
৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্যাংকিং খাতে কাজ করেছেন অভিজ্ঞ ব্যাংকার মোহাম্মদ নুরুল আমিন। তিনি প্রায় ১৫ বছর ধরে এনসিসি ব্যাংক এবং মেঘনা ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি একাধারে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) এবং বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করেন। সম্প্রতি গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। ব্যাংক খাতের নানা সংকট, উত্তরণের উপায়সহ বিভিন্ন বিষয়ে খবরের কাগজের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মৃত্তিকা সাহা
খবরের কাগজ: ব্যাংকিং খাতের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে কিছু বলুন?
মোহাম্মদ নুরুল আমিন: ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে একটা ক্রান্তিকাল পার করছে। সামগ্রিকভাবে দেশের যে একটা পরিবর্তন এসেছে, তার প্রভাব ব্যাংকিং খাতেও পড়েছে। এখানেও বেশ বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। সম্প্রতি খেলাপি ঋণের যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে, তা আপাতদৃষ্টিতে অনেক বেশি হলেও এতদিন তা লুক্কায়িত ছিল। অর্থাৎ এখন প্রকৃত চিত্র প্রকাশ করা হচ্ছে। নতুন গভর্নর দায়িত্ব নিয়ে বেশ কয়েকটি ব্যাংকে পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠন করে দিয়েছেন। সর্বশেষ কয়েকটি ব্যাংকে দেশি-বিদেশি অডিট ফার্ম নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই অডিট কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের এমডিদের তিন মাসের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। সব মিলিয়ে ব্যাংকিং খাতও একটা ক্রান্তিকাল পার করছে।
খবরের কাগজ: আগের সময়ের ব্যাংকিং খাতের সঙ্গে বর্তমান সময়ে তুলনামূলক চিত্র বিশ্লেষণ করুন।
মোহাম্মদ নুরুল আমিন: আগের চেয়ে বর্তমানে ব্যাংকের সংখ্যা, গ্রাহক, আমানত ও ঋণ সবই বেড়েছে। কিন্তু ব্যাংক পরিচালনার গুণগত মান বাড়েনি। সুশাসন নিশ্চিত হয়নি। একটি ব্যাংক যেসব নীতিমালা মেনে পরিচালনা করা দরকার, সেগুলো কার্যকর করা হয়নি। দেশে অনেক আইন আছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেক রেগুলেশন আছে, কিন্তু সেগুলো সঠিকভাবে পরিচালন করতে যে কঠোর তদারকি করা দরকার ছিল সেটা হয়নি। বরং ব্যবসায়ী গোষ্ঠী বা ব্যাংক-মালিকদের চাপে অনেক নিয়ম পরিবর্তন করা হয়েছে, যা ১০ থেকে ১৫ বছর আগে এমনভাবে করা হতো না। গত ১৫ বছরে ব্যাংক পরিচালনার রীতিনীতিতে বড় পরিবর্তন এসেছে। এতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকও সঠিক ভূমিকা পালন করতে পারছে না। তেমনি ব্যাংকগুলোতেও পরিচালনা পর্ষদ এবং ম্যানেজমেন্টের কাজের মধ্যে পার্থক্য তৈরি করা যাচ্ছে না। এখন পর্ষদ যেভাবে নির্দেশ দেয়, ব্যাংকের ম্যানেজমেন্ট সেই অনুযায়ী বাস্তবায়ন করে। এতে যাচাই-বাছাই না করেই কাগুজে প্রতিষ্ঠানকে বড় অঙ্কের ঋণ বিতরণ করে। এতে খেলাপি ঋণ হু হু করে বাড়ছে। ২০০৯ সালে যেখানে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা, এখন তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা।
খবরের কাগজ: ডলারের বাজারে হঠাৎ অস্থিরতার কারণ কী?
