ঢাকা ৩০ পৌষ ১৪৩১, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

রাজস্ব খাতে দুর্নীতি বন্ধে কঠোর আইন হচ্ছে

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩১ এএম
আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০১ এএম
রাজস্ব খাতে দুর্নীতি বন্ধে কঠোর আইন হচ্ছে
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)

রাজস্ব খাতের দুর্নীতি কমাতে কঠোর আইন হচ্ছে। পাশাপাশি ফাঁকি বন্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি। এর ফলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আদায় কয়েকগুণ বাড়বে বলে মনে করছেন কর্মকর্তরা। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর এনবিআর কী করেছে এবং চলতি অর্থবছরের বাকি সময়ে কর্ম পরিকল্পনা কী তা নিয়ে তৈরি প্রতিবেদনে দুর্নীতি কমানো এবং আইনি প্রয়োগের কথা জানানো হয়েছে। 

এ প্রতিবেদন অর্থমন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছেও ওই প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে। 

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এনবিআর কর দাতার সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি রিটার্ন জমা বাড়াতেও জোর দিয়েছে। ভবিষ্যতে শুধু অন লাইনে রিটার্ন জমার সুযোগ রাখা হবে। চার সিটি করপোরেশন, তফসিলি ব্যাংক ও চারটি মোবাইল অপারেটর এবং ছয়টি বহুজাতিক কোম্পানির সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। গত ৯ সেপ্টেম্বর থেকে গতকাল পর্যন্ত অন লাইনে রিটার্ন জমার সংখ্যা ৭ লাখ ছাড়িয়েছে। রাজস্ব সংস্কারে কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই সঙ্গে অনিয়মে জড়িত কর্মকর্তাদের শাস্তি, চট্টগ্রাম কাস্টমের ঝুঁকিপূর্ণ অতিদাহ্য কনটেইনার নিলামে খালাস, বন্ডের অপব্যবহার বন্ধ করার পাশাপাশি ভোগান্তি কমানোর উদ্যোগ নেওয়া নয়েছে। সঠিক সব তথ্য-উপাত্ত আইভাস সঙ্গে সংযুক্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মাঠপর্যায়ে এই সিস্টেমের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে। আইভাসের সঙ্গে এ-চালান ও ই-ইনভয়েসিংয়ের আন্তসংযোগ এবং সিস্টেমের ক্যাপাসিটি বাড়াতে নতুন স্টোরেজে ডেটা মাইগ্রেশন, ই-ভিডিএস সিস্টেমের সমন্বয়বিষয়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রতিটা শুল্ক স্টেশনে মিথ্যা ঘোষণা বন্ধে জোর দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ব্যবহৃত সফটওয়্যার আরও আধুনিক করা হয়েছে। ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডোর (এনএসডব্লিউ) সঙ্গে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ডের এপিআই, এনএসডব্লিউ ও আইভাস সিস্টেমে বিন-এর তথ্য সংযোগ, আমদানি-রপ্তানিতে ১৯টি দপ্তরকে একক প্ল্যাটফর্মের অধীনে আনা, ই-আপিল ও অ্যাডভান্স রুলিংয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। ভোমরা, সোনামসজিদ, হিলি ও বুড়িমারী স্থলবন্দরের অকশন মডিউল চালু, ৪৫টি এইচ এস কোডে ভ্যালুয়েশন মডিউল চালু করা হয়েছে। চোরাচালান রোধ এবং ব্যাগেজ ব্যবস্থায় স্বর্ণ আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ব্যাগেজ রুল সংশোধন করার উদ্যোগ, ইএক্সপি ছাড়া পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে মানি লন্ডারিংয়ের ঝুঁকি নিরসনে ১০০ কেজি বা তার বেশি ওজনের পণ্য চালান বাধ্যতামূলক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় আনা হয়েছে। বন্ডব্যবস্থা সহজ করতে নতুন কাস্টমস আইনের অধীনে ছয়টি বিধিমালা প্রণয়ন, পোশাকশিল্প ব্যতীত অন্যান্য ওয়্যারহাউস লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সাব-কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনার আদেশ জারি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভ্যাট খাতে আদায়ে স্বচ্ছতা আনতে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস-ইএফডি বা ভ্যাট যন্ত্র বসানোর পাশাপাশি অন্য আরও আধুনিক পদ্ধতি চালু করার বিষয়টি নিয়েও প্রস্তুতি চলছে। এসবের পাশাপাশি সম্প্রতি প্রকাশিত অর্থনীতির শ্বেতপত্রে রাজস্ব খাতের যে সমস্যাগুলো তুলে ধরা হয়েছে তার সমাধানেও কাজ শুরু করা হয়েছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শ্বেতপত্রে বিগত সরকারের সময়ে দেওয়া সব ধরনের রাজস্ব অব্যাহতি প্রত্যাহারে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। 

