বিশ্ববাজারে গতকাল বুধবার জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। কারণ বাজারে অংশগ্রহণকারীরা আশা করছেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানিকারক দেশ চীনে জ্বালানি পণ্যটির চাহিদা বাড়বে। এর আগে বেইজিং ঘোষণা দিয়েছে যে, তারা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে ২০২৫ সালে তাদের মুদ্রানীতি শিথিল করবে। খবর রয়টার্সের।
ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থাটির খবরে বলা হয়, অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের (ক্রুড) আন্তর্জাতিক বাজার-আদর্শ ব্রেন্টের ভবিষ্যৎ সরবরাহ (ফিউচার) চুক্তিমূল্য ২৪ সেন্ট বেড়েছে। এর মধ্য দিয়ে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম দশমিক ৩০ শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৭২ ডলার ৪৩ সেন্টে পৌঁছেছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুডের ভবিষ্যৎ সরবরাহ চুক্তিমূল্য ২৪ সেন্ট বেড়েছে। এর মধ্য দিয়ে ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম দশমিক ৪০ শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৬৮ ডলার ৮৩ সেন্ট হয়েছে।
এদিকে গত সোমবার চীন জানিয়েছে, ২০২৫ সালে তারা ‘যথার্থভাবে শিথিল’ মুদ্রানীতি গ্রহণ করবে। কারণ বেইজিং তার অর্থনীতিকে উজ্জীবিত করতে ১৪ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো নীতিগতভাবে মুদ্রানীতি শিথিলতার দিকে যাচ্ছে।
আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান আইজির বাজার কৌশলবিদ ইয়েপ জুন রং বলেছেন, জ্বালানি তেলের দাম সম্প্রতি কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে। কারণ চীনা কর্তৃপক্ষের শক্তিশালী নীতিগত সংকেতগুলো আবারও ২০২৫ সালে বড় ধরনের প্রণোদনা দেওয়ার জন্য আশা জাগিয়েছে। ইয়েপ আরও বলেন, তবে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কারণ বাজারে অংশগ্রহণকারীরা এখনো সাধারণ ইতিবাচক বার্তাগুলোর চেয়ে আরও অনেকটা স্পষ্ট ও সঠিক তথ্য দেখতে চান।
চীনের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি নভেম্বরে সাত মাস পর প্রথমবারের মতো বার্ষিকভিত্তিতে বেড়েছে, যার পরিমাণ ছিল গত বছরের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি। রিস্টাড এনার্জির জ্বালানি তেল বিশ্লেষণ বিভাগের প্রধান মুকেশ সাহদেব বলেছেন, তবে চীনের নীতিগত পরিবর্তনগুলো যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত বাণিজ্য ব্যবস্থা থেকে কোনো প্রভাব মোকাবিলা করতে সক্ষম নাও হতে পারে। তিনি বলেন, এটি (চীনের নীতিগত পরিবর্তন) সর্বোচ্চ হিসাবের ক্ষেত্রে শুধু পরবর্তী পতন ঠেকাতে সাহায্য করতে পারে।
বাজারের সূত্রগুলোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মঙ্গলবার আমেরিকান পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউটের পরিসংখ্যানের উদ্ধৃতিতে জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও অন্যান্য জ্বালানি মজুত গত সপ্তাহে বেড়েছে।
সূত্রগুলো নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মজুত বেড়ে গত ৬ ডিসেম্বর শেষ হওয়া সপ্তাহে ৪ লাখ ৯৯ হাজার ব্যারেলে পৌঁছেছে। গ্যাসোলিনের মজুত বেড়ে ২৮ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেলে পৌঁছেছে এবং ডিস্টিলেট মজুত ২৪ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেলে পৌঁছেছে বলে তারা জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন থেকে তেলের মজুত সম্পর্কিত আনুষ্ঠানিক তথ্য বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে প্রকাশি হওয়ার কথা ছিল। রয়টার্সের চালানো জরিপ অনুযায়ী, বিশ্লেষকরা অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মজুত ৯ লাখ ব্যারেল কম ও গ্যাসোলিনের মজুত ১৭ লাখ ব্যারেল বাড়তে পারে বলে মনে করছেন।