
শুধু কয়লা আমদানির মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সচল ছিল ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের কড়ইতলী ও গোবরাকুড়া স্থলবন্দর। কিন্তু বড়দিন ও নতুন বছর শুরুর দোহাই দিয়ে কয়েক দিন রপ্তানি বন্ধের কথা বলে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা আর কয়লা পাঠাচ্ছেন না। এতে স্থলবন্দর দুটির কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে।
ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পাশাপাশি বন্দর দুটিতে কাজ কার শ্রমিকরা বেকার হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্দর চালু রাখার স্বার্থে তারা কম লাভে কয়লা বিক্রি করছেন। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা চাইলেই কম দামে কয়লা বিক্রি করতে পারেন। কিন্তু তারা সেটা করছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কড়ইতলী ও গোবরাকুড়া স্থলবন্দরে চার হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করেন। গত বছরের এপ্রিলে ভারত থেকে ৯৬৪ টন কয়লা আমদানির পর থেকে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা আর কয়লা আনতে চাননি। তারা দাম কমানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তবু ব্যবসা চাঙা রাখার স্বার্থে গত ৪ ডিসেম্বর দুই স্থলবন্দর দিয়ে আটটি ট্রাকে ৯৬ টন কয়লা বাংলাদেশে আনার মধ্য দিয়ে আবারও আমদানি কার্যক্রম শুরু হয়।
তখন থেকে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯০ ট্রাক কয়লা বাংলাদেশে এসেছে। এসব ট্রাকে ১ হাজার ৮০ টন কয়লা ছিল। এরপর বড়দিন ও নতুন বছরে কয়েক দিন ছুটির কথা বলে রপ্তানি বন্ধ রাখেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। গত ১৭ দিন ধরে কয়লা আমদানি বন্ধ রয়েছে। এতে আবারও ঝিমিয়ে পড়েছে ময়মনসিংহের এ দুই স্থলবন্দর। একই সঙ্গে কমেছে শ্রমিকদের কর্মচাঞ্চল্য।
ব্যবসায়ীরা জানান, আগের কিনে রাখা কয়লা বিক্রি করা হচ্ছে। এসব কয়লার চাহিদা বেড়েছে। কারণ, এখন ইটভাটাগুলোতে পুরোদমে ইট পোড়ানোর কর্মযজ্ঞ চলছে। কিন্তু গত ১৭ দিন ধরে ভারতীয়রা কয়লা দিচ্ছে না। এতে অনেক শ্রমিক ঢিলেঢালাভাবে কাজ করছে। আগের মতো স্থলবন্দর বন্ধ থাকলে অনেক শ্রমিক বেকার হয়ে যাবেন। তবে এ সমস্যা না হওয়ার জন্য ব্যবসায়ীরা ভারতীয়দের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কড়ইতলী-গোবরাকুড়া আমদানি-রপ্তানি গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক অশোক সরকার বলেন, ‘ভারত থেকে প্রতি টন কয়লা কিনতে আনুষঙ্গিকসহ খরচ হচ্ছে ১৮ হাজার টাকা। আমরা ৫০০ টাকা লাভ করে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছি। ক্রেতা ধরে রাখাসহ বন্দর দুটির কার্যক্রম সচল রাখতে আমরা লাভ কম করছি। কিন্তু ২২ ডিসেম্বরের পর থেকে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা পুরো রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন। এ জন্য বন্দরের কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। আশা করছি, কয়েক দিনের মধ্যেই আমদানি-রপ্তানি শুরু হবে।’
বাংলাদেশ স্থলবন্দর কড়ইতলী-গোবরাকুড়া বন্দরের সহকারী পরিচালক পার্থ ঘোষ বলেন, সারা বছর আমদানি-রপ্তানি ঠিক থাকলে স্থলবন্দরের কার্যক্রম জমজমাট থাকবে। এতে ভারতীয় রপ্তানিকারকদের লাভবান হওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশি আমদানিকারকরাও বেশি পরিমাণে কয়লা আমদানি করতে পারবেন। ফলে শ্রমিকদেরও বেকার থাকতে হবে না। ভারতীয়রা ইচ্ছা করলেই সহনীয় দামে কয়লা বিক্রি করতে পারেন। কিন্তু তারা তা করছেন না।
এ বিষয়ে হালুয়াঘাট স্থলবন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা তমাল কান্তি বলেন, ‘গত অর্থবছরে কয়লা আমদানি খুব কম হয়েছে। তবু ২০ লাখ টাকার মতো রাজস্ব আদায় হয়েছে। আমরা চাই, বাংলাদেশি ও ভারতীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে সম্পর্ক ভালো থাকুক। তাহলে সারা বছর আমদানি-রপ্তানি বাড়ার পাশাপাশি রাজস্বও বেশি আদায় হবে।’