
আমনের ভরা মৌসুমেই অস্থির চালের বাজার। চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভারত থেকে চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। ভারতীয় চাল বাজারে আসার পরও দাম বাড়ানোর ‘সীমা ছাড়াল’ চাল ব্যবসায়ীরা। বেশি বেড়েছে জিরাশাইল, নাজিরশাইল, মিনিকেট আতপ, কাটারি আতপ ও সেদ্ধ চালের দাম।
চট্টগ্রামে পাইকারি বাজারে আমনের ভরা মৌসুমে ২০২৪ সালের জানুয়ারির সঙ্গে ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে চালের দাম বাড়ার হারের তুলনামূলক পার্থক্য বিশ্লেষণ করেছে খবরের কাগজ। চট্টগ্রামে চাক্তাই ও পাহাড়তলী চালের পাইকারি বাজারে বছরের ব্যবধানে প্রতিকেজি মোটা সেদ্ধ চালে ২ টাকা, মিনিকেট সেদ্ধ চালে ১২ টাকা, মিনিকেট আতপ চালে ১২ টাকা, কাটারি আতপ চালে ১৪ টাকা, নাজিরশাইলে ১৪ টাকা, জিরাশাইলে ১৪ টাকা, পাইজাম সেদ্ধ চালে ১১ টাকা ও বেতি আতপ চালে ১৪ টাকা বেড়েছে।
বস্তাপ্রতি হিসাবে, বছরের ব্যবধানে (জানুয়ারি ২০২৪ ও জানুয়ারি ২০২৫) প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) মোটা সেদ্ধ চালে ১০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৪০০ টাকা, মিনিকেট সেদ্ধ চালে ৬০০ টাকা বেড়ে ৩ হাজার ২০০ টাকা, মিনিকেট আতপ চালে ৬০০ টাকা বেড়ে ৩ হাজার ৫০০ টাকা, কাটারি আতপ চালে ৭০০ টাকা বেড়ে ৪ হাজার ১০০ টাকা, নাজিরশাইলে ৭০০ টাকা বেড়ে ৪ হাজার ২০০ টাকা, জিরাশাইলে ৭০০ টাকা বেড়ে ৪ হাজার টাকা, পাইজাম সেদ্ধ ৫৫০ টাকা বেড়ে ৩ হাজার টাকা ও বেতি আতপ চালে ৭০০ টাকা বেড়ে ৩ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তা ছাড়া বর্তমানে পাইকারিতে প্রতি বস্তা পাইজাম আতপ ৩ হাজার ২০০ টাকা, কাটারি সেদ্ধ ৪ হাজার ২০০ টাকা, স্বর্ণা-৫ ২ হাজার ৮০০ টাকা ও গুটি স্বর্ণা ২ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এসে আমনের ভরা মৌসুমে এসব চালে নতুন করে ৫০ থেকে ২০০ টাকা বেড়েছিল।
পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. নিজাম উদ্দীন খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠান, উত্তরবঙ্গের চালকল ও মোকামগুলো দফায় দফায় চালের দাম বাড়াচ্ছে। সরকারকে তাদের লাগাম টেনে ধরতে হবে। ব্যবসায়ীদের ফুড গ্রেইন লাইসেন্সের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। তাহলেই পণ্যটির বাজার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।’
এদিকে চালের বাজারের চলমান অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে আনতে গত ৭ জানুয়ারি ভারত থেকে আরও ৫০ হাজার টন নন-বাসমতী চাল কেনার প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। ভারতের বাগাদিয়া ব্রাদার্স নামের একটি কোম্পানির কাছ থেকে এই চাল কেনা হবে।
খরচ পড়বে ২৭৫ কোটি ৩০ লাখ ৪০ হাজার টাকা। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘সরকার চালের বাজার দর স্বাভাবিক পর্যায়ে আনতে আমদানি অব্যাহত রেখেছে। দুই দফায় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ভারত থেকে সাড়ে ৫১ হাজার টন চাল এসেছে। কিন্তু এটা চাহিদার তুলনায় নগণ্য।
চট্টগ্রাম চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদাক মো. ওমর আজম খবরের কাগজকে বলেন, ‘ধান-চালের দাম বাড়ার একটাই কারণ। কর্পোরেট হাউসগুলো কোনো একটা জায়গায় গিয়ে ধান কেনা শুরু করলে অন্য কাউকে আর ধান কেনার সুযোগ দেয় না। তখন বাজারটা চড়া হয়ে যায়। এখন আমনের ভরা মৌসুম চলছে, ভারত থেকে চাল আসছে। এই মুহূর্তে চালের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। বর্তমানে প্রতিমণ কাটারি ধান ২ হাজার টাকার ওপরে। আবার সাধারণ ধানগুলোও ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
এদিকে খুচরা বাজারে ৭০ টাকার নিচে মিলছে না চাল। বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি স্বর্ণা সেদ্ধ ৭০ টাকা, পাইজাম আতপ ৭৫ টাকা, কাটারি আতপ ৮৫ টাকা, নাজিরশাইল সেদ্ধ ৮৮ টাকা, জিরাশাইল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, মিনিকেট আতপ ৭৫ টাকা ও মিনিকেট সেদ্ধ ৭৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন খবরের কাগজকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে চালের দাম বাড়াচ্ছে। চালের দাম বাড়ার পেছনে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়ী করছে পাইকার ও মিলাররা। শুধু করপোরেট প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করলে চলবে না। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মিলার ও পাইকাররাও দাম বাড়াচ্ছে। অপরদিকে চালের বাজারে খাদ্য বিভাগ, ভোক্তা অধিকার বা জেলা প্রশাসনের কোনো রকম তদারকি নেই। চালের বাজার তদারকির বাইরে রয়েছে। এ কারণে চালের দাম দফায় দফায় বাড়ছে।’