কক্সবাজারে এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সুপারি উৎপাদন বেড়েছে। সুপারির আকার বড় ও স্বাদে মিষ্টি হওয়ায় দেশ-বিদেশে এর চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয় বাজারে সুপারি ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে। এতে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।
অন্যদিকে মায়ানমারের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সেখান থেকে কক্সবাজারে সুপারি আমদানি বন্ধ হয়েছে, ফলে দেশি সুপারির চাহিদা আরও বেড়েছে। আগামী মার্চ পর্যন্ত এই সুপারি বাজারে বেচাকেনা চলবে।
জেলার টেকনাফ, উখিয়া, রামু ও কক্সবাজার সদরসহ আটটি উপজেলায় সুপারি চাষ বেড়েছে। এ বছর ১২ হাজার ৩২০ টন সুপারি উৎপাদিত হয়েছে। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এসব সুপারির বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে সুপারির বেচাকেনা বিভিন্ন হাটে জমে উঠেছে।
কক্সবাজারে উৎপাদিত সুপারির আকার বড় ও স্বাদে অত্যন্ত সুস্বাদু হওয়ায় এই সুপারির চাহিদা দেশ-বিদেশে ব্যাপক। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, কিশোরগঞ্জ, বগুড়াসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে সুপারি বাজারজাত করা হচ্ছে। এ ছাড়া, সুপারি রপ্তানি হচ্ছে- দুবাই, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে। কক্সবাজারের সুপারি বিদেশি বাজারে বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া, রামু, কক্সবাজার সদর, ঈদগাঁও, চকরিয়া, মহেশখালী ও পেকুয়া উপজেলায় ৩ হাজার ৫২০ হেক্টর (৮ হাজার ৬৯৪ একর) জমিতে সুপারি বাগান রয়েছে। এতে উৎপাদিত হয়েছে ১২ হাজার ৩২০ টন সুপারি। তবে স্থানীয় চাষি ও ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, কৃষি বিভাগের হিসাবের চেয়ে প্রকৃত উৎপাদন আরও বেশি। বিশেষ করে, টেকনাফ উপজেলায় সুপারির উৎপাদন সবচেয়ে বেশি। এই উপজেলায় ১ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে সুপারি চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে উখিয়ার জালিয়াপালং, টেকনাফের বাহারছড়া ও সাবরাং ইউনিয়নগুলোর সুপারি আকারে বড় ও দামও বেশি।
টেকনাফের শাপলা চত্বর এলাকার ব্যবসায়ী আইয়ুব মিয়া জানান, ‘এক পোন (৮০টি) সুপারি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকায়। এ ছাড়া এক কেজি শুকনা সুপারি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।’ এদিকে সাবরাং ও বাহারছড়ায় এক পোন সুপারি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কক্সবাজারের সুপারি বাজারের অন্যতম বড় কেন্দ্র হচ্ছে- উখিয়ার সোনারপাড়া বাজার। এখানে সপ্তাহে দুই দিন হাট বসলেও, প্রতিদিনই এখান থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা সুপারি সংগ্রহ করতে আসেন। ব্যবসায়ীরা জানান, এই বাজারে প্রতি সপ্তাহে ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকার সুপারি বিক্রি হয়। এই বাজারে সুপারির চাহিদা বেশি থাকায় চাষিরাও লাভবান হচ্ছেন।
এ বছর সুপারির ভালো দাম পাওয়ায়, সুপারি চাষে আগ্রহী কৃষকদের সংখ্যা বাড়ছে। আবদুল হাকিম (৫০) নামের একজন চাষি, যিনি হলদিয়াপালং এলাকা থেকে সুপারি বিক্রি করতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘তিন কানি জমিতে সুপারি চাষ করেছি। এ পর্যন্ত ৩ লাখ টাকার সুপারি বিক্রি করেছি। আরও ৩ লাখ টাকার সুপারি গাছে রয়েছে।’
কক্সবাজারের অন্তত ৫০টি বাজারে এখন সুপারির বেচাকেনা চলছে। আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত বাজারে পাকা সুপারি বিক্রি হবে। এর পর শুকনা ও ভেজা সুপারি বাজারে আসবে। তবে মায়ানমারের রাখাইনে চলমান সংঘাতের কারণে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে সুপারি আমদানি অনেকটাই বন্ধ হয়ে গেছে। এতে কক্সবাজারের সুপারির চাহিদা বেড়েছে। এই সুযোগে কক্সবাজারের সুপারি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে।
কক্সবাজারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. বিমল কুমার প্রামাণিক বলেন, ‘এবার সুপারির ফলন ভালো হয়েছে। চাষিরাও ভালো দাম পাচ্ছেন। গত বছরের তুলনায় চাষের পরিমাণও বেড়েছে।’ তিনি আরও জানান, কক্সবাজারের আবহাওয়া ও মাটি সুপারি চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী, ফলে এই অঞ্চলে সুপারি চাষে খরচ ও পরিশ্রম কম হয়। একটি সুপারি গাছ অনেক বছর ফলন দেয়, তাই এটি কৃষকদের জন্য লাভজনক একটি চাষ হিসেবে বিবেচিত।