ঢাকা ২ ফাল্গুন ১৪৩১, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
English
শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২ ফাল্গুন ১৪৩১

সংস্কার বাস্তবায়ন হলে ঘুরে দাঁড়াবে ব্যাংক খাত

প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৩৯ এএম
আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:৩৮ এএম
সংস্কার বাস্তবায়ন হলে ঘুরে দাঁড়াবে ব্যাংক খাত
মোহাম্মদ নুরুল আমিন

৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্যাংকিং খাতে কাজ করেছেন অভিজ্ঞ ব্যাংকার মোহাম্মদ নুরুল আমিন। তিনি প্রায় ১৫ বছর ধরে এনসিসি ব্যাংক এবং মেঘনা ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি একাধারে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) এবং বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করেন। সম্প্রতি গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। ব্যাংক খাতের নানা সংকট, উত্তরণের উপায়সহ বিভিন্ন বিষয়ে খবরের কাগজের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মৃত্তিকা সাহা

খবরের কাগজ: ব্যাংকিং খাতের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে কিছু বলুন? 

মোহাম্মদ নুরুল আমিন: ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে একটা ক্রান্তিকাল পার করছে। সামগ্রিকভাবে দেশের যে একটা পরিবর্তন এসেছে, তার প্রভাব ব্যাংকিং খাতেও পড়েছে। এখানেও বেশ বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। সম্প্রতি খেলাপি ঋণের যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে, তা আপাতদৃষ্টিতে অনেক বেশি হলেও এতদিন তা লুক্কায়িত ছিল। অর্থাৎ এখন প্রকৃত চিত্র প্রকাশ করা হচ্ছে। নতুন গভর্নর দায়িত্ব নিয়ে বেশ কয়েকটি ব্যাংকে পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠন করে দিয়েছেন। সর্বশেষ কয়েকটি ব্যাংকে দেশি-বিদেশি অডিট ফার্ম নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই অডিট কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের এমডিদের তিন মাসের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। সব মিলিয়ে ব্যাংকিং খাতও একটা ক্রান্তিকাল পার করছে। 

খবরের কাগজ: আগের সময়ের ব্যাংকিং খাতের সঙ্গে বর্তমান সময়ে তুলনামূলক চিত্র বিশ্লেষণ করুন।

মোহাম্মদ নুরুল আমিন: আগের চেয়ে বর্তমানে ব্যাংকের সংখ্যা, গ্রাহক, আমানত ও ঋণ সবই বেড়েছে। কিন্তু ব্যাংক পরিচালনার গুণগত মান বাড়েনি। সুশাসন নিশ্চিত হয়নি। একটি ব্যাংক যেসব নীতিমালা মেনে পরিচালনা করা দরকার, সেগুলো কার্যকর করা হয়নি। দেশে অনেক আইন আছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেক রেগুলেশন আছে, কিন্তু সেগুলো সঠিকভাবে পরিচালন করতে যে কঠোর তদারকি করা দরকার ছিল সেটা হয়নি। বরং ব্যবসায়ী গোষ্ঠী বা ব্যাংক-মালিকদের চাপে অনেক নিয়ম পরিবর্তন করা হয়েছে, যা ১০ থেকে ১৫ বছর আগে এমনভাবে করা হতো না। গত ১৫ বছরে ব্যাংক পরিচালনার রীতিনীতিতে বড় পরিবর্তন এসেছে। এতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকও সঠিক ভূমিকা পালন করতে পারছে না। তেমনি ব্যাংকগুলোতেও পরিচালনা পর্ষদ এবং ম্যানেজমেন্টের কাজের মধ্যে পার্থক্য তৈরি করা যাচ্ছে না। এখন পর্ষদ যেভাবে নির্দেশ দেয়, ব্যাংকের ম্যানেজমেন্ট সেই অনুযায়ী বাস্তবায়ন করে। এতে যাচাই-বাছাই না করেই কাগুজে প্রতিষ্ঠানকে বড় অঙ্কের ঋণ বিতরণ করে। এতে খেলাপি ঋণ হু হু করে বাড়ছে। ২০০৯ সালে যেখানে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা, এখন তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা। 

খবরের কাগজ: ডলারের বাজারে হঠাৎ অস্থিরতার কারণ কী? 

মোহাম্মদ নুরুল আমিন: নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দীর্ঘ চার মাস ডলারের দর স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু হঠাৎ সেখানে চাহিদা ও জোগানে অসংগতি রয়েছে। এ ছাড়া আমরা আমদানিনির্ভর দেশ হওয়ায় পণ্য আমদানির পাশাপাশি মূল্যস্ফীতিও আমদানি করি। এক বছর আগে ডলারের দর বাজারে না ছেড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ধরে বেখেছিল। আমদানি, রপ্তানি, রেমিট্যান্স প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভিন্ন ভিন্ন ডলারের দর ছিল। এতে অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে। এখন নতুন গভর্নর আসার পর সর্বক্ষেত্রে ডলারের একটাই দর করতে পেরেছেন। এখন অনেকটাই বাজারেও ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে আইএমএফেরও চাপ আছে। একই সময়ে আমাদের রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এতে আমাদের রিজার্ভও শক্তিশালী অবস্থানে আছে। ডলারের বাজারও অনেকটাই স্থিতিশীল রয়েছে। সরবরাহের দিক যদি আরও উন্নত হয়, সেই সঙ্গে আইএমএফসহ বিভিন্ন সংস্থার অর্থায়নের যে কথা রয়েছে, সেটা যদি আসে তাহলে ডলার সরবরাহ আরও বাড়বে, বাড়বে রিজার্ভও। 

খবরের কাগজ: মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার বাড়ানোসহ বেশ কিছু উদ্যোাগ নিয়েছে। তার পরও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। এর কারণ কী?

