
বড় ও মাঝারিশিল্প খাতের রুগ্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক খাতের দায়দেনা মুক্তির জন্য এক্সিট পলিসি চেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সেই সঙ্গে ঋণ শ্রেণিকরণ নীতিমালা এখনই আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী না করে আগামী এক বছরের জন্য তারা বিদ্যমান সুবিধা বহাল এবং ব্যাংকের একক গ্রাহকের ঋণসীমা ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছেন।
রবিবার (১২ জানুয়ারি) বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) ও ঢাকায় অবস্থিত বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসব সুবিধা চেয়েছেন। ব্যবসা ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যাগুলো তুলে ধরেন।
এ সময় নেতারা গভর্নরের কাছে ৯ ধরনের সুবিধা চেয়েছেন। বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রির (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। এ সময় বিজিএমইএর প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন, বিসিআইয়ের পরিচালক ও প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী, এলএফএমইবির সিনিয়র সহসভাপতি নজরুল হাসান সোইল, রাভিডার সভাপতি আবদুল হক, বিসিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মইনুল ইসলাম স্বপন, সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হাসান, কোকাকোলা বাংলাদেশ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদাপ আহমেদ, বিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি প্রীতি চক্রবর্তী, সিটি গ্রুপের উপদেষ্টা অমিতাভ চক্রবর্তী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম বলেন, ‘একদিকে সরকার ভ্যাট ও কর বৃদ্ধি করছে। অন্যদিকে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বেড়েই যাচ্ছে। এ ছাড়া শ্রমিকদের বেতন বাড়াতে হচ্ছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ শ্রেণিকরণ আরও জটিল করেছে। এভাবে আমাদের সুবিধাগুলো তুলে নেওয়া হলে আমাদের ব্যবসা করা খুবই কঠিন হবে। তাই আমরা নীতিগত কিছু সুবিধা চেয়েছি।’
আনোয়ার-উল আলম আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে বিদ্যমান রুগ্ণ শিল্পপ্রতিষ্ঠান কীভাবে অবসায়ন হবে, তার স্পষ্ট কোনো নীতিমালা নেই। আমরা গভর্নরের কাছে বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর এক্সিট নীতিমালা চেয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘বিদ্যমান বড় শিল্প খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো এখন রুগ্ণ অবস্থায় রয়েছে। সেসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে এক বছরের মনিটোরিয়াম সুবিধাসহ আগামী ১২ বছরে পরিশোধের সুবিধা চেয়েছি।’
এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে রুগ্ণ প্রতিষ্ঠানের এক্সিট পলিসির ক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যাংক দায়ের ১ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট, ১ বছরের মনিটোরিয়ামসহ ১৫ বছর মেয়াদে পরিশোধের সুবিধা চেয়েছেন বলেও জানান তিনি।
একটি প্রতিষ্ঠান এক্সিট সুবিধা নিয়ে পরবর্তী সময় কীভাবে ব্যাংকের দায় পরিশোধ করবে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ার-উল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘একজন ব্যক্তির একাধিক প্রতিষ্ঠান থাকে। সব প্রতিষ্ঠানই একসঙ্গে খারাপ হয়ে যায় না। যে প্রতিষ্ঠান রুগ্ণ হয়েছে তার দায় পরিশোধের জন্য তার অন্য ভালো প্রতিষ্ঠানের আয়ের মাধ্যমে ব্যাংকের দায় পরিশোধ করবে।’
তিনি বলেন, বর্তমানে একটি ব্যাংক ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড মিলিয়ে একজন গ্রাহককে মোট মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দিতে পারে। এর আগে সীমা ৩৫ শতাংশ ছিল, পরিবর্তন করে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০২২ সালে। এতে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন, বিশেষ করে এলসির (ঋণপত্র) ক্ষেত্রে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণের শর্ত অনুযায়ী ঋণ শ্রেণিকরণে নতুন নিয়ম চালু করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন নিয়ম অনুসারে চলতি বছরের এপ্রিল থেকে তিন মাস মেয়াদোত্তীর্ণ থাকার পর সব ধরনের ঋণকে খেলাপি ঋণ হিসেবে শ্রেণিকরণ করা হবে। বর্তমানে এ সময়সীমা ছয় মাস রয়েছে।