ঢাকা ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪

আমানত নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই: বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৬ পিএম
আমানত নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই: বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র

ব্যাংকে রাখা আমানতের টাকা সবাই ফেরত পাবেন, এ নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা। 

বুধবার (৬ নভেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

হুসনে আরা বলেন, একসঙ্গে অনেকে টাকা তুলতে গেলে পৃথিবীর কোনো ব্যাংকই টাকা দিতে পারবে না। গ্রাহকদের উদ্দেশে বলব, অহেতুক আতঙ্কের কিছু নেই। গণমাধ্যমকেও গ্রাহকদের আতঙ্ক কাটাতে এ বিষয়গুলো তুলে ধরতে হবে।

তিনি বলেন, ‘ব্যাংকগুলোকে ভালো অবস্থানে নিয়ে আসতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সুপরিকল্পনা আছে। আমানতকারীদের আহ্বান জানাব, আপনারা প্রয়োজনের বেশি টাকা তুলবেন না। আমরা ব্যাংক খাতে আস্থা ফেরাতে চাই। সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে গত দেড় মাসে ৫ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকার সাপোর্ট দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।’

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে রিসিভার বসানোর ব্যাপারে মুখপাত্র বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কোনো ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে রিসিভার নিয়োগ করবে না। আদালতের নির্দেশ থাকলেই কেবল সে অনুযায়ী কাজ করা হবে।’

অর্থ পাচারের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘পাচার করা অর্থ ফরমাল চ্যানেলে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদন্ত করবে। তবে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার হলে সেটা তদন্ত করা কঠিন হবে। এসব নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট) কাজ করছে।’

বিতর্কিত শিল্পগোষ্ঠীগুলোর ঋণসংক্রান্ত অনিয়মের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিএফআইইউ এরই মধ্যে অনেক হিসাব জব্দ করেছে। তবে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে কোনো তথ্য দেয়নি।

টাস্কফোর্স নিয়ে এ মুখপাত্র বলেন, টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে, তারা কার্যকর কিছু করছে। একটি টাস্কফোর্স ব্যাংকিং সংস্কারে কাজ করছে। অন্যটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জনবলের দক্ষতা বাড়াতে এবং তৃতীয়টা পাচার করা টাকা ফেরত আনার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশের আইনজীবী, কনসালটেন্ট নিয়োগের কাজ চলছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুশাসন বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নামে-বেনামে অনেক অভিযোগ আসে। আমাদের এইচআর (মানবসম্পদ) বিভাগ সেটা খতিয়ে দেখে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ গভর্নর বরাবর না এলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি না। আমরা ১১টি ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠন করেছি। এগুলো নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। আমাদের মনোযোগ এখন ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর দিকে।’

১২ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে ১৩৫ কোটি টাকা জরিমানা

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:১০ পিএম
১২ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে ১৩৫ কোটি টাকা জরিমানা
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। ছবি : সংগৃহীত

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পাঁচ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার নিয়ে কারসাজির দায়ে ১২ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে ১৩৫ কোটি টাকা জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) বিএসইসির ৯৩৪তম কমিশন সভায় চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে এ জরিমানার সিদ্ধান্ত হয়। সভা শেষে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তালিকাভুক্ত পাঁচ কোম্পানির শেয়ার ও এক মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট লেনদেনে কারসাজির কারণে এসব কোম্পানিকে জরিমানা করা হয়েছে। ২০২১ সালের ৩ থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত ফরচুন শুজ লিমিটেডের শেয়ার লেনদেনে কারসাজি করে সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গের দায়ে আবুল কালাম মাতবরকে ৭ কোটি ২০ লাখ, ডিআইটি কো-অপারেটিভ লিমিটেডকে ১৫ কোটি, কাজী সাদিয়া হাসানকে ২৫ কোটি, কনিকা আফরোজকে ১৯ কোটি, মো. আবুল খায়েরকে ১১ কোটি ও সাজিদ মাতবরকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

কমিশন সভায় ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত তালিকাভুক্ত ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির শেয়ার লেনদেনে কারসাজি করায় সাজিদ মাদবরকে ১ কোটি ৬০ লাখ, মো. বাশারকে ১ কোটি ১৫ লাখ, মো. আবুল খায়েরকে ১৯ কোটি ১৫ লাখ, কনিকা আফরোজকে ২ কোটি ৯০ লাখ, কাজী সাদিয়া হাসানকে ১ কোটি ৯০ লাখ, কাজী ফুয়াদ হাসানকে ১ লাখ, ডিআইটি কো-অপারেটিভকে ৮৪ লাখ ও আবুল কালাম মাতবরকে ২২ কোটি ৩০ লাখ টাকা জরিমানার সিদ্ধান্ত হয়।