এসব উদ্যোগের পাশাপাশি এনবিআরের তিন গোয়েন্দা শাখার কাজের গতি বাড়িয়ে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। 
এরই মধ্যে বিগত সরকারের কাছের লোক বলে পরিচিত এক হাজারের বেশি ব্যক্তির রাজস্ব ফাঁকির অনুসন্ধানের কাজ চলছে। এর মধ্যে সাবেক মন্ত্রী, এমপি, আমলা, পুলিশ, সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ বিগত সরকারের সময়ের শতাধিক অতি প্রভাবশালী ব্যক্তিও আছেন বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। 

প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে জানা যায়, এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা শাখা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি), শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং ভ্যাট নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর যে অবস্থান থেকে কাজ করছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কাজের সুবিধায় নিজেদের মধ্যে তথ্য আদান প্রদানও করছে। 

এরই মধ্যে সিআইসি ৩৭৬ জনের বিরুদ্ধে আয়কর ফাঁকি, ভ্যাট গোয়েন্দা ৩০টি ভ্যাট ফাঁকি এবং শুল্ক গোয়েন্দা ৭৩টি মামলা করেছে। ৪৭ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার পাশাপাশি খুলে দেওয়া হয়েছে খালেদা জিয়া, আবদুল আউয়াল মিন্টুসহ ছয়জনের ব্যাংক হিসাব।

শুল্ক শাখার মামলায় জড়িত রাজস্ব ৪৬ কোটি টাকার বেশি। আদায় হয়েছে ১০.১২ কোটি টাকা। আটক করেছে ৫০ কোটি টাকার বেশি সোনা ও স্বর্ণালংকার। ভ্যাট গোয়েন্দা শতাধিক নিরীক্ষা শেষ করে ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করেছে ২০০ কোটি টাকার বেশি। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনস্বার্থে এনবিআর কাজ করছে। এক্ষেত্রে রাজস্ব ছাড়ও দিয়েছে। বাজারে পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে রাজস্ব ছাড় দিয়ে ভোজ্যতেল, ডিম, আলু, পেঁয়াজ, চাল ও কীটনাশক আমদানির ওপর শুল্ককর ও ভ্যাট কমানো এবং তুলে দেওয়া হয়েছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজস্ব আদায়ের তিনটি অনুবিভাগের (আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট) কর্মচারী-কর্মকর্তাদের জন্য ১৯টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান খবরের কাগজকে বলেন, আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর রাজস্ব আদায় বাড়ানোর পাশপাশি জনকল্যাণে রাজস্ব ছাড়ের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি,এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হলে রাজস্ব আদায় বাড়বে। ব্যবসায় গতি আসবে। করদাতাবান্ধব পরিবেশ তৈরি হবে। 

তিনি আরও বলেন, দুর্নীতি বন্ধে জোর দেওয়া হয়েছে। প্রযুক্তি ব্যবহারে গুরুত্ব বাড়ানো হয়েছে। সব ধরনের কর ফাঁকি বন্ধ করতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। 

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সব পর্যায়ে কাজের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও যোগ্যতাকে ভিত্তি ধরে পদোন্নতির ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।

শুল্ক-ভ্যাট নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে এফবিসিসিআই

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:০৬ পিএম
আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:১৩ পিএম
শুল্ক-ভ্যাট নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে এফবিসিসিআই
ছবি : খবরের কাগজ

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই শুল্ক ও ভ্যাট বাড়ানো এবং গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব করায় ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বৈষম্যবিরোধী সংস্কার পরিষদ (এফবিসিসিআই)। 

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ উদ্বেগ জানানো হয়।

এ সময় সংগঠনটির আহ্বায়ক জাকির হোসেন নয়নের সভাপতিত্বে অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

তারা বলেন, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই গত ৯ জানুয়ারি শুল্ক ও ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। তাছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে গ্যাসের মূল্যও বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। 

