দেশের চলমান পরিস্থিতিতে পোশাক খাতসহ অন্যান্য শিল্প-কারখানাগুলো নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। তবু এই খাতে আশার আলো দেখছেন ব্যবসায়ীরা।
যথাসময়ে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা, শিল্পের নিরাপত্তা বিধানসহ নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে এই খাতে। এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও পোশাকশিল্পের বৈশ্বিক বাজার ও বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের আবেদনকে আশীর্বাদ হিসেবেই দেখেন উদ্যোক্তারা। পোশাক খাতের ৫০ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে এই শিল্পকে নিকট ভবিষ্যতে ১০০ কিংবা ২০০ বিলিয়ন ডলারের বাজারে উন্নীত করা সম্ভব বলেও তারা মনে করেন।
গতকাল সোমবার ডেনিম শিল্পের অন্যতম বৃহৎ আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর ১৭তম আসরে অংশ নেওয়া ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জ এই প্রদর্শনীর আয়োজন করে। রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) দুই দিনের এই আয়োজনে ভারত, পাকিস্তান, চীন, তুরস্ক, স্পেন, ইতালিসহ সাত দেশের ৪৫টির বেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। এবারের এক্সপোর প্রতিপাদ্য হলো ‘দ্য ব্লু নিউ ওয়ার্ল্ড’। এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে ডেনিম শিল্পের গোটা সাপ্লাই চেইনকে এক ছাতার নিচে আসার সুযোগ করে দিচ্ছে। শিল্পের আধুনিক প্রযুক্তি, টেকসই উপাদান এবং উদ্ভাবনী ডিজাইনের ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা লাভের সুযোগ পাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতি পোশাক খাতের, বিশেষ করে ডেনিম শিল্পের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের এই আয়োজনে অংশ নেওয়াটা দেশের ভাবমূর্তির জন্যই ইতিবাচক বলে মনে করেন আয়োজকরা।
জানতে চাইলে ফেব্রিক উৎপাদনকারী তুর্কি প্রতিষ্ঠান বোসসার স্বত্বাধিকারী ইলমাজ দেমির বলেন, বাংলাদেশ এখন একটি কঠিন সময় পার করছে। তবে এই সমস্যা সাময়িক। ব্যবসার সামগ্রিক পরিস্থিতির বিষয়ে ইলমাজ দেমির বলেন, শুধু বাংলাদেশই নয়, গোটা বিশ্বই এখন অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মুদ্রাস্ফীতি ভোগাচ্ছে বিশ্বকে। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের পর পরিস্থিতি কোনদিকে যায়, সেটাও একটা বিষয়। সব মিলিয়ে শিল্পের ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির বিষয়ে নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। তবে আমরা আশাবাদী। বাংলাদেশে প্রায় ১৫ বছর ধরে ফেব্রিক্স সরবরাহ করে আসছে বোসসা। এটি তাদের অন্যতম সেরা বাজার বলেও জানান ইলমা।
পাকিস্তানি ফেব্রিক কোম্পানি নাবিনার জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি (মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস) মুহাম্মদ মানসুর বিলাল বলেন, রাজনৈতিক অবস্থা কখনো স্থিতিশীল হয় না। এ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন নই। আমরা মনে করি রাজনৈতিক অবস্থা যাই হোক কিন্তু আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। পোশাকশিল্পের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পণ্য সরবরাহ গুরুত্বপূর্ণ। এটি ঠিক হলে বাজার আরও এগিয়ে যাবে এবং আমরা তা নিয়ে আশাবাদী।
গত ১৩ বছর ধরে কাপড় উৎপাদন করছে নয়েজ জিনস। এই কোম্পানির সহপ্রতিষ্ঠাতা মনীষ এস চৌহান জানান, বাংলাদেশের গাজীপুর ও আশুলিয়ায় তাদের দুটি কারখানা রয়েছে। সেখানে প্রায় ৭০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। তারা বছরে প্রায় ৮ কোটি ডলার মূল্যের ডেনিম পণ্য উৎপাদন করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পণ্যের গুণগত মান খুব ভালো। দামও বেশ প্রতিযোগিতামূলক।
প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি কোম্পানি প্যাসিফিক জিনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ এম তানভীর পোশাকশিল্পের বর্তমান চ্যালেঞ্জ নিয়ে বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘ডিউ ডিলিজেন্স ল’ অনুযায়ী ২০২৬ সালের মধ্যে আমাদের কার্বন নির্গমন ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে, সেটা একটা চ্যালেঞ্জ। আবার সম্ভাবনাও।
বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘এই আসরের মধ্য দিয়ে আমরা এই প্রদর্শনীর ১০ বছর পার করেছি। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণ দেশের ভাবমূর্তির জন্যও ইতিবাচক।’