ঢাকা ৩০ পৌষ ১৪৩১, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

ট্রাম্পের হুমকিতে চাপের মুখে কানাডা-মেক্সিকো সম্পর্ক

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:২২ এএম
আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:২৫ এএম
ট্রাম্পের হুমকিতে চাপের মুখে কানাডা-মেক্সিকো সম্পর্ক
যুক্তরাষ্ট্রের পিস আর্চ হিস্টোরিক্যাল স্টেট পার্কের কাছে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা সীমান্ত। ছবি: সংগৃহীত

হোয়াইট হাউসে নিজের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করার আগেই কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর অতিরিক্ত শুল্কারোপের হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ বিষয়ে গত সপ্তাহে ট্রাম্প বলেন, জানুয়ারিতে তার দায়িত্ব গ্রহণের পর কানাডা ও মেক্সিকো যদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের যুক্ত সীমান্ত সুরক্ষিত করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তিনি দুই দেশের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্কারোপ করবেন। এই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে কানাডীয় কর্মকর্তারা দ্রুত তাদের দেশের সীমান্ত সমস্যাগুলো মেক্সিকোর থেকে আলাদা করার চেষ্টা করেন। এমন পরিস্থিতিতে কানাডার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা মেক্সিকোকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এ নিয়ে উভয় দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের সম্পর্কের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। খবর বিবিসির।

ব্রিটিশ সম্প্রচারমাধ্যমটির খবরে বলা হয়, কানাডার কর্মকর্তারা যুক্তি দেন যে, দক্ষিণ সীমান্তে (মেক্সিকো-কানাডা সীমান্ত) মাদক পাচার ও অবৈধ অনুপ্রবেশ অনেক বেশি এবং চীনা বিনিয়োগের জন্য উত্তর আমেরিকায় মেক্সিকো একটি ‘পেছনের দরজা’ হিসেবে কাজ করছে।

তবে কানাডার এই মন্তব্যগুলো মেক্সিকোতে নজর এড়ায়নি। মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবম চলতি সপ্তাহে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেন, ‘মেক্সিকোকে সম্মান করতে হবে, বিশেষত তাদের বাণিজ্য অংশীদারদের থেকে এটা আরও বেশি প্রত্যাশিত।’ 

শেইনবম বলেন, কানাডার নিজস্ব সামাজিক সমস্যা রয়েছে, যেমন ফেন্টানিল ব্যবহারের সমস্যা। এ সময় তিনি যোগ করেন, দেশটি (কানাডা) শুধু আশা করতে পারে যে, তাদেরও মেক্সিকোর মতো সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি থাকুক।

শেইনবমের এমন এক সময়ে এই মন্তব্য করেছেন, যখন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত কানাডার রাষ্ট্রদূত কিরস্টেন হিলম্যানের ফরাসি সংবাদ সংস্থাটিকে জানান, সম্প্রতি ট্রাম্পের ফ্লোরিডার বাসভবন মার-আ-লাগোতে একটি ডিনারের সময়, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে বলেছিলেন, উত্তরের সীমান্ত মেক্সিকোর সীমান্তের তুলনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন।

গত সপ্তাহে কানাডার সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ অন্টারিওর নেতা ডগ ফোর্ড বলেছেন, দুই সীমান্তের মধ্যে পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও সীমান্ত নিরাপত্তার বিষয়ে কানাডা ও মেক্সিকোকে একসঙ্গে বিবেচনা করা ‘সবচেয়ে অপমানজনক বিষয়’। সেই সঙ্গে দীর্ঘদিনের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এটি শোনা কানাডার পক্ষে কোনোভাবেই কাম্য নয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন। 

খবরে বলা হয়, কানাডীয় কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাকে চীনের বিরুদ্ধে একটি ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। একই সঙ্গে তারা বলছেন, তারা চীনের বিরুদ্ধে উদ্বিগ্ন যে, দেশটি মেক্সিকোকে ব্যবহার করে সস্তা আমদানির মাধ্যমে নিজেদের পণ্যে উত্তর আমেরিকার বাজার সয়লাব করে ফেলেছে।