তালিকাভুক্ত কোম্পানি সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস লিমিটেডে ২০২১ সালের ২৮ জুন থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত শেয়ার লেনদেনে কারসাজির দায়ে মো. আবুল খায়েরকে ১ লাখ, আবুল কালাম মাতবরকে ১ লাখ, কাজী সাদিয়া হাসানকে ২ লাখ, কনিকা আফরোজকে ১ লাখ, কাজী ফরিদ হাসানকে ৩৫ লাখ, কাজী ফুয়াদ হাসানকে ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

তালিকাভুক্ত কোম্পানি এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডে ২০২১ সালের ৭ থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত শেয়ার লেনদেনে কারসাজির দায়ে মো. আবুল খায়েরকে ২ কোটি ৩০ লাখ, আবুল কালাম মাতবরকে ৪ কোটি ১৫ লাখ, কাজী সাদিয়া হাসানকে ১১ লাখ, কনিকা আফরোজকে ১ লাখ, ডিআইটি কো-অপারেটিভকে ১২ লাখ, আলেয়া বেগমকে ১ লাখ, মোহাম্মদ বাশেরকে ১ লাখ, মোনার্ক হোল্ডিংস লিমিটেডকে ১ লাখ এবং সাজেদা মাতবরকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। 

কমিশন সভায় তালিকাভুক্ত প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডে ২০২৩ সালের ২৩ নভেম্বর থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ইউনিট লেনদেনে কারসাজি করে সংশ্লিষ্ট সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গের দায়ে মাহফুজা আক্তারকে ১২ লাখ এবং দেওয়ান সালেহীন মাহমুদকে ৪০ লাখ টাকা জরিমানার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়েছে

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩০ পিএম
নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়েছে
ছবি : সংগৃহীত

এক মাসের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়েছে। নভেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশে পৌঁছেছে। শহরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি নাগালের বাইরে গিয়ে অবিশ্বাস্য হলেও ১৪ দশমিক ৬৩ শতাংশে ঠেকেছে। 

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) নভেম্বর মাসের ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে এসব তথ্য উঠে এসেছে। 

দেশের ৬৪ জেলার ১৫৪টি হাটবাজার থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। 

খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশের অর্থ হলো ২০২৩ সালের নভেম্বরে যে খাদ্যপণ্য ১০০ টাকায় কেনা যেত, ২০২৪ সালের নভেম্বরে তা কিনতে হয়েছে ১১৩ টাকা ৮০ পয়সায়। সরকার চলতি অর্থবছর মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে রাখার পরিকল্পনা করলেও বাস্তবতা এর ধারেকাছে নেই। কয়েকবার নীতি সুদহারও বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাজার নিয়ন্ত্রণে জেলায় জেলায় টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। তার পরও নিয়ন্ত্রণে আসছে না মূল্যস্ফীতি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি আগামী জুন মাসের মধ্যে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। আমরা আশা করছি, পরবর্তী অর্থবছরের মধ্যে তা ৫ শতাংশে নামবে। আমাদের মূল লক্ষ্য ৪-৫ শতাংশে নামিয়ে আনা। আশা করি, তা সম্ভব।’ 

মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নামিয়ে আনতে পারলে সুদের হার কমিয়ে আনা হবে জানিয়ে গভর্নর আরও বলেন, ‘বন্যার কারণে বর্তমান বাজারে সবজি ও খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়তি। একসময় তা কমে আসবে।’ 

গভর্নর বলেন, ‘মুদ্রাস্ফীতি ৭ শতাংশে নামিয়ে আনতে পারলে আমরা ব্যাংকের সুদ ও নীতি সুদহার কমিয়ে আনব। গ্রাম ও শহর এলাকার মধ্যে শহরের তুলনায় গ্রামে গড় মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। তবে অক্টোবরে গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেশি থাকলেও নভেম্বরে এসে পাল্টে শহর এলাকায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে।’

নভেম্বরে গ্রাম এলাকার গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৫৩ শতাংশে, শহর এলাকায় তা আছে ১১ দশমিক ৩৭ শতাংশে। তবে খাদ্য মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে গ্রাম এলাকায় ১৩ দশমিক ৪১ শতাংশে পৌঁছে। যা আগের মাসে ছিল ১২ দশমিক ৭১ শতাংশ। শহর এলাকায় নভেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৬৩ শতাংশে। এটা আগের মাসে ছিল ১২ দশমিক ৫৩ শতাংশ। 

