চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে আরও লাগামহীন হয়ে পড়েছে ভোজ্যতেলের বাজার। সপ্তাহের ব্যবধানে বৃহত্তর এই ভোগ্যপণ্যের বাজারটিতে প্রতি মণ সয়াবিন তেলে নতুন করে ৩৫০ টাকা বেড়েছে যা লিটার হিসেবে বেড়েছে প্রায় ১০ টাকা। পাম অয়েলের প্রতি মণে বেড়েছে ৮০ টাকা। ডিও স্লিপ বাণিজ্যের কারণে আগের কেনা তেলের দাম এতটা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
গত ২৭ অক্টোবর খাতুনগঞ্জে প্রতি মণ সয়াবিন তেল ৬ হাজার ৫০০ টাকা ও পাম অয়েল ৬ হাজার ৭০ টাকায় বিক্রি হয়। বর্তমানে প্রতি মণ সয়াবিন তেল ৬ হাজার ৮৫০ টাকা ও পাম অয়েল ৬ হাজার ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেলের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বর্তমানে খাতুনগঞ্জে সরবরাহে থাকা ভোজ্যতেলগুলো আগের কেনা। তবে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ায় এবং ডলার রেট বাড়ার কারণে আমদানিকারকরা ভোজ্যতেলের আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। কয়েক মাস আগে প্রতি টন সয়াবিন তেলের বুকিং রেট ছিল ৯৭০ ডলার। এখন বেড়ে দাম ঠেকেছে ১ হাজার ৪০ ডলারে। অন্যদিকে আগে প্রতি টন পাম অয়েলের বুকিং রেট ছিল ৮৫৬ ডলার, এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৩৭ ডলার। তাই সরবরাহ কমে যাওয়ায় আগের কেনা ভোজ্যতেল চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে যে দরে ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে, তা অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে বলে জানান তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খাতুনগঞ্জের এক ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী জানান, বর্তমানে খাতুনগঞ্জে ভোজ্যতেলের সরবরাহ কমেছে, এটা ঠিক। কিন্তু ভোজ্যতেলের চাহিদা থাকায় ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) স্লিপ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের কাছে বারবার হাতবদলের কারণে আগের কেনা ভোজ্যতেলের দাম এতটা লাগামছাড়া হয়ে পড়েছে। প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উচিত এদিকে নজর দেওয়া। অন্যথায় ভোজ্যতেলের বাজার আরও অস্থির হয়ে উঠবে।
বিগত কয়েক বছরের তুলনায় চলতি বছর একেবারে নাগালের বাইরে চলে গেছে ভোজ্যতেলের বাজার। ২০২০ সালে খাতুনগঞ্জে প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) পাম অয়েল বিক্রি হতো ২ হাজার ৫৩০ টাকায়। প্রতি মণ পাম অয়েল ২০২১ সালে ৩ হাজার ৭০০ টাকা, ২০২২ সালে ৪ হাজার ৩৫০ টাকা এবং ২০২৩ সালে বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৯৪০ টাকায়।
তবে সরবরাহ সংকটের অজুহাতে চলতি বছরের আগস্ট মাস থেকে দফায় দফায় বাড়ানো হয় পাম অয়েলের দাম। গত আগস্টে প্রতি মণ বিক্রি হয় ৫ হাজার ৩০০ টাকায়। সেপ্টেম্বরে ৫ হাজার ৪৫০ টাকায়। অক্টোবরের শুরুতে ৫ হাজার ৭৩০ টাকায়। অক্টোবরের শেষে এসে ঠেকে ৬ হাজার ৭০ টাকায়। বর্তমানে আরও দাম বেড়ে প্রতি মণ পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ১৫০ টাকায়।
এদিকে ২০২০ সালে খাতুনগঞ্জে প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ২০০ টাকায়, ২০২১ সালে ৪ হাজার ৫২০ টাকায়, ২০২২ সালে ৬ হাজার ৫০০ টাকায় এবং ২০২৩ সালে ৬ হাজার ৫৮০ টাকায়।
সয়াবিন তেলেও সরবরাহ সংকটের অজুহাত দেখিয়ে গত আগস্ট মাসে প্রতি মণ সয়াবিন তেল বিক্রি হয় ৪ হাজার ৯৯৪ টাকায়। সেপ্টেম্বরে ৫ হাজার ৯৮০ টাকা ও অক্টোবরে ৬ হাজার ৫০০ টাকায় প্রতি মণ সয়াবিন তেল বিক্রি হয়। বর্তমানে দাম আরও বেড়ে খাতুনগঞ্জে প্রতি মণ সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ৮৫০ টাকায়।
খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী মো. কামাল উদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের বুকিং রেট বেড়েছে। সরবরাহ কমে যাওয়া ও চাহিদা বাড়ার কারণে মূলত দামটা বাড়ছে। সরবরাহ বাড়লে ভোজ্যতেলের দাম কমে আসবে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন খবরের কাগজকে বলেন, ‘আগের কেনা ভোজ্যতেল চাহিদা বাড়ার অজুহাতে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা অন্যায়। টাস্কফোর্স টিম, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর তাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছে। আমরা আশা করব, তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। পাশাপাশি সরকার সয়াবিন ও পাম অয়েল আমদানি পর্যায়ের ভ্যাট ১৫ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করেছে। এখন আমদানি বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে।’