জাকির হোসেন নয়ন বলেন, দীর্ঘমেয়াদী সহায়ক কর কাঠামো প্রাপ্তি সাপেক্ষে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করে থাকেন। হঠাৎ কোনো আলোচনা ছাড়াই ভ্যাট বা শুল্ক বৃদ্ধি করা হলে নীতি প্রয়োগের ধারাবাহিকতা থাকে না। ফলে উদ্যোক্তারা নিরুৎসাহিত হন। যার প্রভাব বিনিয়োগের উপর পড়ে। তাই হঠাৎ করে কর হারের পরিবর্তনের পথ থেকে আমাদের ফিরে আসতে হবে। নীতিমালার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, উদ্যোক্তারা নিরুৎসাহিত হলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান স্বাভাবিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

দেশের সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনায় নিয়ে এবং দেশের স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে মূসক ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে পুনর্বিবেচনার জন্য সরকারের প্রতি ব্যবসায়ী সমাজের পক্ষ থেকে আহ্বান জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, সাধারণ মানুষের উপর হঠাৎ করের বোঝা না চাপিয়ে বিকল্প উপায়ে সরকার রাজস্ব বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে পারে। করের হার না বাড়িয়ে করের আওতা বৃদ্ধি করা জরুরি। যাতে সবসময় একই করদাতাকে করের জন্য চাপ প্রয়োগ না করা হয়। তাছাড়া সরকারের অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় সংকোচন এবং স্বচ্ছতা ও সততা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির প্রচেষ্টা গ্রহণ করা জরুরি।

তিনি আরও বলেন, আমরা গভীরভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করছি যে, সরকার আবারও শিল্পখাতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এমনিতে দেশের শিল্পখাত বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। তদুপরি গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাবে এবং স্থানীয় শিল্প প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাবে। স্থানীয় শিল্পের স্বার্থে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। 

তিনি গ্যাসের দাম না বাড়িয়ে গ্যাসের অপচয় রোধ ও অবৈধ সংযোগগুলিকে বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমে গ্যাসের সঠিক যথাযথ ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দেওয়ার অনুরোধ জানান।

সুদের হার কমানো, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য ও বাজার সরবরাহ স্থিতিশীল রাখা, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ, যানযট নিরসন, বন্দরসমূহের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ ফ্যাসিলিটেশন কার্যক্রম জোরদার করার জন্য বৈষম্যবিরোধী সংস্কার পরিষদের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি আবেদন জানান জাকির হোসেন নয়ন।

জাহাঙ্গীর আলম/অমিয়/

এলপি গ্যাসে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট কমিয়েছে সরকার

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:২৬ পিএম
এলপি গ্যাসে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট কমিয়েছে সরকার
ছবি: সংগৃহীত

সরকার এলপি গ্যাস উৎপাদন পর্যায়ে সাড়ে সাত শতাংশ অতিরিক্ত মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রত্যাহার করেছে।

সোমবার (১৩ জানুয়ারি) জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ সংক্রান্ত বিশেষ আদেশ জারি করেছে।

আদেশে বলা হয়, বর্তমানে এলপি গ্যাস বাসাবাড়িতে রান্নার জ্বালানি, অটোগ্যাস স্টেশনে যানবাহনের জ্বালানি এবং বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আর বর্তমানে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর সরবরাহকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের অপ্রতুল হওয়ার কারণে পোশাক শিল্পসহ বিভিন্ন প্রকার শিল্প কারখানায় এলপি গ্যাসের চাহিদা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এছাড়া উল্লেখ করা হয়, এলপি গ্যাসের উৎপাদন ও ব্যবহার সহজলভ্য করার লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূলরক শুল্ক আইন অনুযায়ী উৎপাদন পর্যায়ে এলপি গ্যাসে সাড়ে ৭ শতাংশ অতিরিক্ত মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতি দিয়েছে। এ আদেশ ২০২৫ সালের ৯ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে বলে গণ্য হবে। সূত্র: ইউএনবি

মেহেদী

শুল্ক-ভ্যাট বৃদ্ধির প্রভাব পুঁজিবাজারে

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:২৬ এএম
শুল্ক-ভ্যাট বৃদ্ধির প্রভাব পুঁজিবাজারে
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) - চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)