মোহাম্মদ নুরুল আমিন: রিজার্ভ পরিস্থিতি ভালো থাকায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে এলসি খুলতে কিছু ছাড় দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই সঙ্গে ভ্যাট ও শুল্কেও কিছু পরিবর্তন আনছে সরকার। কিন্তু সরবরাহের দিক ঠিক রেখে আমাদের মতো দেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ কঠিন। এ জন্য সব সময়ই যে নীতি দিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ হবে তা নয়, মানুষের আচার-আচরণ, লোভ-লালসার কাজ এগুলোও গুরুত্বপূর্ণ। বড় ৮-১০টি কোম্পানি নিত্যপণ্য আমদানির কাজ করে। এর বাইরে আমাদের দেশে উৎপাদন হয় এমন পণ্যের দাম হঠাৎ করেই বেড়ে যায়। ওই জায়গার কারসাজিগুলো চিহ্নিত করা এবং সেগুলো দূর করতে পারলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে বলে মনে করি। 

খবরের কাগজ: গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকের আস্থা বাড়াতে কী ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছেন? 

মোহাম্মদ নুরুল আমিন: এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। যদিও আমরা এই মুহূর্তে ব্যাংকটির অতীত নিয়ে কাজ করছি। গণ-অভ্যূত্থান পরবর্তী সারা দেশে যে পরিবর্তন শুরু হয়েছে, সেই হাওয়া এই ব্যাংকটিতেও লেগেছে। সম্প্রতি এই ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তন করা হয়েছে। আমরা নতুন একটি পর্ষদ এই ব্যাংকটিতে কাজ করছি। তবে মানুষের জীবন যেমন চলমান, তেমনি এই ব্যাংকটিকেও চলমান রাখতে কাজ করছি আমরা। অতীতে যে ভুলগুলো হয়েছে, সেগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। দায়িত্ব নিয়ে দেখেছি, ব্যাংকটিতে মানুষের আস্থা কমে গেছে। অনেকে টাকা তুলতে পারছেন না। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক এই সমস্যার সমাধানে আমাদের তারল্য সহায়তা দিয়েছে। প্রথমে গ্যারান্টির ভিত্তিতে এবং পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকও এই সহায়তা দিয়েছে। এতে ব্যাংকটির প্রতি গ্রাহকের আস্থা বাড়ছে। এখন যার চাহিদা নেই, সে আর টাকা তুলছে না। আমরাও যাদের বেশি প্রয়োজন তাদের টাকা দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। সেই সঙ্গে এটিএম, আরটিজিএসসহ বেশ কিছু সেবা যেগুলো বন্ধ ছিল বা সীমিত করা হয়েছিল, সেগুলো চালু করতে পেরেছি। এসএমই ও কৃষিঋণ চালু আছে। বড় ঋণগুলো আপাতত বন্ধ রেখেছি। নতুন আমানতও আসছে। শত শত কোটি টাকা না এলেও কোটি টাকার নতুন আমানত আসছে। সব মিলিয়ে ব্যাংকটি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। আমরাও আপ্রাণ চেষ্টা করছি। 

খবরের কাগজ: সামগ্রিকভাবে ব্যাংকের প্রতি মানুষের যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে, সেটা বাড়ানোর জন্য কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া দরকার?

মোহাম্মদ নুরুল আমিন: ব্যাংকের কাউন্টার যতক্ষণ সচল থাকবে, ততক্ষণ ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থা থাকবে। ব্যাংকের লাভ-ক্ষতি, মুনাফা কমবেশি, বা খেলাপি ঋণ বাড়া-কমা খুব বেশি প্রভাব ফেলে না। মানুষ মনে করে ব্যাংক আস্থার জায়গা, বিশ্বাসের জায়গা। আমি আমার টাকা ব্যাংকে জমা রাখব, যেন যেকোনো সময় এলে টাকা তুলতে পারি। গণ-অভ্যুত্থানের পর বেশ কয়েকটি ব্যাংকে তারল্যের একটা চাপ ছিল, অনেক শাখায় গিয়ে গ্রাহক প্রয়োজনে তার নিজের টাকা তুলতে পারেননি। আর বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়া এত শক্তিশালী যে দেশের কোনো এক প্রান্তে কোনো একটি ঘটনা ঘটলে মুহূর্তে সেটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে ব্যাংকে গিয়ে গ্রাহক টাকা তুলতে না পারার ঘটনাটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এবং এতে ব্যাংকের গ্রাহকের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক বিরাজ করেছে। কেননা ব্যাংক হচ্ছে বিশ্বাসের জায়গা। টাকার নিরাপত্তার জন্য গ্রাহক ব্যাংকে টাকা রাখবেন, আবার প্রয়োজনে তাৎক্ষণিকভাবে টাকা তুলে নেবেন। এটাই হওয়ার কথা। গত কয়েক মাসে ব্যাংকের এই আস্থার জায়গায় কিছুটা দুর্বলতা দেখা গেলেও এখন পরিস্থিতি অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। টাকা তুলতে না পারার সংকট এখন আর নেই। এই অবস্থা চলতে থাকলে শিগগিরই ব্যাংক খাতে আবার মানুষের পূর্ণ আস্থা ফিরে আসবে বলেই আমার বিশ্বাস

খবরের কাগজ: ইসলামী ব্যাংকের ভবিষ্যৎ কী?

