২০২৪ সালে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রায় ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী চীন। সেই সঙ্গে আর্থিক নীতিমালার মধ্যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার পাশাপাশি রাজস্ব নীতিতেও কাউন্টার-সাইক্লিক অ্যাডজাস্টমেন্ট (অর্থনৈতিক চক্রের ওঠানামা প্রতিহত করার ব্যবস্থা) বাড়াবে দেশটি। চীনের উপ-অর্থমন্ত্রী লিয়াও মিন সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের একটি সভায় এসব জানিয়েছেন। দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। খবর পিপলস ডেইলির।
চীনা সরকার সম্প্রতি উন্নয়নে সহায়ক বেশ কয়েকটি নীতিমালা চালু করেছে, যা আন্তর্জাতিকভাবে যথেষ্ট মনোযোগ আকর্ষণ করেছে বলে জানান লিয়াও। তিনি বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, চীনের নীতিনির্ধারকরা স্থানীয় সরকারের ঋণ-সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান, আবাসন বাজার (রিয়েল এস্টেট) স্থিতিশীল করা, প্রধান সামাজিক গোষ্ঠীর আয় বাড়ানো, মানুষের জীবিকা রক্ষা করা এবং সরঞ্জাম উন্নয়ন ও ভোগ্যপণ্য বিনিময় বাড়ানোর মতো ক্ষেত্রগুলোতে বেশ কয়েকটি শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। লিয়াও মিন বলেন, সামগ্রিক সামাজিক বিনিয়োগ ও ভোক্তাদের খরচে উৎসাহিত করার মাধ্যমে সরকারি ব্যয়কে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে এই উদ্যোগগুলো নেওয়া হয়েছে, যার ফলে কার্যকর বাজার চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, চীন প্রায় ৫ শতাংশ বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনে আত্মবিশ্বাসী এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য সামনের দিনগুলোতে আরও বেশি উদ্যোগ নেবে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংকের উন্নয়ন কমিটির ১১০তম সভায় এসব বিষয়ে কথা বলেন চীনের উপ-অর্থমন্ত্রী লিয়াও মিন। সভায় লিয়াও বিশ্বব্যাংকের সভাপতি অজয় বাঙ্গার নেতৃত্বে সংস্থাটির সংস্কারের ইতিবাচক অগ্রগতি লক্ষ্য করেছেন বলে জানান। এ সময় তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাংকের ‘এ ফিউচার-রেডি ওয়ার্ল্ড ব্যাংক গ্রুপ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত সংস্কারের সুপারিশগুলোকে সমর্থন করে এবং চীন দ্রুত সেগুলো বাস্তবায়নের প্রত্যাশা করে।
সভায় অংশগ্রহণকারীরা বিশ্বব্যাংককে একটি বৃহত্তর, উন্নত ও আরও কার্যকর বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংকে পরিণত হওয়ার ব্যাপারে তাদের ব্যাপক সমর্থন জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তারা নলেজ ব্যাংক (বিভিন্ন ধরনের জ্ঞান-তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ এবং ভাগাভাগি করা) গড়ে তোলা, প্রাতিষ্ঠানিক কর্মদক্ষতা উন্নত করা, আর্থিক ক্ষমতা বাড়ানো এবং বেসরকারি খাতের সম্পদ জোগাড় করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য বিশ্বব্যাংকের কার্যক্রমের প্রশংসা করেন।
সভায় সব পক্ষই আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (আইডিএ) ২১তম রিপ্লেনিশমেন্টের (আইডিএর তহবিলকে নিয়মিতভাবে পূরণ করা, যাতে করে দরিদ্র দেশগুলোকে সাহায্য করা যায়) বিষয়ে খুবই আশাবাদী, যাতে নিম্ন আয়ের দেশগুলোকে আরও বেশি ছাড়সহ ঋণ সরবরাহ এবং জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে তাদের সহায়তা করা। সবপক্ষ বিশ্বব্যাংককে লিমা নীতি অনুসারে, ২০২৫ সালের শেয়ারহোল্ডার পর্যালোচনার বিষয়েও সমর্থন দিয়েছে। প্রসঙ্গত, লিমা নীতি আন্তর্জাতিক আইন ও কূটনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। এই নীতিটি মূলত একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য কোনো দেশের হস্তক্ষেপকে নিষিদ্ধ করে। সহজ কথায়, লিমা নীতি অনুযায়ী, একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য কোনো দেশের হস্তক্ষেপ করা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
সভায় চীনের উপ-অর্থমন্ত্রী লিয়াও মিন জানান, চীন আশা করছে, বিশ্বব্যাংক ২০২৫ সালের শেয়ারহোল্ডার পর্যালোচনাকে একটি সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করবে এবং সংস্থার সুশাসন ব্যবস্থাকে বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতির নতুন গতিশীলতার সঙ্গে আরও ভালোভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তুলবে। এ সময় লিয়াও আরও বলেন, চীন আইডিএর ২১তম রিপ্লেনিশমেন্টকে সমর্থন করে এবং নিজেদের সক্ষমতার মধ্যে এ ক্ষেত্রে অবদান রাখতে ইচ্ছুক।
জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিকসের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, দেশটির জিডিপি চলতি বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে প্রায় ৪ দশমিক ৮০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৯৪ দশমিক ৯৭ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (১৩ দশমিক ৩৩ ট্রিলিয়ন ডলার) পৌঁছেছে। এই তথ্য ইঙ্গিত দেয় যে, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটি বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিশ্বের চ্যালেঞ্জের মধ্যেও প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে।