দেশের সব ধরনের আমদানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক (ব্ল্যাঙ্কেট ট্যারিফ) আরোপ করতে চান যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফলে একটি বড় বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে রপ্তানিতে যুক্তরাজ্যের ওপর শুল্কের বোঝা বাড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এই নীতি বাস্তবায়িত হলে রপ্তানির ক্ষেত্রে ২২ বিলিয়ন পাউন্ড ক্ষতির মুখে পড়তে পারে যুক্তরাজ্য। সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইনক্লুসিভ ট্রেড পলিসির (সিআইটিপি) অর্থনীতিবিদদের নতুন একটি বিশ্লেষণে এই তথ্য জানানো হয়েছে। খবর বিবিসির।
সিআইটিপির অর্থনীতিবিদদের মতে, ট্রাম্পের এই নীতি বাস্তবায়িত হলে যুক্তরাজ্যের বৈশ্বিক রপ্তানি ২ দশমিক ৬০ শতাংশের বেশি কমতে পারে, যার কারণ হবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যের পরিমাণ কমে যাওয়া এবং এটির বৈশ্বিক প্রভাব (নক-অন ইফেক্ট)। এই পতন তখনই ঘটতে পারে, যদি যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট তার নির্বাচনি প্রচারের সময় দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সব আমদানির ওপর ২০ শতাংশ এবং চীনা আমদানির ওপর ৬০ শতাংশ হারে শুল্কারোপ করেন।
প্রসঙ্গত, ব্ল্যাঙ্কেট ট্যারিফ এমন একটি শুল্কনীতি যেখানে নির্দিষ্ট দেশ বা অঞ্চলের সব পণ্যের ওপর একই হারে শুল্কারোপ করা হয়। এর ফলে আমদানির খরচ বেড়ে যায় এবং রপ্তানিকারকদের বাজারে প্রবেশের সুযোগ কমতে থাকে। আর নক-অন প্রভাব বলতে একটি ঘটনার প্রভাবে পরবর্তী অন্যান্য ক্ষেত্রে সৃষ্ট প্রভাবকে বোঝানো হয়। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রে শুল্ক বাড়ানোর কারণে যুক্তরাজ্যের অন্যান্য বাজারেও এটির প্রভাব পড়তে পারে।
ব্রিটিশ সম্প্রচারমাধ্যমটির খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য শুল্কারোপের কারণে যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক উৎপাদনে বার্ষিক দশমিক ৮০ শতাংশ ক্ষতি হবে।
গবেষক নিকোলো তামবেরি একটি ব্লগ পোস্টে বলেন, যদিও ট্রাম্পের কঠোর প্রতিশ্রুতিগুলো একটি আলোচনার কৌশল হতে পারে, তবে ‘এই শুল্কগুলো আরোপ করার সম্ভাবনাও অবশ্যই রয়েছে। এর মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের যেসব প্রধান খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে তার মধ্যে রয়েছে মৎস্য, পেট্রোলিয়াম ও খনিজশিল্প। এর ফলে এই খাতগুলোর রপ্তানি প্রায় এক-পঞ্চমাংশ কমতে পারে। এর মাধ্যমে ওষুধ শিল্প ও বৈদ্যুতিক খাতও প্রভাবিত হবে বলেও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
এমনকি যেসব কোম্পানি নিজেরা সরাসরি রপ্তানি করে না, তারাও প্রভাবিত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, পরিবহন পরিষেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এই ক্ষতির মধ্যে পড়বে, যাদের ব্যবসা কার্যক্রম বাণিজ্যিক প্রবাহের ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ছাড়া বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিমা ও আর্থিক পরিষেবাগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে কিছু খাত চীনা রপ্তানির কমে যাওয়ার কারণে উপকৃত হতে পারে। যদি চীনের রপ্তানির ওপর ট্রাম্পের উচ্চশুল্ক আরোপিত হয়, তবে কম প্রতিযোগিতার কারণে টেক্সটাইল ও পোশাক খাতে লাভবান হতে পারে যুক্তরাজ্য।
ট্রাম্পের শাসনামলে সীমান্ত কর (বর্ডার ট্যাক্স) কতটা বাড়বে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। কিছু কূটনীতিক মার্কিন মিত্রদের জন্য সামান্য শুল্কের মতো আরও বাস্তবসম্মত প্রস্তাবের ইঙ্গিত দিয়েছেন।
তবে ট্রাম্পের শীর্ষ বাণিজ্য উপদেষ্টা, সাবেক বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট লাইটহাইজার এই (শুল্ক-সংক্রান্ত) কৌশলের দৃঢ় সমর্থক।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি সম্প্রতি বিবিসির নিউজকাস্ট পডকাস্টে বলেছেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝানোর চেষ্টা করব এবং আমি বিশ্বাস করি তারা এটি বুঝবে যে, নিকট মিত্রদের ক্ষতি করা তাদের মধ্যম বা দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থের পরিপন্থি।’
কিন্তু ট্রাম্পের আগের শাসনামলে তার প্রশাসনে যুক্তরাষ্ট্রে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত লর্ড ডারক যুক্তরাজ্যকে সতর্ক করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতির ঝুঁকিগুলোকে অবমূল্যায়ন করা উচিত নয়। তিনি সম্প্রতি বিবিসির নিউজনাইট অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমি আশাবাদী নই। ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক আরোপ করেছিলেন। এবার তিনি আরও বড় কিছু করতে চান। তিনি বিশ্বাস করেন- এটি কোনো ভাঁওতাবাজি নয়। আমি মনে করি তিনি এটি করবেন।’
যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী (চ্যান্সেলর) র্যাচেল রিভস ও ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর অ্যান্ড্রু বেইলি দুজনেই বলেছেন, তারা মুক্ত বাণিজ্যের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপনের বিষয়টি চালিয়ে যাবেন।
খবরে বলা হয়, যুক্তরাজ্যকে হয়তো এমন একটি অবস্থানে পড়তে হতে পারে, যেখানে ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে আলাদাভাবে চুক্তি করার চেষ্টা করে শুল্ক এড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।