নতুন বছরের শুরু থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত পতনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে লেনদেন। ২০২৫ সালে ৯ দিন লেনদেন হয়েছে পুঁজিবাজারে। এর মধ্যে মাত্র তিনদিন সূচকের উত্থান দেখেছেন বিনিয়োগকারীরা। বাকি ছয় দিনই ছিল পতনমুখী। 

বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, একে তো পুঁজিবাজারে নেই নতুন বিনিয়োগ, তার ওপর সরকারের নতুন করে আরোপ করা সেবা ও পণ্যের ওপর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বিনিয়োগকারীদের  আতঙ্কে ফেলেছে। কারণ, পণ্য ও সেবা খাতে বাড়তি ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আরোপ করায় বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। 

ফলে পণ্য ও সেবার দাম কোন পর্যায়ে পৌঁছে, জীবনযাত্রাকে কোনো পর্যায়ে নিয়ে যায় তা নিয়েই ভাবনা এখন বিনিয়োগকারীদের। 

এনএলআই সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী মোজাম্মেল হক খবরের কাগজকে বলেন, এখন পুঁজিবাজারে নতুন বিনিয়োগের চেয়ে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ উত্তোলনে বেশি আগ্রহী। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে যখন বিনিয়োগ হারিয়ে যাচ্ছে, তখন নতুন বিনিয়োগের তো প্রশ্নই আসে না।  

তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বমুখী প্রবণতা  দীর্ঘদিন থেকে। নতুন সরকার আসার পর প্রত্যাশা ছিল দ্রব্যমূল্য কিছুটা সহনীয় হবে। কিন্ত সম্প্রতি সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে তাতে সব ধরনের পণ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ফলে বিনিয়োগকারীরা স্বাভাবিকভাবেই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে মুনাফার চেয়ে জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহের জন্য হাতে টাকা ধরে রাখবে। মূলত এ কারণেই সম্প্রতি সময়ে নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না, আগামীও তা আরও কমবে। 

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন বছরে বিনিয়োগকারীরা নতুন কমিশনার পেয়েছে, নুতন ডিএসই পরিচালনা পর্ষদ পেয়েছে। কিন্তু তাদের মধ্য থেকে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ সুরক্ষার কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। 

এ বিষয়ে ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক প্রধান গবেষণা কর্মকর্তা দেবব্রত কুমার সরকার খবরের কাগজকে বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী বা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করে মূলত মুনাফার জন্য। এখন পুঁজিবাজার থেকে যদি মুনাফার পথ বন্ধ হয়ে যায় তাহলে এখানে কে বিনিয়োগ করবে কে? 

তিনি বলেন, কমিশনের উচিত পুঁজিবাজারে এখন কোন কোন প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করতে পারবে তাদের চিহ্নিত করা। তাদের বিনিয়োগে বাধ্য করা। এ ছাড়া সম্প্রতি শতাধিক পণ্যের ওপর কর ও ভ্যাট আরোপের পর বিনিয়োগকারীরা আরও আতঙ্ক হয়ে, নতুন বিনিয়োগ থেকে সরে আসছে। 

তিনি আরও বলেন, মানুষের কাছে বিনিয়োগযোগ্য টাকা না থাকলে বিনিয়োগ আসবে না এটাই স্বাভাবিক। কিন্ত আগে জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহ করার পর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হবে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৫ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত পুঁজিবাজারে সবচেয়ে বেশি সূচকের পতন হয়েছে ১২ জানুয়ারি ৩৮ পয়েন্ট। এর আগে ৫ জানুয়ারি পতন হয়েছিল ৩৪ দশমিক ৪৪ পয়েন্ট। এর মধ্যে ১ জানুয়ারি সূচকের উত্থান হয়েছিল ১ দশমিক ৭১ পয়েন্ট। ৬ জানুয়ারি উত্থান হয়েছিল ৩৩ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট এবং ৯ জানুয়ারি সূচক বেড়েছিল ৯ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট। 

বাজার লেনদেন: গতকাল সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) দরপতন হয়েছে। এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহের দুই কার্যদিবসেই পুঁজিবাজারে দরপতন হলো। এর আগে ২০২৪ সালজুড়ে শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়। এতে এক বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন কমে ১ লাখ ১৮ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। বাজার মূলধন কমার অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ কমেছে। বাজার মূলধনের বড় পতনের পাশাপাশি মূল্যসূচকেরও বড় পতন হয় বছরটিতে। ২০২৪ সালে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমে ১ হাজার ৩০ পয়েন্ট।

