দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলে শীত বেশি হওয়ায় লেপ-তোশক, জাজিমের চাহিদা বেড়েছে। এদিকে বৃদ্ধি পেয়েছে তুলার দাম। এর মধ্যেই লেপ তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। ক্রেতারা শীত নিবারণের জন্য নতুন লেপ তৈরি বা পুরোনো লেপ সংস্কার করছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, শীতের কারণে লেপ-তোশকের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এতে ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন। অন্যদিকে জেলা প্রশাসনও শীতবস্ত্র বিতরণ প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই অঞ্চলে বেড়েছে তুলার দাম। প্রতি কেজি কার্পাস তুলা ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, শিমুলতলা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, অঙ্গুরি তুলা ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, ঝুট তুলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এর ফলে লেপ-তোশক তৈরির খরচও বেড়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দিনাজপুর শহরের বিভিন্ন এলাকায় লেপ-তোশক তৈরির কাজও জমজমাট হয়ে উঠেছে। শহরের চুরিপট্টি এলাকায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কারিগররা লেপ-তোশক তৈরি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। লালসালু কাপড়ে লেপ তৈরি করা, সুঁই-সুতা দিয়ে সেলাই করা এবং পুরোনো লেপ-তোশক ভেঙে আবার নতুন করে তৈরি করার কাজ চলছে। অনেক কারিগর নতুন তুলা ব্যবহার করে নতুন লেপ তৈরির পাশাপাশি পুরোনো লেপগুলো আবার সংস্কার করছেন। এ ছাড়া তুলা ধোলাইয়ের কাজও চলছে ব্যাপকভাবে। দোকানগুলোর পাশে মেশিনের মাধ্যমে তুলাধোনা হচ্ছে। কারিগররা এখন দুই থেকে তিন ঘণ্টায় একটি লেপ-তোশক তৈরি করছেন। এক সেট লেপ-তোশক তৈরি করতে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা মজুরি নিচ্ছেন।
দোকানে আসা ক্রেতাদের মধ্যে অনেকেই বলেন, শীতের কারণে লেপ-তোশক কেনার প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। অটোচালক লিটন হায়দার জানান, তিনি অল্প টাকায় লেপ তৈরি করতে এসেছেন। মমিনুল ইসলাম জানান, তারা দীর্ঘ সময় ধরে মাঠে কাজ করেন। এ সময় রাতে শীতের অনেক কষ্ট হয়। তাই তারা একটি লেপ কিনতে এসেছেন। এ ছাড়া মাসুম পারভেজ বলেন, তিনি তার মায়ের জন্য একটি লেপ তৈরি করতে এসেছেন। তিনি ৩ হাজার টাকার একটি লেপ কিনবেন।
কারিগর মইনুল ইসলাম জানান, তিনি ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রতিটি লেপ তৈরিতে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা মজুরি পাচ্ছেন। তাদের কাজের পরিমাণ বেড়ে গেছে। এ জন্য তারা খুশি। এতে তাদের অনেক টাকা আয় হচ্ছে।
চুরিপট্টি এলাকার লেপ-তোশক ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘শীত যতই বাড়বে, লেপ-তোশকের বিক্রিও তত বাড়বে। এ বছর তুলা ও কাপড়ের দাম বেড়ে গেছে। এ সময়ে এসবের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। এতে ব্যবসায়ীদের লাভও বাড়ছে।’ ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, ইতোমধ্যে লেপ-তোশকের বিক্রি বেড়ে গেছে। প্রতিদিন চাহিদামতো লেপ-তোশক বিক্রি করা হচ্ছে। এতে আমরা লাভবান হচ্ছি।
দিনাজপুর জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম জানান, শীতের তীব্রতা বাড়ছে। এই অঞ্চলে প্রতিবছর শীতবস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা বেশি থাকে। তিনি বলেন, ‘সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ প্রক্রিয়া চলছে। শীতের তীব্রতার কারণে এই অঞ্চলে প্রায় পাঁচ লাখ কম্বলের চাহিদা রয়েছে। শিগগিরই হতদরিদ্র মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হবে।