বাজারে সরবরাহ সংকটের মধ্যে সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ৮ টাকা বাড়িয়েছেন পরিশোধনকারীরা। এদিকে এই ঘোষণার পর চট্টগ্রামে প্রতি মণ খোলা তেলে (সয়াবিন ও পাম অয়েল) দাম বেড়েছে ৭০ থেকে ২০০ টাকা।
গত সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ভোজ্যতেল পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক শেষে ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ এডিবল ওয়েল অ্যাসোসিয়েশন। প্রতি লিটারে ৮ টাকা বাড়িয়ে বোতলজাত সয়াবিনের দাম ১৭৫ টাকা ও খোলা সয়াবিন ১৫৭ টাকা দরে বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়। এরপর থেকেই খাতুনগঞ্জেও বেড়ে যায় খোলা তেলের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি মণ খোলা সয়াবিনে ২০০ টাকা বেড়ে ৬ হাজার ৪০০ টাকা ও পাম অয়েলে ৭০ টাকা বেড়ে ৬ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে দাম বাড়ায় খাতুনগঞ্জে খোলা তেলের বেচাকেনা কমে গেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
গত ১ ডিসেম্বর খাতুনগঞ্জে কমে আসে ভোজ্যতেলের দাম। সেদিন প্রতি মণ সয়াবিন তেল ৬ হাজার ২০০ টাকা ও পাম অয়েল ৬ হাজার ৩০ টাকায় বেচাকেনা হয়। কিন্তু সরকারের সিদ্ধান্ত আসার পর রাত পেরোতেই বর্তমানে সেখানে প্রতি মণ সয়াবিন তেল ৬ হাজার ৪০০ টাকা (লিটারপ্রতি ১৬০ টাকা) ও পাম অয়েল ৬ হাজার ১০০ টাকায় (লিটারপ্রতি ১৫২ দশমিক ৫ টাকা) বিক্রি হচ্ছে।
এর আগেও দীর্ঘদিন ধরে খাতুনগঞ্জে চড়া দামে বিক্রি হয় খোলা তেল। গত ৩ নভেম্বর প্রতি মণ সয়াবিন তেল বিক্রি হয় ৬ হাজার ৮৫০ টাকায় (লিটারপ্রতি বিক্রি হয় ১৭১ টাকা) এবং পাম অয়েল ৬ হাজার ৪৪০ টাকায় (লিটারপ্রতি দাম ১৬১ টাকা) বিক্রি হয়।
তবে সরবরাহ বাড়ায় গত ২০ নভেম্বর দাম কমে প্রতি মণ সয়াবিন তেল ৬ হাজার ৫০০ টাকা (প্রতি লিটার ১৬২ দশমিক ৫ টাকা) ও পাম অয়েল ৬ হাজার ৩৪০ টাকায় (লিটারপ্রতি ১৫৮ দশমিক ৫ টাকা) বিক্রি হয়।
খাতুনগঞ্জে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী মো. কামাল উদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে নিম্নমুখী ছিল ভোজ্যতেলের বাজার। খাতুনগঞ্জে সয়াবিন ও পাম অয়েলের সরবরাহ একটু কমেছে। তাই দামটা বেড়েছে। পাশাপাশি আমাদের বেচাকেনাও খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। আমরা দুশ্চিন্তায় সময় পার করছি।’
এদিকে খাতুনগঞ্জে কমে এসেছে চিনির দাম। বাজারটিতে গত ২৯ অক্টোবর প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) চিনি ৪ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাসের ব্যবধানে ১০০ টাকা কমে গত ১ ডিসেম্বর প্রতি মণ চিনি বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৩০০ টাকায়। বর্তমানে আরও ৫০ টাকা কমে প্রতি মণ চিনি বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ২৫০ টাকায়। চিনির সরবরাহ ভালো থাকায় সামনে পণ্যটির দাম আর বাড়বে না জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
নগরের হালিশহর এলাকার বাসিন্দা মো. ওমর ফারুক বলেন, এখন মানুষ অর্থনৈতিকভাবে ভালো নেই। হুট করে ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হলো। কিন্তু সেভাবে তো মানুষের আয় বাড়ছে না। সরকারের উচিত, বিষয়টা বিবেচনা করা।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন খবরের কাগজকে বলেন, পাইকারি বাজারে সব সময় নানা অজুহাতে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ানো ব্যবসায়ীদের পুরোনো স্বভাব। এর মধ্যে আগের কেনা পণ্যে দাম বাড়িয়ে তারা অতি মুনাফা করছেন। সঙ্গে ক্রেতাদের হয়রানি করছেন। এখন প্রশাসন, ভোক্তা অধিকারের উচিত তারা কখন, কত দামে কিনেছেন, সেটা ভালোভাবে খতিয়ে দেখা। যাদের অপরাধ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সামনে রোজা আসছে। এখন থেকে এসব সঠিকভাবে তদারকি করা না হলে ভোক্তারা ভোগান্তিতে পড়া সম্ভাবনা তৈরি হবে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক ফয়েজ উল্যাহ বলেন, ‘আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। কোনো অনিয়ম পেলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। বাজার কমিটির সঙ্গে বৈঠক করছি। ব্যবসায়ীদের সচেতন করছি, লিফলেট দিচ্ছি। কেউ যদি বাড়তি দরে পণ্য বিক্রি করে আমাদের কাছে অভিযোগ জানাতে পারেন, আমরা তখন বিষয়টা খতিয়ে দেখে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’