
আলুর দাম লাগাম ছাড়া হওয়ায় আমদানিতে সরকার শুল্কহার অর্ধেক কমালেও দাম কমেনি খুচরা বাজারে। আবার বিভিন্ন বাজারে নতুন আলু উঠলেও দাম চড়া। তিন দিনের ব্যবধানে কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৮০ টাকা ছুঁয়ে গেছে পুরোনো আলু। নতুন আলু সেঞ্চুরি ছাড়িয়ে ১১০-১২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আমদানি শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করার পর ভারত থেকে আসছে চাল। আমন ধানও উঠতে শুরু করেছে। তার পরও কমেনি দাম।
তবে সবজির বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। অধিকাংশ সবজি ৬০-৮০ টাকার ঘরে। তবে সরকারনির্ধারিত দরে মেলে না ডিম ও মুরগি। আগের মতোই ডিমের ডজন ১৪৫-১৫০ টাকা, ব্রয়লার ১৮০-২০০ ও সোনালি মুরগি ৩০০-৩১০ টাকা কেজি।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজার ও হাতিরপুল বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
চড়া দামেই আলু বিক্রি
গত সপ্তাহে নতুন আলু বিক্রি হয়েছে ১২০-১৪০ টাকা কেজি। গতকাল ২০ টাকা কমে ১১০-১২০ টাকায় নেমেছে। তবে পুরোনো আলু কেজিতে ৫-১০ টাকা বেড়ে ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ এই আলুর দাম কমাতে সরকার শুল্ক অর্ধেক কমিয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত ৫ সেপ্টেম্বর এক প্রজ্ঞাপনে আলু আমদানিতে বিদ্যমান ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। একই সঙ্গে আলু আমদানিতে যে ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আছে, তা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে। তার পরও পুরোনো আলু সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে।
তবে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। আমদানি করার ফলে ভারতের পেঁয়াজ ১০০-১১০ টাকায় বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। এর প্রভাবে দেশি পেঁয়াজের দামও ১০ টাকা কমে ১৩০-১৪০ টাকায় নেমেছে। বিক্রেতারা বলেন, দেশি পেঁয়াজ শেষ পর্যায়ে। ভারতের পেঁয়াজ আমদানি করার ফলে সরবরাহ বাড়ছে। এ জন্য দাম কমছে। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে রসুন ও আদার দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে। বিদেশি রসুন ২৪০-২৮০ টাকা, দেশিটা ২৮০-৩০০ টাকা। দেশি আদার কেজি ১৬০ টাকা ও চীনের আদা ২৮০-৩০০ টাকা কেজি।
কমতির দিকে সবজি
শীতের সবজি বাজারে উঠতে থাকায় কমছে দাম। বিক্রেতারা বলেন, প্রতি সপ্তাহে বেগুন, শিমসহ অধিকাংশ সবজির দাম ১০ টাকা কমেছে। ফলে বেগুন ও শিমের কেজি ৮০-১২০ টাকায় নেমেছে। ঝিঙা ৭০-৮০ টাকা, কচুরমুখী ৭০, পটোল ৬০-৭০, ধুন্দুল ৬০-৭০, ঢ্যাঁড়স ৬০-৮০, পেঁপে ৪০-৫০, শসা ৬০-৮০, বরবটি ও কচুরলতি ৮০, গাজর ১৪০, টমেটো ১৬০-২০০ টাকা কেজি। কাঁচা মরিচের দামও কমে ১০০-১৬০ টাকা কেজি হয়েছে। কপি, লাউ, চালকুমড়ার পিস ৪০-৬০ টাকা। পুঁইশাকের আঁটি ৪০ টাকা, লাল, পালং, কলমি ও পাটশাক ২০ টাকা আঁটি।
খেতের ধান উঠলেও কমেনি চালের দাম
অন্তর্বর্তী সরকার চালের দাম কমাতে গত ৩১ অক্টোবর চাল আমদানিতে সম্পূর্ণ শুল্ক প্রত্যাহার করে। ভারত থেকে চাল আসছে। কিন্তু খুচরা বিক্রেতারা বলছেন দাম কমেনি। আগের মতোই বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারের চাল বিক্রেতা আব্দুল মান্নান খবরের কাগজকে বলেন, ‘আগের মতোই মিনিকেট ৭২-৭৬ টাকা, আটাশ চাল ৬০-৬২ ও মোটা চাল ৫২-৫৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এখনো ভারতের চাল আসেনি। তবে মাঠ থেকে ওঠা নতুন চাল আসছে, কিন্তু দাম কমেনি। চিনিগুঁড়া খোলা চাল ১৩০-১৪০ টাকা ও প্যাকেটজাত ১৭০-১৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
একই বাজারের সাইফুল স্টোরের সাইফুলসহ বিভিন্ন বাজারের খুচরা বিক্রেতারা বলেন, আগের মতোই ছোলা ১৪০-১৬০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা কেজি, মসুর ডাল ১১০-১৩৫, দুই কেজির প্যাকেট আটা ১০০-১৩০, খোলা আটা কেজি ৪০ টাকা, এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৬৭ টাকা ও পাঁচ লিটার ৮০০-৮১০ টাকা, চিনি ১৩০-১৩৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
কমেনি মুরগির দাম
সরকার ডিম ও মুরগির দাম বেঁধে দিলেও তা বাজারে মেলে না। সরকার ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৮০ টাকা ও সোনালি মুরগির দাম ২৭০ টাকা বেঁধে দিয়েছে। তার পরও গতকাল আগের মতোই ব্রয়লার মুরগি ১৯০-২০০ টাকা ও সোনালি মুরগি ৩০০-৩১০ টাকা কেজি বিক্রি হয়।
কারওয়ান বাজারে নূরজাহান ব্রয়লার হাউসের শাহেদ আলী বলেন, ‘আগের মতোই মুরগি বিক্রি করা হচ্ছে, দাম কমেনি বা বাড়েনি। গরুর মাংসও আগের মতো ৭০০-৭৮০ টাকা কেজি এবং খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে ডিমের দাম ১৪২ টাকা বেঁধে দিলেও ১৪৫-১৫০ টাকা ডজন বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা।
আগের মতোই মাছের দাম
অন্যান্য পণ্যের মতো মাছের দামও কমছে না। ইলিশ মাছ বাজারে পাওয়া গেলেও কমে না দাম। মাছ বিক্রেতারা বলেন, রুই-কাতলার কেজি ৩৫০-৬০০ টাকা। চিংড়ি ৬০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, কাজলি ১ হাজার, মলা ৫০০, ট্যাংরা ৫০০-৮০০, তেলাপিয়া ও পাঙাশের কেজি ২০০-২৫০, চিংড়ি ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা কেজি। ইলিশের কেজি ২ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ ও জাটকা ১ হাজার টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।