
রোজার সময় ঘনিয়ে আসতেই চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে আবার অস্থির হয়ে উঠেছে খোলা তেলের বাজার। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিনে নতুন করে বেড়েছে ২ টাকা ৬৮ পয়সা। তবে প্রতি লিটার পাম অয়েলে দাম কমেছে ২ টাকা ৪২ পয়সা। গত ডিসেম্বরের শুরুতে ভোজ্য তেলের দাম বাড়িয়ে নতুন করে বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও এর চেয়ে বেশি দামেই বিক্রি করছেন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা।
এর আগে গত ২৫ ডিসেম্বর খাতুনগঞ্জে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৭৪ টাকা ১৬ পয়সায় এবং পাম অয়েল ১৬৩ টাকা ৪৫ পয়সায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে পাইকারি এই বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৭৬ টাকা ৮৪ পয়সা ও পাম অয়েল ১৬১ টাকা ৩ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে।
মণপ্রতি হিসাবে, গত ২৫ ডিসেম্বর খাতুনগঞ্জে প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) সয়াবিন তেল ৬ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে ১০০ টাকা বেড়ে ৬ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে একই সময়ের ব্যবধানে প্রতি মণ পাম অয়েলে ৯০ টাকা কমে বর্তমানে ৬ হাজার ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জে সয়াবিন তেলের দাম বাড়লেও কিছুটা কমেছে পাম অয়েলের দাম। তবুও বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে ভোজ্য তেল। গত বছরের ৯ ডিসেম্বর বৈঠক শেষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মিল মালিকদের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ভোজ্য তেলের নতুন দাম অনুমোদন দেয়। নতুন দাম অনুযায়ী, লিটারপ্রতি ৮ টাকা বাড়িয়ে খোলা সয়াবিন তেল ১৫৭ টাকা এবং খোলা পাম অয়েল ১৫৭ টাকা করা হয়।
সেই হিসেবে খাতুনগঞ্জে খোলা সয়াবিন তেল ১৭ টাকা ১৬ পয়সা ও ৪ টাকা ৩ পয়সা বেশি দরে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বাজারে ভোজ্য তেলের দাম সরবরাহ কমার কারণে বেড়েছে বলে অজুহাত দেখাচ্ছেন। অথচ বিশ্ববাজারে ভোজ্য তেলের বুকিং রেট কমেছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত বছরের অক্টোবরে প্রতি টন সয়াবিনের বুকিং রেট ছিল ১ হাজার ৯৫ ডলার, নভেম্বরে ১ হাজার ১৪৫ ডলার, ডিসেম্বরে ১ হাজার ৬৪ ডলার। কিন্তু বর্তমানে ব্যবসায়ীদের প্রতি টন সয়াবিন তেল কিনতে বুকিং রেট পড়ছে ১ হাজার ৫২ ডলার।
এদিকে উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধকেন্দ্র চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ১ লাখ ১২ হাজার ৫৯৩ টন সয়াবিন তেল এবং ৭ লাখ ৩৪ হাজার ৭০ টন পাম অয়েল খালাস হয়েছে।
খাতুনগঞ্জের ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী মো. কামাল উদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘বর্তমানে খোলা সয়াবিন তেলের দামটা বাড়তি। কারণ আমরা চাহিদা মোতাবেক পণ্যটির জোগান পাচ্ছি না। তাই দামটা বেড়েছে। বর্তমানে বিশ্ববাজারে সয়াবিনের বুকিং রেট কমেছে। আশা করছি, আগামী দিনে সরবরাহ বাড়লে দাম কমে আসবে।’
এদিকে পাইকারি বাজারটিতে তিন সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি চিনিতে ১ টাকা ৮৭ পয়সা কমেছে। গত ২৫ ডিসেম্বর প্রতি কেজি চিনি ১১৫ টাকা ২১ পয়সায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে পাইকারিতে লেনদেন হচ্ছে ১১৩ টাকা ৩৪ পয়সা। মণপ্রতি হিসাবে, গত ২৫ ডিসেম্বর প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) চিনি ৪ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ২৩০ টাকা।
এর আগেও চড়া দামে বিক্রি হয়েছে চিনি। গত বছরের ২৯ অক্টোবর খাতুনগঞ্জে প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) চিনি ৪ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাসের ব্যবধানে ১০০ টাকা কমে গত ১ ডিসেম্বর প্রতি মণ চিনি বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৩০০ টাকায়। গত ১২ ডিসেম্বর প্রতি মণ চিনি লেনদেন হয়েছে ৪ হাজার ২৫০ টাকায়।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন খবরের কাগজকে বলেন, ‘রোজার সময় যত ঘনিয়ে আসছে, অসাধু ব্যবসায়ীরা ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে। আইনের যখন সঠিক ব্যবহার বা প্রয়োগ হবে না, তখন অনিয়ম বাড়বেই। এখনো এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। খাদ্যবিভাগ, জেলা প্রশাসন, ভোক্তা অধিকার- কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। রোজার আর দেড় মাস বাকি। এখন থেকে বাজার মনিটরিং না করলে কখন করবে?’