মোহাম্মদ নুরুল আমিন: ইসলাম ধর্মের অন্যতম শিক্ষা হচ্ছে শরিয়াহভিত্তিক জীবনযাপন করা। ইসলামে ব্যবসাকে হালাল করা হয়েছে। তবে সেটা অবশ্যই শরিয়াহভিত্তিক হতে হবে। সুদ শব্দটাকে হারাম করা হয়েছে। ফলে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পণ্যের কেনাবেচা করাই শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিয়ের মূল ভিত্তি। এই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েই ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ এত বড় ব্যাংক হয়েছে। ইসলামভিত্তিক দেশ এবং শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক ব্যবসার মাধ্যমেই ইসলামী ব্যাংক প্রথম সারির ব্যাংকে পরিণত হয়েছে। এরপর দেশে অনেকগুলো ইসলামি ব্যাংক হয়েছে। অনেক কনভেনশনাল ব্যাংকও ইসলামি ব্যাংকে রূপান্তরিত হয়েছে। তবে শেষ দিকে যেসব কনভেনশনাল ব্যাংক ইসলামি ব্যাংকে রূপান্তর হয়েছে, সেগুলো কি ইসলামি আদর্শের কারণে হয়েছে নাকি অন্য কোনো সুবিধার জন্য হয়েছে, সেই বিষয়ে প্রশ্ন রয়েছে। শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক হিসেবে অবশ্যই শরিয়াহ আইন মেনেই ব্যাংকিং পরিচালনা করা উচিত। আমি দায়িত্ব নিয়ে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে সেটা যথাযথভাবে পরিচালনের চেষ্টা করছি এবং প্রথম দিনই সবাইকে সেভাবে নির্দেশনা দিয়েছি। সেখানে বলেছি, শুধু নামে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক হলে চলবে না, আমাদের কাজে শরিয়াহভিত্তিক হতে হবে। 

খবরের কাগজ: বলা হয়, নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। এই বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী? 

মোহাম্মদ নুরুল আমিন: আগের সরকার এবং বর্তমান সরকারের মধ্যে যদি তুলনা করা হয়, তাহলে দেখা যাবে আগের সরকারের সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারত না। সেখানে সরকারের বড় ধরনের প্রভাব ছিল। আমি মনে করি, এখন আর বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশিত হয়ে চলে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নরকে সেই স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। তবে নিশ্চয়ই গভর্নর তার প্রয়োজন অনুযায়ী দেশের স্বার্থে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করবেন। তবে নির্দেশিত হওয়ার কোনো ঘটনা এখন নেই বলেই আমি মনে করি। এ ছাড়া আগের সময়ে যে যে নীতি পরিবর্তন করা হয়েছে, সেগুলো উদ্দেশ্যমূলক ছিল। সেখানে হয় কোনো ব্যাংককে সুবিধা দেওয়ার জন্য বা কোনো গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়ার জন্য নীতি পরিবর্তন করা হয়েছিল। এখন যা একেবারেই নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে অনেকগুলো মনিটরি টুলস আছে। তার অস্ত্রই হচ্ছে কখন কোনটা ব্যবহার করবে। আমি মনে করি, এখন সেটা সঠিকভাবেই ব্যবহার হচ্ছে। 

খবরের কাগজ: সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক অনেকগুলো সংস্কার উদ্যোগ নিয়েছে। এতে কি ব্যাংক খাত ঘুরে দাঁড়াবে? 

মোহাম্মদ নুরুল আমিন: অবশ্যই সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কিছু সময়োপযোগী এবং সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেওয়া, ডলারের দর অনেকটাই বাজারভিত্তিক করা, রিজার্ভের ক্ষত ঠেকানো, সঠিক মনিটরি টুলস ব্যবহার করে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করা, আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা ইত্যাদি। এসব উদ্যোগের প্রভাবও ইতোমধ্যে পড়তে শুরু করেছে। গ্রাহকের মধ্যে আবার আস্থা ফিরে আসছে। সব মিলিয়ে বলা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের সংস্কার উদ্যোগগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে দেশের ব্যাংক খাত। তবে অবশ্যই ব্যাংকগুলোতে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে করেপারেট গভর্ন্যান্স নিশ্চিত করতে হবে। ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতেও পরিবর্ত আনতে হবে। যখন মানুষ দেখবে যে সঠিক নিয়মনীতির মধ্যেই ব্যাংক চলছে, কোনো গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়ার জন্য নীতি পরিবর্তন করা হচ্ছে না। তাহলেই মানুষের আস্থা বাড়বে। 

খবরের কাগজ: বলা হয়, খেলাপি ঋণ ব্যাংক খাতের অন্যতম সমস্যা। এটি নিয়ন্ত্রণে কী করা উচিত?

