চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি-এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। এ সময়ে খরচ হয়েছে ১৩ হাজার ২১৫ কোটি টাকা। এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। যেখানে আগের অর্থবছরের একই সময়ে খরচ হয়েছিল ২০ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা। বাস্তবায়ন হয়েছিল ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। এ সময়ে ৫৬টির মধ্যে ১০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ১ শতাংশও বাস্তবায়ন করতে পারেনি।
এর মধ্যে একটি অর্থও খরচ করতে পারেনি স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগসহ ৩টি মন্ত্রণালয়। গত সোমবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) এডিপির হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে এসব তথ্য জানা গেছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন সরকার এসে অনেক প্রকল্প কাটছাঁট করছে। সংশোধিত প্রকল্পও পর্যালোচনা করছে। এ জন্য অনেক প্রকল্পের ধীর গতি শুরু হয়েছে। বাস্তবায়নে গতি কমেছে।
এ ব্যাপারে আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, এবারে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার থেকে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসেছে। এই সরকার বিভিন্নভাবে প্রকল্প যাচাই-বাছাই করছে। এ ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্প পরিচালকদের সিদ্ধান্ত পেতে দেরি হচ্ছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি-একনেক সভাও কম হচ্ছে। এটা বেশি হলে প্রকল্প পাশ বেশি হবে। তবে এ বছর আগের মতো গতি পাবে না। কারণ বাস্তবায়নকারী সংস্থা বা মন্ত্রণালয় প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। তারা কম প্রকল্প পাঠাচ্ছে পরিকল্পনা কমিশনে।’
প্রতিবেদনে দেখা যায়, শুধু গত সেপ্টেম্বর মাসে সরকার উন্নয়ন খাতে অর্থ খরচ করেছে ৬ হাজার ৭২ কোটি টাকা বা ২ দশমিক ১৮ শতাংশ। যেখানে গতবছরের একই সময়ে খরচ হয়েছিল ১০ হাজার ৬৮ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
গত তিন মাসে সরকার উন্নয়ন কাজে খরচ করেছে ১৩ হাজার ২১৫ কোটি টাকা বা বাস্তবায়ন করা হয়েছে ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে খরচ করেছিল ২০ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা। এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে টাকা খরচ করেছিল ২১ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা, বাস্তবায়ন করা হয়েছিল ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৮ দশমিক ২৬ শতাংশ, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৮ দশমিক ০৬ শতাংশ, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এভাবে প্রতি অর্থবছরে বাস্তবায়নের হার ৭ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে ছিল। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৭৪ হাজার কোটি টাকার এডিপির মধ্যে খরচ করে ৭ হাজার ২৬২ কোটি টাকা। বাস্তবায়নের হার ছিল ১০ শতাংশ। ওই সময়ে সেতু বিভাগসহ ১ শতাংশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি ৬টি মন্ত্রণালয়।
চলতি অর্থবছরে সারা দেশের উন্নয়ন কাজের জন্য সদ্য পদত্যাগী শেখ হাসিনা সরকার ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন দিয়েছে। এডিপিতে মোট ১ হাজার ৩৫২টি প্রকল্প ধরা হয়েছে। এবারে এডিপিতে স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্য বরাদ্দ ৩৭ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জন্য ৩০ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ বিভাগের জন্য ৩৩ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জন্য ১২ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য ১১ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জন্য ১৩ হাজার ১২৫ কোটি টাকা, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৮৮৭ কোটি টাকা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ১৩ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা, সেতু বিভাগের জন্য ৬ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জন্য ৮ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এডিপিতে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরে এডিপিতে সর্বোচ্চ ৩৭ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়ে গত তিন মাসে স্থানীয় সরকার বিভাগ বাস্তবায়ন করতে পেরেছে ৮ দশমিক ২৬ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৩ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ বাস্তবায়ন করতে পেরেছে ৮ দশমিক ১১ শতাংশ। তৃতীয় পর্যায়ে ৩০ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ মাত্র ৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ বাস্তবায়ন করতে পেরেছে।
একটি অর্থও খরচ করতে পারেনি ৩টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ
গত তিন মাসে এক পয়সা খরচ করতে পারেনি ৩টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এর মধ্যে স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ ৪ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েও এক টাকা খরচ করতে পারেনি। আইন ও বিচার বিভাগ ১৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দ নিয়েও এক টাকা খরচ করতে পারেনি। পররাস্ট্র মন্ত্রণালয়ও ১৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়ে এক টাকা খরচ করতে পারেনি।
১ শতাংশও বাস্তবায়ন করতে পারেনি এমন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ হচ্ছে ১০টি। এগুলো হচ্ছে- পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, সেতু বিভাগ, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়।