকের আঁটি ৫০ টাকা, ১৫-২০ টাকার লালশাক, পালং, পাটশাক ২০-২৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। বাড়তি দামের ব্যাপারে বিক্রেতারা বলেন, সপ্তাহের প্রায় প্রতিদিন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। কখনো হচ্ছে ভারী বৃষ্টি। এ জন্য খেত থেকে তোলা যাচ্ছে না সবজি। সরবরাহ কমে গেছে। সারা দেশের সবজি আসছে না। তাই আগের সপ্তাহের চেয়ে প্রায় প্রতিটি সবজির দাম বেড়েছে।
পেঁয়াজের কেজি ১৩০ টাকা
বাড়তি দামের ব্যাপারে কারওয়ান বাজারের লক্ষ্মীপুর স্টোরের আবুল কাশেম বলেন, ‘হঠাৎ করে ছোলার দাম বেড়ে গেছে। তা ১৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। মুগ ডালের দামও বেশি, ১৮০ টাকা কেজি। সিন্ডিকেট করে সব জিনিসের দাম বাড়ছে। এখন তো রমজান মাস নেই। তাহলে ছোলার দাম বাড়ে কেন? তেল চিনির দামও কমছে না। বিক্রেতারা জানান, আগের সপ্তাহে ১১০-১২০ টাকা দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করা হলেও গতকাল তা ১২০-১৩০ টাকা কেজি ও আমদানি করা পেঁয়াজ ১১৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আলু বিক্রি হয়েছে ৫৫-৬০ টাকা ও রসুন ২০০-২৪০ টাকায়। আদার দামও বেড়েছে। তা ৩১০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এ সময় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জহির রায়হান নামে এক ক্রেতা খবরের কাগজকে বলেন, ‘কি আর বলব! বেগুনের দাম বাড়তেই আছে। পেঁয়াজের দামও বেড়ে ১৩০ টাকা কেজি। সরকার মুখে বলছে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু কাজে তো কিছু দেখছি না। দেশে মগের মুল্লুক চলছে। বাজারে ঢোকা যায় না। গত বছরও দেশে বৃষ্টি, বন্যা ছিল। এটা তো নতুন কিছু না।’
বিভিন্ন বাজারের বিক্রেতারা জানান, আগের মতোই মসুরডাল ১১০-১৩৫ টাকা, ছোলা ১৪০ টাকা কেজি, ২ কেজি ওজনের প্যাকেট আটা ১০০-১৩০ টাকা, খোলা আটা ৪০ টাকা কেজি। ১ লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৬৫ টাকা, ৫ লিটার ৭৯০-৮০০ টাকা, চিনি ১৩০-১৩৫ টাকা, দেশি লাল চিনি ১৬০-১৭০ টাকা কেজি।
বাড়তি মুরগির দাম
অন্য পণ্যের মতো অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দামও বেঁধে দিয়েছে। তার পরও সে দামে বাজারে মিলছে না। ভোক্তাদের বেশি দামেই কিনতে হচ্ছে। ব্রয়লার ১৮০ টাকা ও সোনালির দাম ২৭০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও গতকাল বিভিন্ন বাজারে তা যথাক্রমে ২০০-২১০ টাকা এবং ৩০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে দেখা গেছে। গত সপ্তাহে সোনালি মুরগি ২৬০-২৭০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। হাতিরপুল বাজারের মায়ের দোয়া পোলট্রি হাউসের দ্বীন ইসলাম বলেন, ‘চাহিদার ওপর দাম কম-বেশি হচ্ছে। তাই বেশি দামেই ব্রয়লার বিক্রি করতে হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, আড়তেই দামের কারসাজি হচ্ছে। তাছাড়া মুরগির বাচ্চা ও খাদ্যের দাম বেশি। এ জন্য মুরগির দামও বেশি। গরুর মাংস ব্যবসায়ীরাও জানান, আগের মতোই ৭৫০-৭৮০ টাকা ও খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
কমেছে ডিমের দাম
গত দুই বছরের মতো এবারও ডিমের দামে ভোক্তাদের ভুগতে হচ্ছে। সরকার খুচরা পর্যায়ে ১৪৪ টাকা দাম বেঁধে দেওয়ার পরও বাস্তবতা তার ধারেকাছে নেই। গতকালও বিভিন্ন বাজারে ১৬০ টাকা ডজন ডিম বিক্রি করতে দেখা গেছে। তবে প্যারাগনের ডিমের দাম আরও বেশি, ১৭০ টাকা। এ ছাড়া বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় ১৬৫-১৭০ টাকা ডজন বিক্রি করা হচ্ছে।
কমেনি মাছে দাম
অন্য পণ্যের মতো মাছের দামও কমেনি। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ‘মোকামেই বেশি দাম। তাই ঢাকার আড়তেও কমে না। এ জন্য আমরা কম দামে বিক্রি করতে পারি না।’
দামের ব্যাপারে টাউন হল বাজারের মাছবিক্রেতা রাজু বলেন, ‘আড়তে কমলে আমরাও কম দামে বিক্রি করতে পারব। মৌসুম শেষ হওয়ায় ইলিশ মাছের দাম বেশি। ১ কেজি ওজনের ওপরের ইলিশের দাম ২০০০ টাকা কেজি, ৯৫০ গ্রাম ওজনের কেজি ১৮০০ টাকা। রুইসহ অন্য মাছের দামও কমেনি।’ কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল বাজারেও দেখা গেছে একই চিত্র। সব জিনিস বেশি দামে বিক্রি করছেন।
কমেনি চালের দাম
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পরই সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় চালের দাম কেজিতে ৩-৫ টাকা বেড়ে গেছে। দুই মাস চলে গেলেও ভাঙেনি চালের সিন্ডিকেট। বাজারে আগের মতোই বেশি দামে চাল বিক্রি হচ্ছে। গতকালও মিনিকেট ৭০-৭৬ টাকা, আটাশ চাল ৫৮-৬০ টাকা ও মোটা চাল ৫২-৫৫ টাকা ছিল। কারওয়ান বাজারের মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘কি বলব। আগের মতোই চালের দাম। কমে না। সরকার বাজারের সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছে না। এ জন্য কমছে না দাম।’