মোহাম্মদ নুরুল আমিন: একটা ব্যাংকের সঙ্গে একজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সম্পর্ক স্থাপিত হয় অ্যাকাউন্ট খোলার মাধ্যমে। ফলে অবশ্যই সেটা সঠিক পদ্ধতি মেনে হতে হবে। কেওয়াইসি নিশ্চিত করতে হবে। যে ব্যক্তি ব্যাংকে এলই না, তার একটা এনআইডি আর ছবি দিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তা অ্যাকাউন্ট খুলে দিলে, অনিয়মের বীজটা সেখানেই বপন করা হয়। ফলে অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে একটা ঋণ অনুমোদনের যে সঠিক নীতিমালা রয়েছে, ব্যাংকিং খাতের শুরুতে সেটা যেভাবে হয়েছে, সেটাই সঠিকভাবে পরিপালন করতে হবে। সাম্প্রতিক অনেক ব্যাংকে এসব নীতিমালা পরিপালন না করেই বড় বড় ঋণ অনুমোদন করা হয়েছে। ফলে সেসব ঋণ আর আদায় হচ্ছে না। নিয়ম মেনে ঋণ অনুমোদন হলে খেলাপি ঋণ বাড়ার কোনো সুযোগ নেই। হলেও এক-দুই শতাংশ হতে পারে, সেটা পৃথিবীর সব দেশেই হয়। আমাদের দেশে একদিকে যেমন খেলাপি ঋণ বাড়ানোর কলাকৌশল রয়েছে, তেমনি খেলাপি হওয়ার পর তাদের ধরারও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। নেই কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। 

খবরের কাগজ: সাম্প্রতিক সময়ে সরকার ব্যাংক খাত থেকে অনেক বেশি ঋণ নিচ্ছে। এতে বেসরকারি খাতে কোনো প্রভাব পড়বে কি না?

মোহাম্মদ নুরুল আমিন: সরকারের ব্যয় মেটানোর জন্য টাকা দরকার। যেহেতু রাজস্ব আয় অনেক কম হচ্ছে, ফলে সরকার বাধ্য হয়ে ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিচ্ছে। সুদও দিচ্ছে অনেক বেশি হারে। বর্তমানে ১২ শতাংশের ওপরে সুদ দিচ্ছে ট্রেজারি বিল ও বন্ডে। এতে ব্যাংকগুলোও সরকারকে চাহিদা অনুযায়ী ঋণ দিচ্ছে এবং শতভাগ নিশ্চিত মুনাফা পাচ্ছে। ফলে ব্যাংক খাত কিছুটা লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বেসরকারি খাত। কেননা সরকার বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে চাহিদা অনুযায়ী ঋণ পাবে না। এর প্রমাণ পাওয়া গেছে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির চিত্রে। সেখানে সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে গত অক্টোবরে, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অনেক কম।

দোকানে ভোজ্যতেল নেই, বেড়েছে মুরগি-সবজির দাম

প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ পিএম
দোকানে ভোজ্যতেল নেই, বেড়েছে মুরগি-সবজির দাম
ছবি: সংগৃহীত

‘২০০ কার্টনের দাম দিলেও দুই দিন পর তেল পাওয়া গেছে ৩০ কার্টন। সঙ্গে পোলাওয়ের চাল, সরিষার তেল ধরিয়ে দেয়। পাঁচ লিটারের বোতল পাওয়া গেলেও এক ও দুই লিটারের তেল পাই না। দাম বাড়িয়েও কোম্পানি সয়াবিন তেল সরবরাহ করে না। এ জন্য আমরাও ভোক্তাদের দিতে পারি না। বিক্রি কমে গেছে। খুবই প্যারায় (যন্ত্রণা) আছি।’ এভাবেই রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ইউসুফ জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী ইউসুফ আলী তেলের ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। শুধু এই ব্যবসায়ী নন, অন্য বাজারের খুচরা বিক্রেতাদেরও একই ক্ষোভ দেখা গেছে। 

বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) আগের মতো চড়া দামে চাল বিক্রি হতে দেখা গেছে। মুরগির দামও কমেনি। মাঘের শীত বিদায় নেওয়ায় সবজির দাম একটু বেড়েছে। বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

দুই মাস আগেও বাজার থেকে সয়াবিন তেল উধাও হয়ে যায়। এরপর ৯ ডিসেম্বর সরকার লিটারে দাম ৮ টাকা বাড়িয়ে বোতলজাত তেলের দর ১৭৫ টাকা নির্ধারণ করে। ওই দিন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন বলেছিলেন, ‘তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করি বাজারে আর তেলের ঘাটতি হবে না।’ কিন্তু দুই মাস চলে গেলেও সংকট কাটেনি। 

বিভিন্ন ভোজ্যতেল কোম্পানি বাজারে তেল সরবরাহ কমিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে খুচরা বিক্রেতারা সহজে তেল পাচ্ছেন না। রমজান মাস ঘনিয়ে আসায় সরবরাহ কমিয়ে মিলমালিকরা আবারও তেলের দাম বাড়ানোর ফন্দি আঁটছেন। কোনো কোনো খুচরা বিক্রেতা তেল পেলেও কোম্পানির প্রতিনিধিরা সঙ্গে ডাল, চালও ধরিয়ে দিচ্ছেন।

এ ব্যাপারে মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারের অনন্ত স্টোরের স্বত্বাধিকারী নুরুল হুদা খবরের কাগজকে বলেন, ‘দোকানে তেল নেই। রাখি না। কারণ তেলের সঙ্গে পোলাওয়ের চাল, সরিষার তেল, আটা ধরিয়ে দিচ্ছে। এসব তেমন চলে না। এভাবে ব্যবসা করা যায় না।’ 

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘কোম্পানি থেকে শর্ত দিয়ে পণ্য বিক্রি করবে- এ ব্যবস্থা কোন আইনে আছে? সরকারের উচিত এ বিষয়ে নজর দেওয়া।’ এই বাজারের মনির স্টোরের আনোয়ার হোসেনেরও একই বক্তব্য। এভাবে ব্যবসা হয় না। সামনে রমজান। এ জন্য কোম্পানি লুকোচুরি খেলা শুরু করেছে। কয়দিন পরপর দুই-এক কার্টন দিলেও তারপর আর খবর নেই। 