অক্টোবরে চীনে তৈরি বৈদ্যুতিক যানবাহনের (ইভি) আমদানির ওপর ১০০ শতাংশ শুল্কারোপ করে কানাডা। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অনুরূপ ঘোষণা দেয়। এ ছাড়া চীনের স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্কারোপ করার পরিকল্পনাও করছে কানাডা। তবে মেক্সিকো এখনো এ রকম উচ্চহারের শুল্ক আরোপ করেনি। 

বর্তমানে তিনটি দেশই উত্তর আমেরিকার বাণিজ্য চুক্তির অধীনে রয়েছে, যা ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে পুনরায় আলোচনা করা হয়েছিল। এই চুক্তি নিয়ে ২০২৬ সালে আবার আলোচনা করা হবে। 

তবে চীনের সঙ্গে উত্তেজনার কারণে ডগ ফোর্ড বারবার কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর মধ্যে পৃথক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন। কানাডার জ্বালানি তেলসমৃদ্ধ প্রদেশ আলবার্টার নেতা ড্যানিয়েল স্মিথ এই প্রস্তাবটি সমর্থন করেছেন। 

এ বিষয়ে ডগ ফোর্ড নভেম্বরের শেষ দিকে বলেন, তাদের এই সমস্যাগুলো সমাধানের সুযোগ ছিল বহু বছর ধরে। কিন্তু তারা তা করতে চায় না। জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, কানাডা মেক্সিকোকে একটি ঐক্যবদ্ধ উত্তর আমেরিকান বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে দেখতে চায়। তবে যদি তারা চীনের সঙ্গে বাণিজ্য-সংক্রান্ত বিষয়গুলো সমাধান না করে, তাহলে আমাদের অন্য বিকল্প উপায়গুলো বিবেচনা করতে হতে পারে। 

উইন্ডসর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রস-বর্ডার ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মার্তা লিয়ার্ডি-অ্যান্ডারসন বলেন, ফোর্ডের মন্তব্য সম্ভবত অন্টারিওর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গভীর বাণিজ্যিক নির্ভরশীলতার প্রতিফলন। উইন্ডসর শহরটি একটি সেতুর মাধ্যমে মিশিগানের ডেট্রয়েট শহরের সঙ্গে সংযুক্ত। 
অন্টারিও প্রদেশ কানাডার অত্যন্ত সংহত অটো শিল্পের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে এবং ২০২৩ সালে অন্টারিও ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৪৯৩ বিলিয়ন কানাডীয় ডলার (৩৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। 

এ বিষয়ে মার্তা লিয়ার্ডি-অ্যান্ডারসন বলেন, এটি দেশের যেকোনো একটি অঞ্চল থেকে আসা বিশাল পরিমাণ অর্থনৈতিক শক্তি। তিনি আরও বলেন, ট্রাম্পের শুল্ক ও সীমান্ত নিরাপত্তা সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গি দীর্ঘদিনের মিত্র মেক্সিকো ও কানাডাকে তাদের সম্পর্কের দুর্বলতাগুলো এমনভাবে বিশ্লেষণ করতে বাধ্য করেছে, যা তারা আগে করেনি।

এই মন্তব্যগুলো মেক্সিকোর প্রধান বাণিজ্য মধ্যস্থতাকারী গুতিয়েরেজ রোমানোর বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হয়েছে। তিনি গত সপ্তাহে কানাডার পত্রিকা গ্লোব অ্যান্ড মেইলকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিভক্ত হওয়া কোনোভাবেই যুক্তিসঙ্গত নয়। 

অন্যদিকে ডগ ফোর্ডের মন্তব্য এবং এ বিষয়ে ট্রুডোর নীরবতাকে কিছু মেক্সিকান জনগণের কাছে অপমানজনক হিসেবে মনে করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেক্সিকোর ন্যাশনাল অটোনোমাস ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক অলিভার সান্তিন পেনা। 

