ইরানের পেট্রোকেমিক্যাল উৎপাদন সক্ষমতা ৮ শতাংশ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে দেশটি। সপ্তম জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার (২০২২-২৭) অংশ হিসেবে ২০২৭ সালের মধ্যে ইরানের পেট্রোকেমিক্যাল উৎপাদন ১৩ কোটি টনে পৌঁছাবে। সম্প্রতি ইরানের পেট্রোএনার্জি ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক শানার একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। খবর ইরনার।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থাটি জানিয়েছে, দেশটির অষ্টম জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার জন্য পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পে আরও ৪ হাজার কোটি (৪০ বিলিয়ন) ডলার বিনিয়োগ করবে, যা এই শিল্পকে আরও সম্প্রসারিত করবে এবং এর মূল্য-শৃঙ্খল বা ভ্যালু চেইন পুরোপুরি স্বনির্ভর করতে সাহায্য করবে।
বর্তমানে বিশ্বের মোট পেট্রোকেমিক্যাল উৎপাদন সক্ষমতার ২ দশমিক ৮ শতাংশ এবং অঞ্চলের এই শিল্পের মোট সক্ষমতার প্রায় ২৮ শতাংশে অবদান রাখছে ইরান। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, সপ্তম উন্নয়ন পরিকল্পনার সময়সীমার মধ্যে ইরানের পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পের উৎপাদনক্ষমতা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে।
ইরানের জাতীয় পেট্রোকেমিক্যাল কোম্পানি (এনপিসি) প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি ইরানি পঞ্জিকাবর্ষ শেষ হওয়ার (মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত) আগেই ইরানের পেট্রোকেমিক্যাল উৎপাদন সক্ষমতা ১০ কোটি ৩০ লাখ টনে পৌঁছাবে। এ ছাড়া সপ্তম জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রায় ৬০টি পেট্রোকেমিক্যাল প্রকল্প চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে, যা ২০২৭ সালের মধ্যে দেশের পেট্রোকেমিক্যাল সক্ষমতায় আরও ৩ কোটি ৫০ লাখ টন যোগ করবে। তবে এই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন করতে সপ্তম ও অষ্টম জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার জন্য বছরে কমপক্ষে ৭০০ কোটি (৭ বিলিয়ন) ডলারের বিনিয়োগ প্রয়োজন। এই লক্ষ্য অর্জন করতে এবং পরিকল্পনাগুলো সফল করতে সরকার ও পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পের সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ এককভাবে পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প এই লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম নয়; বরং এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহের জন্য সরকারের সহায়তা প্রয়োজন।
চলতি মাসের শুরুতে ন্যাশনাল পেট্রোকেমিক্যালের তত্ত্বাবধায়ক দেশের বর্তমান পেট্রোকেমিক্যাল উৎপাদন সক্ষমতা ১০ কোটি টন বলে উল্লেখ করেছেন। তার মতে, ২০২৭ সালের মধ্যে দেশের পেট্রোকেমিক্যাল উৎপাদনক্ষমতা ১৩ কোটি টন অতিক্রম করতে পারে।
চলতি বছরের মে মাসে অ্যাসোসিয়েশন অব পেট্রোকেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি করপোরেশনের (এপিআইসি) মহাপরিচালক আহমদ মাহদাভি আভারি জানান, গত দুই বছরে ইরানের পেট্রোকেমিক্যাল উৎপাদন ১ কোটি ৫০ লাখ টন বেড়েছে। তিনি দেশটির বর্তমান পেট্রোকেমিক্যাল উৎপাদন ৮ কোটি ২০ লাখ টন বলে উল্লেখ করেছেন। তার দেওয়া তথ্যমতে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম রাইসির দায়িত্ব গ্রহণের আগে, ২০২১ সালের আগস্টে ইরানের পেট্রোকেমিক্যাল উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৬ কোটি ৭০ লাখ টন।
এই শিল্প কর্মকর্তা জানান, ইরানের পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় ১ লাখ ৪৩ হাজার মানুষের প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। তিনি আরও বলেন, দেশের তৃতীয় পঞ্চবার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা থেকে এই শিল্পের প্রবৃদ্ধির হার ২৭ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে বেড়ে বর্তমানে ৪০ দশমিক ৬০ শতাংশে পৌঁছেছে। ইরানের পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পের উৎপাদন সক্ষমতা এখন অঞ্চলটির মোট পেট্রোকেমিক্যাল সক্ষমতার ২৮ শতাংশ এবং বিশ্বের মোট পেট্রোকেমিক্যাল সক্ষমতার ২ দশমিক ৭ শতাংশ।
ইরানের নন-অয়েল অর্থনীতিতে পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পেট্রোকেমিক্যাল রপ্তানি দেশের জ্বালানি তেলের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম আয়ের উৎস হিসেবে বিবেচিত। পেট্রোকেমিক্যাল রপ্তানি ইতোমধ্যেই দেশের মোট নন-অয়েল রপ্তানির প্রায় ৩৩ শতাংশ অবদান রাখছে। ইরানের জাতীয় পেট্রোকেমিক্যাল কোম্পানির (এনপিসি) সাবেক প্রধান মরতেজা শাহমিরজায়ী জানিয়েছেন, কোম্পানি আগামী ১০ বছরের মধ্যে বার্ষিক পেট্রোকেমিক্যাল উৎপাদন সক্ষমতা ২০ কোটি টনে উন্নীত করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।