এদিকে কারওয়ান বাজারেও দেখা গেছে একই চিত্র। এই বাজারের কিচেন মার্কেটের নিচতলা ও দ্বিতীয় তলায় অসংখ্য মুদির দোকান। ইয়াছিন স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. ইয়াসিন আলী বলেন, ‘তেল আছে। আবার নেই। এক কার্টন (২০ লিটার) এক দিন পাওয়া গেলেও সপ্তাহজুড়ে কোনো খবর থাকে না। তীর, ফ্রেশ, পুষ্টি কোনো তেলই নেই। টাকা দিয়েও পাই না। সামনে রমজান। তাই দাম বাড়ানোর খেলা চলছে।’

একই বাজারের ফরিদগঞ্জ স্টোরের মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সিটি গ্রুপের তীর ব্র্যান্ডের তেল নেই। এডিবল অয়েল কোম্পানির রূপচাঁদা ও টিকে গ্রুপের পুষ্টির ডিলাররা তেলের সঙ্গে চাল, ডাল ও সুজি ধরিয়ে দিচ্ছেন।’

একই বাজারের জব্বার স্টোরের বিক্রয়কর্মী গনি মিয়া, আল আমিন স্টোরের অন্তর বিশ্বাসসহ অসংখ্য খুচরা বিক্রেতা অভিযোগ করে জানান, দুই মাসও হয়নি দাম বাড়ানো হয়েছে। তার পরও কোম্পানির ডিলার ও পাইকারি বিক্রেতারা ঠিকমতো তেল দেন না। পাঁচ লিটারের গায়ের যে মূল্য (৮৫০ টাকা), সেই দামেই কিনতে হচ্ছে। কেউ কারও কথা শোনে না। সরকারও দেখে না। সাংবাদিকরা লিখলেও কোনো কাজ হয় না।’ 

রাজধানীর হাতিরপুল বাজারের মাসুদ স্টোরের মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর আগে বিভিন্ন কোম্পানি সরবরাহ কমিয়ে দেয়। কিছুদিন আগেই দাম বেড়েছে। সামনে রমজান। আবার সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ 

নিউ মার্কেটসহ অন্য বাজারের খুচরা বিক্রেতাদেরও একই অভিযোগ, এভাবে ব্যবসা করা যায় না। সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারি করা দরকার। 

খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ব্র্যান্ডের ডিলার মেসার্স মিনু ট্রেডার্সের বিপ্লব কুমার বলেন, ‘আমি ফ্রেশসহ অন্য কোম্পানিরও সয়াবিন তেল বিক্রি করি। চাহিদা বেশি। কিন্তু আগের মতো তেল পাওয়া যায় না। এ জন্য খুচরা বিক্রেতাদের চাহিদামতো তেল দিতে পারছি না।’ 

এ ব্যাপারে ভোজ্যতেল উৎপাদনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও টিকে গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা হায়দার সম্প্রতি খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের কোম্পানি থেকে তেল সরবরাহের কোনো ঘাটতি নেই। আমরা শর্ত দিয়ে ভোক্তাদের কাছে কোনো তেল বিক্রি করি না। স্বাভাবিক নিয়মেই ব্যবসা করা হচ্ছে।’ 

সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে

মাঘ মাসের শেষে সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে বলে জানান সবজি বিক্রেতারা। তারা বলেন, বেগুনের কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, শিম ২০ থেকে ৫০, কাঁচা মরিচ ৮০ থেকে ১০০, টমেটো ৩০ থেকে ৬০, পেঁপে ৪০, শসা ও গাজর ৪০ থেকে ৫০, ফুলকপির পিস ২০ থেকে ৩০, বাঁধাকপি ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি, লাউয়ের পিস ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গতকাল বিভিন্ন বাজারে আলু ২০ টাকা কেজি, পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৫০, দেশি আদা ১২০ থেকে ১৬০, আমদানি করা আদা ২২০, দেশি রসুন ১৬০, আমদানি করা আদা ২৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। 

সপ্তাহের ব্যবধানে আগের মতোই চড়া দামে চাল বিক্রি হয়েছে। খুচরা বিক্রেতারা বলেন, বর্তমানে মিনিকেটের কেজি ৭২-৮৫ টাকা, আটাশ চাল ৬২-৬৫ টাকা ও মোটা চাল ৫৪-৫৬ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। মুদি দোকানিরা বলেন, রমজান ঘনিয়ে এলেও বাড়েনি ছোলা ও চিনির দাম। ছোলার দাম কমে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা কেজি, মসুর ডাল ১১০ থেকে ১৩৫, মুগ ডাল ১৮০, চিনি ১২০ থেকে ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

বাড়তি দামে মুরগি বিক্রি

মাংস বিক্রেতারা জানান, আগের মতোই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে মুরগি। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৯০ থেকে ২০০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩২০ থেকে ৩৩০ এবং দেশি মুরগি ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংসও আগের মতো ৭০০-৭৫০ টাকা ও খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ডিমও গত সপ্তাহের মতো ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা ডজন বিক্রি করতে দেখা গেছে।

জুলাই-জানুয়ারি এডিপি ৫ বছরে সর্বনিম্ন অগ্রগতি

প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪৯ পিএম
৫ বছরে সর্বনিম্ন অগ্রগতি
ছবি: সংগৃহীত

চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) জুলাই-জানুয়ারি মাসে এক শতাংশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দুই শতাংশের নিচে রয়েছে এনবিআর। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগসহ ৯টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগও ১০ শতাংশের নিচে। এভাবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের উন্নয়ন কাজে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। সাত মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) মাত্র ২১ দশমিক ৫২ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। এই অগ্রগতি পাঁচ বছরে সর্বনিম্ন।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) জানুয়ারি মাস পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়নের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই চিত্র পাওয়া গেছে। 

বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) এডিপি বাস্তবায়নের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে আইএমইডি। 

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে- গত সাত মাসে ৫৬টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ খরচ করতে পেরেছে ৫৯ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা বা ২১ দশমিক ৫২ শতাংশ। গতবার একই সময়ে খরচের পরিমাণ ছিল ৭৪ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা বা ২৭ দশমিক ১১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে এডিপিতে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা কম খরচ হয়েছে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম টাকা খরচ হয়েছে এই সময়ে।

সংশ্লিস্টরা বলছেন, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সরকার পরিবর্তনের পর ঠিকাদার ও প্রকল্প পরিচালকদের খুঁজে না পাওয়ার কিছুর প্রভাব পড়েছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে। চলতি বছরে বাকি আছে মাত্র ৫ মাস। এই সময়ে খরচ করতে হবে ২ লাখ ১৮ হাজার ৪১২ কোটি টাকা। কারণ চলতি অর্থবছরে মোট উন্নয়ন বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা। ১ হাজার ৩৫৩টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে এই অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়।

আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, কোভিডের বছরেও জুলাই-জানুয়ারিতে (২০২০-২১ অর্থবছর) ৬১ হাজার ৪৮ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল বা বাস্তবায়ন হয়েছিলো ২৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থছরে ৭১ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা  খরচ বা বাস্তবায়ন হয়েছিল ৩০ দশমিক ২১ শতাংশ। এছাড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৭২ হাজার ৯০ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল বা বাস্তবায়ন হয়েছিলো ২৮ দশমিক ১৬ শতাংশ।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ৪ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়ে সর্বোচ্চ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় বা ৭৮ শতাংশ। তারা খরচ করেছে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। তবে সর্বোচ্চ বরাদ্দ প্রায় ৩৮ হাজার কোটি টাকার বিপরীতে স্থানীয় সরকার বিভাগ খরচ করেছে ১১ হাজার ২৫১ কোটি টাকা বা ২৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে এডিপি।

জাহাঙ্গীর আলম/এমএ/

ঢাকায় আন্তর্জাতিক পোলট্রি মেলা শুরু ২০ ফেব্রুয়ারি

প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:০১ পিএম
ঢাকায় আন্তর্জাতিক পোলট্রি মেলা শুরু ২০ ফেব্রুয়ারি
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘বিল্ডিং এ রেজিলিয়েন্ট পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রি ইন বাংলাদেশ; ইভোলুশন, চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজি’ শীর্ষক সেমিনার

আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তিন দিনের ১৩তম আন্তর্জাতিক পোলট্রি শো। বিশ্বের ১৭টি দেশের দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠান সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও পণ্যের পসরা নিয়ে এতে হাজির হবে। 

বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘বিল্ডিং এ রেজিলিয়েন্ট পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রি ইন বাংলাদেশ; ইভোলুশন, চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজি’ শীর্ষক সেমিনারে এ তথ্য জানায় ওয়ার্ল্ডস পোলট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখা (ওয়াপসা-বিবি) এবং বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি)। ফিশারিজ অ্যান্ড লাইভস্টক জার্নালিস্ট ফোরাম (এফএলজেএফ) এই সেমিনারের আয়োজন করে।

সেমিনারে জানানো হয়, আগামী ১৮ থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত হবে আন্তর্জাতিক পোলট্রি সেমিনার। আর ২০ থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি পূর্বাচলে বাংলাদেশ চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে ১৩তম আন্তর্জাতিক পোলট্রি শো। পোলট্রি মেলা সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। কুড়িল বিশ্বরোডের ৩০০ ফিট থেকে সারা দিন বিনামূল্যে শাটল বাসের ব্যবস্থা রেখেছে মেলার আয়োজক কর্তৃপক্ষ। 

ওয়াপসা-বাংলাদেশ শাখার সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, ‘আসন্ন রমজানে ডিম ও মুরগির মাংসের দাম সহনশীল থাকবে। আমরা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্রের মাধ্যমে পুরো রমজান মাস সুলভ মূল্যে ডিম ও মুরগি বিক্রি করব।’

ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (বিএবি) সভাপতি মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে খামারিদের লোকসান হলেও তা জোর গলায় বলার মতো পরিস্থিতি ছিল না। সে সময় যারাই পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্বে সামনে এসেছিলেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এখনো অনেক মামলা নিষ্পত্তি হয়নি।’

ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘খামারি ও উদ্যোক্তাদের ঝরে পড়া ঠেকাতে হবে। পোলট্রিশিল্পকে টেকসই ও মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে হবে।’ 

এফএলজেএফ সভাপতি মুন্না রায়হানের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন ডিবিসি নিউজের সম্পাদক লোটন একরাম, আরটিভির হেড অব নিউজ ইলিয়াস হোসেন ও এফএলজেএফের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমান।