মোহাম্মদ নুরুল আমিন: নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দীর্ঘ চার মাস ডলারের দর স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু হঠাৎ সেখানে চাহিদা ও জোগানে অসংগতি রয়েছে। এ ছাড়া আমরা আমদানিনির্ভর দেশ হওয়ায় পণ্য আমদানির পাশাপাশি মূল্যস্ফীতিও আমদানি করি। এক বছর আগে ডলারের দর বাজারে না ছেড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ধরে বেখেছিল। আমদানি, রপ্তানি, রেমিট্যান্স প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভিন্ন ভিন্ন ডলারের দর ছিল। এতে অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে। এখন নতুন গভর্নর আসার পর সর্বক্ষেত্রে ডলারের একটাই দর করতে পেরেছেন। এখন অনেকটাই বাজারেও ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে আইএমএফেরও চাপ আছে। একই সময়ে আমাদের রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এতে আমাদের রিজার্ভও শক্তিশালী অবস্থানে আছে। ডলারের বাজারও অনেকটাই স্থিতিশীল রয়েছে। সরবরাহের দিক যদি আরও উন্নত হয়, সেই সঙ্গে আইএমএফসহ বিভিন্ন সংস্থার অর্থায়নের যে কথা রয়েছে, সেটা যদি আসে তাহলে ডলার সরবরাহ আরও বাড়বে, বাড়বে রিজার্ভও।
খবরের কাগজ: মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার বাড়ানোসহ বেশ কিছু উদ্যোাগ নিয়েছে। তার পরও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। এর কারণ কী?
মোহাম্মদ নুরুল আমিন: রিজার্ভ পরিস্থিতি ভালো থাকায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে এলসি খুলতে কিছু ছাড় দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই সঙ্গে ভ্যাট ও শুল্কেও কিছু পরিবর্তন আনছে সরকার। কিন্তু সরবরাহের দিক ঠিক রেখে আমাদের মতো দেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ কঠিন। এ জন্য সব সময়ই যে নীতি দিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ হবে তা নয়, মানুষের আচার-আচরণ, লোভ-লালসার কাজ এগুলোও গুরুত্বপূর্ণ। বড় ৮-১০টি কোম্পানি নিত্যপণ্য আমদানির কাজ করে। এর বাইরে আমাদের দেশে উৎপাদন হয় এমন পণ্যের দাম হঠাৎ করেই বেড়ে যায়। ওই জায়গার কারসাজিগুলো চিহ্নিত করা এবং সেগুলো দূর করতে পারলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে বলে মনে করি।
খবরের কাগজ: গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকের আস্থা বাড়াতে কী ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছেন?
মোহাম্মদ নুরুল আমিন: এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। যদিও আমরা এই মুহূর্তে ব্যাংকটির অতীত নিয়ে কাজ করছি। গণ-অভ্যূত্থান পরবর্তী সারা দেশে যে পরিবর্তন শুরু হয়েছে, সেই হাওয়া এই ব্যাংকটিতেও লেগেছে। সম্প্রতি এই ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তন করা হয়েছে। আমরা নতুন একটি পর্ষদ এই ব্যাংকটিতে কাজ করছি। তবে মানুষের জীবন যেমন চলমান, তেমনি এই ব্যাংকটিকেও চলমান রাখতে কাজ করছি আমরা। অতীতে যে ভুলগুলো হয়েছে, সেগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। দায়িত্ব নিয়ে দেখেছি, ব্যাংকটিতে মানুষের আস্থা কমে গেছে। অনেকে টাকা তুলতে পারছেন না। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক এই সমস্যার সমাধানে আমাদের তারল্য সহায়তা দিয়েছে। প্রথমে গ্যারান্টির ভিত্তিতে এবং পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকও এই সহায়তা দিয়েছে। এতে ব্যাংকটির প্রতি গ্রাহকের আস্থা বাড়ছে। এখন যার চাহিদা নেই, সে আর টাকা তুলছে না। আমরাও যাদের বেশি প্রয়োজন তাদের টাকা দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। সেই সঙ্গে এটিএম, আরটিজিএসসহ বেশ কিছু সেবা যেগুলো বন্ধ ছিল বা সীমিত করা হয়েছিল, সেগুলো চালু করতে পেরেছি। এসএমই ও কৃষিঋণ চালু আছে। বড় ঋণগুলো আপাতত বন্ধ রেখেছি। নতুন আমানতও আসছে। শত শত কোটি টাকা না এলেও কোটি টাকার নতুন আমানত আসছে। সব মিলিয়ে ব্যাংকটি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। আমরাও আপ্রাণ চেষ্টা করছি।
খবরের কাগজ: সামগ্রিকভাবে ব্যাংকের প্রতি মানুষের যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে, সেটা বাড়ানোর জন্য কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া দরকার?
