
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার খাদ্য অধিদপ্তর চলতি আমন মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানে সফল হয়নি। দেড় মাস পার হলেও খাদ্যগুদামে এক ছটাক ধানও গুদামজাত করা সম্ভব হয়নি। খোলাবাজারের তুলনায় সরকারি গুদামে ধানের দাম কম। নানা ভোগান্তির কারণে কৃষকরা খাদ্যগুদামে ধান দিতে আগ্রহী নন। উৎপাদন খরচের তুলনায় দাম কম হওয়ায় মিলমালিকরাও গুদামে চাল সরবরাহ করতে অনিচ্ছুক। এর ফলে ধান ও চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে পড়েছে।
ফুলবাড়ী উপজেলার খাদ্যগুদামে গত ১৭ নভেম্বর থেকে ধান-চাল সংগ্রহ শুরু হয়েছে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। উপজেলায় ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ২৫৮ টন। কিন্তু গত ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত তার এক ভাগও সংগ্রহ হয়নি। অন্যদিকে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৬১৬ টন, যার মধ্যে ১ হাজার ৮৪১ টন সংগ্রহ করা হয়েছে; যা লক্ষ্যমাত্রার ৫১ শতাংশ।
কৃষক মেহেদী হাসান বলেন, ‘সরকারি গুদামে ধান দেওয়ার পর ব্যাংকে টাকা গ্রহণসহ নানা ঝামেলা পোহাতে হয়। এর পাশাপাশি খোলাবাজারে ধানের দাম বেশি হওয়ায় কৃষকরা গুদামে ধান দিতে আগ্রহী নন। ফুলবাড়ীর সুজাপুর গ্রামের চাষি মাসুদ রানা জানান, গুদামে ধান দিতে গেলে শুস্কার পরীক্ষা, বস্তার ওজন নিয়ে সমস্যা, গাড়ি ভাড়াসহ নানা ঝামেলা হয়।
ফুলবাড়ী খাদ্য অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ নভেম্বর থেকে আমন ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হলেও ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য এখনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সরকার গত বছরের তুলনায় এবার প্রতি কেজি ধানের দাম ১ টাকা বাড়িয়ে ৩৩ টাকা। চালের দাম ২ টাকা বাড়িয়ে ৪৭ টাকা নির্ধারণ করেছে। তবে উল্লিখিত দামে গুদামে চাল দেওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ ৪৯ জন হাসকিং মিল। ১০ জন অটোমিল-মালিকদের কাছ থেকে ৩ হাজার ২৫৮ দশমিক ৩৩ টন সেদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ফুলবাড়ী খাদ্যগুদামের জন্য সেদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ৪৩৯ দশমিক ৭৫ টন, যার মধ্যে চুক্তিবদ্ধ ২ হাজার ২০৮ দশমিক ৬৬ টন। তবে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ৯২২ দশমিক ৩ টন সংগ্রহ করা হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার ৪২ শতাংশ। আতপ চালের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৯৫ টন, এর মধ্যে ৫৫৮ টন সংগ্রহ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার ৭০ শতাংশ। তবে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৫০ টন। কিন্তু মাত্র এক টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে, যা শতকরা শূন্য ভাগ।
মাদিলাহাট খাদ্যগুদামের সেদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ১৭৬ দশমিক ২৪ টন, এর মধ্যে চুক্তিবদ্ধ ১ হাজার ৪৯ দশমিক ৬৭ টন। তবে সংগ্রহ হয়েছে ৪৩২ দশমিক ৯০ টন, যা লক্ষ্যমাত্রার ৪১ শতাংশ। ওই গুদামে আতপ চালের লক্ষ্যমাত্রা নেই। ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭০৮ টন। কিন্তু সেখানে এক কেজি ধানও সংগ্রহ হয়নি।
স্থানীয় কৃষকরা অভিযোগ করছেন, সরকারি খাদ্যগুদামে ধান দেওয়ার ক্ষেত্রে নানা সমস্যা রয়েছে। এ ছাড়া খোলাবাজারে ধানের দাম বেশি হওয়ায় তারা গুদামে ধান দিতে আগ্রহী নয়। ফুলবাড়ী চাল কল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘বাজারে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫৪-৫৫ টাকায়। কিন্তু সরকারি গুদামে দাম ৪৭ টাকা। এর ফলে প্রতি টন চালের ব্যবসায়ীরা ৭-৮ হাজার টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। চুক্তি থাকার কারণে তারা নির্ধারিত চাল দিচ্ছেন। কিন্তু সরকারের যদি কোনো প্রণোদনা দেওয়া হয়। তাহলে ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা কমানো সম্ভব হবে।
ফুলবাড়ী খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রওশন আলী জানান, চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ পূরণের জন্য তারা চুক্তিবদ্ধ মিলারদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন। আশা করছেন সময়ের মধ্যে এটি সম্পন্ন হবে। উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা সোহেল আহমেদ জানান, সরকারি খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করতে অনীহা তৈরি হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে। খোলাবাজারের তুলনায় দাম কম হওয়া এবং কৃষকদের সময়ক্ষেপণমূলক ঝামেলা। তবে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন মিলমালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। তাদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহের লক্ষ্য পূরণের চেষ্টা চলছে।