জিআই স্বীকৃতি পেল শেরপুরের ছানার পায়েস

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৮ পিএম
জিআই স্বীকৃতি পেল শেরপুরের ছানার পায়েস
শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন ছানার পায়েস। ছবি : খবরের কাগজ

ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন মিষ্টান্ন ছানার পায়েস। 

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি ছানার পায়েসকে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির আবেদন করে শেরপুর জেলা প্রশাসন। এরপর নানা তথ্য সংগ্রহ এবং এই খাবারের বিশেষত্ব যাচাই করে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেড মার্কস অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসান স্বাক্ষরিত চিঠিতে ছানার পায়েসকে ৪৩তম জিআই পণ্য হিসেবে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। 

ছানার পায়েস বা রসমালাই জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় উৎসবে মেতেছেন শেরপুরের বাসিন্দারা। স্বীকৃতি পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অনেকে মিষ্টি বিতরণ করেন।

অনুরাধা মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী বাপ্পি দে বলেন, ‘জিআই পণ্য হিসেবে ছানার পায়েসের স্বীকৃতি শেরপুর জেলাকে বিশ্বের দরবারে অন্যভাবে চেনাবে। পাশাপাশি এই ছানার পায়েস দেশ ছাড়াও বিদেশে রপ্তানি হবে। এতে দেশের অর্থনীতিতে অনন্য ভূমিকা রাখবে পণ্যটি। মূলত দুধ, চিনি, এলাচের মিশ্রণে তৈরি গুটি গুটি রসালো মিষ্টির নামটি ছানার পায়েস বা রসমালাই।’

জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘ছানার পায়েস ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় তা শেরপুরের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। দেশের সব জেলাসহ সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে এই ছানার পায়েস বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে অর্জিত হবে বৈদেশিক মুদ্রা। এর আগে শেরপুরের তুলশীমালা ধান জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়।’

 

ইউসিবির চেয়ারম্যান শরীফ জহিরের ব্যাংক হিসাব সচল

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:২২ পিএম
আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৬ পিএম
ইউসিবির চেয়ারম্যান শরীফ জহিরের ব্যাংক হিসাব সচল
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি

ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসির (ইউসিবি) চেয়ারম্যান শরীফ জহির ও তার পরিবারের সদস্যদের জব্দ ব্যাংক হিসাব সচল করা হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের (সিআইসি) সহকারী পরিচালক মোত্তাকিনুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়। 

গত ১ ডিসেম্বর সিআইসি এক নির্দেশনার মাধ্যমে এসব ব্যাংক হিসাব জব্দ করে। পরে আজ আরেকটি নির্দেশনা জারি করে অ্যাকাউন্টগুলো সচলের নির্দেশ দেওয়া হয়। শরীফ জহিরের আবেদনের প্রেক্ষিতে সঠিক তথ্য যাচাই করে তিনিসহ তার পরিবার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বাকি সদস্যদের ব্যাংক হিসাব সচল করে এনবিআর। 

এনবিআরের এই সিদ্ধান্ত ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় উদাহরণ তৈরি করেছে বলে মত প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট মহল। তবে একইসঙ্গে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ বা তথ্য ছাড়া ব্যাংক হিসাব জব্দের সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা দেশের ব্যবসায়িক মহলে প্রশ্ন ও উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। 

ব্যবসা খাতের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এ ধরনের সিদ্ধান্তের প্রভাব নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস-চেয়ারম্যান রোমো রউফ চৌধুরী বলেন, ‘এমন পদক্ষেপ ব্যবসায়িক কমিউনিটিতে অনিশ্চয়তা তৈরি করতে পারে এবং একইসঙ্গে তা ব্যাংকিং খাতের অংশীজনদের আস্থা ক্ষুণ্ন করবে।’

তার এই মন্তব্য একটি স্থিতিশীল রেগুলেটলরি এনভায়রনমেন্ট নিয়ে অংশীজনদের উদ্বেগেরই প্রতিফলন।

একইভাবে বিজিএমইএ সাপোর্ট কমিটির সদস্য শামস মাহমুদ পোশাক খাতে এ ধরনের সিদ্ধান্তের সম্ভাব্য প্রভাবের ওপর আলোকপাত করে বলেন, ‘পোশাক খাতে বেতন পরিশোধের সময়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেসব ব্যবসায়ী সুনামের সঙ্গে কারখানা পরিচালনা করে আসছেন, তাদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করা অযৌক্তিক। ব্যাংকগুলো সাধারণত প্যাকিং ক্রেডিট (পিসি) ও ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ছাড়ের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত হিসাব ও গ্যারান্টির ওপর নির্ভর করে, যা সময়মতো মজুরি পরিশোধের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