পেনা বিবিসিকে বলেন, অবশেষে এটি কানাডা ও মেক্সিকোর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জন্য ভালো সময় নয়। তিনি বলেন, দুই দেশ ৮৫ বছর ধরে একটি স্থিতিশীল সম্পর্ক উপভোগ করেছে। 

মেক্সিকোর এই অধ্যাপক আরও বলেন, শেইনবমের প্রতিক্রিয়া ইঙ্গিত দেয় যে, প্রয়োজন হলে তিনি মেক্সিকোর জন্য দৃঢ় অবস্থান নেবেন। তবে ট্রাম্প ও ট্রুডোর সঙ্গে দ্বিমুখী বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করার ইচ্ছা সম্ভবত তার নেই। পেনা বলেন, তিনি (শেইনবম) উসকানিতে পা দেবেন না। তবে তিনি এটি পরিষ্কার করতে চান যে, তার দেশকে সম্মান করা উচিত। 

শেইনবাউম, যিনি অক্টোবরে দায়িত্ব গ্রহণ করেন, এখনো দেশের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের অবস্থান প্রতিষ্ঠা করছেন। তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে মেক্সিকোকে তার উত্তর আমেরিকান প্রতিবেশীদের দ্বারা একটি পূর্ণাঙ্গ ও সমান অংশীদার হিসেবে সম্মান করা উচিত। মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবমকে যখন দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করার সম্ভাবনা নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হয় তখন তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমি সবসময় মেক্সিকো ও মেক্সিকানদের অধিকার রক্ষা করব, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারীরাও অন্তর্ভুক্ত।’

খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ও দক্ষিণ- উভয় সীমান্তেই অবৈধ অনুপ্রবেশ ও মাদক জব্দের ঘটনা ঘটছে। তবে সরকারি তথ্য অনুসারে, কানাডার সঙ্গে লাগোয়া সীমান্তে এই সংখ্যাগুলো মেক্সিকোর সীমান্তের তুলনায় অনেক কম। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উত্তর সীমান্তে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত বাহিনী ৪৩ পাউন্ড (সাড়ে ১৯ কেজি) ফেন্টানিল (মাদক) জব্দ করেছে, যেখানে দক্ষিণ সীমান্তে এই পরিমাণ ২১ হাজার পাউন্ডের বেশি। একই সময়ে উত্তর সীমান্তে প্রায় ২ লাখ অভিবাসীর অনুপ্রবেশ ঘটেছে। আর দক্ষিণ সীমান্তে এই সংখ্যা ২০ লাখের বেশি। তবে ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত শুল্ক হুমকির পর থেকে সীমান্ত নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কানাডা।

শুল্ক-ভ্যাট নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে এফবিসিসিআই

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:০৬ পিএম
আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:১৩ পিএম
শুল্ক-ভ্যাট নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে এফবিসিসিআই
ছবি : খবরের কাগজ

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই শুল্ক ও ভ্যাট বাড়ানো এবং গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব করায় ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বৈষম্যবিরোধী সংস্কার পরিষদ (এফবিসিসিআই)। 

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ উদ্বেগ জানানো হয়।

এ সময় সংগঠনটির আহ্বায়ক জাকির হোসেন নয়নের সভাপতিত্বে অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

তারা বলেন, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই গত ৯ জানুয়ারি শুল্ক ও ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। তাছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে গ্যাসের মূল্যও বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। 

জাকির হোসেন নয়ন বলেন, দীর্ঘমেয়াদী সহায়ক কর কাঠামো প্রাপ্তি সাপেক্ষে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করে থাকেন। হঠাৎ কোনো আলোচনা ছাড়াই ভ্যাট বা শুল্ক বৃদ্ধি করা হলে নীতি প্রয়োগের ধারাবাহিকতা থাকে না। ফলে উদ্যোক্তারা নিরুৎসাহিত হন। যার প্রভাব বিনিয়োগের উপর পড়ে। তাই হঠাৎ করে কর হারের পরিবর্তনের পথ থেকে আমাদের ফিরে আসতে হবে। নীতিমালার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, উদ্যোক্তারা নিরুৎসাহিত হলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান স্বাভাবিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