সিংগাইরে আড়াই কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা

প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:১৪ এএম
সিংগাইরে আড়াই কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা
সিংগাইর উপজেলার ফোর্ডনগর দক্ষিণপাড়া গ্রামে ফুলের বাগান পরিচর্যা করছেন এক চাষি। খবরের কাগজ

পহেলা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে মানিকগঞ্জের সিংগাইরে ফুলচাষিরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। উপজেলার জয়মন্টপ, ধল্লা, শায়েস্তা ও তালেবপুর ইউনিয়নে ফুল চাষ হচ্ছে। চাষিরা ভালো ফলনের আশা করছেন। এমনিতে ফুলের বাজার বেশ ভালো। তবে বিদেশি ফুলের আমদানির কারণে তারা উদ্বিগ্ন। চলতি মাসে ফুলচাষীরা প্রায় আড়াই কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা করছেন।

সিংগাইর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষে এগিয়ে যাচ্ছে সিংগাইর উপজেলা। সাভারের বিরুলিয়া কিংবা যশোরের গদখালীর মতো এখানে বড় পরিসরে গোলাপ, গ্লাডিওলাস, চন্দ্রমল্লিকা, জিপসি ও স্টারের মতো জনপ্রিয় ফুল চাষ হচ্ছে। বর্তমানে উপজেলার জয়মন্টপ, ধল্লা, শায়েস্তা ও তালেবপুর ইউনিয়নের আট থেকে ১০ গ্রামে প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফুলের চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে ১৬ হেক্টর জমিতে গোলাপ ফুলের চাষ হয়েছে। বাকি চার হেক্টর জমিতে গ্লাডিওলাস, চন্দ্রমল্লিকা, জিপসি ও স্টারের মতো ফুল রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পহেলা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ফুল চাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ কেউ ফুল সংগ্রহ করে তা দেশের বিভিন্ন বাজারে পাঠানোয় ব্যস্ত আছেন।

ধল্লা ইউনিয়নের ফোর্ডনগর দক্ষিণপাড়া গ্রামের বাবুল হোসেন সিংগাইরের অন্যতম সফল ফুলচাষি। ১৮ বছর আগে মাত্র দুই বিঘা জমিতে ফুল চাষ শুরু করেছিলেন তিনি। এখন তার ফুলের খেতের পরিমাণ ২৫ বিঘা। বাবুল বলেন, ‘এই মৌসুমে ফুলের চাহিদা বেশি থাকে। তাই আমরা আরও বেশি শ্রম দিয়ে ফুলের যত্ন নিচ্ছি। এবার ফলন ভালো হয়েছে। বাজারও ভালো। আশা করছি, লাভবান হব।’

বাবুলের মতো আরও ২০-২৫ জন কৃষক বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ করছেন। জয়মন্টপ, ধল্লা, শায়েস্তা ও তালেবপুর ইউনিয়নে ফুল চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
জয়মন্টপের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি সাত বছর ধরে তিন বিঘা জায়গায় চায়না গোলাপ ফুল চাষ করছি। এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় ফুলের ফলন ভালো হয়েছে। এখন প্রতি পিস গোলাপ বিক্রি করছি ৩০ টাকায়, আর ক্যাপ পরানো গোলাপ বিক্রি করছি ৪৫-৫০ টাকায়।’

ফোর্ডনগর দক্ষিণপাড়া গ্রামের তরুণ চাষি সবুজুর রহমান বলেন, ‘আমি ৫২ শতাংশ জায়গায় সাদা ও হলুদ জাতের চন্দ্রমল্লিকা ফুলের আবাদ করেছি। এসব গাছের বীজ ভারত থেকে আনতে হয়। সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। বাজার ঠিক থাকলে খরচ বাদ দিয়ে দেড় লাখ টাকা লাভ হবে।’

একই গ্রামের ফুলচাষি তুহিন বলেন, ‘দেড় বিঘা জায়গায় জিপসি ফুলের আবাদ করেছি। ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এই খেত থেকে ৩০-৪০ হাজার টাকা লাভ হবে। আমাদের ফুল ঢাকার বিভিন্ন মার্কেটে বিক্রি হয়।’

তবে চাষিদের একটি উদ্বেগ রয়েছে। বিদেশ থেকে আমদানি করা ফুলের কারণে স্থানীয় বাজারে প্রতিযোগিতা বেড়ে যায়। জয়মন্টপের কানাইনগর গ্রামের আনোয়ার বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি মাসের এই তিনটি দিবসে সবচেয়ে বেশি ফুল কেনাবেচা হয়। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, ভারত ও চায়না থেকে যেন কোনো ফুল আমদানি না হয়। যদি আমদানি না হয়, তাহলে আমরা লাভবান হব।’

সিংগাইর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল বাশার চৌধুরী বলেন, ‘অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি ফুল চাষ এখানে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। রাজধানীর কাছে হওয়ায় পরিবহন খরচ কম। বাজারজাতকরণ সহজ হওয়ায় চাষিরা ভালো দাম পাচ্ছেন। চলতি ফেব্রুয়ারি মাসেই আড়াই কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা করা হচ্ছে।’

বিপাকে লবণ মিলের মালিকরা

প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:০৫ এএম
আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:১১ এএম
বিপাকে লবণ মিলের মালিকরা
প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য শ্রমিকরা মাথায় করে কারখানায় লবণ নিয়ে যাচ্ছেন। চট্টগ্রাম মহানগরের বাংলাবাজার ঘাট থেকে তোলা। ছবি: মোহাম্মদ হানিফ।