অভিযোগ উঠেছে, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে সম্পৃক্ত আগের পরিচালনা পর্ষদের একটি স্বার্থান্বেষী মহল ইউসিবির নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদের সুনাম ক্ষুণ্ন করতে এ ধরনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ব্যাংকের স্থিতিশীলতা ও আস্থা পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশ ব্যাংক গত ২৭ আগস্ট পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে। শরীফ জহিরের নেতৃত্বে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গ্রাহকদের আস্থা পুনরুদ্ধার, খেলাপিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া এবং করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণ পরিশোধে উৎসাহিত করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি আগের ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা পর্ষদের অধীনে অপব্যয় ও সম্পদের তছরুপ নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপও নিয়েছে নতুন পরিচালনা পর্ষদ।   

অতীতের অনিয়ম উন্মোচনে ও দোষীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে ফরেনসিক অডিট পরিচালনা করা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, উল্লেখ্য স্বার্থান্বেষী মহল এ অডিট পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। তাদের উদ্দেশ্য- অডিট পরিচালনায় বাধা দেওয়ার মাধ্যমে নতুন পরিচালনা পর্ষদকে অস্থিতিশীল করা এবং আগে অনিয়মের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের সুরক্ষা দেওয়া।

শরীফ জহির দেশের শীর্ষস্থানীয় রপ্তানিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান অনন্ত গ্রুপেরও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ৩২ হাজারের বেশি মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির পাশাপাশি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে প্রতিষ্ঠানটি। অনন্ত গ্রুপ পেশাদারত্ব ও নিষ্ঠার জন্য বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছে। প্রতিষ্ঠানটি সুনামের সঙ্গে বৈশ্বিক রিটেইলার ও ব্যাংকসহ বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে কাজ করছে। তবে সরকারি কোনো ব্যবসার সঙ্গে অনন্ত গ্রুপের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। 

এক অভূতপূর্ব সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দেশে ব্যবসায়িক খাতসহ সব ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় সংস্কারের বাস্তবায়নে পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা ও দুর্নীতি প্রতিরোধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে।

এমন প্রেক্ষাপটে, যারা পেশাদারত্বের ক্ষেত্রে উৎকর্ষের মাধ্যমে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন তাদের জন্য স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি ও তাদের আস্থা অর্জন করা গুরুত্বপূর্ণ। অন্যথায়, ভিত্তিহীন তথ্যের মাধ্যমে সিদ্ধান্তগুলো দেশের অগ্রগতির পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্যাহত করবে।

লাবনী/সালমান/

এনবিআর-আইএমএফ বৈঠকে ঘাটতি থেকে বের হতে গুরুত্ব

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১১ পিএম
এনবিআর-আইএমএফ বৈঠকে ঘাটতি থেকে বের হতে গুরুত্ব
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)

চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই ঘাটতির চক্রে ঘুরপাক খাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ঘাটতির কারণ ও এ থেকে বেরিয়ে আসতে এনবিআর কী করছে তা জানতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। একই সঙ্গে আদায় বাড়াতে পরামর্শ দিয়েছেন আইএমএফের প্রতিনিধিরা। 

এনবিআর জানিয়েছে, রাজস্ব ফাঁকি বন্ধ করতে প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি আইনের কঠোর প্রয়োগ করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, শিগগিরই এর সুফল পাওয়া যাবে। রাজস্ব আদায় কয়েক গুণ বাড়বে। ফলে অর্থবছরের শেষ হিসাবে ঘাটতি থাকবে না। বরং লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আদায় হবে। এনবিআর সূত্রে এসব জানা গেছে। 

গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের সঙ্গে তার দপ্তরে আইএমএফের প্রতিনিধিদল বৈঠকে বসে। এ সময় এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের তিন শাখা- আয়কর, শুল্ক ও ভ্যাট শাখার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শুরু হয় বেলা আড়াইটায়, শেষ হয় ৪টা ১৫ মিনিটে। 

সূত্র জানায়, এনবিআরের সর্বশেষ পরিসংখ্যান নিয়ে বৈঠকের শুরুতেই আলোচনা হয়। পরিসংখ্যানে উল্লেখ আছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর- এই চার মাসে এনবিআরের মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ১ লাখ ৩২ হাজার ১১৪ কোটি টাকা। কিন্তু আদায় হয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ২৮১ কোটি টাকা। রাজস্ব আদায় কমেছে ৩০ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা। 