মোহাম্মদ নুরুল আমিন: ব্যাংকের কাউন্টার যতক্ষণ সচল থাকবে, ততক্ষণ ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থা থাকবে। ব্যাংকের লাভ-ক্ষতি, মুনাফা কমবেশি, বা খেলাপি ঋণ বাড়া-কমা খুব বেশি প্রভাব ফেলে না। মানুষ মনে করে ব্যাংক আস্থার জায়গা, বিশ্বাসের জায়গা। আমি আমার টাকা ব্যাংকে জমা রাখব, যেন যেকোনো সময় এলে টাকা তুলতে পারি। গণ-অভ্যুত্থানের পর বেশ কয়েকটি ব্যাংকে তারল্যের একটা চাপ ছিল, অনেক শাখায় গিয়ে গ্রাহক প্রয়োজনে তার নিজের টাকা তুলতে পারেননি। আর বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়া এত শক্তিশালী যে দেশের কোনো এক প্রান্তে কোনো একটি ঘটনা ঘটলে মুহূর্তে সেটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে ব্যাংকে গিয়ে গ্রাহক টাকা তুলতে না পারার ঘটনাটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এবং এতে ব্যাংকের গ্রাহকের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক বিরাজ করেছে। কেননা ব্যাংক হচ্ছে বিশ্বাসের জায়গা। টাকার নিরাপত্তার জন্য গ্রাহক ব্যাংকে টাকা রাখবেন, আবার প্রয়োজনে তাৎক্ষণিকভাবে টাকা তুলে নেবেন। এটাই হওয়ার কথা। গত কয়েক মাসে ব্যাংকের এই আস্থার জায়গায় কিছুটা দুর্বলতা দেখা গেলেও এখন পরিস্থিতি অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। টাকা তুলতে না পারার সংকট এখন আর নেই। এই অবস্থা চলতে থাকলে শিগগিরই ব্যাংক খাতে আবার মানুষের পূর্ণ আস্থা ফিরে আসবে বলেই আমার বিশ্বাস
খবরের কাগজ: ইসলামী ব্যাংকের ভবিষ্যৎ কী?
মোহাম্মদ নুরুল আমিন: ইসলাম ধর্মের অন্যতম শিক্ষা হচ্ছে শরিয়াহভিত্তিক জীবনযাপন করা। ইসলামে ব্যবসাকে হালাল করা হয়েছে। তবে সেটা অবশ্যই শরিয়াহভিত্তিক হতে হবে। সুদ শব্দটাকে হারাম করা হয়েছে। ফলে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পণ্যের কেনাবেচা করাই শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিয়ের মূল ভিত্তি। এই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েই ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ এত বড় ব্যাংক হয়েছে। ইসলামভিত্তিক দেশ এবং শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক ব্যবসার মাধ্যমেই ইসলামী ব্যাংক প্রথম সারির ব্যাংকে পরিণত হয়েছে। এরপর দেশে অনেকগুলো ইসলামি ব্যাংক হয়েছে। অনেক কনভেনশনাল ব্যাংকও ইসলামি ব্যাংকে রূপান্তরিত হয়েছে। তবে শেষ দিকে যেসব কনভেনশনাল ব্যাংক ইসলামি ব্যাংকে রূপান্তর হয়েছে, সেগুলো কি ইসলামি আদর্শের কারণে হয়েছে নাকি অন্য কোনো সুবিধার জন্য হয়েছে, সেই বিষয়ে প্রশ্ন রয়েছে। শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক হিসেবে অবশ্যই শরিয়াহ আইন মেনেই ব্যাংকিং পরিচালনা করা উচিত। আমি দায়িত্ব নিয়ে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে সেটা যথাযথভাবে পরিচালনের চেষ্টা করছি এবং প্রথম দিনই সবাইকে সেভাবে নির্দেশনা দিয়েছি। সেখানে বলেছি, শুধু নামে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক হলে চলবে না, আমাদের কাজে শরিয়াহভিত্তিক হতে হবে।
খবরের কাগজ: বলা হয়, নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। এই বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
মোহাম্মদ নুরুল আমিন: আগের সরকার এবং বর্তমান সরকারের মধ্যে যদি তুলনা করা হয়, তাহলে দেখা যাবে আগের সরকারের সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারত না। সেখানে সরকারের বড় ধরনের প্রভাব ছিল। আমি মনে করি, এখন আর বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশিত হয়ে চলে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নরকে সেই স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। তবে নিশ্চয়ই গভর্নর তার প্রয়োজন অনুযায়ী দেশের স্বার্থে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করবেন। তবে নির্দেশিত হওয়ার কোনো ঘটনা এখন নেই বলেই আমি মনে করি। এ ছাড়া আগের সময়ে যে যে নীতি পরিবর্তন করা হয়েছে, সেগুলো উদ্দেশ্যমূলক ছিল। সেখানে হয় কোনো ব্যাংককে সুবিধা দেওয়ার জন্য বা কোনো গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়ার জন্য নীতি পরিবর্তন করা হয়েছিল। এখন যা একেবারেই নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে অনেকগুলো মনিটরি টুলস আছে। তার অস্ত্রই হচ্ছে কখন কোনটা ব্যবহার করবে। আমি মনে করি, এখন সেটা সঠিকভাবেই ব্যবহার হচ্ছে।
খবরের কাগজ: সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক অনেকগুলো সংস্কার উদ্যোগ নিয়েছে। এতে কি ব্যাংক খাত ঘুরে দাঁড়াবে?
