চট্টগ্রামে পাইকারি বাজারে নিম্নমুখী ডিমের দাম। তবে এর সুফল পাচ্ছেন না সাধারণ ভোক্তারা। আড়ত থেকে কেনার পর খুচরা ব্যবসায়ীরা প্রতিটি ডিম ১ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১ টাকা ২০ পয়সা বেশি দামে বিক্রি করতে পারেন। কিন্তু চট্টগ্রামের খুচরা ব্যবসায়ীরা কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করেই প্রতিটি ডিমে ভোক্তার কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছেন।
চট্টগ্রামে পাইকারি ডিম বিক্রি হয় পাহাড়তলী বাজারে। গত মাসের শুরুতে বাজারটিতে প্রতিটি ডিম ১০ টাকার ওপরে বিক্রি হয়েছে। তবে গত সপ্তাহে প্রতিটি ডিম ৯ টাকা ৭০ পয়সা হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৯ টাকা ৬০ পয়সা।
জানা গেছে, পাইকারি আড়ত থেকে একজন খুচরা বিক্রেতা কিনে আনার পর প্রতিটি ডিম ১ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১ টাকা ২০ পয়সা বেশি দামে বিক্রি করতে পারবেন। সেই হিসেবে চট্টগ্রামে খুচরা পর্যায়ে একটি ডিম ১০ টাকা ৬০ পয়সা বা ১০ টাকা ৮০ পয়সায় বিক্রি করার কথা।
কিন্তু চট্টগ্রাম নগরের কাজীর দেউড়ি, হালিশহর, নাসিরাবাদসহ বিভিন্ন এলাকার খুচরা দোকান ঘুরে দেখা গেছে, একেক জায়গায় একেক দরে ডিম বিক্রি হচ্ছে। খুচরা পর্যায়ে ১ ডজন কিনলে প্রতিটি ডিমে ক্রেতার খরচ পড়ছে ১১ টাকা ৬৬ পয়সা (ডজনপ্রতি ১৪০ টাকা)। আবার এক হালি কিনলে প্রতি ডিমে ক্রেতার খরচ পড়ছে ১২ টাকা ৫০ পয়সা (প্রতি হালি ৫০ টাকা)।
পাহাড়তলী বাজারের পাইকারি ডিম ব্যবসায়ী মো. দেলোয়ার খবরের কাগজকে বলেন, ‘ডিমের বাজার দর কমতির দিকে রয়েছে। প্রতি ১০০ পিস ডিম ৯৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রোজার মাসে ডিমের দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই।’
ঢাকার তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমান উল্লাহ আমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘বাজার পরিস্থিতি খুব একটা ভালো না। দামও কমতির দিকে। আমরা প্রতি ১০০ পিস ডিম ৯৭০ টাকায় বিক্রি করছি। পাইকারিতে ডিমের বাজার চড়া হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখছি না।’
বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার খবরের কাগজকে বলেন, ‘আড়তদার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা যেভাবে লাভবান হচ্ছেন, সেভাবে প্রান্তিক খামারিরা লাভবান হচ্ছেন না। তারা ন্যায্য দামটা পাচ্ছেন না। অপরদিকে ভোক্তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কারণ খুচরা বিক্রেতারা অতিরিক্ত মুনাফার চেষ্টা করছেন। অনেক ক্রেতা দাম-দর করেন না বলে খুচরা ব্যবসায়ীরা বাড়তি দরে ডিম বিক্রির সুযোগটা পান। তবে দেশের ও জনগণের স্বার্থে সব জায়গায় একটা শৃঙ্খলা থাকা জরুরি।’
চট্টগ্রাম মহানগরের হালিশহর এলাকায় আল মক্কা স্টোরের মালিক মো. নাছির খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা আড়ত থেকে কিনে আনার সময় অনেক ডিম ফেটে যায়, নষ্ট থাকে। তাই আমাদের সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে একটু বাড়তি দরে বিক্রি করতে হয়। লোকসান গুণে তো আর ব্যবসা করা যাবে না।’
নগরের হালিশহর কাঁচাবাজারে কথা হয় ওই এলাকার বাসিন্দা মো. আল আমিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘খুচরা পর্যায়ে একেক দোকানে একেক দামে ডিম বিক্রি হচ্ছে। দোকানদার ডজনপ্রতি ডিমের দাম ১৫০ টাকা চান। দাম-দর করে ১৪০ টাকায় কিনেছি। অথচ শীতকালে ডিমের দাম কমে যাওয়ার কথা।’
এদিকে রিয়াজুদ্দিন বাজার ও কর্ণফুলী কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, ‘এসব বাজারে কমতে শুরু করেছে মুরগির দাম। চলতি মাসের শুরুতে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২০৫ থেকে ২১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকায়। তবে সোনালি ও দেশি মুরগি আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। বাজারে প্রতিকেজি দেশি মুরগি ৫৪০ টাকা ও সোনালি মুরগি ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
তবে আগের দরেই বিক্রি হচ্ছে সবজি। বর্তমানে প্রতিকেজি নতুন আলু ৪৫ টাকা, মুন্সীগঞ্জের আলু ৫০ টাকা, ফুলকপি ৩০ টাকা, বাঁধাকপি ২০ টাকা, লাউ ৩০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৩০ টাকা, মুলা ২০ টাকা, ক্ষীরা ৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৪০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, টমেটো ৪০ থেকে ৫০ টাকা, শিম ও বেগুন ৫০ টাকা, শিমের বিচি ১২০ টাকা, বরবটি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা ও করলা ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তা ছাড়া প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ৭০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৫৫ টাকা ও চীনা রসুন ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অপর দিকে মাছের বাজারে প্রতিকেজি রুই আকারভেদে ২৮০ থেকে ৩৮০ টাকা, কাতলা মাছ ৩৫০ টাকা, শিং মাছ ৩৫০ টাকা, পাঙাশ ১৮০ থেকে ২২০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কোরাল ৬০০ টাকা, রূপচাঁদা ১ হাজার টাকা, বোয়াল ৫০০ টাকা ও লাল পোয়া ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।