২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম চার মাসের চেয়েও চলতি অর্থবছরের একই সময়ে ১ দশমিক ৩ শতাংশ বা ১ হাজার ৫৫ কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ১ লাখ ২ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের কোনো মাসেই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি এনবিআর। 

জুলাই মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ২৫ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ২০ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা। জুলাইয়ে রাজস্ব আদায় কমেছে ৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। পরের মাস আগস্টে ৩১ হাজার ৬০৭ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২১ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ আদায় কমেছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বর মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৩৯ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ২৯ হাজার ২ কোটি টাকা। রাজস্ব আদায় কমেছে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি। 

অক্টোবর মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৩৫ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ২৭ হাজার ৭২ কোটি টাকা। আদায় কমেছে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। 

বৈঠকে উপস্থিত আইএমএফের প্রতিনিধিরা বলেন, ঘাটতির চক্র থেকে বের হয়ে না এলে দেশের অর্থনীতিতে গতি আসবে না। সরকার বড় ধরনের অর্থসংকটে পড়বেও বলে আইএমএফের প্রতিনিধিরা সতর্ক করেন। 

ভবিষ্যতে ঘাটতিতে পড়বে না বলে জোর দিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, করদাতা বাড়ানোর পাশাপাশি রিটার্ন জমা বাড়াতেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে রিটার্ন জমার সংখ্যা ৬ লাখ ছাড়িয়েছে। রাজস্ব খাতের সংস্কার কার্যক্রম ও মিথ্যা ঘোষণা বন্ধে কঠোরতার কথা জানান তিনি।

চট্টগ্রাম বন্দরসহ প্রতিটা শুল্ক স্টেশনে মিথ্যা ঘোষণা বন্ধে জোর দেওয়া হয়েছে জানিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, ভ্যাট আদায়ে স্বচ্ছতা আনতে ইএফডির পাশাপাশি অন্য আরও আধুনিক পদ্ধতি চালুর করার বিষয় নিয়েও প্রস্তুতি চলছে। সারা দেশের ভ্যাটযোগ্য প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করতে কাজ চলছে। এমন পদ্ধতিতে যাওয়া হচ্ছে যে, কোনো প্রতিষ্ঠান ভ্যাট না দিয়ে ব্যবসা করতে পারবে না। 

সম্প্রতি প্রকাশিত অর্থনীতির শ্বেতপত্রের কথা তুলে ধরে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, অপ্রয়োজনে দেওয়া সব ধরনের রাজস্ব অব্যাহতি প্রত্যাহার করতে কাজ চলছে। এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা শাখা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি), শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং ভ্যাট নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর যে যার অবস্থান থেকে গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছে। কর ফাঁকি উদ্ঘাটন হলে ২৫ হাজার টাকার বেশি এনবিআরের কোষাগারে আসবে, যা চলতি অর্থবছরের শেষ হিসাবে যোগ হবে। 

এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান খবরের কাগজকে বলেন, ‘এনবিআরের কাজে গতি বাড়ানো হয়েছে। ব্যাপক সংস্কার, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আশা করি, এতে চলতি অর্থবছরে রাজস্ব ঘাটতি এড়ানো সম্ভব হবে।’

প্রসঙ্গত, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা হবে এমন শর্ত মেনেই আইএমএফের কাছ থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ নেয় বাংলাদেশ। এ শর্ত পূরণ না হলে ঋণের কিস্তি ছাড় করা হবে না বলেও ঋণ অনুমোদনের আগেই জানিয়েছিল সংস্থাটি। অথচ ঋণ পাওয়ার পর থেকে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে এনবিআর। আইএমএফ ও এনবিআরের সঙ্গে অনুষ্ঠিত আগের বৈঠকগুলোর মতোই গতকালের বৈঠকেও ঋণ পাওয়ার শর্ত উল্লেখ করে আইএমএফের প্রতিনিধিরা জানান, আগামী অর্থবছর অর্থাৎ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষে কর-জিডিপির অনুপাত ৮ দশমিক ৮ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। এ লক্ষ্য অর্জন করতে হলে রাজস্ব থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে অতিরিক্ত আয় করতে হবে ৭৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির সর্বশেষ বছর অর্থাৎ ২০২৫-২৬ অর্থবছরে কর-জিডিপির অনুপাত ৯ দশমিক ৫ শতাংশ অর্জন করতে হবে।