দেশের সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনায় নিয়ে এবং দেশের স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে মূসক ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে পুনর্বিবেচনার জন্য সরকারের প্রতি ব্যবসায়ী সমাজের পক্ষ থেকে আহ্বান জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, সাধারণ মানুষের উপর হঠাৎ করের বোঝা না চাপিয়ে বিকল্প উপায়ে সরকার রাজস্ব বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে পারে। করের হার না বাড়িয়ে করের আওতা বৃদ্ধি করা জরুরি। যাতে সবসময় একই করদাতাকে করের জন্য চাপ প্রয়োগ না করা হয়। তাছাড়া সরকারের অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় সংকোচন এবং স্বচ্ছতা ও সততা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির প্রচেষ্টা গ্রহণ করা জরুরি।

তিনি আরও বলেন, আমরা গভীরভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করছি যে, সরকার আবারও শিল্পখাতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এমনিতে দেশের শিল্পখাত বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। তদুপরি গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাবে এবং স্থানীয় শিল্প প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাবে। স্থানীয় শিল্পের স্বার্থে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। 

তিনি গ্যাসের দাম না বাড়িয়ে গ্যাসের অপচয় রোধ ও অবৈধ সংযোগগুলিকে বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমে গ্যাসের সঠিক যথাযথ ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দেওয়ার অনুরোধ জানান।

সুদের হার কমানো, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য ও বাজার সরবরাহ স্থিতিশীল রাখা, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ, যানযট নিরসন, বন্দরসমূহের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ ফ্যাসিলিটেশন কার্যক্রম জোরদার করার জন্য বৈষম্যবিরোধী সংস্কার পরিষদের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি আবেদন জানান জাকির হোসেন নয়ন।

জাহাঙ্গীর আলম/অমিয়/

এলপি গ্যাসে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট কমিয়েছে সরকার

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:২৬ পিএম
এলপি গ্যাসে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট কমিয়েছে সরকার
ছবি: সংগৃহীত

সরকার এলপি গ্যাস উৎপাদন পর্যায়ে সাড়ে সাত শতাংশ অতিরিক্ত মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রত্যাহার করেছে।

সোমবার (১৩ জানুয়ারি) জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ সংক্রান্ত বিশেষ আদেশ জারি করেছে।

আদেশে বলা হয়, বর্তমানে এলপি গ্যাস বাসাবাড়িতে রান্নার জ্বালানি, অটোগ্যাস স্টেশনে যানবাহনের জ্বালানি এবং বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আর বর্তমানে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর সরবরাহকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের অপ্রতুল হওয়ার কারণে পোশাক শিল্পসহ বিভিন্ন প্রকার শিল্প কারখানায় এলপি গ্যাসের চাহিদা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এছাড়া উল্লেখ করা হয়, এলপি গ্যাসের উৎপাদন ও ব্যবহার সহজলভ্য করার লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূলরক শুল্ক আইন অনুযায়ী উৎপাদন পর্যায়ে এলপি গ্যাসে সাড়ে ৭ শতাংশ অতিরিক্ত মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতি দিয়েছে। এ আদেশ ২০২৫ সালের ৯ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে বলে গণ্য হবে। সূত্র: ইউএনবি

মেহেদী

শুল্ক-ভ্যাট বৃদ্ধির প্রভাব পুঁজিবাজারে

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:২৬ এএম
শুল্ক-ভ্যাট বৃদ্ধির প্রভাব পুঁজিবাজারে
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) - চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)

নতুন বছরের শুরু থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত পতনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে লেনদেন। ২০২৫ সালে ৯ দিন লেনদেন হয়েছে পুঁজিবাজারে। এর মধ্যে মাত্র তিনদিন সূচকের উত্থান দেখেছেন বিনিয়োগকারীরা। বাকি ছয় দিনই ছিল পতনমুখী। 

বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, একে তো পুঁজিবাজারে নেই নতুন বিনিয়োগ, তার ওপর সরকারের নতুন করে আরোপ করা সেবা ও পণ্যের ওপর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বিনিয়োগকারীদের  আতঙ্কে ফেলেছে। কারণ, পণ্য ও সেবা খাতে বাড়তি ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আরোপ করায় বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। 