গতকাল ডিএসইতে লেনদেন শুরু হওয়ার আগেই সার্ভারে সমস্যা দেখা দেয়। যে কারণে নির্ধারিত সময়ে ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয়নি। নির্ধারিত সময়ের ১০ মিনিট পর ডিএসইতে লেনদেন শুরু হতেই বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমে যায়। ফলে মূল্যসূচকও ঋণাত্মক হয়ে পড়ে।

তবে অল্প সময়ের ব্যবধানে দাম কমার তালিকা থেকে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার তালিকায় চলে আসে। এতে কিছু সময়ের জন্য মূল্যসূচকও ঊর্ধ্বমুখী হয়। কিন্তু বেলা সাড়ে ১১টার পর আবার দাম কমার তালিকায় চলে যায় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান। ফলে মূল্যসূচকও ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। অবশ্য শেষ দিকে বড় মূলধনের কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ায় মূল্যসূচকের বড় পতন হয়নি।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ৯১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ২৪৭টির এবং ৬২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এর পরও ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় মাত্র ৪ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ১৫১ পয়েন্টে নেমে গেছে।

অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় দশমিক ৯৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯০৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় দশমিক ৬১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৫৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

সব কটি মূল্যসূচক কমলেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৯৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩৭১ কোটি টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ২৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা।

অপর পুঁজিবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৩৮ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৯৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১১৮টির এবং ৩০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৫৪ কোটি ৩ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

পুঁজিবাজার স্পট মার্কেটে ন্যাশনাল ফিড

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:২৩ এএম
স্পট মার্কেটে ন্যাশনাল ফিড
ন্যাশনাল ফিড মিলস

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিবিধ খাতের কোম্পানি ন্যাশনাল ফিড মিলস রেকর্ড ডেটের আগে আজ মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) স্পট মার্কেটে যাচ্ছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

আগামী রবিবার (১৯ জানুয়ারি) কোম্পানিটির রেকর্ড ডেট।

এর আগের ১৪ থেকে ১৬ জানুয়ারি স্পট মার্কেটে লেনদেন করবে কোম্পানিটি। আর রেকর্ড ডেটের কারণে আগামী ১৯ জানুয়ারি কোম্পানিটি লেনদেন স্থগিত থাকবে।

পুঁজিবাজার লেনদেনের শীর্ষে গ্রামীণফোন

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:১৫ এএম
লেনদেনের শীর্ষে গ্রামীণফোন
গ্রামীণফোন লিমিটেড

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৪০০টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট হাতবদল হয়েছে। কোম্পানিগুলোর মোট ৩৯৭ কোটি ৮১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে গ্রামীণফোন লিমিটেডের।

ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্রমতে, গতকাল গ্রামীণফোনের ১১ লাখ ৩৯ হাজার ৩০৮টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে। যার বর্তমান বাজারমূল্য ৩৮ কোটি ৫৮ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। গ্রামীণফোন কোম্পানি সর্বশেষ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের ১২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। ২০২২ সালে ২২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ বিতরণ করেছিল। 

কোম্পানির মুনাফার চিত্রে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে নিট মুনাফা হয়েছিল ৩ হাজার ৩০৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। আগের বছর ২০২২ সালে নিট মুনাফা হয়েছিল ৩ হাজার ৯ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া ২০২১ সালে নিট মুনাফা হয়েছিল ৩ হাজার ৪১২ কোটি ৯০ লাখ টাকা। 

২০০৯ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এই কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৯০ শতাংশ শেয়ার আছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ৬ দশমিক ৩১ শতাংশ শেয়ার, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ২ দশমিক ৭১ শতাংশ শেয়ার। 

লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা খান ব্রাদার্সের লেনদেন হয়েছে ২১ কোটি ৭১ লাখ ৩৪ হাজার টাকার। আর ১৩ কোটি ৫৭ লাখ ৯৯ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন নিয়ে শীর্ষ তালিকার তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে ফাইন ফুডস।

এদিন লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলো হলো আফতাব অটোমোবাইলস, অগ্নি সিস্টেমস, স্কয়ার ফার্মা, মিডল্যান্ড ব্যাংক, রবি আজিয়াটা, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ এবং ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেড।