ঢাকা ২৬ মাঘ ১৪৩১, রোববার, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
English
রোববার, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৬ মাঘ ১৪৩১

নকশিকাঁথায় ভাগ্যবদল সেলিনার

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:০৮ এএম
আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:১৫ এএম
নকশিকাঁথায় ভাগ্যবদল সেলিনার
নিজের প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন সেলিনা আক্তার। ছবি: খবরের কাগজ

ভোলার সেলিনা আক্তার স্বপ্ন পুঁজি নিয়ে নকশিকাঁথার ব্যবসা শুরু করেন। কয়েক বছরের মধ্যে তিনি স্বাবলম্বী হন। ইতোমধ্যে অসংখ্য নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেন। তার নকশিকাঁথা এখন অনলাইন ও অফলাইন বিক্রি হচ্ছে। ২০২৩ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ জয়িতা সম্মাননা পান। তার সফলতা নারীদের জন্য একটি প্রেরণা হয়ে উঠেছে। সেলিনা নারীদের ঘরে বসে কাজ করার জন্য উৎসাহিত করেন এবং তাদের স্বাবলম্বী হতে পরামর্শ দেন। 

ভোলার সেলিনা আক্তার একসময় আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছিলেন। চাকরির  জন্য তিনি বিভিন্ন জায়গায় চেষ্টা করেন। কিন্তু সফল হননি। হতাশ হয়ে তিনি ভাবতে থাকেন, চাকরি ছাড়া কীভাবে টাকা উপার্জন করা যায়। পরে একদিন ইউটিউবে নকশিকাঁথার ডিজাইন দেখে সিদ্ধান্ত নেন, নিজেই এই ব্যবসা শুরু করবেন। 

সেলিনা আক্তার ২০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ‘গ্ল্যামার জোন নকশিকাঁথা’ নামে একটি ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসা শুরুর পর থেকে তার জীবনে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। পরিশ্রম ও উদ্যোমের কারণে তিনি আজ সফল নারী উদ্যোক্তা। ছয় বছরের মধ্যে তিনি নিজে স্বাবলম্বী হয়েছেন এবং অন্তত ৫০ জন নারীর জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করেছেন। ২০২৩ সালে তিনি ভোলা সদর উপজেলার শ্রেষ্ঠ জয়িতা হিসেবে সম্মাননা পান।

সেলিনা আক্তারের বলেন, ‘নারীদের ঘরে বসে না থেকে কিছু করার পরামর্শ দিই। এতে তারা স্বাবলম্বী হতে পারে।’ 

সেলিনার কলেজপড়ুয়া মেয়ে ইসরাত জাহান মিম বলেন, ‘আম্মুকে নকশিকাঁথার কাজে সাহায্য করতাম। এখন আমি ডিজাইন ও সেলাইয়ের কাজ পারি।’ 

নকশিকাঁথা সেলাই শিখতে আসা ফেরদৌস বেগম বলেন, ‘এখানে কাজ শিখে আমিও আয় করছি।’ 

সেলিনার প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে আসা নারী শ্রমিক জানান, ‘স্বামী রিকশা চালায়। আমি এখানে কাজ করি। আমাদের দুজনের আয়ের টাকায় সংসার ভালোভাবে চলছে।’ 

নারীরা আরও জানান, তারা প্রতিটি কাঁথা থেকে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় করেন। এ আয় দিয়ে তারা সংসারের খরচ চালাতে সক্ষম। তাদের মতে, সেলিনার মতো একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন তাদেরও রয়েছে।

ভোলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ‘সেলিনা আক্তার একজন সংগ্রামী ও সফল নারী। তিনি নিজের সংগ্রাম ও পরিশ্রমের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়েছেন। ভোলার অসহায় নারীদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন। তিনি যেকোনো প্রয়োজনে আমাদের পাশে আছেন।’ 

মুদ্রা বিনিময় হার: ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:০৭ এএম
আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৪১ এএম
মুদ্রা বিনিময় হার: ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
প্রতীকী ছবি

দিন দিন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্প্রসারিত হচ্ছে বাংলাদেশের ব্যবসা–বাণিজ্য। তাছাড়া, পড়াশোনা, চিকিৎসা, ভ্রমণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রয়োজনে বিদেশি মুদ্রার সঙ্গে আমাদের দেশের মুদ্রা বিনিময় করতে হয়। পাঠকদের সুবিধার্থে আমরা প্রতিদিনের মুদ্রা বিনিময় হার তুলে ধরছি।

একটা বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন, মুদ্রার বিনিময় হার প্রতিদিন পরিবর্তিত হয়। আমরা প্রতিদিন সর্বশেষ বিনিময় হার তুলে ধরছি। আরও বিস্তারিত জানতে স্থানীয় ব্যাংক বা বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা বা তাদের ওয়েবসাইট পরিদর্শন করা যেতে পারে।

সূত্র: বাংলাদেশ ব্যাংক

মুদ্রা ক্রয় (টাকা) বিক্রয় (টাকা)
ইউএস ডলার ১২২.০০ ১২২.০০
ইউরো ১২৫.৯৯ ১২৬.১৬
ব্রিটেনের পাউন্ড ১৫১.৩৯ ১৫১.৪৩
অস্ট্রেলিয়ান ডলার ৭৬.৫১ ৭৬.৫২
জাপানি ইয়েন ০.৮০৫৬ ০.৮০৫৮
কানাডিয়ান ডলার ৮৫.৩৪ ৮৫.৩৫
সুইস ক্রোনা ১১.১৪৯১ ১১.১৫২১
সিঙ্গাপুর ডলার ৯০.০১ ৯০.০৮
চায়না ইউয়ান ১৬.৬৯৮৭ ১৬.৭০৮০
ইন্ডিয়ান রুপি ১.৩৯১৪ ১.৩৯২৩
সৌদি রিয়াল - ৩২.৪২
আরব আমিরাত দেরহাম - ৩২.৫৪

নড়াইলে কমছে বাঁশ-বেত শিল্পের চাহিদা

প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:১৪ এএম
নড়াইলে কমছে বাঁশ-বেত শিল্পের চাহিদা
বাঁশ দিয়ে ঝুড়ি তৈরি করছেন এক নারী। খবরের কাগজ

নড়াইল সদর উপজেলার আউড়িয়া গ্রামের ঋষিপল্লিতে বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরি সামগ্রী বিক্রি করে শতাধিক পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছে। তবে বাঁশ ও বেতের কাঁচামালের অভাব এবং সস্তা প্লাস্টিক পণ্যের কারণে শিল্পের চাহিদা কমে গেছে। এতে কারিগররা আর্থিক সংকটে পড়েছেন। সরকারি সহযোগিতা পেলেও এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।

ঋষিপল্লিতে বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরি পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে খোল, চাঙ্গই, চাটাই, খালই, মোড়া, দোলনা, কুলা ইত্যাদি। প্রতিটি বাড়িতে নারীরা শৈল্পিক হাতের কাজ দিয়ে এসব তৈরি করেন। পুরুষরা এগুলো বাজারে বিক্রি করেন।

তবে বাঁশ ও বেতের স্বল্পতা এবং সস্তা প্লাস্টিকের প্রচলন এই শিল্পের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি মানুষ বাঁশ ও বেতগাছ কাটছেন না, বরং অন্য কাজে তা ব্যবহার করছেন। এর ফলে বাঁশ ও বেতের কাঁচামাল পাওয়া যাচ্ছে না আগের মতো। বর্তমানে প্লাস্টিকের পণ্য সহজলভ্য ও সস্তা হওয়ায় সাধারণ মানুষ তাদের দিকে ঝুঁকছেন। এতে কুটির শিল্পের বাজার সংকুচিত হচ্ছে।

নারী কারিগর গীতা রানী বলেন, ‘আমরা বাঁশ ও বেত দিয়ে পণ্য তৈরি করি। পুরুষেরা সেগুলো বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন। যা আয় হয়, তা দিয়েই সংসার চলে। তবে আমাদের জীবিকা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।’

আরেক নারী কারিগর সন্ধ্যা রানী বলেন, ‘ছোটবেলায় মা-বাবার কাছ থেকে বাঁশ ও বেত দিয়ে কাজ শিখেছিলাম। এখন আমরা বাঁশ কিনে চেরাই করি, পরে বেতি বানিয়ে নানা পণ্য তৈরি করি।’

কারিগর দীলিপ কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘বর্তমানে প্লাস্টিকের সামগ্রী সহজে পাওয়া যায়। তাই কুটির শিল্পের চাহিদা কমে গেছে। বাঁশ ও বেতের গাছও এখন পাওয়া যায় না। কারণ মানুষ তা কেটে চাষাবাদ এবং ঘরবাড়ি নির্মাণের কাজে ব্যবহার করছেন।’

আউড়িয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম পলাশ বলেন, ‘ঋষিপল্লিতে ৬৬টি পরিবার রয়েছে। যাদের তিন শতাধিক সদস্য রয়েছেন। ওই পরিবারের সদস্যরা বাঁশ ও বেতশিল্পে নিযুক্ত। তবে বর্তমানে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং স্বল্প আয় এই শিল্পে টিকে থাকতে বাধা সৃষ্টি করছে।’ 

জেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক মৌসুমী রানী মজুমদার বলেন, ‘বাঁশ ও বেতের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হবে।’

আলুর দাম সহনীয় রাখতে নীতি-সহায়তা চান কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন

প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫৪ এএম
আলুর দাম সহনীয় রাখতে নীতি-সহায়তা চান কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন
ছবি: সংগৃহীত

আলু সংরক্ষণ ভাড়া কৃষকদের সহনীয় পর্যায়ে আনার মাধ্যমে আলুচাষিদের সুরক্ষা প্রদানসহ বাজারে আলুর দাম ক্রেতার নাগালে রাখতে সরকারের নীতি-সহায়তা চেয়েছেন হিমাগার মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন।
 
তারা প্রচলিত দণ্ডসুদসহ ব্যাংকঋণের সুদ শতকরা ১৭ ভাগ থেকে কমিয়ে শতকরা ৭ ভাগ করা এবং বিদ্যুৎ বিলের ইউনিটপ্রতি রেট পিক আওয়ারে ১৩.৬২ টাকা ও অফপিক আওয়ারে ৯.৬২ টাকার স্থলে ৫ টাকা করার দাবি জানান। পাশাপাশি ভ্যাট ও উৎসে কর কর্তন (টিডিএস) প্রত্যাহার চান।
 
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান সংগঠনটির সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।

তিনি বলেন, বিগত ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৭ সালে আলুর বাজারে স্মরণকালের ভয়াবহ মূল্যহ্রাস ঘটে। ফলে হিমাগারে আলু সংরক্ষণকারী অনেক কৃষক ও ব্যবসায়ী হিমাগারে সংরক্ষিত আলু বের না করায় হিমাগার মালিকরা ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েন। ফলে ব্যাংক থেকে গৃহীত ঋণের কিস্তি নিয়মমাফিক পরিশোধ করতে না পারায় বিভিন্ন আর্থিক চাপ ও সমস্যা নিয়ে হিমাগার পরিচালনা করছেন; যা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি ৩ মাস পরপর ব্যাংকঋণের কিস্তি প্রদানের নির্দেশনা প্রদান করেছে। কিন্তু হিমাগারে আলু সংরক্ষণ হয় মার্চ মাসে এবং খালাস হওয়া শুরু হয় জুলাই মাসে। যার ফলে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে ঋণের কিস্তি প্রদান করতে না পারায় ঋণখেলাপিতে পরিণত হচ্ছে। ফলে ১৫ শতাংশ ব্যাংক সুদের সঙ্গে আরও ২ শতাংশ সুদ যোগ হয়ে তা ১৭ শতাংশে দাঁড়াচ্ছে। এমতাবস্থায় ব্যাংকঋণের সুদ এবং বিদ্যুৎ বিলের খরচ কমিয়ে আনা এবং ব্যাংকঋণের কিস্তি ত্রৈমাসিকের পরিবর্তে বার্ষিক ভিত্তিতে পরিশোধ করার ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাই।’  

তিনি আরও জানান, ২০২৪ সালে অ্যাসোসিয়েশন নির্ধারিত হিমাগারে আলু সংরক্ষণ ভাড়া ছিল কেজিপ্রতি ৭ টাকা। সে হিসাবে ৫০ কেজির বস্তার আলু ভাড়া ৩৫০ টাকা। আলু সংরক্ষণকারীরা ৭০ থেকে ৭২ কেজি ওজনের বস্তার ভাড়া ৩৫০ টাকা প্রদান করেই হিমাগার থেকে আলু বের করেছেন। ফলে হিমাগার মালিকরা প্রতি বস্তায় ১৫ থেকে ২২ কেজি আলুর ভাড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এতে হিমাগারের আলু ধারণক্ষমতা প্রায় ২০-২৫ শতাংশ কমে গিয়েছে এবং গড়ে ১০ হাজার মে. টনের একটি হিমাগার প্রায় ১.৫ কোটি থেকে ২ কোটি টাকার মতো আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। ফলে দেশের ৪০০ হিমাগারের মধ্যে প্রায় ৩০০ হিমাগার সময়মতো ব্যাংকঋণ পরিশোধ করতে না পেরে এবং অন্যান্য পরিচালনা ব্যয় সংকুলান করতে না পেরে রুগ্‌ণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে এবং বেশ কিছু হিমাগার ঋণখেলাপিতে পরিণত হয়েছে।                                                                                                        
 এ সময় তিনি জাানান, ২০২৫ সালে হিমাগারগুলোতে কেজিপ্রতি ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে ওপরে বর্ণিত খরচগুলো বিবেচনায় নিয়ে কেজিপ্রতি ভাড়া ৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। হিমাগারে আলু সংরক্ষণে যুক্তিসংগতভাবে নির্ধারিত কেজিপ্রতি ৮ টাকা ভাড়ায় হিমাগার পরিচালনায় সহায়তা করার মাধ্যমে দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি হিমাগার শিল্পকে রক্ষার্থে সবার প্রতি আহ্বান জানান মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।
 
এ বছর আলুর যথেষ্ট উৎপাদন হয়েছে উল্লেখ করে আলুর দাম খুচরা পর্যায়ে কোনোভাবেই গত বছরের মতো হবে না বলে আশ্বাস দেন সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইশতিয়াক আহমেদ, পরিচালক হাসেন আলী, কাজী মেহাম্মদ ইদ্রিস, চন্দন কুমার সাহা, মো. তারিকুল ইসলাম খান, গোলাম সরোয়ার রবিন, মাইনুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম বাবু, ফরহাদ হোসেন আকন্দ, মো. কামরুল ইসলাম এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুসান্ত কুমার প্রামাণিক।

ভেনামি চিড়িংতে সম্ভাবনা ব্যাপক, নীতি-সহায়তার ঘাটতি

প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:৪৫ এএম
আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:৪৬ এএম
ভেনামি চিড়িংতে সম্ভাবনা ব্যাপক, নীতি-সহায়তার ঘাটতি
ছবি: সংগৃহীত

একসময়ে এ দেশের খামারিরা দেশ-বিদেশে বাগদা, গলদা, হরিণাসহ বিভিন্ন জাতের চিংড়ির রমরমা ব্যবসা করলেও গত কয়েক বছরে তা কমেছে। বিশ্বব্যাপী জায়গা করে নিয়েছে ভেনামি চিংড়ি। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশে এখনো ভেনামি চিংড়ির চাষ সাধারণ খামারি পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েনি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণ খামারিদের ভেনামি চিংড়ি চাষে আগ্রহী করতে হলে সরকারকে অল্প সুদে ঋণ, নগদ ও নীতি সুবিধা দিতে হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে ডলারসংকটর কারণে সব ধরনের চিংড়ি উৎপাদনেই খরচ বেড়েছে। খরচ কমাতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার বাড়াতে হবে। এতে সাধারণ মানুষ কম দামে চিংড়ি কিনতে পারবেন। রপ্তানিও বাড়বে।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, বিভিন্ন ধরনের নিয়মকানুন মেনে ভেনামি চিংড়ি চাষ করতে হয়। তা না হলে এসব চিংড়ি সহজে মরে যায়। ফলে খামারিরা লোকসানে পড়বেন। এ জন্য সরকারকে ভেনামি চাষে আগ্রহীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করতে হবে।

বাংলাদেশের হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিকারকরা বলছেন, বর্তমান বিভিন্ন দেশ থেকে রপ্তানি হওয়া চিংড়ির সিংহভাগই ভেনামি। হিমায়িত করে এসব চিংড়ি রপ্তানি করা হয়। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া চিংড়ির বেশির ভাগই বাগদা। চিংড়ির উচ্চফলনশীল জাত ভেনামির চাষও পুরোপুরি শুরু হয়নি। এতে স্বাভাবিকভাবেই হিমায়িত চিংড়ির রপ্তানি কমেছে। গত অর্থবছর তার আগের অর্থবছরের তুলনায় হিমায়িত চিংড়ির রপ্তানি কমেছে ২৫ শতাংশ। এতে চিংড়ির রপ্তানি প্রায় ৪১ কোটি ডলার থেকে কমে গত বছর ৩২ কোটি ডলারে নেমেছে।

ভেনামি উচ্চফলনশীল পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের উন্নত জাতের চিংড়ি। উচ্চফলনের পাশাপাশি প্রতিরোধক্ষমতার জন্যও এই চিংড়ি সারা পৃথিবীতে ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে উৎপাদিত চিংড়ির ৮০ শতাংশই ভেনামি জাতের। দেশে ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতি চেয়ে সরকারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে দেনদরবার করেছেন রপ্তানিকারকরা। পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে- এ যুক্তিতে শুরুতে ভেনামি চাষে উৎসাহ বা অনুমতি কোনোটিই দেয়নি মৎস্য অধিদপ্তর। বাংলাদেশ ২০১৯ থেকে এ চিংড়ির পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়। চার বছর ধরে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এ চিংড়ির বাণিজ্যিক উৎপাদনে অনুমতি দিয়েছে সরকার। বছর দুয়েক থেকে ভেনামি চিংড়ির চাহিদা বেড়েছে। তবে বাংলাদেশ এখনো পুরোপুরি ভেনামি চিংড়ি চাষে যেতে পারেনি।

মৎস্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ভেনামি চিংড়ি চাষে বায়োসিকিউরিটি নিশ্চিত করতে পানি ও বর্জ্য শোধন, ভৌত অবকাঠামোর বিচ্ছিন্নতা, বায়ু সঞ্চালন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, রোগের তথ্য সংরক্ষণ, খাদ্য প্রয়োগসহ অন্যান্য তথ্যও হালনাগাদ রাখতে হবে। সনাতন পদ্ধতির বদলে আধা নিবিড় বা নিবিড় পদ্ধতিতে ভেনামি চিংড়ির চাষ করতে হবে। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ এ চিংড়িকে যথাযথভাবে মানসম্মত খাদ্য দিতে হবে। কোনোভাবেই অননুমোদিত অ্যান্টিবায়োটিক, রাসায়নিক বা কীটনাশক প্রয়োগ করা যাবে না। আর বাজারজাত করার ৮ থেকে ১০ দিন আগে চিংড়ির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে নিতে হবে। কোনো কারণে ভেনামি চিংড়িতে রোগ দেখা দিলে মৎস্য অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মৎস্য হ্যাচারি আইন, মৎস্য হ্যাচারি বিধিমালা ও মৎস্য সংগনিরোধ আইন অনুসরণ করে দ্রুত ওই সব সংক্রমিত চিংড়ি ধ্বংস করতে হবে। রোগাক্রান্ত খামার সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত করে আবার উৎপাদনে যেতে হবে।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, প্রাথমিকভাবে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের চাষিরা ভেনামি চিংড়ি চাষের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে আগ্রহী খামারিদের বাণিজ্যিকভাবে ভেনামি চিংড়ি চাষের জন্য বায়োসিকিউরিটি, সংগনিরোধসহ ভৌত অবকাঠামোগত সুবিধা থাকতে হবে। অনুমোদন পেতে আগ্রহী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে নির্ধারিত ছকে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করতে হবে। অনুমোদিত খামারের নির্বাচিত স্থানের বাইরে ভেনামি চিংড়ি চাষ করা যাবে না।

আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সংক্রান্ত তথ্যভান্ডার ওইসি ওয়ার্ল্ডের তথ্যানুযায়ী, গত কয়েক বছরে বিশ্ব চিংড়ি রপ্তানির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ রপ্তানি করেছে ইকুয়েডর। তারপর ভারত ২৩ দশমিক ৫০ শতাংশ, ভিয়েতনাম ১০ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া ৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ ও আর্জেন্টিনা ৫ শতাংশ রপ্তানি করেছে। বিশ্ব চিংড়ি রপ্তানিতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ১ দশমিক ৫০ শতাংশ। 

ভেনামিতে সফল হতে ভারতের ৫-১০ বছর সময় লেগেছে। বাংলাদেশের খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, বরগুনা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী ও ময়মনসিংহে চিংড়ি চাষ হয়। রপ্তানির জন্য বড় মাপের শতাধিক চিংড়ি প্রক্রিয়াজাত কারখানা রয়েছে। বড় মাপের ৩০টির মতো কারখানায় ভেনামি চিংড়ি চাষ হচ্ছে। 

বাণিজ্যিক চিংড়ি খামার রাসনা হ্যাচারির মালিক আবদুল খালেক খবরের কাগজকে বলেন, দুই দশক আগে থেকে দামে সস্তা হওয়ায় দুনিয়াজুড়ে 
ভেনামি চিংড়ির জনপ্রিয়তা বাড়ছে। বাংলাদেশে এসব চিংড়ির চাষ বাড়াতে হবে। এর জন্য সরকারকে সহায়তা দিতে হবে।
সাহানা মৎস্য ফার্মের মালিক রণজিত সাহা খবরের কাগজকে বলেন, চিংড়ির ব্যবসা বলতে এখন ভেনামি চিংড়ি চাষ করা হয়। ভেনামি চিংড়ির বাণিজ্যিক লাভ কতটা, তা সাধারণ খামারিরা জানতে পারলে ভেনামি চিংড়ি চাষে আগ্রহী হবেন। এ জন্য সরকারকে ভেনামি চাষের ভালো দিকগুলো নিয়ে প্রচার করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ভেনামি চাষে আগ্রহী করতে সরকারকে নগদ সহায়তা দিতে হবে। নীতি-সহায়তা দিতে হবে। একই সঙ্গে অল্প সুদে ঋণ দিতে হবে। এসব সুবিধা পেলে সাধারণ খামারিরা ভেনামি চিংড়ি চাষে আসবেন। এতে সারা দেশের চিংড়ির চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে। সরবরাহ বাড়লে দাম কমবে। বিশ্ববাজারে ভেনামি চিংড়ির চাহিদা রয়েছে। উৎপাদন বাড়লে রপ্তানিও বাড়বে। 

হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিকারক সমিতির সাবেক সভাপতি আমিন উল্লাহ বলেন, ভেনামিতে সফল হতে ভারতের ৫-১০ বছর সময় লেগেছে। ধরে নেওয়া যায়, বাংলাদেশেরও সময় লাগবে। ভেনামি চাষ সফল করতে চাষিদের মূলধনের জোগান দিতে ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। বর্তমানে বাগদা চাষে প্রতি একরে ১-২ লাখ টাকা লাগে। ভেনামি করতে হবে সেমি-ইনসেনটিভ পদ্ধতিতে। তাতে প্রতি একরে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকার প্রয়োজন হবে। তবে খরচ বাড়লেও উৎপাদন কয়েক গুণ বেশি হয়। ফলে লাভ থাকে।’

এমইউ সি ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শ্যামল দাস খবরের কাগজকে বলেন, ‘বাগদা চিংড়ি রপ্তানিতে টিকতে হলে উৎপাদন খরচ কমাতে হবে। যুদ্ধের আগে এক পাউন্ড চিংড়ির (মাথাবিহীন ১৬-২০ পিস চিংড়ি) দাম ছিল গড়ে ১৪-১৫ ডলার। এখন গড়ে ১০-১১ ডলারের বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। উৎপাদন বাড়াতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই।

তিনি আরও বলেন, ‘ভারতের হ্যাচারিতে যেসব পোনা পাওয়া যায়, সেগুলোর স্বাস্থ্য ভালো, রোগবালাইও কম। আমাদের হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিতে ঘুরে দাঁড়াতে হলে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর পাশাপাশি মানসম্মত পোনার সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

অবৈধ তামাক পণ্য জব্দে এনবিআরের অভিযান

প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:৩৬ এএম
অবৈধ তামাক পণ্য জব্দে এনবিআরের অভিযান
ছবি: সংগৃহীত

তামাকজাতীয় পণ্য সিগারেটে রাজস্ব ফাঁকি ঠেকানোই যাচ্ছে না। সম্প্রতি তিন স্তরের সিগারেটের ওপরে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। ফলে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বাজারে প্রবেশ করছে দেশি-বিদেশি সিগারেট। তামাকজাত পণ্য বিক্রয়ে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো।

অবৈধ তামাকজাতীয় পণ্যের (সিগারেট, গুল, জর্দা ও সমজাতীয় পণ্য) বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করার কথা জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সংস্থাটির দ্বিতীয় সচিব প্রণয় চাকমার সই করা আদেশ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

নিয়মিত অভিযান পরিচালনার জন্য সব কমিশনারেটের অধীন সার্কেল পর্যায়ে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করেছে এনবিআর।

এতে বলা হয়, সিগারেট, বিড়ি ও তামাকজাতীয় পণ্য থেকে আহরিত ভ্যাটের প্রায় ২৫ শতাংশ রাজস্ব আদায় হয়। অবৈধ তামাকজাতীয় পণ্যের কারণে দেশের সামগ্রিক রাজস্ব আদায় মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে দেশের শহর/গ্রাম/প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্থানীয় বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দেশি ও বিদেশি অবৈধ তামাকজাতীয় পণ্য ব্যাপকহারে বাজারজাতের সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে।

এতে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতির পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।

এতে বলা হয়, নিয়মিত অভিযান পরিচালনার জন্য সার্কেল সংশ্লিষ্ট রাজস্ব কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক করে কমিটি করা হয়েছে। যেখানে পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট সেক্টর/ব্যাটালিয়নের বিজিবি প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট জেলা/ব্যাটালিয়নের আনসার ও ভিডিপি প্রতিনিধিকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাকে সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

আদেশে বলা হয়, মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২-এর ধারা ৮২(১)-এর ক্ষমতাবলে বর্ণিত সরকারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মূসক কর্মকর্তাকে তার দায়িত্ব পালনে সহায়তা দিতে এ কমিটি গঠন করা হলো।
এতে আরও বলা হয়, সব সার্কেল কর্মকর্তা এ কমিটির সামগ্রিক নেতৃত্ব দেবেন। প্রয়োজনে এলটিউ ভ্যাট কমিশনারের পরামর্শ নেবেন। কমিটি নিজ উদ্যোগে গোপনে সংবাদ সংগ্রহ করে প্রাত্যহিক হাটবাজার, লোকালয়, স্থানীয় গুদাম এবং সম্ভাব্য ও সন্ধিগ্ধ স্থানে অভিযান পরিচালনা করবে।

বিভাগীয় কর্মকর্তা তার সব সার্কেলের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও সম্পাদিত কার্যক্রম মান, গুণ ও পরিমাণ যাচাই করে মতামতসহ কমিশনারের কাছে পাঠাবে। কমিশনার প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত সমন্বয় করে সামগ্রিক কর্মকাণ্ড বিবেচনায় গুণগত মানসম্পন্ন ও মেধাজাত কর্মকাণ্ডে সেরা কর্মকর্তাকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে পাঠাবে।

অবৈধ তামাকজাতীয় পণ্য ঠেকাতে উদ্বুদ্ধ দেশব্যাপী সেরা সার্কেল কর্মকর্তাকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে ‘স্বীকৃতি সনদ’ দেওয়া হবে বলেও এতে জানানো হয়।