ফলে পণ্য ও সেবার দাম কোন পর্যায়ে পৌঁছে, জীবনযাত্রাকে কোনো পর্যায়ে নিয়ে যায় তা নিয়েই ভাবনা এখন বিনিয়োগকারীদের। 

এনএলআই সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী মোজাম্মেল হক খবরের কাগজকে বলেন, এখন পুঁজিবাজারে নতুন বিনিয়োগের চেয়ে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ উত্তোলনে বেশি আগ্রহী। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে যখন বিনিয়োগ হারিয়ে যাচ্ছে, তখন নতুন বিনিয়োগের তো প্রশ্নই আসে না।  

তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বমুখী প্রবণতা  দীর্ঘদিন থেকে। নতুন সরকার আসার পর প্রত্যাশা ছিল দ্রব্যমূল্য কিছুটা সহনীয় হবে। কিন্ত সম্প্রতি সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে তাতে সব ধরনের পণ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ফলে বিনিয়োগকারীরা স্বাভাবিকভাবেই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে মুনাফার চেয়ে জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহের জন্য হাতে টাকা ধরে রাখবে। মূলত এ কারণেই সম্প্রতি সময়ে নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না, আগামীও তা আরও কমবে। 

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন বছরে বিনিয়োগকারীরা নতুন কমিশনার পেয়েছে, নুতন ডিএসই পরিচালনা পর্ষদ পেয়েছে। কিন্তু তাদের মধ্য থেকে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ সুরক্ষার কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। 

এ বিষয়ে ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক প্রধান গবেষণা কর্মকর্তা দেবব্রত কুমার সরকার খবরের কাগজকে বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী বা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করে মূলত মুনাফার জন্য। এখন পুঁজিবাজার থেকে যদি মুনাফার পথ বন্ধ হয়ে যায় তাহলে এখানে কে বিনিয়োগ করবে কে? 

তিনি বলেন, কমিশনের উচিত পুঁজিবাজারে এখন কোন কোন প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করতে পারবে তাদের চিহ্নিত করা। তাদের বিনিয়োগে বাধ্য করা। এ ছাড়া সম্প্রতি শতাধিক পণ্যের ওপর কর ও ভ্যাট আরোপের পর বিনিয়োগকারীরা আরও আতঙ্ক হয়ে, নতুন বিনিয়োগ থেকে সরে আসছে। 

তিনি আরও বলেন, মানুষের কাছে বিনিয়োগযোগ্য টাকা না থাকলে বিনিয়োগ আসবে না এটাই স্বাভাবিক। কিন্ত আগে জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহ করার পর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হবে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৫ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত পুঁজিবাজারে সবচেয়ে বেশি সূচকের পতন হয়েছে ১২ জানুয়ারি ৩৮ পয়েন্ট। এর আগে ৫ জানুয়ারি পতন হয়েছিল ৩৪ দশমিক ৪৪ পয়েন্ট। এর মধ্যে ১ জানুয়ারি সূচকের উত্থান হয়েছিল ১ দশমিক ৭১ পয়েন্ট। ৬ জানুয়ারি উত্থান হয়েছিল ৩৩ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট এবং ৯ জানুয়ারি সূচক বেড়েছিল ৯ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট। 

বাজার লেনদেন: গতকাল সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) দরপতন হয়েছে। এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহের দুই কার্যদিবসেই পুঁজিবাজারে দরপতন হলো। এর আগে ২০২৪ সালজুড়ে শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়। এতে এক বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন কমে ১ লাখ ১৮ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। বাজার মূলধন কমার অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ কমেছে। বাজার মূলধনের বড় পতনের পাশাপাশি মূল্যসূচকেরও বড় পতন হয় বছরটিতে। ২০২৪ সালে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমে ১ হাজার ৩০ পয়েন্ট।