মোহাম্মদ নুরুল আমিন: অবশ্যই সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কিছু সময়োপযোগী এবং সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেওয়া, ডলারের দর অনেকটাই বাজারভিত্তিক করা, রিজার্ভের ক্ষত ঠেকানো, সঠিক মনিটরি টুলস ব্যবহার করে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করা, আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা ইত্যাদি। এসব উদ্যোগের প্রভাবও ইতোমধ্যে পড়তে শুরু করেছে। গ্রাহকের মধ্যে আবার আস্থা ফিরে আসছে। সব মিলিয়ে বলা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের সংস্কার উদ্যোগগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে দেশের ব্যাংক খাত। তবে অবশ্যই ব্যাংকগুলোতে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে করেপারেট গভর্ন্যান্স নিশ্চিত করতে হবে। ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতেও পরিবর্ত আনতে হবে। যখন মানুষ দেখবে যে সঠিক নিয়মনীতির মধ্যেই ব্যাংক চলছে, কোনো গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়ার জন্য নীতি পরিবর্তন করা হচ্ছে না। তাহলেই মানুষের আস্থা বাড়বে।
খবরের কাগজ: বলা হয়, খেলাপি ঋণ ব্যাংক খাতের অন্যতম সমস্যা। এটি নিয়ন্ত্রণে কী করা উচিত?
মোহাম্মদ নুরুল আমিন: একটা ব্যাংকের সঙ্গে একজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সম্পর্ক স্থাপিত হয় অ্যাকাউন্ট খোলার মাধ্যমে। ফলে অবশ্যই সেটা সঠিক পদ্ধতি মেনে হতে হবে। কেওয়াইসি নিশ্চিত করতে হবে। যে ব্যক্তি ব্যাংকে এলই না, তার একটা এনআইডি আর ছবি দিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তা অ্যাকাউন্ট খুলে দিলে, অনিয়মের বীজটা সেখানেই বপন করা হয়। ফলে অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে একটা ঋণ অনুমোদনের যে সঠিক নীতিমালা রয়েছে, ব্যাংকিং খাতের শুরুতে সেটা যেভাবে হয়েছে, সেটাই সঠিকভাবে পরিপালন করতে হবে। সাম্প্রতিক অনেক ব্যাংকে এসব নীতিমালা পরিপালন না করেই বড় বড় ঋণ অনুমোদন করা হয়েছে। ফলে সেসব ঋণ আর আদায় হচ্ছে না। নিয়ম মেনে ঋণ অনুমোদন হলে খেলাপি ঋণ বাড়ার কোনো সুযোগ নেই। হলেও এক-দুই শতাংশ হতে পারে, সেটা পৃথিবীর সব দেশেই হয়। আমাদের দেশে একদিকে যেমন খেলাপি ঋণ বাড়ানোর কলাকৌশল রয়েছে, তেমনি খেলাপি হওয়ার পর তাদের ধরারও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। নেই কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।
খবরের কাগজ: সাম্প্রতিক সময়ে সরকার ব্যাংক খাত থেকে অনেক বেশি ঋণ নিচ্ছে। এতে বেসরকারি খাতে কোনো প্রভাব পড়বে কি না?
মোহাম্মদ নুরুল আমিন: সরকারের ব্যয় মেটানোর জন্য টাকা দরকার। যেহেতু রাজস্ব আয় অনেক কম হচ্ছে, ফলে সরকার বাধ্য হয়ে ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিচ্ছে। সুদও দিচ্ছে অনেক বেশি হারে। বর্তমানে ১২ শতাংশের ওপরে সুদ দিচ্ছে ট্রেজারি বিল ও বন্ডে। এতে ব্যাংকগুলোও সরকারকে চাহিদা অনুযায়ী ঋণ দিচ্ছে এবং শতভাগ নিশ্চিত মুনাফা পাচ্ছে। ফলে ব্যাংক খাত কিছুটা লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বেসরকারি খাত। কেননা সরকার বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে চাহিদা অনুযায়ী ঋণ পাবে না। এর প্রমাণ পাওয়া গেছে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির চিত্রে। সেখানে সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে গত অক্টোবরে, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অনেক কম।