১৯৬৫ সালে চট্টগ্রামের চাক্তাই এলাকায় যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ সল্ট ক্রাশিং নামের একটি লবণ প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান। কয়েক বছর আগেও মিলটির ব্যবসা মোটামুটি ভালো ছিল। কিন্তু এখন প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হওয়ার পথে। অব্যাহত লোকসানের কারণে পুঁজি হারানো আর বকেয়া টাকা ফেরত না পেয়ে প্রতিষ্ঠানটির এখন যায় যায় অবস্থা। এর সঙ্গে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে যুক্ত হয়েছে ব্যাংকঋণ পরিশোধের তাড়া। অবস্থা এমন যে, কারখানায় নিয়োজিত দুজন ম্যানেজার আর শ্রমিকসহ ৫০ জনের বেতন দিতে প্রতিষ্ঠানটি রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। এত কিছুর পরও শুধু বাপ-দাদার ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে প্রতিষ্ঠানটি চালু রাখা হয়েছে। তাও চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।

শুধু এই প্রতিষ্ঠান নয়, চট্টগ্রামে এমন অন্তত ৪৫টি লবণ মিল রয়েছে যেগুলো এখন সংকটময় সময় পার করছে। আর লোকসানের ভার বইতে না পেরে দুটি প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু কেন এমন পরিস্থিতি? দেশের একসময়ের লাভজনক খাত কেন হঠাৎ মুখথুবড়ে পড়ল। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে একাধিক ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেছে খবরের কাগজ। 

তাদেরই একজন বাংলাদেশ সল্ট ক্রাশিং কারখানার মালিক ফয়সাল ইমরান। তিনি বলেছেন, ‘ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে হয়। তার ওপর প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে বাকিতে লবণ বিক্রি না করে উপায় থাকে না। কিন্তু ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অনেক ক্রেতা গা ঢাকা দিয়েছেন। ধরা পড়ার ভয়ে অনেকে ব্যাংকে গিয়ে অর্থ পরিশোধ করতে পারছেন না। সব মিলিয়ে আমরা বিপাকে পড়েছি। একদিকে ব্যাংকঋণের অর্থ শোধ করতে চাপ দিচ্ছে, অন্যদিকে পুঁজিসংকটে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা মুশকিল হয়ে পড়েছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘শুধু আমি নই, সব মিলারেরই মার্কেটে ৪০ থেকে ৬০ লাখ টাকা বকেয়া রয়ে গেছে। এই অর্থ আদায় করতে না পেরে ব্যবসা সামলাতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হচ্ছে। লোকসানের ভার বইতে না পেরে এরই মধ্যে দুটি কারখানা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।’ 

এদিকে লবণ উৎপাদনের মৌসুম শুরু হলেও পুঁজি হারানোর কারণে মিলমালিকদের মুখে হাসি ফুটছে না। গত বছর এক মাসে কেউ মাত্র ২০ দিন, কেউ ২৫ দিন করে মিল চালু রেখেছিলেন। এখন প্রায় সবাই মিল বন্ধ রেখেছেন। বর্তমানে ব্যবসায় চাঙাভাব না থাকায় লবণের পাশাপাশি অন্য কোনো পণ্য নিয়ে ব্যবসার কথা ভাবছেন অনেকে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রামে লবণ মিলগুলো চাক্তাই, রাজাখাল ও মাঝিরঘাট এলাকায় গড়ে উঠেছে। চাক্তাই ও রাজাখাল এলাকায় অন্তত ১৭টি মিল রয়েছে। এর মধ্যে চাক্তাই এলাকায় দুটি কারখানা পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে। এর একটি হাজি রহমত আলী সল্ট ক্রাশিং, অন্যটি বাগদাদ সল্ট। অন্যদিকে মাঝিরঘাট এলাকায় ৩০টি লবণ মিল রয়েছে। চালু থাকা এসব কারখানাগুলোও চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। 

চাক্তাই এলাকার লবণ পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠান লাল মিয়া সল্টের মালিক আসাদ আসিফ খবরের কাগজকে বলেন, ‘পুঁজিসংকটের কারণে খুবই খারাপ দিন যাচ্ছে। মিলগুলো কাজের গতি হারিয়েছে। কাঁচা লবণ কিনে এনে প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ পড়ে বেশি। কিন্তু ওই লবণের অধিকাংশ বিক্রি করতে হয় বাকিতে। অতীতেও বাকিতে বিক্রি করে অনেকে সে অর্থ আদায় করতে পারেননি। তাই আমরা অল্প পরিমাণে এনে প্রক্রিয়াজাত করছি।’ 

তিনি বলেন, ‘গত বছর এক বস্তা লবণ (৭৪ কেজি) ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা ছিল। এবার বিক্রি করছি ৬৪০ থেকে ৭১০ টাকায়। এভাবে চলতে থাকলে লবণ মিলগুলো বন্ধ হয়ে যাবে।’ 

বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল কবির বলেন, ‘লবণ উৎপাদন মৌসুম শুরু হয়েছে। আশা করছি এবারও ভালো পরিমাণে লবণ উৎপাদন হবে। অনেকে বাকিতে লবণ বিক্রি করে সে অর্থ আদায় করতে পারেননি। তাই তারা আর্থিক সংকটে পড়েছেন।’ 

তিনি বলেন, ‘যদিও সেটা ব্যবসায়ীদের ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু তাদের সচেতন হয়ে ব্যবসা করতে হবে। মিলারদের সংকট নিরসনে আমরা বিসিকসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায় যে, এ বছর মিলারদের অবস্থা খুব একটা ভালো যাবে না।’