গতকাল ডিএসইতে লেনদেন শুরু হওয়ার আগেই সার্ভারে সমস্যা দেখা দেয়। যে কারণে নির্ধারিত সময়ে ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয়নি। নির্ধারিত সময়ের ১০ মিনিট পর ডিএসইতে লেনদেন শুরু হতেই বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমে যায়। ফলে মূল্যসূচকও ঋণাত্মক হয়ে পড়ে।

তবে অল্প সময়ের ব্যবধানে দাম কমার তালিকা থেকে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার তালিকায় চলে আসে। এতে কিছু সময়ের জন্য মূল্যসূচকও ঊর্ধ্বমুখী হয়। কিন্তু বেলা সাড়ে ১১টার পর আবার দাম কমার তালিকায় চলে যায় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান। ফলে মূল্যসূচকও ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। অবশ্য শেষ দিকে বড় মূলধনের কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ায় মূল্যসূচকের বড় পতন হয়নি।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ৯১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ২৪৭টির এবং ৬২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এর পরও ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় মাত্র ৪ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ১৫১ পয়েন্টে নেমে গেছে।

অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় দশমিক ৯৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯০৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় দশমিক ৬১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৫৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

সব কটি মূল্যসূচক কমলেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৯৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩৭১ কোটি টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ২৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা।

অপর পুঁজিবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৩৮ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৯৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১১৮টির এবং ৩০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৫৪ কোটি ৩ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

পুঁজিবাজার স্পট মার্কেটে ন্যাশনাল ফিড

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:২৩ এএম
স্পট মার্কেটে ন্যাশনাল ফিড
ন্যাশনাল ফিড মিলস

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিবিধ খাতের কোম্পানি ন্যাশনাল ফিড মিলস রেকর্ড ডেটের আগে আজ মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) স্পট মার্কেটে যাচ্ছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

আগামী রবিবার (১৯ জানুয়ারি) কোম্পানিটির রেকর্ড ডেট।

এর আগের ১৪ থেকে ১৬ জানুয়ারি স্পট মার্কেটে লেনদেন করবে কোম্পানিটি। আর রেকর্ড ডেটের কারণে আগামী ১৯ জানুয়ারি কোম্পানিটি লেনদেন স্থগিত থাকবে।

পুঁজিবাজার লেনদেনের শীর্ষে গ্রামীণফোন

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:১৫ এএম
লেনদেনের শীর্ষে গ্রামীণফোন
গ্রামীণফোন লিমিটেড

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৪০০টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট হাতবদল হয়েছে। কোম্পানিগুলোর মোট ৩৯৭ কোটি ৮১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে গ্রামীণফোন লিমিটেডের।

ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্রমতে, গতকাল গ্রামীণফোনের ১১ লাখ ৩৯ হাজার ৩০৮টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে। যার বর্তমান বাজারমূল্য ৩৮ কোটি ৫৮ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। গ্রামীণফোন কোম্পানি সর্বশেষ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের ১২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। ২০২২ সালে ২২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ বিতরণ করেছিল। 

কোম্পানির মুনাফার চিত্রে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে নিট মুনাফা হয়েছিল ৩ হাজার ৩০৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। আগের বছর ২০২২ সালে নিট মুনাফা হয়েছিল ৩ হাজার ৯ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া ২০২১ সালে নিট মুনাফা হয়েছিল ৩ হাজার ৪১২ কোটি ৯০ লাখ টাকা। 

২০০৯ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এই কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৯০ শতাংশ শেয়ার আছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ৬ দশমিক ৩১ শতাংশ শেয়ার, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ২ দশমিক ৭১ শতাংশ শেয়ার। 

লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা খান ব্রাদার্সের লেনদেন হয়েছে ২১ কোটি ৭১ লাখ ৩৪ হাজার টাকার। আর ১৩ কোটি ৫৭ লাখ ৯৯ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন নিয়ে শীর্ষ তালিকার তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে ফাইন ফুডস।

এদিন লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলো হলো আফতাব অটোমোবাইলস, অগ্নি সিস্টেমস, স্কয়ার ফার্মা, মিডল্যান্ড ব্যাংক, রবি আজিয়াটা, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ এবং ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেড।